নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
হসপিটালের ক্যান্সার ইউনিটে যাওয়ার মত ব্যাথা আর কোথাও নাই, আশেপাশে যতলোক দেখাযায় অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এরা চলে যাবে না ফেরার দেশে। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও প্রিয় মানুষগুলিকে কয়েকটা দিন বেশি পাশে রাখার জন্য কতই চেষ্টা করে যায়, হসপিটাল ডাক্তার অপারেশন কেমু আরো কত কি........
একজন মানুষ হুইল চেয়ারে বসে আছে কিংবা ট্রলিতে বসে আছে কেও একজন এদিক সেদিন দৌড়াচ্ছে এই ট্রলিটা নিয়ে, তবে ট্রলিতে বসে আছে সে কিন্তু নির্ভাক। কোন কথা বলেনা শুধু চারি পাশে তাকিয়ে থাকে, হয়তো শেষ বারের মত পৃথিবীটাকে দেখতে চেষ্টা করছে। হসপিটালের ইট পাথরের ফাক দিয়ে বিশাল আকাশ আর দেখা হয়না, তবু সে তাকিয়ে থাকে যদি একটু আকাশ দেখা যায়.........
ক্যান্সার ইউনিটে আমি কখনো যায়না, এমনকি খুব কাছের আপন মানুষ থাকলেও আমি যেতে চাইনা। হয়তো অনেকেই ভাবছেন আমি রোগটার ভয়ে যেতে চাইনা কিন্তু বাস্তব কারন হল, এতগুলি মলিন মুখ এক সাথে দেখে সহ্য করার ক্ষমতা আল্লাহ আমাকে দেইনি। আমি কিছুতেই পারিনা, তাই যাইওনা।
২০০৯/২০১০ সালের দিকে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালে (সিঙ্গাপুর) অনেকদিন কাজ করেছি, বর্তমানের নতুন ৩টা বড় বিল্ডিং ছিলনা তাই পুরাতন বিল্ডিংএ সব ডিপার্টমেন্ট ছিল। আমি একদিন ক্যান্সার ইউনিটে গেলাম, সম্ভবত ৭তলায়। চারিপাশে অচেনা অজানা অনেকগুলি মলিন মুখ, সবাই কেমন আপনজন খারানোর প্রাক প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে রোগিদের দেখলে মনেই হয়না এরা চিরদিনের জন্য চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এরা কেমন জানি হয়ে যায়। না খুশি, না কান্না একটা ভাব।
একটা বাংলাদেশি পরিবারের সাথে পরিচয় হল, উনাদের বড় মেয়েকে নিয়ে এসেছেন চিকিৎসা করাতে। মেয়েটা কেমন শুকিয়ে গেছে, মাথায় একটা স্কার্ফ বাধা। হুইল চেয়ারে বসে আছে, মেয়েটার বাবা হুইল চেয়ারের ধরে রেখেছে।
করিডোরের ঠিক মাঝে উনারা অপেক্ষা করছে, আমি পাশে গিয়ে জানতে চাইলাম উনারা কি বাংলাদেশি কিনা। পরিচয় হওয়ার পর অনেক কথা হল, মেয়েটা প্রায় ৩ বছর হল ক্যান্সার ধরা পরেছে বর্তমানে শেষ ষ্টেজে আছে। বলতে গেলে এবার উনারা ফাইনালি মেয়েকে হারানোর জন্য তৈরী হয়ে এসেছে। মানুষটা বিশাল বড় ব্যবসায়ী গুলশানে বাসা, গাড়ী বাড়ি টাকা পয়সার কোন কমতি নেই। এত কিছু থাকার পরও একটা রোগের কাছে বড্ড অসহায় পিতা উনি।
সামনে অনেকটা জায়গা থাকার পরেও উনি করিডোরের মাঝামাঝি আছেন, এখান থেকে উন্মুক্ত আকাশটা দেখা যায়। উনার মেয়ের নাকি আকাশ খুব প্রিয়, হুট করেই মেয়েটা বলে উঠল -
"ভাইয়া খুব শীগ্রই আমি আকাশের তারা হয়ে যাব দেখবেন সবচেয়ে সুন্দর তারাটা হব আমি, সবাই আমাকে খুজবে কিন্তু পাশাপাশি সব গুলি তারা প্রায় সিমিলার হওয়াতে খুজে পাবেন না। মজার বিষয় কি জানেন? আমি আপনাদের সবাইকে দেখব"
