নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশের বর্তমান দুটি রাজনৈতিক জোটের কর্মকান্ডের বিশ্লেষণ

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ ভোর ৬:৩৭

দেশে বর্তমানে প্রধান দুটি রাজনৈতিক ধারা বিদ্যমান। একটি বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলীয় জোট অপরটি ১৪ দলীয় মহাজোট যার নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সকলেই জানেন আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, অপরদিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জে. জিয়াউর রহমান। শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের নেতা থেকে ক্রমান্বয়ে বাঙালি জাতির অসীম সাহসী ও অবিসংবাদিত নেতার স্তরে উন্নীত হন। সর্বোপরি, তিনি ছিলেন সমগ্র পাকিস্তানের নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা। কিন্তু শক্তিধর পাকি সামরিক বাহিনী নির্বাচিত বাঙালি নেতার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পরিবর্তে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে উপহার দেয় ইতিহাসের জঘন্য নারকীয় গণহত্যার তা-ব। অকুতোভয় নেতা এদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে (পলাতক হওয়ার পরিবর্তে) সেই নিষ্ঠুর পাকিজান্তার হাতে বন্দিত্ববরণ করেন। অপর পক্ষে তৎকালীন মেজর জিয়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ অপরাহ্নে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঐ সময়ে তিনি নিজেকে স্বাধীন বাংলার প্রভিশনাল হেড অব স্টেট বলে দাবি করেন। অনেকে মত প্রকাশ করেন এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে তিনি প্রথম থেকেই সামরিক শক্তিবলে জাতির নয়নমণি শেখ মুজিবের অবস্থানটি দখলের স্বপ্ন দেখতেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি অন্যতম সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।



পাকি বন্দীশালা থেকে মুক্ত হয়ে ’৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুজিব তার স্বপ্নের স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তন করে নির্বাচিত নেতা হিসেবে সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পরিচালনায় তিনি সারা জাতির ও সারা বিশ্বের সহযোগিতা লাভ করেন। নির্বাচিত গণপরিষদ জাতিকে একটি সর্বাঙ্গীণ সুন্দর প্রশংসনীয় সংবিধান উপহার দেয়। অপরপক্ষে জে. জিয়া সামরিক ফরমানবলে উক্ত সংবিধানে কিছু সংশোধনী সংযোজন করেন। এক নেতার যাবতীয় কর্মকা-ের পেছনে বিপুল জনসমর্থন অপর জনের সব কাজের ভিত্তি সামরিক শক্তি। সা¤প্রতিক এক রায়ে দেশের সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণ অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে তার সংবিধান সংশোধনকেও অবৈধ আখ্যায়িত করা হয়।



পাকিস্তানিরা দেশকে ধ্বংসস্তূপ করে রেখে যায়। শূন্যহাতে ক্ষমতা গ্রহণ করে দেশনায়ক সারা বিশ্বের সহায়তা কুড়িয়ে জনগণকে বুভুক্ষু থেকে কোনো রকমে বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট। কিন্তু দেশের কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ অরাজক ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে তৎপর। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন ভিয়েতনামকে স্বীকৃতি দান করায় এবং মার্কিন-শত্রু দেশ কিউবায় পাটের থলে রপ্তানি করার ছুতোয় ইহুদি কিসিঞ্জার আমাদের নিজস্ব অর্থে ক্রীত খাদ্যশস্য বোঝাই জাহাজ গভীর সমুদ্র থেকে ফিরিয়ে নেয়ায় ১৯৭৪ সালে দেশে অনাহূত দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়। দেশের ভেতরে তৎকালীন খাদ্য সচিব মোমেন খান গুদাম থেকে সব খাদ্য বাজারে ছেড়ে দিতে বাধা দিয়ে দুর্ভিক্ষাবস্থা আরো প্রকট করে তুলে। এ দুর্ভিক্ষে প্রায় ২৮০০০ লোক অনাহারে করুণ মৃত্যুবরণ করেন। উক্ত মোমেন খান এহেন ষড়যন্ত্রের পুরস্কারস্বরূপ জিয়া সরকারের খাদ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন।



