নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
জাতির বিশেষ এক সংকটকালে ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ সালে ঢাকা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের সমর্থন নিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে নেতৃত্ব গ্রহণ করার সোচ্চার দাবি জানান হয়। অপ্রতিন্দন্দ্বী নেতা হিসাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গ্রহণ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার আবির্ভাব কোটি মানুষের মনে স্বস্তি ও আস্থা এনে দিয়েছিল সত্য। কিন্তু বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীকারী শক্তি, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা মেনে নিতে পারেনি, সেই পরাজিত শক্তি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরোধিতাকারী শক্তির মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। জেনারেল জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই শক্তি পরবর্তীকালে তার স্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিএনপি নেত্রী করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু সেটা যে মারাত্মক ভুল ছিল এবং জাতির জন্য কোন কল্যাণকর হয়ে ওঠেনি, তা আজ টের পাওয়া যাচ্ছে। এই শক্তির উচ্ছিষ্টভোগীদের মুখোশও এখন খসে যাচ্ছে। এরা শুধুমাত্র শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার ধ্বংস চান না। এরা বাঙালি জাতির ধ্বংস চান, বাংলাদেশের ধ্বংস চান। অথবা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি সেটা হবার নয়। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও আড়াই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানো আত্মত্যাগে যে জাতি ঐক্যবদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতায় সদাজাগ্রত তাকে ধ্বংস করার স্পর্ধা কারও হতে পারে না। ১৯৭৫-১৯৯৬ পর্যন্ত জেনারেল জিয়া জেনারেল এরশাদ এবং খালেদা জিয়া সরকারগুলো সেই অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
১৭ মে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালিকে আবার একাত্ম করেছে। তখন তার বয়স মাত্র তেত্রিশ বছর। পিতা-মাতা-ভাই ও স্বজন হারানো শোক তাকে শক্তি যুগিয়েছিল। পিতা শেখ মুজিবের স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা, যেখানে মানুষ উন্নত জীবনের অধিকারী হবে এবং অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিত্সা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। যে পিতার ডাকে বাঙালি একদিন যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে গেরিলা হয়ে শত্রুকে উত্খাত করেছে এবং সশস্ত্র লড়াই করে মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বিজয়ী জাতি হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন সফল করতে এবং তার প্রিয় দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই শেখ হাসিনা এই নেতৃত্বের দায়িত্ব সেদিন গ্রহণ করেছিলেন। পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা যে কত কঠিন হবে এবং তার চলার পথটি যে কুসুমাস্তীর্ণ হবে না সেটা তিনি জানতেন এবং জেনেশুনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সেদিন এসেছিলেন।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে শেখ হাসিনার জন্ম। পিতা তখন কলকাতায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, দেশভাগের দাঙ্গা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে ব্যস্ত। এরপর পিতার রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে-সঙ্গে শৈশব কৈশোর কাটিয়ে অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে তিনি বড় হয়ে ওঠেন। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত আমরা যারা তাকে দেখে আসছি তারা নিশ্চয় লক্ষ্য করে থাকবেন শেখ হাসিনা একজন সরল-সাধারণ বাঙালি নারী হলেও অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। তার মানবিক গুণাবলী, অসীম ধৈর্য ও সাহস, দায়িত্ববোধের একনিষ্ঠতা তাকে শুধু আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে নয়, সমাজ, দেশ ও জাতির প্রতি কর্তব্য সাধনে কল্যাণময়ী করে তুলেছে। শেখ হাসিনা একজন রাজনৈতিক নেতা থেকে সরকারপ্রধান শুধু নয়, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও তার দূরদর্শিতা ও কল্যাণধর্মী চিন্তা-ভাবনা তাকে আজ বিশ্বনেতার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনেতাদের তালিকায় শেখ হাসিনা বর্তমান সময়ে প্রথমসারিতে।
১৯৮১ সালে তিনি যখন নেতৃত্ব গ্রহণ করেন, তখন শুধু দল নয়, সারাদেশ তার দিকে তাকিয়ে থেকেছে। তার পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত নিয়ে হিসেব কষেছে। তিনি একদিকে দলকে সংগঠিত করেন, অপরদিকে জনমনে আশার সঞ্চার সৃষ্টি করেন। তিনি পদে পদে বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়েছেন কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল একটাই বিশ্বে বাংলাদেশকে আবার মাথা তুলে মর্যাদার সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করা। উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারায় বাংলাদেশ সবার সামনে অবস্থান নেবে, বাংলাদেশ সব দেশের আদর্শ হবে।
