নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দুঃখ হীন পৃথিবী

দুঃখ হীন পৃথিবী

একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।

দুঃখ হীন পৃথিবী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা আমি তনিকে বিয়ে করব

০৯ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৫




- বাবা আমি তনিকে বিয়ে করব।
- কি?
- তনিকে........... (আর কিছু বলতে পারিনি)
- বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে তোমার এত ভাল লাগল?

বাবা অগ্নি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এই প্রথম বাবাকে রাগে কাপতে দেখলাম। মনে হচ্ছে এখানে বিরাট কিছু একটা হয়ে যাবে, হাতের কাছে বন্ধুক থাকলে এতক্ষনে গুলি করে দিত। ভাগ্যিস বাড়িতে মানুষ জবাই করার মত দা নেই থাকলে হয়তো এই ভাবে হত্যা করতেও চিন্তা করতোনা।
আজকে সকাল থেকেই বাবার সাথে ভাল একটা সম্পর্ক তৈরী হয়, বলতে গেলে এই প্রথম বাবা আর আমি সারাদিন এক সাথে গল্প করলাম। দুজনেই অনেক কথা শেয়ার করলাম, আমি শুধু অপেক্ষায় ছিলাম বাবার সাথে সারদিন ভাল একটা সম্পর্ক রেখে সন্ধ্যার পর কথাটা বলব।
খাবার টেবিলে বসে বাবাকে অনেক উৎফুল্ল দেখে মাঝ খানেই বলে দিলাম।
মনে হয় বাবা আকাশ থেকে দপাশ করে মাটিতে পরে গেছে, সারা দিনের উৎফুল্লটা কেমন যানি মুহুর্তের মাঝে ই শেষ হয়ে গেছে।