জাসদ ও তার অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ তখন সারা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে উন্মত্ত ও হিংসাত্মক কা-কীর্তিতে লিপ্ত থাকে। আরেক চৈনিক বিপ্লবী সর্বহারা সংগঠক সিরাজ শিকদার আত্মগোপনে থেকে কিছু বিপথগামী চামু-াদের নিরীহ সচ্ছল নাগরিকদের খতম করে সর্বহারা রাজ কায়েমের উস্কানি দিতে থাকেন। সর্বহারা গ্রুপ খুন, ডাকাতি ও থানা লুট, ব্যাংক ডাকাতি খাদ্য গুদাম লুট, পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগে লিপ্ত ছিল। সশস্ত্র এ তথাকথিত বিপ্লবীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করে আর নিরস্ত্র আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য, নেতা উপ-নেতাদের হত্যা করার প্রকাশ্য মিশনে নামে। তাদের হাত থেকে জনগণকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সরকার রক্ষী বাহিনী গঠন করে। আর তখনই সরকার বিরোধী রাজাকার ও উগ্রবাদীরা রক্ষীবাহিনীর অত্যাচারের কল্পিত কাহিনী অতিরঞ্জিত করে গোপনে প্রচার করতে থাকে। অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের মোকাবেলায় রাষ্ট্রপতি তখন বাকশাল পদ্ধতি কায়েম করেন।



আওয়ামী লীগ বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করে গণতন্ত্রের পিঠে ছুরিকাঘাত করে বলে অভিযোগ শোনা যায়। দলটি দাবি করে যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে বাকশাল কায়েম করা হয়। তাছাড়া বাকশাল কোনো সাধারণ একদলীয় ব্যবস্থা ছিল না। বরং তা ছিল সকল দলের সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয়ভিত্তিক দল। ন্যূনতম ৩ বছর সময়কাল ঐ ব্যবস্থা সচল রাখার সুযোগ পাওয়া গেলে জাতি বিচার করতে পারতো যে তা দেশের সমস্যা সমাধানে কার্যকর ও সফল ছিল কিনা। অথচ সে সুযোগ না দিয়েই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীর উসকানিতে কতিপয় বিপথগামী স্বাধীনতাবিরোধী উর্দিধারী সেনা সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করে দেশটাকে অস্থিতিশীল করে দেয়। বাকশাল প্রতিষ্ঠিত হয় সাংবিধানিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অথচ মোশতাক ঘটায় রক্তাক্ত ও অসাংবিধানিক অভ্যুত্থানÑ যার পরবর্তী উপকারভোগী হিসেবে ক্ষমতায় আবির্ভূত হন জিয়াউর রহমান। উল্লেখ্য, তৎকালীন পার্লামেন্ট সদস্য জে. ওসমানী ও ইত্তেফাক সম্পাদক মইনুল হোসেন বাকশাল প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন কিন্তু ওসমানী রক্তাক্ত পন্থায় ক্ষমতা দখলকারী মোশতাকের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার পদে আসীন হন। মইনুল হোসেন মোশতাক গঠিত ডেমোক্রেটিক লীগের অন্যতম জ্যেষ্ঠ পদাধিকারী হন। এটা তাদের গণতন্ত্রপ্রিয়তার নাকি মুজিব বিরোধিতার স্বাক্ষর।



