নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিল তৈরি হচ্ছে চরের একটি ছোট কারখানায়
বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে তো বটেই, প্রতিটি অলিগলিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা। এসব কারখানায় উৎসবের বেলুন থেকে শুরু করে হাঁড়ি-পাতিল, র্যাক, পাটা-পুতা, পানির ড্রাম, পাদুকা, আলকাতরা, ব্যাটারিসহ অনেক কিছু তৈরি হয়। ছোট ও মাঝারি কারখানা নিয়ে এলাকাটি এখন মোটামুটি এক ক্ষুদ্র শিল্পাঞ্চল।
এই কথাগুলো প্রযোজ্য পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের জন্য। বুড়িগঙ্গার বুক চিরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় তিন বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই চরের কারখানাগুলোয় কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার মানুষের। এখানকার উৎপাদিত পণ্য চকবাজার, মিটফোর্ড, যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের পাইকারি বাজার ঘুরে রাজধানীসহ সারা দেশেই চলে যায়।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘরে দেখা যায়, উদ্যোক্তারা নিজস্ব সৃজনশীলতায় বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদনে সাফল্য দেখাচ্ছেন। তবে নকল পণ্যসামগ্রী তৈরির কারখানাও আছে। অপরিকল্পিতভাবে কারখানা স্থাপন ও যত্রতত্র বর্জ্য ফেলায় চরের আবাসিক চরিত্রটি নষ্ট হয়ে গেছে। নদীতে রাসায়নিক পদার্থ ঢেলে দূষণের সীমা যেন চরমে নিয়ে গেছেন উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীরা। ভারী আর দুর্গন্ধময় বাতাসে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সুস্থ মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রশিক্ষণের অভাবে চরের উদ্যোক্তারা পণ্যের মানের ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে আছেন। আর অসচেতনতার জন্য এলাকাটিকে করে ফেলছেন বসবাসের প্রায় অযোগ্য। এ জন্য ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সরকারকে এগিয়ে আসা দরকার। দরকার উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণসহ নানা সহায়তা।
মানচিত্র
সারি সারি কারখানা: সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও পুরো কামরাঙ্গীরচরে অন্তত ৫০০ কারখানা আছে। এর বেশিও হতে পারে। এসব কারখানায় তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের পণ্যসামগ্রী। এর মধ্যে বড় একটি হলো প্লাস্টিকের ড্রাম। পানি রাখার এই ড্রাম তৈরির ১০টি কারখানা আছে এই চরে।
প্রতিদিন ৮০০ থেকে এক হাজার প্লাস্টিকের ড্রাম তৈরি করে এইচএস এন্টারপ্রাইজ। সেমি-অটো এই কারখানাটিতে দিনে-রাতে পালা করে ৩৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। তিন থেকে চারটি আয়তনের ড্রাম তৈরি হয় এখানে। ১০০ লিটারের একটি ড্রামের দাম পড়ে ২৭০ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক মামুন হোসেন বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে এবার ভরা মৌসুমেও বিক্রি কম হওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দিতে হয়েছে। তার পরও রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। সে জন্য নদীতে নৌকা বোঝাই করে রাখতে হয়েছে।’
মানচিত্রএকসময় এই চরে প্লাস্টিক পণ্য তৈরির অনেক কারখানা ছিল। তবে বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন।
নূরবাগের এই ড্রাম তৈরির কারখানার পাশেই জাকির হোসেন নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার বেলুন তৈরি করেন। ভালো রোদ থাকলে ২৪ হাজার পর্যন্ত করতে পারেন। প্রতি ১০০ বেলুন চকবাজারের পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন মাত্র ৩০ টাকায়। তাঁর কারখানা বলতে একটি টিনের ছাপরা ঘর, আর সামনের একচিলতে উঠোন। তিনি বছর দেড়েক আগে এই কারখানা স্থাপন করেন। আগে এখানেই একটি বেলুন তৈরির কারখানায় কারিগরের কাজ করতেন। এখন তাঁর পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি বাইরের দুজন শ্রমিক নিয়েছেন। তাঁদের সপ্তাহে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি দেন।
বেলুনের পাশেই একটি আলকাতরা তৈরির কারখানা। বিদেশ থেকে আমদানি করা বড় ড্রামভর্তি অশোধিত আলকাতরা নদীপথে আসে চরের এই কারখানায়। এখানেই প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করে রবিন ব্রাদার্স। উড়োজাহাজ, জেট বিমান ও বোয়িং বিমান নামে ব্র্যান্ডিং করে প্রতিষ্ঠানটি।
