নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুশীল সমাজের কাছে কয়েকটি সহজ প্রশ্ন

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:২৫

যারা এখনো বলে যে তারা ভুল করেনি একাত্তরে, সুযোগ পেলেই যারা আঘাত করে পূজনীয় মিনারে, তাদের কাছে আমার কোনো প্রশ্ন নেই। যারা স্বাধীনতার চেতনায় অর্থাৎ মূলধারা একাত্তরে ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের চার স্তম্ভে বিশ্বাস করে না, যারা জনতার সমষ্টিগত বিশাল ত্যাগে অর্জিত জাতীয়সত্ত্বাকে বিকিয়ে দেয়, তাদের কাছেও আমার কোনো প্রশ্ন নেই। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধীনতা আর স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী, তাদের কাছেই আমার যতো প্রশ্ন। প্রশ্নগুলো সহজ। তবে এগুলোর মাঝেই অন্তর্নিহিত দেশ ও জাতির গভীর ভাবনার বিষয়। শুধুই স্বল্পমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে, প্রশ্নগুলো আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদী ভাবনা হিসেবে। নিচের আটটি প্রশ্ন ও তার তাৎপর্য বোঝার আহ্বান জানাচ্ছি সম্মানিত সুশীল সমাজকেÑ



১. বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে কি জামাত-শিবির তথা স্বাধীনতা বিরোধী পক্ষ (যারা শুধু একাত্তরই নয়, এখনো স্বাধীনতা যুদ্ধে ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী নয়) ক্ষমতায় আসে? ২. বিএনপি-জামাত-শিবির রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে কি স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত হয়? ৩. বিএনপি-জামাত-শিবির ক্ষমতায় এলে কি বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনায় আঘাত আসে? ৪. বিএনপির সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলো কি মৌলবাদী ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী? তারা কি বাংলাদেশকে মধ্যযুগীয সমাজব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিতে চায়? বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ কি তা চায়? ৫. বিএনপি-জামাত-শিবির ক্ষমতায় এলে কি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী অত্যাচারিত ও অকারণে হয়রানির শিকার হয়? ৬. যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচারে বিএনপি শুধুই নীরব নয়, প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে এ বিচারের বিরুদ্ধে। কিন্তু কেন? তবে কি বিএনপি স্বাধীনতার চেতনা তথা মূলধারা একাত্তরের বিরুদ্ধে? ৭. বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে কি রাজাকার-আলবদর তথা যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী হয়? ৮. ধরে নিলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রধান জাতীয় নেতা হওয়ার যোগ্য নন। তবে এটাতো অনস্বীকার্য যে, তার নেতত্বেই বাঙালি জাতি প্রথমবারের মতো এক মঞ্চে শরিক হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। অন্তত সেটুকুর জন্য হলেও তার মৃত্যুর দিনে তিনি তার ন্যূনতম সম্মানটুকুতো পেতে পারেন না! ১৫ আগস্টে বিএনপির ম্যাডাম খালেদা জিয়ার পাতানো জন্মদিনে ঘটা করে জন্মদিন উৎসব করে জাতীয় শোকদিবসের তাৎপর্যকে আন্ডারমাইন করার অপচেষ্টায় বিএনপি এবং এর নেতৃত্বের কী ধরনের মানসিকতা প্রকাশ পায়?



বলার অপেক্ষা রাখে না, উপরের প্রশ্নগুলোর সঙ্গে আমাদের জাতীয় সত্ত্বা ও আত্মমর্যাদাবোধের বিষয়গুলো ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। এবার বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকগুলো দেখা যাক। গত সাড়ে চার বছরে আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সব সিদ্ধান্তই যে সঠিক হয়েছে তা নয়। সঠিক হলে হয়তো উন্নয়নের ধারা আরো গতিশীল হতে পারতো। তা সত্ত্বেও গত সাড়ে চার বছরের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নতি কি তার পূর্বের বিএনপির পাঁচ বছরের উন্নতির চেয়ে মন্দ? কিংবা তার পূর্বের ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালের বিএনপির শাসনামলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের শাসনামলের উন্নতির তুলনা করুন! আওয়ামী লীগের শাসনামলের উন্নতির হার কি বিএনপির চেয়ে কম? অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনের মাঝে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। সেই সঙ্গে সামাজিক দিকগুলোর কথা ভাবুন। হেফাজতের নারীবিরোধী দফার দাবির মুখে এক নারীকে স্পিকার করা, স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, ব্যক্তি এবং সংগঠনকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি ও সম্মানে ভূষিত করা, অভ্যন্তরীণ এবং বহির্বিশ্বের শত চাপের মুখেও একের পর এক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির ঘোষণা দেয়া, পূর্বের শাসনামলে (১৯৯৬-২০০১) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর করাৃ এটুকুও করার মতো আর কোনো দল আছে কি এই মুহূর্তে?



