নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
আজ আমাদের ৫ম বিবাহ বার্ষিকী, এই প্রথম অনুভব করলাম আমার মেয়ে আমার গলা জড়িয়ে বাবা বলে ডাকছে। এই যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি, বলে কিংবা লিখে শেষ করা যাবেনা। ছাত্র জীবনে যে স্বপ্ন দেখিছিলাম (লাল রং এর হুড খোলা গাড়ি) সে স্বপ্ন জীবনে অর্থনৈতিক সাফল্য আসলে পুরন করব বলে ভেবেছিলাম। চাকরি হলো, বউ হলো। স্বপ্নের অনেক কাছা কাছি চলে গেছিলাম, প্রায় বাস্তবে নামিয়ে এনেছিলাম লাল রং এর হুড খোলা গাড়িতে লিমিট লেস হাইওয়েতে গাড়ি চালানোর স্বপ্ন। আর্থিক সংগতি হয়েছিল। কিন্তু স্বপ্ন আর পুরন হলোনা। গাড়ির বদলে জীবনে আসলো একটি নতুন জীবন। ছোট ছোট হাত আর পা, আধো গলায় বলে উঠে "বাবা"। সে এক মধুর ডাক, আন্দোলিত হয়ে উঠে বুক। জীবনের সুখের খোজে তৃষ্না বেড়ে যায়।
আমার মেয়ের বয়স ৩ বছর, বিয়ের কিছুদিন পরেই তনিটা কানের কাছে গেনর গেনর শুরু করল একটা বাবুর জন্য। মনে হয় আমি দোকান দিয়েছি যখন তখন একটা বাবু এনে উনার কুলে দেব, আর উনি গুনু গুনু করবে। যেহেতু ভালবাসর বিয়ে আবার ফ্যামিলী ছেড়ে দূরে থাকতে হচ্ছে তাই রাগ করতে পারছিনা, অনেক বুঝিয়ে বল্লাম ৩/৪ বছর পর একটা বাবু নেব তাতে করে আমরা কিছু টাকা জমাতে পারব আমার শখের লাল গাড়িটা কিনা হয়ে যাবে। তাছাড়া বাবু নিলে আমাদের ভালবাসায় একটা গ্যাপ তৈরী হবে। নাহু নাহু করতে করতে করতে উনি এক বছর সময় দিলেন, ঠিক ৩৬৫ দিন পরেই আবার শুরু হল। তনিটাকে অনেক ভালবাসি তাই খুব একটা রাগও করতে পারছিনা আবার এই মূহুর্তে সন্তান নিতেও চাচ্ছিনা, আমার অনেক দিনে শখ একটা লাল গাড়ি কিনার। কিন্তু এই মুহুর্তে বাচ্চা নিলে সংসারের খরচ বেরে যাবে তখন কিছুই সন্চয় করতে পারবনা গাড়ির জন্য, কিন্তু সব চিন্তায় পানি ডেলে তনির জয় হল। আমি হার মানতে বাধ্য হলাম, ডাক্তার রিপোর্ট আসল তনিটা মা হতে যাচ্ছে। কিছুটা সময় অনেক আনন্দে ছিলাম কিন্তু যখনই আমার লাল গাড়ির কথা মনে হল তখন সব কিছু ভুলে তনিটার উপর বিষন রাগের সৃষ্টি হচ্ছে, ইচ্ছে করছে নিজেই মরে যায় কেন জানি এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করলাম বাবা মায়ের মতের বাহিরে গিয়ে।
দেখতে দেখতে আমাদের ঘরে আলো করে রাজকন্যা এল, যদিও আমি অনেকটাই অখুশি ছিলাম মেয়েটার প্রতি। ২ বছরের জমানো টাকা প্রায় শেষ হয়ে গেছে মেয়ের জন্মের ১ মাসের মধ্যেই, হসপিটাল বিল সাথে ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান। এখন বলতে গেলে শূন্যহাত নিয়ে আছি, আমার এত বছরের স্বপ্নের লাল গাড়িটার সলিল সমাধি হল।
অফিস থেকে ফেরার পথে তনির জন্য ফুল নিয়ে আসি কিন্তু কখনো মেয়েটার জন্য কিছুই নিয়ে আসিনা, ব্যাপারটা তনি বুঝতে পারে তাই মাঝে মাঝে দরজা খোলার সাথে সাথে কোন না কোন কারন দেখিয়ে মেয়েটাকে আমার কুলে দিত। আমিও শুধু তনির দিকে তাকিয়ে এক প্রকার মনের ইচ্ছার বাহিরে মেয়েটাকে নিতাম।
আমার দরকার গতি। তীব্র বেগে গাড়ি চালাতে আমার ভালো লাগে। লাল রং এর গাড়ি আমার পছন্দ। হুড খোলা গাড়ী। পাশে থাকবে জীবন সঙ্গী যার চুল উড়বে হাওয়ায়। এ স্বপ্ন দেখছি সেই বুঝতে শিখার বয়স থেকে। গাড়ী দোকানের সামনে নতুন ভলবো, অডি, মার্সিডিস আর বিএমডাব্লু দেখে সে স্বপ্ন লালন করেছি পুরা ছাত্র জীবন।
