নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
২০১৩ সালের শুরুর দিকে - গার্মেন্টস বিজনেসের একটা ভাল অর্ডার পেলাম। বিনিয়োগ করলাম। কিছু মানুষের উপর ভরসা করলাম এবং ধরা খেলাম। সেই সাথে বেশ বড় অংকের টাকা গচ্ছা গেল। অর্ডারটাও ক্যানসেল হয়ে গেল।
-- আমি থেমে থাকিনি।
ব্যাংকে টাকা পয়সা যা ছিল সব টোকাইয়া টাকায়া বিয়া শাদীর আয়োজনে মনোনিবেশ করলাম। সব প্রস্তুতি শেষ। তৎকালীন হবু বউয়ের গায়ে হলুদ হয়ে গেল। রাতে আব্বার সাথে কিছু কথা বললাম। পরের দিন সন্ধ্যায় আমার গায়ে হলুদ। সকালে ঘুম থেকে উঠে আব্বাকে আর পেলাম না। সকল আনন্দে পানি ঢেলে দিয়ে, আমার পায়ের নিচের মাটি কেড়ে নিয়ে তিনি চলে গেলেন উপারে।
-- আমি থেমে থাকিনি।
বাবার দাফন সম্পন্ন হল। বিয়ে পিছিয়ে গেল। সাধারণ শোক কাটিয়ে উঠে আবার বিয়ের পিড়িতে বসলাম। যা না করলেই নয় ঠিক সেইটুকু কর্তব্য পালন করে ঘরে বউ আনলাম। বাসর রাতে কান্না জড়িত কণ্ঠে বউকে বলেছিলাম, আমাকে কিছুদিন একা থাকতে দাও। স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে। এখন ঘুমিয়ে পড়।
-- এরপরও আমি থেমে থাকিনি।
প্রায় মাসখানেক পরে বউয়ের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছিলাম। ধীরে ধীরে সংসারে মন দিতে হল। হঠাৎ আবিস্কার করলাম যে, এক কেজি আলুর দাম কত আমি জানি না। আমার বাসা ভাড়া কত আমি জানি না। সংসার কি জিনিস, দায়িত্ব কি জিনিস জানতে এবং বুঝতে শিখলাম। অভ্যস্ত হতে থাকলাম। মানিয়ে নিতে চেষ্টা করলাম।
-- এখানেও আমি থেমে থাকিনি।
আমার মূল ব্যবসার পার্টনারশীপ ক্লোজ হয়ে গেল। হিসাব কিতাব করে অনেকটা শূন্য হাতেই আবারো নিজের কাজে মন দিলাম। নতুন টীম নিলাম। পুঁজির সংকট ছিল। হিসাব করে ব্যবসা, সংসারে সব কিছুতে এগুতে হচ্ছিল। অফিসটা ছিল তখনো শেয়ারে। একদিন সকালে অফিসে গিয়ে জানলাম, আমার ব্যবহৃত অংশটুকু অন্য পার্টনার ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। নিমেষেই বুঝে গেলাম যে, আরেকটা উষ্টা খেলাম। সেদিনই অফিসটা ছেড়ে, টীম গুটিয়ে, সবার পাওনা দেনা মিটিয়ে বেড়িয়ে এলাম।
-- তারপরেও আমি থেমে থাকিনি।
অন্য একটা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ ছিল। সেই পার্টনারও হঠাৎই অন্য সুর ধরল। তখন প্রবল জেদের উপর আছি। একটু ভেবে সেটাও ক্লোজ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে অনেক সম্ভাবনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে, নগদ অর্থ গচ্ছা দিয়ে হিসাব কিতাব শেষ করলাম। এখন আমি ঝাড়া হাত পা।
--- তবুও আমি থেমে থাকিনি।
বাবা যে অফিসে চাকরি করতেন সেখান থেকে চাকরির জন্যে ডাকল। বন্ধু মহলের আরেকটা স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান তখন সমস্যা সঙ্কুল। সাহায্য চাইল। ফুল টাইম সময় দিতে বলল। বাবার এক্স অফিসের চাকরির অফার, আমার ব্যবসার পরিকল্পনা, স্টার্টআপের অফার সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, চাকরি আমি করব না। ব্যবসাই করব। বন্ধু মহলের স্টার্টআপে কিছুদিন সময় দিয়ে তারপরে আবার গুছিয়ে ব্যবসায় নামব। জয়েন করলাম স্টার্টআপে। মন দিয়েই কাজ করলাম প্রথম মাসটা। মানুষ চিনতে থাকলাম। অনেক কিছুই চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠল। নিজেকে গুটিয়ে নিলাম। ৪৫ দিনের চাকরির অভিজ্ঞতা ছিল ভয়াবহ। অযোগ্য লোকের নেতৃত্ব কি জিনিস তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। সম্মানী না নিয়েই ছেড়ে দিলাম সেটা। যদিও তখন টাকাটা আমার বেশ দরকার ছিল।
-- আমিতো থেমে থাকিনি।
আমার ল্যাপটপ, যেটাতে আমার বিগত ২ বছরের সব ড্যাটা, বিজনেস প্ল্যান ইত্যাদি ছিল। সেই সাথে মানি রিসিটপট বই, কিছূ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস, পেনড্রাইভ, মোডেম, ডায়রী, নোট খাতা, একটা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের ডিটেইলস এবং নগদ কিছু টাকা সহ সব ছিনতাই হয়ে গেল। গালে হাত দিয়ে কাগজপত্র আর বিজনেস প্ল্যানগুলোর কথা ভেবেছি বেশ কিছুদিন। এরপর আবার শুরু করেছি নতুন করে। শুন্য থেকে।
-- আমি থেমে থাকিনি।
