নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃখ হীন পৃথিবী

দুঃখ হীন পৃথিবী

একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।

দুঃখ হীন পৃথিবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট্ট ফার্মেসি থেকে যেভাবে শিল্পের মহীরুহ...

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল। ভারতবর্ষে স্বদেশী আন্দোলনের জোয়ার বইছে। সুভাষ চন্দ্র বসু তখন যুবাদের নায়ক। নতুন নতুন বিপ্লবী চিন্তা আর দেশ গড়ার চেতনায় উজ্জীবিত তারুণ্য। পাবনার আতাইকুলার এক তরুণ নীরব সাধনায় মগ্ন। কিছু একটা করবেন। নানা জটিলতা আর মতের অমিল হওয়ায় পোস্ট অফিসের কেরানিগিরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বড় কর্তা যখন তাকে চাকরি থেকে বাদ দেয়ার কথা ভাবছেন তখন তিনি নিজেই তাকে (বড় কর্তাকে) বাদ দিয়ে এসেছেন।



কিন্তু দিশা কোথায়। স্বপ্ন, ব্যবসায়ী হবেন। দেশ ভাগ হলো। চারপাশে অস্থিরতা। হার্ভার্ড থেকে ব্যবস্থাপনায় ডিপ্লোমা শেষ করেছেন। পড়াশোনা শেষ। টুকটাক চাকরির অভিজ্ঞতাও হলো। কিন্তু নিজস্ব উদ্যোগ দরকার। মনের তীব্র নেশায় ছুটে বেড়ান খেত-খামারে। গাঁয়ের মেঠো পথ আর ইছামতির বাতাস দোলা দেয় এক স্বপ্নচারীকে।



বাবা ই এইচ চৌধুরী তখন একটা মিশনারি হাসপাতালে কাজ করেন। আশপাশের চরাঞ্চলের দশ-বারো মাইল দূর থেকে মানুষ তার বাবার কাছ থেকে কুইনাইন নিতে আসতো। নানা রোগ-বালাই আক্রান্ত মানুষের যন্ত্রণা দগ্ধ চেহারা চোখে ভাসতো। ভাষা আন্দোলনে তখন ঢাকা উত্তাল। সারা দেশেই মায়ের ভাষার দাবিতে ছাত্র-জনতা জেগে উঠছে। উদীয়মান এক তরুণ মানুষের রোগ যন্ত্রণা থেকে বাঁচাতে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আতাইকুলা বাজারে ছোট্ট একচালা ঘরে ফার্মেসি দিলেন। খুচরা ওষুধ বিক্রয়ের দোকান। সময়টা ১৯৫২ সাল। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নেয়া স্যামসন এইচ চৌধুরী তখন ২৬ বছরের যুবক। বাবা খ্রিষ্টান মিশনারি পরিচালিত কম্যুনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে। খ্রিষ্টান মহিলার গড়া ছোট কম্যুনিটি হাসপাতালের দায়িত্ব তিনি মারা গেলে বর্তে চৌধুরী পরিবারের হাতেই। বাবা এইচ চৌধুরী নিয়ম করলেন, শুধু গরিব মানুষদের চিকিৎসা দেয়া হবে। তবে শর্ত একটাই, যারা চিকিৎসা নিতে আসবেন তাদের একটা করে চেলা কাঠ নিয়ে আসতে হবে। সবাই অবাক হলো এ আবার কি নিয়ম। কিছু হাসিঠাট্টাও হলো। দমলেন না। কারণ ওই চেলা কাঠ দিয়েই হাসপাতালে পানি জ্বাল দেয়া হতো। ঘটনাক্রম তরুণ স্যামসনকেও নাড়া দেয়। ফাঁকে ফাঁকে বাবার ওষুধ সংগ্রহের কষ্ট পীড়া দেয়। কি করে একটি ওষুধের কারখানা দেয়া যায়। নিজেদের ওষুধ কেন নিজেরাই তৈরি করি না। ভাবনার ডালপালা গজাতে থাকে। সময়-সুযোগের অপেক্ষায় থাকে স্যামসন চৌধুরী।