পঁচাত্তরের স্বজনহারানো বেদনার শোক শেখ হাসিনাকে সব সময় কুরে কুরে খায়, ক্ষতবিক্ষত করে প্রতিনিয়ত। যে কোনও ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে আজ জাতীয় প্রতীক, সর্বস্তরের অভিভাবক। তার দৃঢ মনোবল, কঠোর অবস্থান এবং বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। এটাই হলো তার চমত্কারিত্ব।
শেখ হাসিনা সব সময় বলে থাকেন, 'বাঙালি বীরের জাতি। বিজয়ী জাতি। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে। মেধা-শ্রম ও সততা দিয়ে নিশ্চয় সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।' শেখ হাসিনা বলে থাকেন, 'ভিক্ষুকের জাতির কোনও মর্যাদা নেই। এই পরিচয় আমাদের ঘোচাতে হবে। অনুদান-খয়রাত-বিচ্ছিন্ন উন্নয়ন নয় আমাদের আনতে হবে সার্বিক উন্নয়ন। নিচের তলা থেকেই এই উন্নয়নটা শুরু করতে হবে যাতে দুস্থ, অসহায় দরিদ্র মানুষ শক্তি অর্জন করতে পারে।' একারণে তিনি তার সরকার পরিচালনায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সবার আগে স্থান দিয়েছেন নারী ও প্রতিবন্ধীদের। নারীর ক্ষমতায়নকে তিনি স্বীকৃতি দিয়েছেন সর্বক্ষেত্রে এবং খুব কঠোরভাবে। দেশে উপকারভোগী নারীর সংখ্যা বর্তমানে ১৫ লক্ষ এবং নানামাত্রায় অর্থোপার্জনকারী নারীর সংখ্যা এক কোটিরও বেশি।
আমরা দেখেছি তিনি দেশি-বিদেশি অর্থনীতিবিদ ও দাতাদেশগুলোর পরামর্শ না শুনে দেশকে খাদ্যে স্বযংসম্পূর্ণ করেছেন কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে এবং কৃষি উপকরণের দাম কমিয়ে সহজলভ্য করে। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, পেটভরে খাদ্য পেলে মানুষ শ্রম দিতে চাইবে আরও ভালো থাকার জন্য। এরপর শিক্ষাক্ষেত্রেও এক বিপ্লব সাধন করেছেন। তিনি জানেন, শিক্ষা ও সচেতনতা থেকে মানুষের মনে দায়িত্ব বোধ জন্মে। সেই দায়িত্ববোধই হচ্ছে দেশ ও সমাজের প্রতি তার ভালোবাসা। একদিন নিশ্চয় আমাদের নতুন প্রজন্ম নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে। শেখ হাসিনা বলে থাকেন, 'রাজনীতিই হচ্ছে আমার জীবন। মানুষের ভালোবাসা আমাকে সব সময় সচেতন করে রাখে তাদের প্রতি আমার দায়িত্ববোধ। আমার পিতাকেও আমি দেখেছি জনগণের স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দিতে। সেখানে তার পরিবারকে কখনও ভাবেননি। আমি সেই আদর্শবোধেই লালিত-পালিত।'
১৯৯৬-২০০১ এবং ২০০৯-২০১৩ শেখ হাসিনা দু'বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, সরকার পরিচালনা করেছেন-স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণ ঘটিয়েছেন, একুশ শতকের প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার ঘটিয়েছেন, দারিদ্র্য হরাস করে শতকরা ২৬ ভাগে নামিয়েছেন, মাথাপিছু আয় ১০৪৪ ডলারে উন্নীত, জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় ৬.৫ ভাগে উন্নীত, মূল্যস্ফীতি ১১ থেকে ৭ ভাগে সীমিতকরণ, সাক্ষরতার হার ৬৫ ভাগে উন্নীত, ১ লক্ষ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমা অর্জন, ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বিদ্যুত্ উত্পাদন ক্ষমতা ৮,৫৩৭ মেগাওয়াট, ১২,৪০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, ৫১ হাজার নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ, ৬ লক্ষাধিক শ্রমিককে সৌদী সরকারের বৈধতা প্রদান, ২৬,১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ এবং ১ লক্ষ ৪হাজার জন শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ। সরকারি বেসরকারি সকলক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধি এবং শ্রমিক ও মজুরদের মজুরি বৃদ্ধি। দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায় রাখা। বিদেশে সরকারি উদ্যোগে কর্মসংস্থান। ব্রিজ, ওভারব্রিজ এবং গ্রামীণ অবকাঠামোয় পুল, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ উন্নয়নের ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ফলে শহর গ্রামের দূরত্ব কমেছে, বৈষম্যও হরাস পেয়েছে।
শুদ্ধতম রাজনীতিমনস্ক শেখ হাসিনার সাফল্যের প্রধান কারণ তার অঙ্গীকার, ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মনিটারিং। বাংলাদেশ বর্তমানে একটি স্থিতিশীল উন্নয়ন ধারায় এগিয়ে চলেছে। মিথ্যাচার, বিভ্রান্তমূলক অপপ্রচার চালিয়ে তাকে আর পশ্চাত্পদ রাখা যাবে না। সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে সে এগিয়ে যাবেই। এই এগিয়ে যাওয়াটাই শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও সাধনা। পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা।
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার জন্মদিন। তার জন্মদিন পালিত হবে নানা মাত্রায়, নানা আয়োজনে। তার দীর্ঘায়ু এবং কর্মজীবনের সাফল্য কামনা করবে সবাই। দেশে-বিদেশে জনপ্রিয়তার শীর্ষ পর্যায়ে শেখ হাসিনার অবস্থান আজ প্রমাণ করেছে তিনি জন্ম-মৃত্যুর অনেক ঊর্ধ্বে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সুযোগ্য কন্যা হিসেবে একদিন তিনি তার প্রিয় দেশ ও মানুষের ত্রাণকর্তা হিসেবে দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন। ত্যাগ শ্রম সততা এবং দূরদর্শিতা দিয়ে তিনি জনকল্যাণে তার ধর্ম পালন করেছেন। এটাই হলো তার দেশপ্রেম, রাজনীতি, বিশ্ব শান্তি ও কল্যাণকামী চেতনা এবং মানবিকতা।
সুত্র
©somewhere in net ltd.