নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ : জামাত বর্জন

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:১০

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামাতে ইসলামীসহ বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিচারকার্য চলছে। এরই মধ্যে জামাতের ৫ জন নেতার অপরাধ সংশ্লিষ্টতার দায়ে শাস্তির রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রতিটি রায়ে ট্রাইব্যুনাল একটি কথা স্পষ্ট করে বলেছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাতে ইসলামী অখ- পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিল এবং জামাতে ইসলামীর অনুসারী ইসলামী ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানিদের ধ্বংসযজ্ঞে সহযোগিতা করেছিল। জামাতে ইসলামীসহ ওই সময় পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল পাকিস্তান মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী ও পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা-সমর্থকরা। জামাতে ইসলামীর মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার বিভিন্ন সময়ে তাদের দেয়া বক্তৃতা, বিবৃতি এবং প্রতিবেদন যুক্তির সপক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ দেয়।



গত ১ আগস্ট হাইকোর্ট এক রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দল হিসেবে জামাতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে। অর্থাৎ জাতীয় কিংবা স্থানীয় যেকোনো নির্বাচন করার ক্ষেত্রে জামাতে ইসলামী অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এখন নির্বাচন কমিশন তাদের অর্পিত দায়িত্বটুকু সম্পন্ন করবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, নিবন্ধন বাতিল, জামাত নেতাকর্মীদের গণহারে হাজতবাস সব মিলিয়ে জামাতের খুব একটা ভালো সময় যাচ্ছে না। তবে কি ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্নের দিকে ধাবিত হচ্ছে জামাতে ইসলামী? কিংবা ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে একাত্তরে পাকিস্তানপন্থী ঘাতকদের সাহায্যকারী ওই দলটির ভাগ্যে?



আমরা যা আশঙ্কা করছি সে সবের কিছুই হবে না জামাতের ভাগ্যে। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তাতে জামাতের কিছুই আসে যায় না। কারণ মুখে দুদল যাই বলুক, আচরণে কেউই জামাতের শত্রু নয়। আর জামাতে ইসলামীও এটা ভালোভাবেই জানে। দুদলেরই স্বাধীনতাবিরোধী জামাতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি করার ইতিহাস রয়েছে। তাই এদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে নিজেদের শক্তিশালী করার কাজটিই করছে জামাত। মূল লক্ষ্য একদিন দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার মসনদে আরোহণ। একটি ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক পূর্ণাঙ্গ সংবিধান রচনা এবং দেশ পরিচালনা করা। সে দিনটি হয়তো আর বেশি দূরে নেই। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির জামাতপ্রীতি এবং পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতা দেখে এমন আশঙ্কা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়!



একটি কথা আমরা সবাই মোটামুটি জানি। রাজনীতিতে ‘শেষ’ এবং ‘শূন্য’ বলে আসলে কোনো শব্দ নেই। জামাতের নিবন্ধন বাতিল হলেই জামাতের রাজনীতির দিন শেষ হয়ে গেলো তা বলা যাবে না। দেশের কতিপয় বুদ্ধিজীবী ‘জামাতের রাজনীতির সাথে’ ‘ধর্মভিত্তিক রাজনীতি’কে গুলিয়ে ফেলছেন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু রয়েছে। ভারতেও উগ্র সা¤প্রদায়িক রাজনীতি আমরা দেখছি এবং তারা খুব শক্ত অবস্থানে রয়েছে। দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চালু থাকলে ক্ষতি নেই, বহু ধর্মের বসবাসের কারণে নিজ নিজ অধিকার রক্ষায় ধর্মভিত্তিক দল থাকতে পারে, তারা রাজনীতিও করতে পারে। কিন্তু এখানে বলা আবশ্যক যে, আমরা ব্যক্তি হিসেবে, একজন মানুষ হিসেবে আমাদের মধ্যে নানা বিষয়ে নানামত থাকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে ‘একাত্তর’ নিয়ে কোনো মত, কোনো অজুহাত, কোনো আদর্শ কাম্য নয়। অর্থাৎ একাত্তরে যে দলটি বাংলাদেশ নামক ভূখ-ের জন্মের বিরোধিতা করেছিল তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আপোস করবার উপায় নেই।



অসা¤প্রদায়িক একটি দেশে সা¤প্রদায়িক রাজনীতির বীজ বপণকারী জামাতে ইসলামীকে বাংলার খোলা হওয়ায় রাজনীতি করার কোনো অধিকার রয়েছে বলে মনে হয় না। যারা এই যুক্তির বিপক্ষে সাফাই গেয়ে বিরোধিতা করবে, জেনে রাখা ভালোÑ তারা জামাতে ইসলামীর অখ- পাকিস্তানেরই অনুচর। বাংলার আলো-হাওয়ায় লালিত-পালিত হয়ে অখ- পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আজো দেখেন তারা। একাত্তরের প্রশ্নে আমাদের দল, মত, আদর্শ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এখনই জামাতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা উচিত। নতুবা একদিন বাঙালিকে এ ভুলের চরম মূল্য দিতে হবে।