তনি আমার পূর্ব পরিচিত, আস্তে আস্তে আমাদের পরিবারের সবার সাথেই ওর ভাল সম্পর্ক হয়। বলতে গেলে এই পরিবারের একজন সদস্য হয়ে উঠে, ছোট বড় সব অনুষ্ঠানেই মেয়েটার উপস্থিতি।
দেখতে দেখতে মেয়েটার প্রেমে পরে গেলাম, এমন ভাবে পরলাম যেন উঠে আসার কোন পথ খুজে পেলাম না। এই প্রেমে পরার গভীরতাটা দিন দিন বারতে থাকল, আমি নির্বোধের মত মেনে নিতে থাকলাম।
তনিটা যেদিন অনার্স শেষ করেছে সেই দিন থেকেই ওর পরিবার বিয়ের জন্য উঠে পরে লাগছে, আর আমি শুনেই যাচ্ছি। না পারছি তনিটাকে বলতে, না পারছি আমার কিংবা ওর পরিবারকে বলতে।
মেয়েটার সাথে পাশাপাশি হাটা, হাত দরে সাগরের পারে বেড়ানো সব কিছুই করতে পারতাম কিন্তু শুধু একটা কথা বলতে পারতামনা। তনির জন্য ছেলে খুজে পাওয়া গেছে, বেসরকারি একটা কোম্পানিতে জব করে। বেতনও ভাল, সব মিলিয়ে অর্ধ লক্ষটাকা। এই দিকে তনিটাও জব পেয়েছে, শুরুতে বেতন কম হলেও একেবারে খারাপনা।
তনি নিজেই এসে আমার হাতে বিয়ের কার্ডটা দড়িয়ে দিল, গায়ে হলুদ থেকে বিয়ে সব কিছু শেষ করে আমার বাসায় আসতে হবে। অর্থাৎ ৩/৪ দিনের জন্য তনিদের বাসায় আমি মেহমান।
আমি বারবার তনির সেই কাল তিলটার দিকে তাকিয়ে থাকতাম, কেন জানি মনে মনের ভিতরে একটা হাহাকার করে উঠছে। এমনটা হওয়ার কথাছিলনা, যদি একটু সাহস করতে পারতাম।
সবকিছু শেষ করে প্রায় ৪দিন পর নিজের বাড়িতে ফিরলাম, মনে হল মাথার উপর থেকে বিশাল একটা বুঝা সরে গেছে। আমিও এবার নিজের কাজে মনযোগ দিলাম, খুব দ্রুতই বছর শেষ হয়ে গেল।
হঠাৎ একদিন তনিটা আমাকে ফোন করে উর বাসায় যেতে বল্ল, এখন নাকি তনি আর ওর হাসবেন্ড আলাদা বাসা নিয়েছে। মেয়েরা পরিবারের বাহিরে বাসা নিলে সবাইকে ডেকে ডেকে নিয়ে দেখাতে ভাল লাগে, যে সে স্বর্গে বাস শুরু করেছে। ঠিক এমনি এক নিমন্ত্রনে ওর বাসায় এসে হাজির, বাসতো নই যেন আলীবাবার গুহা। ডানে বামে এদিক সেদিক করে তারপর বাসায় পৌছলাম, বাহির থেকে গুহা মনে হলেও ভিতররা বেশ সুন্দর করে সাজানো। টুনা টুনির সংসারটা মানিয়েছে ভাল।
এক বছর যাবত ভুলতে বসা পুরনো প্রেমটা কেমন যেন জাগ্রত হয়ে উঠল, আবারো সেই তনির কাল তিলটা...... ওফ অসহ্য।
তনিটাকেও দেখতে কেমন গম্ভির মনে হচ্ছে, কেমন বউ বউ একটা ভাব চলে এসেছে। উর্নাটা এক মুহুর্তের জন্যও মাথা থেকে পরতে দিচ্ছেনা, কথা বলার স্বরটা কেমন জানি একেবারে নিচু হয়ে গেছে। অথচ এই তনি ভুল করেও কোন দিন মাথায় কাপর দিত না আর গলার স্বরতো দুই এক কিলোমিটার সুন্দর ভাবেই শুনা যেত।
কত সাজানো আর পরিপাটি নিয়ে এসেছে মেয়েটার মধ্যে, আমি যেন আরো মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
ঘন্টা দুয়েক ছিলাম মেয়েটা নিজের হাতে কত কিছু তৈরী করে দিয়েছে, একটার চেয়ে একটা স্বাদ ছিল ভাল তাই কোনটাই আর শেষ করা হলনা। বারবার শুধু মেয়েটার তিলটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর ভাবছিলাম, আচ্ছা তিলটার জন্য মেয়েটা সুন্দর নাকি মেয়েটার জন্য তিলটা সুন্দর। উত্তর আর খুজে পেলাম না, এবার বাসায় যাওয়ার পালা। কেমন একটা শূন্যতা নিয়ে বাসার পথে পা বাড়ালাম।

বাসায় আসতেই মা বল্ল,
- তনিটা কেমন আছেরে বাবা?
- ভাল আছে , নতুন সংসার সাজিয়েছে কেমন একটা গম্ভির্যতা চলে এসেছে মেয়েটার মধ্যে। উস্কোখুস্কো তনিটা কেমন নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে।
আমি তখন মাকে অন্য রকম আবিষ্কার করলাম মনে হল আমার চেয়ে মা বেশি কষ্ট পাচ্ছে মেয়টার জন্য, কেমন একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শূন্যে দৃষ্টি নিয়ে বল্ল
- ইস্য যদি আমি আর দশটা দিন হাতে সময় পেতাম, তাখলে এই মেয়েটাকে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে আসতাম। সব কিছু ঘুছিয়ে নিয়ে এসেছিলাম তখনি শুনি মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, আবার ছেলেও অনেক ভাল। তাই কষ্টটা নিজের মাঝেই রেখে দিলাম। আচ্ছা তুই কি তনিটাকে পছন্দ করতি?
আমি কিছুই বলতে পারিনি শুধু পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম।