পুরো কারখানাটিতে দেখা গেল অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। চারপাশে ঝাঁজাল গন্ধ। আলকাতরা প্রক্রিয়াজাতে নিয়োজিত শ্রমিকের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা উপকরণ। কারখানার শ্রমিক আলমগীর বললেন, ‘কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে যায়। প্রথম একটু সমস্যা হতো। এখন হয় না।’
কামরাঙ্গীরচরের খোলামোড়া ঘাট এলাকায় গৃহস্থালি কাজে ব্যবহূত লোহার র্যাক তৈরির কারখানা করেছেন আলতাফ উদ্দিন। বছর দেড়েক আগে মালয়েশিয়া থেকে ফিরে নিজের জমানো টাকা দিয়েই কারখানাটি করেন তিনি। বর্তমানে দিনে ৫০ থেকে ৬০টি র্যাক তৈরি হয় তাঁর কারখানায়। কাজ করেন ১০ জন শ্রমিক। এসব র্যাক পাইকারদের কাছে এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
র্যাক তৈরির কারখানা থেকে বের হতেই চোখে পড়ল ছোট একটি ঘরে বেলচা তৈরি হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা ও নির্মাণসামগ্রীর জন্য এটি ব্যবহূত হয়। কাঠের হাতল ও সেটির মাথায় টিনের খোল দিয়ে বেলচা বানাতে কাজ করছেন চারজন শ্রমিক।
এম এ মেটাল নামের এই প্রতিষ্ঠানটির কারিগর হূদয় ইসলাম জানান, সপ্তাহে ৫০ থেকে ৬০টি বেলচা তৈরি হয়।
এখান থেকে বের হয়ে মূল সড়ক ধরে হাঁটতেই চোখে পড়ল সারি সারি করাতকল। বরিশাল, ভোলা, চরফ্যাশন, শরীয়তপুর এলাকায় থেকে নদীপথে এখানে কাঠ আসে। এগুলো এখানে কাটিয়ে বনানী, গাজীপুর ও সাভারের পাইকারেরা নিয়ে যান। ৩০ থেকে ৩৫টি করাতকল আছে চরে।
করাতকল সামনেই আছে পাদুকা, অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি-পাতিল ও পাটা-পুতা তৈরির কারখানা। এ ছাড়া আছে পাঁচ থেকে ছয়টি বেল্ট তৈরির কারখানা।
ভেতরের এলাকা ঘুরে দেখা গেল, বাসা-বাড়িতে প্লাস্টিকের পণ্যসামগ্রী, লাইলনের দড়ি, আটা-ময়দা ইত্যাদির ছোট কারখানা গড়ে উঠেছে। বড় শিল্পকারখানা হিসেবে আছে ম্যাটাডোর শিল্পপার্ক। এখানে বলপয়েন্ট কলম, টুথব্রাশ, স্যানেটারি পাইপসহ বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হয়। এ ছাড়া পান্না ব্যাটারি লিমিটেডের কারখানা। এখানে বছরে বিভিন্ন ধরনের প্রায় দেড় লাখ পিস ব্যাটারি তৈরি হয়, যা ভলভো ব্র্যান্ড নামে বিক্রি হয়।
করাতকল
বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে চরে ৩০-৩৫টি করাতকল আছে। নদীপথে দক্ষিণাঞ্চল থেকে কাঠ আসে এখানে
শিল্পপার্ক
এখানে গড়ে উঠেছে ম্যাটাডোর শিল্পপার্ক।তারপাশেই আছে পান্না ব্যাটারির কারখানা
বেলুন
দিনে ২৪ হাজার পর্যন্ত বেলুন তৈরি হয় একটি কারখানায়। পুরো চরে এমন কারখানার সংখ্যা ১২টি
হাঁড়ি-পাতিল
অ্যালুমিনিয়ামের নানা আকারের হাঁড়ি-পাতিল তৈরি হচ্ছে। যাচ্ছে চকবাজার, মিটফোর্ডসহ বিভিন্ন স্থানে
৩ বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে কামরাঙ্গীরচর এলাকাটি ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। এখন সেটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায়
৫০০ ছোট কারখানা আছে চরে। ব্যাটারি, আলকাতরা, বেলুন, হাঁড়ি-পাতিল, পাটা-পুতা, পানির ড্রাম, র্যাক, পাদুকা ইত্যাদি প্রস্তুত হচ্ছে।
কামরাঙ্গীরচর পুরান ঢাকার ব্যবসা বাণিজ্য
নজরদারি ও মনোযোগ না থাকায় কামরাঙ্গীরচরের শিল্প-ব্যবসা উন্নত হচ্ছে না, বাড়ছে পরিবেশদূষণ। পুরো এলাকা সরেজমিনে ঘুরে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর শাহ ও শুভংকর কর্মকার। ছবি তুলেছেন হাসান রাজা
Click This Link
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০০
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আশা করি আপনার উপকারের পাশাপাশি উনাদেরও কিছু একটা অগ্রগতি হবে।
ভাল থাকবেন
২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:৫৩
ঢাকাবাসী বলেছেন: দুনিয়ার সবচাইতে দুর্ণীতিবাজ আর অদক্ষ আমলা আর রাজনীতিবিদদের দেশে কিছুই হবেনা।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:০৮
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: তবু স্বপ্ন দেখি এই খেটে খাওয়া মানুষ গুলির জন্য একদিন আমরা সকল বাধা অতিক্রম করে সফলতার শীর্ষে অবস্থান করব।
ভাল থাকবেন।
৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫
অলওয়েজ এ্যান্টি গর্ভণমেন্ট বলেছেন: ভালো হয়েছে।
ধারা বাহিক লিখুন।
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:২৩
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই,
আমি এই লিখাটা কপি করেছি, আরো পেলে অবশ্যই শেয়ার করব।
ভাল থাকবেন
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০৮
জিকো বলেছেন: এরকম একটা আর্টিকেল খুজতেছিলাম। আমার বহুৎ উপকার করলেন।