এক যুগেরও বেশি সময় নিয়ে দেখে আসা স্বপ্নটা কেমন এক মুহুর্তেই শেষ হয়ে গেল, তনিটার সাথেই কিছুদিন কেমন একটা অদৃশ্য দালান তৈরী করে রেখেছিলাম কিন্তু কিছুটা সময় পর যখন বুঝতে পারলাম তনিটার ভালবাসা আমর খুব বেশি প্রয়োজন তখন শুধু রাগটা থেকে গেল আমার মেয়েটার উপরে। স্বাভাবিক হলাম তনিটার সাথে।
মেয়েটা যখন আজ প্রথম আমার গালে হাত দিয়ে বাবা বলে ডেকে উঠল কেন জানি মনে হল এই লাল পরীটার কাছে একটা লাল গাড়ি অতি তুচ্ছ, হাজারো লাল গাড়ি ছুড়ে ফেলে দিতে পারি এই রাজকন্যার একটা বাবা ডাকের জন্য।
আজ আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ, রাজকন্যাটা সারাটা দিন আমার গলা জড়িয়ে ছিল। কি যে এক মধুর ভালবাসা তা বলে শেষ করা সম্ভব না।
সেই ছোট্ট মেয়েটি আমার জন্য চা বানায়, তার সাথে আমি খেলি রান্নাবাটি। কার্টুন দেখি, দুজনে মিলি বানাই ফুলের বাগান। রাতে ঘুমাবার আগে পড়ি "দ্যা লিটল মারমেড" । ছোট্ট মেয়েটি স্বপ্ন দেখে তার রাজপুত্র আসবে। আমার নতুন হুড খোলা গাড়ীর স্বপ্ন বড় তুচ্ছ, তার নতুন জীবনের আশার কাছে। আমার মেয়ের স্বপ্ন হয়ে যায় আমার স্বপ্ন।
যখন তাকে নিয়ে সকালে বেড়াতে যাই হেটে হেটে, পাশের লেনে একটি নতুন হুড খোলা স্পোরটস কার দেখে আমার স্বপ্ন পুরন হলোনা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফালাই, পরোক্ষনে যখন শুনি আমার মেয়ের বাবা ডাক আর সে যখন বলে আজ রাতে আমরা কি খেলবো তখন সেই লাল গাড়ীর চেয়ে এ লাল টুকটুকে মেয়েটিকে বড় ভালো লাগে। তার চুলির ঝুটি নেড়ে সে যখন বলে বাবা আমি তোমায় ভালবাসি, তখন মনে হয় এই তো জীবন কি ছোট, কত কি পাবার আছে আর আমি কিনা চেয়েছিলাম লাল গাড়ি।
আমার মেয়ে আমায় ভালোবাসে, হাজার হাজার লাল গাড়ি, চাদনি রাতের হাসি তার কাছে কিছুই নয়। তার হাসি আমাকে স্বপ্ন থেকে জাগিয়ে নিয়ে আসে জীবনে যাতে আছে হাসি কান্না আর সুখ অসুখ। বড় ভালো লাগে সে মেয়েটির মায়াবী হাসি।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১২
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: বাস্তবে মেয়ে নেইতো তাই কল্পনাতে মেয়ের ভালবাসাটা অনুভব করার চেষ্টা করলাম, অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
২| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯
অন্তঃপুরবাসিনী বলেছেন: +
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১২
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ
৩| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৬
দিগন্ত জর্জ বলেছেন: মন ভালো করে দেয়ার মত একটা লেখা পড়লাম। সন্তানের স্পর্শে বাবার জীবন সার্থক। পোস্টে +
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৩
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: সব বাবার কাছেই তার মেয়েটা রাজকন্যা হয়ে থাকুক আর সব মেয়ের কাছেই বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা হয়ে থাকুক............
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
৪| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি পড়ে ভালো লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০০
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আমার মেয়ে আমায় ভালোবাসে, হাজার হাজার লাল গাড়ি, চাদনি রাতের হাসি তার কাছে কিছুই নয়। তার হাসি আমাকে স্বপ্ন থেকে জাগিয়ে নিয়ে আসে জীবনে যাতে আছে হাসি কান্না আর সুখ অসুখ। বড় ভালো লাগে সে মেয়েটির মায়াবী হাসি।
স্বপ্ন পেল বাস্তবতার মাটি
++++++++++++++