বঙ্গবন্ধু আমলে সর্বহারা রাজনীতির প্রধান সংগঠক সিরাজ শিকদারের অপমৃত্যু ঘটে। ব্যক্তিটি ছিলেন একজন প্রকৌশলী। তার আদর্শ ছিল সশস্ত্র শ্রেণী সংগ্রাম। জোতদার, জমিদার ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের খতম করার মাধ্যমে সর্বহারাদের রাজ কায়েম করাই ছিল তার জীবনের লক্ষ্য। এ গোপন বিপ্লবী আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই বলে অভিহিত করতেন। তার মধ্যে স্বজাত্যবোধ একেবারেই ছিল না। এক পর্যায়ে সশস্ত্র সংগ্রাম ও গলাকাটা রাজনীতির ধারক এই মিসগাইডেড জিনিয়াসকে গ্রেপ্তার করা হয়। সরকারি ভাষ্যমতে সে আটকাবস্থা থেকে পলায়নকালে পেছন থেকে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। বিরোধীরা প্রচার করে তাকে আটক অবস্থায় সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়। শান্তিপ্রিয় লোকরা মনে করেন যে, যে ব্যক্তি রাষ্ট্রকে মানে না, রাষ্ট্রের আইন অমান্য করে আত্মগোপনে থেকে সশস্ত্র আক্রমণে নিরীহ লোক হত্যা, থানা-পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ অস্ত্র লুট, বিখ্যাত রাজনীতিকদের প্রকাশ্যে হত্যা, পাটের গুদামে অগ্নিসংযোগ করে নতুন রাষ্ট্রে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টিতে নিয়োজিত ছিল তার জন্য আইনি সুরক্ষা এতোই কি জরুরি? ২১ বছর দেশের সরকার বঙ্গবন্ধুর প্রতি বৈরী ছিল। এ দীর্ঘ সময় সিরাজ শিকদারের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে কোনো সঠিক তথ্য উদঘাটন করার চেষ্টা কেউ করেছে বলে জানা যায়নি।



কর্নেল তাহেরকে জিয়াউর রহমান ক্যামেরা বিচারের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেন। হাইকোর্টের সা¤প্রতিক বিচারকালে প্রকাশ পায় যে বিচার শুরু হওয়ার আগেই জিয়া তাকে ফাঁসি দিতে মনস্থির করেন। কর্নেল তাহের ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মুখ সমরে তিনি একটা পা হারান। পঙ্গু লোককে ফাঁসির দ- দেয়ার রীতি নেই। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিবরণ কেবল কোর্ট মার্শাল প্রধান ব্রি. ইউসুফ হায়দারের হাতে ছিল। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যদের অভিযোগনামা দেয়া হয়নি। ইউসুফ হায়দার লিখিত ফাঁসির আদেশের ওপর অন্য সদস্যরা কোনো কিছু না দেখেই স্বাক্ষর করেছেন মাত্র। হাইকোর্ট এ ফাঁসিকে ঠা-া মাথার খুন বলে আখ্যায়িত করেছে।



লে. কর্নেল তাহের সম্পর্কে কিছু লোকের ধারণা ক্যান্টনমেন্টে সাধারণ সৈনিকদের গণবাহিনীর নামে উসকিয়ে এক উদ্ভট সেনারাজ কায়েম করার অপপ্রয়াস ছিল দেশ বিরোধী পদক্ষেপ। সেপাই সেপাই ভাই ভাই, সুবেদারের ওপরে অফিসার নাইÑ এই সেøাগান সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা খর্ব করার এক ব্যর্থ অপপ্রয়াস মাত্র। এছাড়া মোশতাকের রক্তাক্ত অভ্যুত্থান মোকাবেলা করে পুনরায় দেশে সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য খালেদ মোশারফের উদ্যোগ কর্নেল তাহেরের হস্তক্ষেপে ভ-ুল হয়ে যায়। তাহের চেয়েছেন ক্ষমতার পাকা ফলটি গণবাহিনীর অপচেষ্টায় তার হাতে এসে পড়বে। কিন্তু সুচতুর জিয়া যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় তাহেরের গুড়েবালি।