স্বাধীনতার পর জামাত দেশের রাজনীতির ময়দানে পাকাপোক্ত ভিত রচনা করেছে। প্রশ্ন ওঠে, স্বাধীন দেশে জামাতের রাজনীতিতে আমরা বাধা সৃষ্টি করতে পারিনি কেন? দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের লালনে-পালনে হৃষ্টপুষ্ট জামাত আজ দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে হুমকির সম্মুখীন। তারা গণতন্ত্র মানে না, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ কায়েম করতে চায়। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য এবং স্বদেশপ্রীতি তীব্র হলে আমরা কি পারতাম না মুক্তিযুদ্ধের পরই জামাতসহ তাদের অনুচরদের মূলোৎপাটন করতে? বঙ্গবন্ধুর ‘সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা’ আর মেজর জিয়ার ‘রাজনীতি করার নিবন্ধন’ জামাতকে স্বাধীন দেশে বিচরণ করার লাইসেন্স দিয়েছিল। আর অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতাবিরোধীরা সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি বৃহৎ ঐকবদ্ধ রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলে। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে নতুন প্রজন্মকে। আজ দেশে গণতন্ত্র হুমকির মুখে, অসা¤প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে- এসবের জন্য জামাতই একমাত্র দায়ী নয় কি? যে সংগঠনের নামটি ৪২ বছর আগেই ইতিহাসের পাতায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির কুখ্যাত শাসক হিটলারের ‘নাৎসি’ বাহিনীর মতো কলঙ্কিত হয়ে থাকার কথা, সেই দলটিকেই দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেখলেও অবাক হওয়ার কিছুই নেই! জামাতে ইসলামীর মতো একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে এখনো নিষিদ্ধ করার সময় কি আসেনি? মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারাধীন জামাত নেতার রায়ের দিন হরতাল এবং রায়ের প্রতিবাদে পরদিন হরতাল ডাকা এমনকি রমজান মাসেও হরতাল ডাকা জামাতের অগণতান্ত্রিক মনোভাবেরই পরিচায়ক। এটি আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মতো ধৃষ্টতাও বটে! হরতালের নামে জামাত সারা দেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ভাঙচুর, অবরোধ, ককটেল বিস্ফোরণ করে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে, দেশের সরকারি সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি জনজীবনে অসহনীয় দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে। কিন্তু এতো কিছুর পরও স্বাধীনতার সপক্ষের দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায়ও কেন জামাতকে নিষিদ্ধ করছে না?



মুক্তিযুদ্ধের সময় একা কোনো সা¤প্রদায়িক গোষ্ঠী যুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দেয়নি। দেশের সর্বস্তরের, সব শ্রেণী-পেশা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বাধীন করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, স্বাধীনতার ৪২ বছর পর কিভাবে একটি সা¤প্রদায়িক সংগঠন দেশে এতোটা প্রভাবশালী হয়ে উঠলো? স্বাধীনতার পর দেশে যেসব স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ছিল, তখনই কেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি? তাহলে আজ হয়তো জামাত একটি ইসলামি রাষ্ট্র বানানোর স্বপ্ন দেখতে পারতো না। দেশের সর্বস্তরের মানুষের আকাক্সিক্ষত উদার, গণতান্ত্রিক সর্বোপরি একটি অসা¤প্রদায়িক রাষ্ট্রের স্বপ্নও বারবার ভেঙে যেতো না। ৩০ লাখ শহীদ আর অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের এখনই ঠিক করা উচিত কোনটিকে তারা বেছে নেবেন। এক. লেজুরবৃত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে জামাতকে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে সহযোগিতা। দুই. জামাতকে নিষিদ্ধ করে পুরো সংগঠনকেই বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো। বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ রইলো। ব্যক্তিস্বার্থের চিন্তা করে নয়, অন্তত নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শিক্ষা দেয়ার জন্য হলেও জামাতকে বর্জন করা উচিত। নইলে ‘ইতিহাস’ আমাদের ক্ষমা করবে না।

সুত্র

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৬:৩৮

সাদা পাখি বলেছেন: ৩০ লাখ শহীদ আর অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া এই দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের এখনই ঠিক করা উচিত কোনটিকে তারা বেছে নেবেন। এক. লেজুরবৃত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে জামাতকে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনে সহযোগিতা। দুই. জামাতকে নিষিদ্ধ করে পুরো সংগঠনকেই বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো।



সহমত।

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:০৪

তালপাতারসেপাই বলেছেন: সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.