তবে এটা সত্য, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছে এর চেয়ে বেশি আশা করে। কোনো সন্দেহ নেই, কয়েকটি ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের কারণে সুশীল সমাজ কিছুটা অসন্তুষ্ট। আগামী নির্বাচনে হয়তো তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বীকে ভোট দেবে। এক দলের কাজে সন্তুষ্ট না হলে অন্য দলকে ভোট দেবেÑ সেটাই স্বাভাবিক। তবে প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামী লীগ হারলে জিতবে কে? সুশীল সমাজের কি তা ভাবনার বিষয় নয়?



তাহলে দেখা যাচ্ছে, বিএনপি-জামাত-শিবির সরকারের, তুলনামূলক বিবেচনায়, না আছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্রেডিবিলিটি; না আছে সামাজিক উন্নয়নের ক্রেডিবিলিটি। তদতিরিক্ত, তারা সেই গোষ্ঠী যারা সরাসরি স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে। তাহলে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সুশীল সমাজের স্বাধীনতা চেতনার বিরোধী পক্ষের পক্ষ নেয়া কি সমীচীন?



আগামী নির্বাচনে যদি প্রগতিশীল সুশীল সমাজের ভোটের বাক্সে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিএনপি-জামাত-হেফাজত আঁতাত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসে, তাহলে কী হতে পারে?



১. সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতারোধী চক্র জেল-ফাঁসির রায় থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে এবং বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য বন্ধ করে দেয়া হবে। এ শুধু কথার কথা নয়। ১৯৭৫ সালে পটপরিবর্তনের পর, ১৯৭৩ সালে সাজাপ্রাপ্ত রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধীদের শুধু ছেড়েই দেয়া হয়নি, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল (অব.) জিয়া আইন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দেন। তার পরবর্তী এরশাদ কিংবা বিএনপি কোনো সরকারই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সত্য কথা যে, তারা নিতেও পারবে না। কারণ, বিএনপি তার জন্মলগ্ন থেকেই প্রমাণ করেছে যে জামাত-শিবির-রাজাকার-আলবদর তাদেরই সহযোগী। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ এবং বহির্বিশ্বের শত চাপের মুখেও আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে এ কাজ একমাত্র তাদের পক্ষেই সম্ভব। ২. দেশের বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে সংবিধানে সংশোধনী এনে ১৯৭২-এর সংবিধানের যতোটুকু কাছাকাছি আনা সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষে, বিএনপি-জামাত-হেফাজত আঁতাত ক্ষমতায় এলে, পুনরায় সেই পুরোনো অবস্থায় ফিরে যাবে। অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে শুরু হবে ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা। ৩. জামাত-রাজাকার তথা যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী হবে এবং তাদের গাড়িতে আবার বাংলাদেশের পতাকা শোভা পাবে। ৪. পূর্বের মতো স্কুলের পাঠ্য পুস্তককে আবার বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধীনতা আর স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের সুশীল সমাজ পুনরায় এসব দেখতে চায়?



অনেকের নিশ্চয় এখনো স্মরণ আছে, ১৯৭৫ সালের প্রারম্ভে বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা! (সেদিনের বাংলাদেশের সেই রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাকশাল পদ্ধতি সঠিক ছিল কি ছিল না, তা এ লেখার বিষয়বস্তু নয়)। সেদিন গণতন্ত্র রক্ষার নামে বাকশাল প্রতিহত করতে গিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ও স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সুশীল সমাজ শুধু পাকিস্তানের আইয়ুবী ধাঁচের স্বৈরশাসনকেই প্রশ্রয় দেয়নি, যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতার বিরুদ্ধ চক্রকে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের পুনর্বাসনে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, পরবর্তীতে ৮০ ও ৯০ দশকে এই সুশীল সমাজের অনেকেই জামাত-শিবির-রাজাকারদের হাতে প্রকাশ্যে হয়রানি ও অপমানিত হয়েছেন। এমনকি হত্যার হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি শামসুর রাহমান তাদেরই একজন। কবি কি সেদিন বুঝেছিলেন বাকশাল প্রতিহত করার পরিণতি? বাকশাল টিকে থাকলে দেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলতো, তা হয়তো বলা কঠিন, তবে দেশ রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত থাকতো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই অক্ষুণœ থাকতো বাঙালির জাতীয় সত্ত্বা আর আত্মমর্যাদা। সেদিন বাকশাল প্রতিহত করার পরিণতি কী হতে পারে তার ভবিষ্যতবাণী করা সম্ভব না হলেও আজকের চিত্র পরিষ্কারÑ আওয়ামী লীগ হারলে জিতবে স্বাধীনতার চেতনায় অবিশ্বাসী এবং যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী স্বাধীনতা বিরুদ্ধচক্র। তাই সুশীল সমাজকে ভাবতে হবে ভোটের বাক্সে তাদের সিদ্ধান্ত কী হওয়া উচিত!



অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একজন বিশিষ্ট প্রতিনিধি। তিনি শুধু নোবেল লোরেটই নন, আমার জানা মতে, তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষের মানুষ, জাতির স্বার্থে জাতীয় ইস্যুতে তিনি মতামত দেবেন সেটাই আমাদের কাম্য। যেমন কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সময় সরকারের রূপরেখা কেমন হওয়া উচিত তার উপর মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেনÑ ‘নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া নির্বাচনের ফলাফল মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না’। ভালো কথা! একইভাবে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যান্য ইস্যুতেও অধ্যাপক ইউনূস তার বিচক্ষণ মতামত দেবেন জাতি সেটাও আশা করে। তার গড়া গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যের মেজোরিটি নারী। অথচ এই নারী সম্পর্কে মওলানা শফীর কুৎসিত মন্তব্যের উপর অধ্যাপক ইউনূসের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখি না। শুনি না, জাতীয় শোক দিবসে বিএনপির ম্যাডাম খালেদা জিয়ার বানানো ও পাতানো জন্মদিনে ঘটা করে জন্মদিন-উৎসব করে শোকদিবসের তাৎপর্যকে আন্ডারমাইন করার অপচেষ্টার উপর তার মন্তব্য। নারী সম্পর্কে মওলানা শফীর মন্তব্য আর ১৫ আগস্টে বিএনপির ম্যাডামের পাতানো জন্মদিন পালন করা কোনো ব্যক্তিগত অথবা দলীয় বিষয় নয়, এ বিষয়গুলো জাতীয় এবং রাজনৈতিক।



সন্দেহ নেই, আদর্শগত দিক দিয়ে জামাত-শিবির আর তালেবানদের মাঝে তফাৎ অনেক কম, অথবা নেই বললেই চলে। যুদ্ধাপরাধ বিচারের শুরু থেকেই বিচারকার্য বন্ধ করার লক্ষে জামাত-শিবির হরতালের নামে জনজীবনে তালেবানি কায়দায় নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে আসছে। এর উপরও শুনি না অধ্যাপক ইউনূসের কোনো প্রতিক্রিয়া। যুদ্ধাপরাধের বিচারের উপর শুনি না তার কোনো মন্তব্য। অথচ, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মতো শিক্ষাবিদরা যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। বলাবাহুল্য, দলীয় ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন পরিচালনা করার একটি সাংবিধানিক ভিত্তি আছে (সংবিধানে সংশোধনী ও আদালতের রায়), অথচ তার বিরুদ্ধে সমালোচনা করেন অধ্যাপক ইউনূস (পাঠকদের স্মরণ আছে নিশ্চয়ই ২০০৬ এ নির্বাচন সম্পর্কে অধ্যাপক ইউনূস কী বলেছিলেন? ২০০৬ সালে বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার প্রশ্নে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করেছিলÑ তখন অধ্যাপক ইউনূস বলেনÑ ‘সংবিধানের বাইরে কিছু করা যাবে না’ (ভোরের কাগজ)। ব্যাপারটা কেমন যেন ‘যখন যেমন’!)। অন্যদিকে জামাত-শিবির-বিএনপি হরতালের নামে জনজীবনে ধ্বংস ও নৈরাজ্যের সৃষ্টি করার কোনো আইনগত অথবা গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকা সত্ত্বেও শুনি না তার কোনো প্রতিবাদ। কিংবা দেখি না মওলানা শফীর নৈতিকতা ও শালীনতা বর্জিত মন্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া।



দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে অধ্যাপক ইউনূসের গত কয়েক মাসের গতিবিধি দেখে অনেকে অনেক কিছুই ভাবছেন। অনেকের ধারণা তিনি আবার অতীতের মতো দলছুটদের নিয়ে দল করে আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবেন। নতুন রাজনৈতিক দল করে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় গিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়ন সাধন করবেন, তাকে জনগণ স্বাগত জানাবে। তবে দলছুটদের (অতি চেনা মুখ) নিয়ে দল করলে, কতোটুকু গ্রহণযোগ্যতা মিলবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে অধ্যাপক ইউনূসকে। আবার ইদানীং তার কিছু রাজনৈতিক বক্তব্যের সঙ্গে বিএনপি-জামাত-শিবিরের বক্তব্যের মিল দেখা যায়। সেই সঙ্গে তার প্রস্তাব ‘সরকার চাইলে আগামী নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি’, শুনে অবাক হয়েছেন অনেকে। জনগণের প্রশ্নÑ অধ্যাপক ইউনূস কার পক্ষে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান?



অধ্যাপক ইউনূস কিছুকাল যাবৎ দেশে-বিদেশে বিএনপি-জামাতের পক্ষে লবিং করে যাচ্ছেন বলে পত্রপত্রিকায় প্রকাশ। তাহলে কি তিনি সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিএনপিতেই যোগ দিচ্ছেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এই বয়সে নতুন দল করে ক্ষমতায় যাওয়া অধ্যাপক ইউনূসের জন্য পাহাড় ঠেলার সামিল। তাই বিএনপি-জামাত-শিবিরের ওপর ভর করে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হলে মন্দ কিসের? এও কি সম্ভব? অধ্যাপক ইউনূস জীবনে যথেষ্ট পেয়েছেনÑ যশ, প্রতিপত্তি ইত্যাদি। তারপরও স্বাধীনতা যুদ্ধ আর স্বাধীনতার চেতনায় অবিশ্বাসীদের কাছে সব নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে প্রেসিডেন্ট হওয়াটা কি তার জন্য এতোই জরুরি? ‘লিডারশিপ দেখানো’ শুধুই রাজনীতিকদের থেকে নয়, জাতি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের থেকেও আশা করে।



উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী ড. ভূপেন হাজারিকার কথা মনে পড়ছে। তার গানে ধ্বনিত হতো খেটে খাওয়া মানুষের ব্যথা, মানবতার বাণী। সেই ভূপেন হাজারিকা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে যোগ দেন উগ্র হিন্দু ফান্ডামেন্টালিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী বিজেপি দলে (ভারতীয় জনতা পার্টি) শুধুমাত্র প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য। সবার জানা শেষ পর্যন্ত ভূপেন হাজারিকা যে শুধুই ভারতের প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি তা নয়, তিনি হারিয়েছেন লক্ষ-কোটি মানুষের শ্রদ্ধা। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একই পরিণতি হোক, তা নিশ্চয়ই আমাদের কাম্য নয়। অথবা স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধীনতা আর স্বাধীনতার চেতনায় অবিশ্বাসীদের উত্থানে, বুমেরাং হয়ে কবি শামসুর রাহমানের মতো অধ্যাপক ইউনূসও লাঞ্ছিত হোন জামাত-শিবির-রাজাকারদের হাতে, সেও আমাদের কাম্য নয়। ১৯৭১ সালে সকল জাতি গোষ্ঠীর সমষ্টিগত ত্যাগে অর্জিত জাতীয়সত্ত্বাকে সমুন্নত রেখে আমাদের সামনে যেতে হবে। এগিয়ে যাওয়ার সঠিক পথ বেছে নিতে হবে আগামী নির্বাচনে। আমরা কী চাই? ধর্মনিরপেক্ষতা না ধর্মব্যবসা; উদারতা না সংকীর্ণতা, মানবাধিকার না সংখ্যালঘুদের নির্যাতন; চেতনায় প্রগতিশীলতা না পশ্চাৎপদতা; মুক্তিযুদ্ধ না যুদ্ধাপরাধের বাংলাদেশ?



যদি স্বাধীনতা যুদ্ধ, স্বাধীনতা আর স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী সুশীল সমাজের এসবে কিছু যায়-আসে না, তাহলে তাদের কাছেও আমার কোনো প্রশ্ন নেই।

সুত্র

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৬

শফিক আলম বলেছেন: আমরা সবই জানি। চর্মচক্ষে সবই দেখেছি এবং দেখছি। তবে আমরা যেমন অতীতকে সহজেই ভুলে যাই, তেমনি ভবিষ্যতকে অনুমান করতে পারি না। আর সবচেয়ে বড় কথা আমরা কি চাই তা আমরা নিজেরাই জানি না। যে করনে আমরা শুধু এপিঠ-ওপিঠ করতে থাকি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.