সেইদিন তনিটার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে কেমন জানি কাজে মন বসাতে পারছিনা, প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা তনিটার সাথে গল্প করি। কেমন জানি আমার সারাটা জগত তনিটা গিরে ফেলেছে, মনে হয় এবার আর বাহির হওয়ার কোন পথ নেই।
তনিটাকে ভুলে যাওয়ার হাজার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই পারছিনা, ছোট ছোট কোন বিষয়ে তনিটার সাথে রাগ করে মোবাইল ফোন অফ করে দেই। মনে হয় এবার থেকে আর কথা হবেনা কিন্তু ঠিকই কথা হয়ে উঠে এক ঘন্টা পর, বরং এই একটা ঘন্টাই আমার ধম বন্ধ হয়ে আসে।
অফিস থেকে ছুটি নিলাম বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সময় দিলাম, বিভিন্ন পর্যটন স্পটে গিয়ে সময় কাটালাম। সী-বিচ থেকে পাহাড় সব কিছুতেই বেড়াতে গেলাম, কিন্তু মনে হল তনিটা এখন আমার সারাটা হৃদয় দখল করে বসে আছে। এখন আমি পাগল হয়ে যাব।
হাতে দুইদিন সময় রেখেই বাসায় ফিরলাম, তারপর সারাটা দিন বাবার সাথে হেসে হেলে গল্প করে রাতের খাবার টেবিলেই বলে দিলাম "তনিকে আমি বিয়ে করব"
বাবার অগ্নি চক্ষু এড়িয়ে মা বলে উঠল
- এইকথাটা যদি তুই একটা বছর আগে বলতি তাখলে তনিটা আজকে আমাদের সংসারটা উজ্জল করে রাখতো।

ভিষন্ন মনে শুধু ভাবতে থাকলেম, ইস্য কেনযে সময়ের কাজ সময়ে করতে পারিনা......................

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৯

সুরাইয়া বীথি বলেছেন: গল্পটা পড়ে ভাল লাগল তবে এই গল্পের Moral একটাই আর সেটা হল সময়ের কাজ সময়ে না করতে পারলে পরে আর কিছুই করার থাকে নাহ !! :-(

১০ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:০০

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: তাইতো মনে হচ্ছে, আমিতো এমন গেড়া কলেই পইরা গেছি। দেখি বাবার কাছেতো প্রস্তাব রাখছি কিছু করে কিনা আমার জন্য

২| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২

মুহাম্মাদ আরিফ হুসাঈন বলেছেন: সব ছিল রাজী ,ছিলনা শুধু বর

১০ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:০২

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: বরও ছিল কিন্তু বরের কলিজা ছিলনা বলে বলতে পারেনি, সেইদিন যদি আমার কলিজা থাকতো কথাটা বলার মত তাখলে "তনি আর আমার গল্পটা আমাদের গল্প হতে পারতো"

৩| ০৯ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: রবীন্দ্রনাথের একটা গল্প আছে একরাত্রি। সেইম কাহিনী (নিজেকে আবার রবীন্দ্রনাথ ভাইবেন না B-)) )

১০ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: তাই? আজকেই খুজে পড়েনেব।
আসলে নিজের গল্পটাই এমন শুধু বাবাকে বলাটা কাল্পনিক,

৪| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২১

সুজন শাহজাহান বলেছেন: হায়রে জীবন! :(

২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৩১

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: এক জীবনে কত রং দেখতে হয়

৫| ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৪৯

সবুজ সালু বলেছেন: আপনার নিজের জীবনের ঘটনা হয়ে থাকলে সত্যিই খুব মর্মান্তিক!

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ ভোর ৬:০৯

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: নারে ভাই, আমার এমন কিছু ঘটার মত সময় ছিলনা। এমনিতেই এইটা একটা কল্পনা মাত্র

৬| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:৫৬

হাবিব বলেছেন: সত্যি গল্প টা পরে খুব খারাপ লাগছে। কেননা আমার জিবনে এই ঘটনা টি ঘটেছে। সময় চলে গেছে তারপর ও আমি চেষ্টা করে ছি কিন্ত কোন কাজ হল না।তবে আমি বাবা কে বলি নাই,মা কে বলে ছি।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:০৫

দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: মাইতো আমাদের সবচেয়ে পরম বন্ধু, এমন ঘটনা বাবা কিংবা মাকে বলার মত সাহস আমার নেই শুধু গল্পেই সম্ভব হয়েছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.