বাগেরহাটের লে. কর্নেল মোস্তাফিজুর রহমান পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মুখ্য তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। কী যুক্তিতে জে. জিয়া তাকে তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করেন? সম্ভবত মনের মিলই ছিল এর পেছনে মূল যুক্তি। হতে পারে পাকি সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে উভয়ের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। পাঠকের স্মরণ থাকতেও পারে ঐ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদিদের আন্দোলন দমনে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করা হয়Ñ যার ফলে শ’খানেক কয়েদি নিহত হন।



মুক্তিযুদ্ধকালে জামাত আল-বদর, আল-শামস ও রাজাকার বাহিনী দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে সশস্ত্র সমর্থন জুগিয়েছে এবং নিজেরাও অনেক খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও ধর্মান্তরকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যথার্থভাবে তৎকালীন সরকার জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে। কিন্তু জিয়াউর রহমান জামাতকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেন। ’৭১ সালের সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে জাতিসংঘে বাংলার মুক্তিসংগ্রামের বিরোধিতা করে বক্তব্যদানকারী ঘৃণ্য রাজাকার শাহ আজিজকে তিনি তার প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন।



’৯১-’৯৬ শাসনামলে মোবাইল ফোনে সিটিসেল কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। ঐ কোম্পানির মালিক মোর্শেদ খান চৌ: ঐ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তখন একটি মোবাইল সেটের মূল্য ছিল লাখ টাকার ওপরে আর মিনিট প্রতি ৮/১০ টাকা কলচার্জ আদায় করা হতো। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আরো ৩টি কোম্পানিকে মোবাইল ব্যবসার সুযোগ দিয়ে সিটিসেলের একচেটিয়া বাজার ভঙ্গ করে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি করে। এর ফলে মোবাইল সেটের মূল্য ৩০০০/৪০০০ টাকায় নেমে আসে। সেটের আকর্ষণীয় মূল্য হ্রাস ও কলচার্জ হ্রাসের ফলে এখন একজন দরিদ্র রিকশাচালক ও মোবাইল ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। এমনকি গৃহকর্মী বুয়া মোবাইল ব্যবহার করে থাকে। বিএনপি সরকার প্রদত্ত সুযোগ ব্যবহার করে ঐ কোম্পানির মালিক ৫ বছরে কতো হাজার কোটি টাকা অর্জন করেছে তার হিসাব কে রাখে? এটাকেই বলে অনুপার্জিত আয়। আওয়ামী সরকারের এ সিদ্ধান্তটি অতি জনকল্যাণমুখী। বিএনপি দলীয় ব্যক্তিদের মনোপলি ব্যবসার সুযোগ করে দেয়। আওয়ামী লীগ তার বিপরীতে জনবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দেশের সাধারণ জনতা কিন্তু এ দৃষ্টিভঙ্গিতে বিষয়টি বিবেচনা করে না। সিটিসেলকে বিএনপি সরকার কর্তৃক ৫ বছর একচেটিয়া ব্যবসায় করতে দেয়ার বিরুদ্ধে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারতো অথবা রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন/প্রতিবাদ করতে পারতো। কিন্তু নিশ্চুপ ও নিষ্ক্রিয় থেকে বিএনপিকে ওয়াক-ওভার দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার পরিচয় দিয়েছে। বস্তুত এ দলটি বিএনপিকে ও মোর্শেদ চৌধুরীকে নিরীহ দরিদ্র জনগণকে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বঞ্চিত করার সুযোগ দিয়েছে।



২০০৬ সালের শেষ লগ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজ একটি ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করেন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রণীত ছবিসহ ভোটার আইডি কার্ডের ভিত্তিতে তৈরি ভোটার তালিকাতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভোটার কম পাওয়া যায়। এ বিপুল পরিমাণ ভোটারই মূলত বিএনপি সরকারের ভুয়া ভোটার। এহেন ছলনার জন্য উক্ত এম এ আজিজ ও তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আইনগত ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যুক্তিসঙ্গত ছিল। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি।