কোরবানীর সময়টাতে বেশ সমস্যায় পড়েছিলাম। এই প্রথম কোরবানীর দায়িত্ব আমার উপর। মা জিজ্ঞেস করল, কিভাবে কি করবি ? আমি বললাম, তুমি ভেব না। অন্য সব প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে গরু কেনার সময়টাতে আমার হাতে মাত্র ২০ হাজার টাকা। কোরবানীর বাকি ২ দিন। কিভাবে কি করব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎই টাকা ম্যানেজ হল। ছোটখাট একটা গরু কিনলাম। জীবনের প্রথম সংসারের একটা গুরু দায়িত্ব পালন করলাম। সবার মুখে হাসি। আমিও খুশি।
-- এখানেও আমি থেমে থাকিনি।
নতুন করে ব্যবসার পরিকল্পনা করি। রাতের পর রাত জাগি। বউ পাশে শুয়ে ঘুমায়। আমি পাতার পরে পাতা প্ল্যান লিখে যাই, কাটাকুটি করি, ভাবি আর হিসাব মেলাতে চেষ্টা করি। নিজের স্বপ্নগুলোর সাথে সময়ের দাবি মেলানো যায় না। আবারো সব কিছু উল্টে পাল্টে চেষ্টা করি। স্বপ্নগুলোকে খাতায় আঁকি। অবশেষে একটা কিছুতে স্থির হয় মন, মগজ। নতুন করে স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনা আর প্রত্যয়ে টগবগ করে ফুটি। নিশ্চয়ই এবার হবে। নতুন বছরের সেইসব স্বপ্ন পূরণের কাজে কর্মেই নিজেকে নিয়োজিত করা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
-- আমি থেমে থাকি না।
ছোট আরেকটা ভেঞ্চারে বিনিয়োগ ছিল। গতকাল বিশাল একটা লসের ফর্দ হাতে পেলাম। দ্রুতই সিটিং মিটিং করে একটা প্ল্যান করলাম। লস রিকভারী করার এবং সেই ভেঞ্চার থেকে বেরিয়ে আসার পলিসি ঠিক করলাম। এখন সিচুয়েশনটা উইন-উইন। আমিও ঠকব না। ভেঞ্চারটি যিনি চালিয়ে নিবেন তিনিও ঠকবেন না। তবে, এই প্রক্রিয়াটি সফল করতে আমাদের উভয়কেই অনেকটা সময় ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
-- আমি কোথাও থেমে থাকিনি। থেমে থাকার জন্যে আমার জন্মও হয়নি। বিজয় সুনিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। আর চলার উপর থাকলে নিশ্চয়ই পথ একদিন না একদিন ফুরাবেই। জীবনের যত ব্যর্থতা আছে তার সবই আসলে অভিজ্ঞতা। আর যা কিছু প্রাপ্তি তাই সাফল্য। অভিজ্ঞতা আর সাফল্য দুটোই সমানভাবে উপভোগ করা উচিত।
কষ্ট করে এতবড় ইতিহাস পড়ার জন্যে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। নতুন বছর সবার জন্যেই অভিজ্ঞতা আর সাফল্যের আয়োজনে ভরপুর হোক। স্বপ্নগুলো প্রস্ফুটিত হয়ে জীবনের বাগানকে শোভামন্ডিত করুক সেই কামনায় সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। শুভ ইংরেজী নববর্ষ
সাজ্জাত ভাইয়ের ফেইসলবুক আইডি - Click This Link
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:৪৮
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: সাজ্জাত ভাইয়ের প্রতি আমার সেই বিশ্বাস আছে, বিপদের সময়ের সকল বন্ধুকে সে অবশ্যয় মনে রাখবে।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য
২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২১
স্রাবনের রাত বলেছেন: আপনি যে ভেঙ্ঘে পড়েননি , এটাই সবচেয়ে কঠিন বাস্তব । আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে, এত দিন বানের জলে ভেসে জেত ।
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:৫০
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ভেঙ্গে পরার জন্য সাজ্জাদ ভাইদের জন্ম হয়না, একটা কথা সাজ্জাদ ভাইদের সাফল হতেই হবে।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য
৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪০
adder69 বলেছেন: স্যালুট
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:৫০
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য
৪| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫২
জনাব মাহাবুব বলেছেন: আমি হলো তো এতদিন ভাইঙ্গা টুকরা টুকরা হইয়া যাইতাম
নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন। কোরআনের এই আয়াত আপনার উপর প্রযোজ্য।
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:৫০
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫
হাসিব০৭ বলেছেন: Congrats........ দুঃখের সময় যারা আপনাকে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়েছে মনে রাখবেন তারাই আপনার প্রকৃত বন্ধু এবং সহযোগী।