নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমারি মত.................।

তাজ - সৈয়দাবাদী ।

শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, এম পিও ভুক্ত কলেজ

তাজ - সৈয়দাবাদী । › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুনাফা নয়, মানের গুরুত্ব দরকার

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৭

: ড. সুলতান মাহমুদ রানা

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক | 07-07-2015



মুনাফা নয়, মানের গুরুত্ব দরকার: ড. সুলতান মাহমুদ রানা গত ২৩ জুন শিক্ষা সচিব দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষুব্ধ হন। অভিযোগ পাওয়া যায়, এ দুটি প্রতিষ্ঠানে কোনো নিয়ম-নীতি বা নীতিমালা মানা হচ্ছে না। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনেক আগেই এ ক্যাম্পাস দুটিকে অবৈধ ঘোষণা করে।

তারপরও ওই বিশ্ববিদ্যালয় দুটির শিক্ষা কার্যক্রম বহাল থাকা এবং শিক্ষা সচিবের পরিদর্শনে যাওয়ার বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য নয়। ইউজিসির কালো তালিকায় থাকা ক্যাম্পাসে কীভাবে এখনও অনিয়মের মধ্যে থেকেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়_ এটি এখন সবার প্রশ্ন। নিয়ম অনুযায়ী ইউজিসি কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করা ক্যাম্পাসগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের আইনগত ক্ষমতা থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে। কিন্তু অবৈধ ঘোষণা করা ক্যাম্পাস বন্ধ না করে পুনরায় তার শিক্ষা কার্যক্রম পরিদর্শনে যাওয়ার বিষয়টিও যথেষ্ট চিন্তাযোগ্য। অবশ্য ওই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক করে শিক্ষা সচিব বলেন, 'ত্রুটি সামলে না নিলে ব্যবস্থা নেবে সরকার।' তিনি আরও বলেন, 'একটি স্কুলে যে শিক্ষা উপকরণ, অবকাঠামো, ল্যাবরেটরি থাকা প্রয়োজন তা নেই রাজধানীর ওই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন বিশ্ববিদ্যালয় নয়, খুপরি দোকান। ফলে শিক্ষার্থীরা কী শিখছে তা সহজেই অনুমেয়। আমরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপকরণ, অবকাঠামো, ল্যাবরেটরির দ্রুত উন্নতি চাই। নইলে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।' শিক্ষা সচিবের এমন বক্তব্যকে আমরা সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি আশাবাদী হয়ে উঠি যে, এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কখন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে? শুধু এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসই নয়, এ রকম অনেক ক্যাম্পাস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যেগুলো ইউজিসি কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত থাকলেও এখনও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা যায়, দ্রুত এসব ক্যাম্পাস বন্ধের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ক্রমেই বাড়বে এবং শিক্ষার মান ক্রমেই হ্রাস পাবে।



দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে সনদ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন ছাড়াই একাধিক ক্যাম্পাস চালিয়ে যাচ্ছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। ইতিপূর্বে টিআইবি পরিচালিত 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়' গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের তথ্য প্রকাশ পায়। এসব প্রতিবেদন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার বেহাল দশা এবং শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের প্রকৃত চিত্র উঠে আসে। এসব চিত্র দেখে পরিষ্কার উপলব্ধি করা যায় যে, শিক্ষার মানের চেয়ে বাণিজ্যের অগ্রাধিকারই বেশি।



বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে এ পর্যন্ত ১২২টি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে, যা শিক্ষা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ। এর মধ্যে ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সম্প্রতি আরও ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবির অব্যাহত রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায় (২৮ জুন ২০১৫, সম্পাদকীয়, দৈনিক কালের কণ্ঠ)।



উদ্যোক্তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক দলের বা অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী এবং কিছু এনজিও কর্তা। আগেও মূলত তারাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুমোদন পেয়েছেন। এভাবে শত শত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিলেই কি বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষায় দ্রুত এগিয়ে যেতে পারবে? নাকি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বিশ্বপরিসরে কেবল নিন্দিত ও স্বীকৃতিহীনই হতে থাকবে?



২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত 'নামসর্বস্ব গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানা' শিরোনামের প্রতিবেদনে সরাসরি সনদ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ১৫ প্রতিষ্ঠান, উপাচার্য ছাড়াই চলছে ২৩ বিশ্ববিদ্যালয়, সারাদেশে অবৈধ ক্যাম্পাস প্রায় ২০০টি প্রভৃতি তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ইউজিসির সীমাবদ্ধতা', 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈধ ভিসি নেই' প্রভৃতি শিরোনামে প্রকাশিত সম্পাদকীয় কিংবা প্রতিবেদন দেখে রীতিমতো হতবাক হতে হয় শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষকে। মনিটরিং ব্যবস্থায় ইউজিসির সীমাবদ্ধতা ও সার্টিফিকেট বাণিজ্যসহ আইনানুগ নয় এমন অনেক কাজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশে গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানা স্থাপনের প্রশ্ন উঠে। এমনকি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অংশের ঝোঁকই মুনাফার দিকে বলে তথ্য পাওয়া যায়। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে রীতিমতো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ধাবিত হচ্ছে নতুন-পুরনো অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কাজেই গ্র্যাজুয়েট তৈরির কারখানা স্থাপনের প্রশ্ন আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।



মুনাফা অর্জনের বিবেচনায় বাণিজ্যের অন্যতম আকর্ষণীয় ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। টিআইবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় তিন কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়। ফলে মানহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আর বৃদ্ধি করা কোনোমতেই উচিত হবে কি-না তা নিয়ে ভাবতে হবে। তাই পর্যাপ্ত বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া ঠিক হবে না। অন্যদিকে শিক্ষার মান এবং অনুমোদনের শর্ত পূরণ করে না, এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে সেগুলোর অনুমোদন বাতিল করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ধরনের আপস কাম্য হতে পারে না।



সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যায়, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই শাখা ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখলেও গোপনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলোই 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০'-এর শর্ত পূরণ না করেই চলছে। সেগুলো ঠিকঠাক না করে নতুনভাবে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের।



বিদ্যমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যথাযথ তদারকির ব্যবস্থা করে সেখানে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রতিটি স্তরে গুণগত মান এবং স্বচ্ছতার বিষয়টি নিশ্চিত করা আবশ্যক। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবনায় শিক্ষকের তালিকায় ভালো ফলধারী মেধাবীদের নাম থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর শিক্ষক হিসেবে তাদের না রেখে অযোগ্য আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম মেধার শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে কর্তৃপক্ষ। কাজেই এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনভিজ্ঞ, অদক্ষ শিক্ষকমণ্ডলী কর্তৃক শিক্ষা কার্যক্রম কিংবা পাঠদানের ঘটনা ঘটছে কি-না তা তদারকির জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিক্ষার মান বাড়াতে সচেষ্ট হওয়া দরকার। ইতিমধ্যে নানাবিধ প্রতারণা এবং প্রহসনের অপরাধে অভিযুক্ত বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হলেও কেন এগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে, সেটিই এখন আমাদের প্রশ্ন।



ড. সুলতান মাহমুদ রানা: সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.