ঢাকার রাস্তার পার্শ্বে বিভিন্ন স্থানে বিলবোর্ডে কুরআন শরিফের আয়াত (তর্জমাসহ) শোভা পেতো। ’৭৯ সালে মোরারজী দেশাই এর বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে সরকারি উদ্যোগে শহরের সকল রাস্তা থেকে ঐ সকল আয়াত সংবলিত বিলবোর্ড গায়েব হয়ে যায়। এক রাষ্ট্রপতি আড়াই মাসের মাথায় ঐ দেশী সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করাতে সক্ষম হন। এটা কি আধিপত্যবাদের কাছে মাথা নত করাÑ নাকি কুরআন শরিফের আয়াত গায়েব করা আধিপত্যবাদের কাছে নিজেকে সমর্পণ করাÑ জনগণকে এটা ভেবে দেখতে হবে। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবিধানে বিসমিল্লাহ সংযোজন করেন। আবার তিনিই (বঙ্গবন্ধু কর্তৃক) সংবিধানে নিষিদ্ধ ঘোষিত মদ, জুয়া ও ঘোড় দৌড়ের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। বিসমিল্লাহ সংযোজন করে একদিকে ধর্মানুরাগীদের খুশি করেনÑ অপরদিকে মদ্যপ ও জুয়াড়িদের সমর্থনও আদায় করে নেন। ধর্মের বেশধারী রাজনীতিকরা যেন “মিসিং দি উড ফর দি ট্রি” প্রবাদের শিকার।



আধুনিক রাজনীতিতে ধর্ম যার যার কিন্তু রাষ্ট্র সবার। তাই ব্যক্তিগতভাবে ধর্মের অনুরাগী হয়েও আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীরা মানবতাবাদী, প্রগতিশীল ও অসা¤প্রদায়িক রাজনীতির ধারক। অপরদিকে বিএনপি-জামাত-হেফাজত এখন নারী বিরোধী, প্রগতি বিরোধী, উন্নয়ন বিরোধী, ১৩ দফায় একাকার হয়ে গেছে। তেঁতুল ও লালা তত্ত্বের আবিষ্কারক আহমদ শফী এখন তাদের ধর্মীয় গুরু। ঐ গুরু নারীকে অবরোধবাসিনী হতে নসিহত করে। আবার বেগম জিয়ার রাজনীতিতে হাওয়া দিয়ে ক্ষমতার কিছু উচ্ছিষ্ট ভোগ করতে আগ্রহী। উল্লেখ্য, হেফাজতের পরিচালনা কমিটির ৪ জন ব্যতীত বাকি সবাই জামাতি।



বিএনপি সেনাবাহিনী যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেবে বলে নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে, ওয়াশিংটন টাইমে কলাম লিখে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহারের জন্য মার্কিন সরকারকে পরামর্শ দেয়, জামাত-শিবিরের দেশবিরোধী কর্মকা-ের সমালোচনার পরিবর্তে পুলিশ বাহিনী গণহত্যা করেছে বলে সরকারের নিন্দা জানায়। তারা কি চায় যে জামাত-শিবির থানা ও ফাঁড়ি লুট করবে, কানসাটে বিদ্যুৎ কেন্দ্র জালিয়ে দেবে, ট্রেনের বগি জ্বালাবে, রেললাইন উপড়ে ফেলবেÑ সরকার তাদের নাত-জামাইয়ের আদর সম্ভাষণ করবে?



হাওয়া ভবন একদিকে ছিল সমান্তরাল বা বিকল্প সরকারের কেন্দ্রবিন্দু। সরকারদলীয় ব্যবসায়ীদের লালন ক্ষেত্র। বৃহৎ ব্যবসায়ী থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের আখড়া। শাহ কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যাকা-ের প্রেরণার উৎস, ২০০১-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী সমর্থক ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের পরিকল্পনাকারী এবং সর্বোপরি ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রধান উদ্যোক্তা। দুর্নীতির মামলা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না বলে ঐ ভবনের কর্তা রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে প্রায় ৬ বছর বিদেশে অবস্থান করছেন। বর্তমান সরকারের আমলে সরকারের কোনো দ্বিতীয় কেন্দ্রবিন্দু গড়ে ওঠেনি। ফলে দুর্নীতি ও অপকীর্তিতে সরকার প্রধান বা তার পরিবারের সদস্যদের জড়িত হওয়ার অভিযোগ নেই।