মেয়েটা হাসছে, কেমন উচ্চ স্বরেই হাসল। ঠিক যেন শেষ বারের মত হাসি, ক্যান্সার ইউনিটে হাসির শব্দে সবাই কেমন করে তাকাচ্ছিল। হ্যা, সেই হাসিটাই মেয়েটা শেষ হাসি ছিল। পরদিনই মেয়েটা মারা যায়, বিকালের ফ্লাইটে মেয়েটার লাশ নিয়ে বাবা মা দেশে ফিরে।
২০১৩ সালে দেশে গেলে কোন এক কাকতালিয় ভাবে ভদ্রলোকের সাথে আমার দেখা হয়, কোন কথা বলার আগেই আমাকে উনি গাড়ীতে উঠিয়ে বাসায় নিয়ে যান। বাসাতো নয় যেন রাজ প্রাসাদ। মেয়ের মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদেঁ ফেল্ল, পাশে থাকা ১০/১২ বছরের মেয়েটাও কাদছে। আমি উদের কাওকেও থামাতে চাচ্ছিনা, কাদলে নাকি মনের কষ্টটা খালকা হয় তাই আমি উনাদের কান্না থামাতে আর চেষ্টা করছিনা। এখানেই শেষ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এটা যে গল্পের শুরু হবে তা ভাবতেও পারিনি, আমাকে চমকিয়ে দিয়ে ছালমার বাবা উর নিত্যদিনের ডাইরিটা হাতে দিল শেষ লেখাটা পড়ার জন্য।
এবারযে আমার কান্নার পালা, ডাইরিতে লেখা ছিল -
"আজকে যে ভাইয়াটার সাথে দেখা হল, উনি যদি সত্যি সত্যি আমার আপন ভাইয়া হত তাখলে ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে হলেও আরো ১ যুগ বেচে থাকতাম।কেমু দেয়ার কারলে মাথার সবগুলি চুল পরে গেছে তাই স্কার্ফ দিয়ে ডেকে রেখেছিলাম কিন্তু ভাইয়া মাথায় হাত রাখার সময় মনে হয়েছিল স্কার্ফটা খুলে দেই, পরম মমতায় ভাইয়া আমার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিক। যদি পরে কোন দিন দেখা হয় তাখলে তাই করব, আমার কোন ইচ্ছাই পুরন হয়নি এটাও হবেনা জানি। তবে এই ভাইয়া যদি আকাশের তারার মাঝে আমাকে একটা দিনের জন্যও খুজে তাহলেই যে ক্ষুদ্র জীবনের অনেক কিছুই পাওয়া হয়ে যাবে"
মেয়ের ইচ্ছা পুরনের জন্য বাবা মা দুজনেই আমাকে নিয়ে গেলেন নভোথিয়েটারে, দুইপাশে দুইজন বসনেল। একটু পরপর বলছিনে "আমার মেয়ে কোন তারাটা বলতো" আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি, শুধু দেখেই গেছি। সব শেষে পিচ্চি বোনটার কান্নার সময় আমার চোখের কোনেও অশ্রু কনা জমে এল।
মাঝে মাঝে দেশে আসলে এই ভদ্র লোকের পরিবারের সাথে কথা হত দেখা হত, ছালমার রুমটাই আমাকে বসতে দিত। এই রুম থেকে আকাশটা খুব সুন্দর ভাবে দেখা যায়, বিশাল জানালার গ্লাস দিয়ে আকাশ দেখা এটাই আমার প্রথম ছিল। দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই ছালমার একটা হাস্যউজ্জল ছবি চোখে পরে, হসপিটালে দেখা মেয়েটার সাথে এই ছবিটার কোন মিলই আমি খুজে পাইনি।
এমন ভালবাসা আমার সহ্য হয়নি তাই অনেকটা আড়ালে চলে গিয়েছিলাম যাতে করে আমাকে খুজে না পাই, দুই বছর কোন প্রকার যোগাযোগ ছিলনা। হ্যা অনেকদিন পর আবার দেখা হয়েছে, ঠিক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটালে ক্যান্সার ইউনিটে। নতুন বিল্ডিং এর ১৫ তালায়, নতুন ভাবে সাজানো অত্যাধুনিক ক্যান্সার ইউনিট, হুইল চেয়ারে বসা ছালমার যায়গায় ওর আদরের বোন "ছামিয়া"।
ভদ্রলোক আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্ল, "আমার ক্ষেত্রেই কেন এমন হবে?"