একদিন ফার্মেসিতেই দেখা মেলে সদ্য পাস করা ডাক্তার বন্ধু রশীদের। সারাদিন রোগী দেখে, খাওয়া-দাওয়া করে আর তাস-টাস খেলে চলে যাওয়ার শর্তে সে বসতে রাজি হলো আতাইকুলায় স্যামসন এইচ চৌধুরীর ফার্মেসিতে। পাবনারই আরেক হিন্দু ফার্মাসিস্ট জুটলো- যিনি ম্যালেরিয়ার মিকশ্চার ওষুধ বানাতেন। বেচতেন। তিনে মিলে আড্ডা। আর টুকটাক পরিকল্পনা। ধীরে ধীরে ফল দিতে শুরু করে এই মজলিশি গল্প-গুজব। স্বপ্নগুলো বাস্তবতায় ভর করে এগোতে থাকে। একদিন মুখোমুখি হন ডিরেক্টর ড্রাগ-এর কাছে। ড্রাগ ম্যানুফ্যাকচারিং লাইসেন্সের অনুমতি প্রার্থনা করতে। দুরু দুরু বুকে নানা প্রতিকূলতা নিয়ে যাত্রা শুরু আজকের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস-এর।



কোম্পানিটির সূচনায় সঙ্গী হয়েছিলেন চারজন। পুঁজি পনের হাজার টাকা। চারজনে মিলে সূচনা। নাম তাই ‘স্কয়ার’। ফোর হ্যান্ডস আর ইকুয়াল। চার হাত সমান। সমান না হলে তো বর্গক্ষেত্র (স্কয়ার) হচ্ছে না। শুরুতে মিকশ্চার সিরাপ আর কিছু ট্যাবলেট। আস্তে আস্তে পরিধি বাড়তে থাকে। প্রথম তিন বছরে পুঁজি দাঁড়ায় আশি হাজারে। লাভের মুখ দেখতে শুরু করে চতুর্থ বছরে। তখন স্যামসন এইচ চৌধুরী নিজেই ছিলেন দারোয়ান, নিজেই বিপণন কর্মকর্তা, নিজেই ঝাড়ুদার, নিজেই কেরানি। এক সময় চার অংশীদারের দু’জন চলে গেলেও তিনি দমেননি। প্রতিকূলতা ও বৈরী পরিস্থিতিতেও নিজেকে আগলে ধরেন। নির্মাণ করেন সিঁড়ির পর সিঁড়ি। ১৯৫৮ সালের প্রতিষ্ঠিত স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস আজ দেশের বড় শিল্প গ্রুপ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২০

খাটাস বলেছেন: সুন্দর পোস্ট ব্রাদার। প্লাস। শেয়ারের জন্য কৃতজ্ঞতা। স্বপ্ন দ্রষ্টা মানুষের আরও লেখা সময় পেলে শেয়ার করবেন। ভাল থাকবেন।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩০

টেকনিসিয়ান বলেছেন: ভাবতে অবাক লাগে বাবার মতো ছেলেরা দয়ালু হয়নি... কেননা তারা দেশে গরীব দুঃখীদের জন্য কোন হাসপাতাল তৈরী না করে করেছে কোটি পতীদের জন্য যা ইতিমধ্যে চিকিৎসা সেবার নামে দুর্নাম বয়ে আনছে।
চিকিৎসা নিতে যাওয়া অনেককেই বলতে শুনেছি ''স্কয়ার হাসপাতাল'' এটি দেশের ৭তারকা মানের হোটেল.....

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩০

শেখ মফিজ বলেছেন: একজন সফল মানুষ ।
আমরা দেখেছি একজন সফল ব্যবসায়ির প্রাথমিক অংশিদারেরা
এক সময় ওই ব্যবসায় থাকতে পারেনা ।
স্কয়ার’ফার্মাও তাই ।
আনার বহু দিন থেকে একটা ধারণা আছে,
তিনি তার অংশিদারদের তাড়িয়ে দিয়েছেন ।
আমার কাছে আরেকটি বির্তকিত বিষয় হচ্ছে
১০০ টাকার প্রাইমারী শেয়ারে ৮০০ টাকা প্রিমিয়াম নেওয়া ।

৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২০

মুদ্‌দাকির বলেছেন:
দুজনতো গেলো বাকি একজনের খবর কি? আর লাভজনক রেখেও ঐ দুজন গেলেন কেন ? পুঁজি ১৫ হাজার থেকে বেড়ে তিন বছরে ৮০ হাজার মানেতো অনেক টাকা তখনকার হিসাবে, তাই না??

৫| ১১ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৭

নন্দীত নরকে বলেছেন: দারুন হয়েছে !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.