প্রশাসন দলীয়করণ : ’৭২-’৭৫ সালে আওয়ামী শাসনামলে কেবল ’৭৩ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ব্যাচ বিসিএস ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হয়। ’৭৭ সাল থেকে নিয়মিত প্রতি বছর উক্ত ক্যাডারে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। প্রায় ২ যুগ সময়কাল (’৭৫-’৯৬) আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়। ঐ সুদীর্ঘ সময়ে ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আর যাই হোক আওয়ামী অনুরাগী ছিল না। মনস্তাত্ত্বিকভাবে তারা আওয়ামী বিরোধী শিবিরের লোক। মোনেমি আমলের এনএসএফ সমর্থকদের মধ্যে যারা পরবর্তীতে ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেয় তারা বাংলাদেশ আমলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দাবিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছে। ’৭৭ সাল থেকে প্রশাসনে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়মিতভাবে প্রতিপালিত হয়ে আসছে। তবে ’৯১ সাল থেকে প্রকাশ্যে এই দলীয়করণ ব্যবস্থা পাকাপোক্ত রূপ লাভ করে। ’৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি মন্ত্রিসভার সদস্য কর্তৃক সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ব্যবস্থার প্রচলন করে। আবহমানকাল থেকে জ্যেষ্ঠতা ও কার্যসম্পাদন রেকর্ডই পদোন্নতির ভিত্তি ছিল। সাক্ষাৎকার গ্রহণের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য জ্যেষ্ঠতা ও কর্মদক্ষতা পরিহার করে কেবলমাত্র সুপারিশের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেয়া। এর ফলে কতো দক্ষ ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা যে পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছে তার হিসাব কে রাখে। ’৭৩ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা মুক্তিযোদ্ধা বিধায় আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের দুর্বলতা থাকতে পারে এই আশঙ্কায় ২৫ বছর পূর্তিতে অবসর দেয়ার বিধান প্রয়োগ করে ঐ ব্যাচের অনেক কর্মকর্তাকে অকালীন অবসর দিয়ে বেকারত্বের জীবনে ঠেলে দেয়া হয়। এটা শতভাগ দলীয় করন যা সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য প্রয়োগ করা নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতা।



প্রশাসন দলীয়করণ একটা বড় মাপের দুর্নীতি। এর পেছনে উদ্দেশ্য হচ্ছে দলীয়ভাবে অনুগত কর্মকর্তাদের দ্বারা দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন। প্রশাসন দল নিরপেক্ষ না থাকলে সরকারি সিদ্ধান্তে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়, আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রতিবিম্বিত হয়Ñ প্রশাসন থেকে সততা, ন্যায়তা ও যথার্থতা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দলীয়করণের উপকারভোগী হয় আর সাধারণ লোক হয় বঞ্চিত। অপরদিকে দলীয় প্রীতির সুযোগে কর্মকর্তারাও দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে ডুবে যায়।



কোন দলের সরকারের আমলে ’৯৪ সালে মাগুড়া ও ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়েছিল, কোন দল ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একদলীয় সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করে, কোন দলের সরকার গণঅনাস্থার প্রেক্ষিতে ঐ সালের ৩০ মার্চ তারিখে পদত্যাগ করেছিল, কোন দলীয় প্রধান পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয় এ আপ্তবাক্য আওড়াতোÑ এসব প্রশ্নের উত্তর জনগণকে খুঁজতে হবে। হাওয়া ভবনের মালিক কে? তৎকালীন সরকার প্রধানের সঙ্গে তার সম্পর্ক কি, তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত কাকে ‘ক্লেপ্টোমেনিয়াক’ বলে আখ্যায়িত করে তাকে ভিসা মঞ্জুর না করার জন্য মার্কিন সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠায় মিডিয়ার কলামিস্টরা এসব ব্যাপারে নীরবÑ তাই সত্যের সন্ধানে জনগণকেই ব্রতী হতে হবে।



নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্ন উঠলে ’৭৩ সালের নির্বাচনে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের কথা স্মরণ হয়ে যায়। জাসদের রশীদ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে মোশতাক ভোটে হেরে যায়। তখন হেলিকপ্টারে ব্যালট বাক্স বদলি করে মোশতাকের পরাজয় ঠেকানোর অভিযোগ উত্থাপিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে যতোটুকু জানি তাতে তার জ্ঞাতসারে এমন অপকীর্তি সংঘটন হয়েছিল বিশ্বাস করতে মন চায় না। তাছাড়া ব্যালট বাক্স পরিবর্তনের কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার মশা মারতে কামান দাগার মতো মনে হয়। যাক, অভিযোগ তো উত্থাপিত হয়েছিল। তবে ৪২ বছরের ইতিহাসে এটাই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একমাত্র অভিযোগ।



মাগুড়া ও ঢাকা মহানগরীর ১০ নং আসনে উপ-নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে কেবল হাতেখড়ি-২০০১ সালের শালসা নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের কারণে পুলিশ বাহিনী ও বিএনপি-জামাত কর্মীদের মাধ্যমে আওয়ামী সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বানচাল করেই দলটি ক্ষান্ত হয়নি। ২০০৬ সালের অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের সকল আইনবিধি ও নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে দলীয় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান পদে নিয়োগ দান করার কথাও দেশবাসী ভুলে যায়নি। ভুলে যায়নি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজ কর্তৃক প্রণীত ভোটার তালিকায় এক কোটি তেইশ লাখ ভুয়া ভোটার অন্তর্ভুক্তির কথা তো এসব পদক্ষেপই ক্ষমতায় স্থায়ী হওয়ার বাসনা চরিতার্থ করার চেষ্টা। এ সঙ্গে রাষ্ট্রপতি জিয়ার সেনাপ্রধান থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ক্ষমতার প্রভাব বলয়ে থেকে ’৭৯ সালের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানÑ সর্বোপরি সরকারের ক্ষমতার প্রভাব ও আর্থিক সুবিধাদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল গঠন ও দলের সমর্থক বৃদ্ধি প্রভৃতি পদক্ষেপ সবই একসূত্রে গাথা।



সরকারি দান গ্রহণ করার মধ্যে কোনো রাজনৈতিক কৃতিত্ব আছে বলে জনগণ মনে করে না। অথচ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নৃশংস হত্যাকা-ের পর তার দলীয় সরকার সেনাপ্রধানের বাড়িটি (যার বর্তমান মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা) তার পরিবারের অনুকূলে বরাদ্দ করে পরবর্তী সেনাশাসক গুলশানের আরেকটি বৃহৎ বাড়ি ঐ পরিবারকে বরাদ্দ দেয়। ১৯৩৫ সাল থেকে তৎকালীন বাংলা প্রদেশে নির্বাচিত বাঙালি মন্ত্রিসভা সরকার পরিচালনা করে আসছে। এ পরিবারটি ছাড়া আজ পর্যন্ত অন্য কোনো রাজনীতিকের পরিবার সাগ্রহে সরকারি অনুদান গ্রহণ করেছে বলে জানা যায় না। রাজনীতি হলো জনকল্যাণে নিবেদিত পেশাÑ অবশ্য কিছু রাজনীতিকের দুর্নীতির মাধ্যমে বিত্তশালী হওয়ার অভিযোগ আছে। কিন্তু সরকারি অনুদান গ্রহণ রাজনীতিকদের পেশা অবমূল্যায়নের শামিল।সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.