ছামিয়া আমার হাতে একটা সুতা বেধে দিয়ে হিলহিল করে হেসে বল্ল "এটা রাহী, বোন নাকি ভাইয়ের হাতে বেধে দিতে হয়। আমাদের এই জীবনে সবই পেয়েছি শুধু একটা ভাই ছাড়া, এই অপূর্ণতা আজ গুছিয়ে দিলাম"
এই হাসিটা আমার কানে একটা যন্ত্রনার কারন হয়ে উঠেছে, আমি সহ্য করতে পারছিনা। সেই করিডোর, হুইল চেয়ার, মেয়েটার বাবা চেয়ারে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে, মেয়েটা আনমনে আকাশ দেখছে আর বিরবির করছে.................................
১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৮
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: হসপিটাল গুলি হাজার মানুষের স্বপ্ন গড়ে দিলেও অন্য হাজার স্বপ্ব ভেঙ্গে ফেলে
২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৮
Noam_Tolstoy বলেছেন: Well, it's a sad story for most of the cancer patient and their families.
But, we will defeat cancer within 2050 and mark my word.
Cancer will be just a silly disease like Cholera now. Inventions are already on its way to defeat this unwanted weed.
১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:২০
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: সেই স্বপ্নটাই দেখি, কোন একদিন আমরা ক্যান্সার জয় করব
৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৯
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কষ্ট পেলাম।
১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৪
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: কিছু ঘটনা থাকে যা কেবল কষ্টই দিতে পারে
৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
ছাসা ডোনার বলেছেন: এমন ঘটনা যেন বাস্তবে না ঘটে , আশা করি এটা কাল্পনিক একটা গল্প। ভাল থাকুন
১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩২
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: কিছু কিছু ঘটনা কল্পনাতে থাকলেই ভাল হয় কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ঘটনা গুলি বাস্তবে এসে পরে
৫| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৮:১৫
প্রামানিক বলেছেন: কষ্টের কাহিনী।
১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৩
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের ঘটনা ছিল এটি
৬| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৫৯
আখেনাটেন বলেছেন: পৃথিবী কত দ্রত এগিয়ে যাচ্ছে, অথচ সামান্য একটা রোগ নিরাময়ের কোনো সমাধান করা যাচ্ছে না। শত শত বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর গবেষণার জন্য ব্যয় হলেও চিরস্থায়ী সমাধান নেই। আর এই কর্কট রোগের বেদনা মাকে হারিয়ে আমরাও টের পেয়েছিলাম।
৭| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: ছামিয়া হাসিটা যেমন আপনার কানে একটা যন্ত্রনার কারন হয়ে উঠেছিল ঠিক আপনার লেখাটিও আমার কাছে একটা যন্ত্রনার কারন হয়ে উঠেছে। যা আমি সহ্য করতে পারছিনা। ....
ভালো থাকবেন নিরন্তর।
৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৩
বিজন রয় বলেছেন: নতুন পোস্ট দিন।
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৭
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ভাইয়া পড়াশোনা চাকরি আর ব্যবসা নিয়ে বড্ড দৌড়ের উপরে আছি, কাজের চাপটা কমলেই আবার পোষ্ট দেব
৯| ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:০১
মোঃ গাউছুল আজম বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল
১০| ২৯ শে অক্টোবর, ২০২০ দুপুর ২:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: আবেগি লেখা।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১
বাঁশ আর বাঁশ বলেছেন: অসাধারণ লেখা। প্রতিটি হাসপাতাল অজস্র স্বপ্নভঙ্গের কাহিনী বহণ করে।