নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ একটি মাইলফলক অর্জন করেছে। ওইদিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকাল ৫টায় চলতি সংসদের ১৯তম অধিবেশন বসার সঙ্গে সঙ্গে কার্যদিবসের দিক দিয়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে নবম জাতীয় সংসদ। এর আগে কেবল পঞ্চম জাতীয় সংসদ ৪০০ কার্যদিবস সম্পন্ন করেছিল। ফলে ৩০ সেপ্টেম্বর নবম সংসদের ১৯তম অধিবেশনের ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে কার্যদিবস ৪০১ এ উন্নীত করে সর্বোচ্চ কার্যদিবসের রেকর্ড স্থাপিত হল।
সংসদ সচিবালয় সূত্র অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর প্রথম সংসদের অধিবেশন চলেছিল ১৩৪ কার্যদিবস। ১৯৭৯ সালের ২ এপ্রিল থেকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় সংসদের কার্যদিবস চলে ২০৬ দিন। ১৯৮৬ সালের ১০ জুলাই থেকে ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তৃতীয় সংসদের কার্যদিবস ছিল ৭৫ দিন। ১৯৮৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চতুর্থ সংসদের মেয়াদ ছিল ১৬৮ কার্যদিবস। ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল থেকে ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সংসদের কার্যদিবস ছিল ৪০০ দিন। ১৯৯৬ সালের ১৯ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত ষষ্ঠ সংসদ চলে ৪ কার্যদিবস। ১৯৯৬ সালের ১৪ জুলাই থেকে ২০০১ সালের ১৩ জুলাই পর্যন্ত সপ্তম সংসদ স্থায়ী ছিল ৩৮২ কার্যদিবস। আর ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত অষ্টম সংসদের অধিবেশন বসে ৩৭৩ কার্যদিবস।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, বিশেষ করে সংসদীয় গণতন্ত্রে জাতীয় সংসদ সব কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু হলেও দেশের সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রতিটি সংসদে নানান অজুহাতে বিরোধীদলের সংসদ বর্জন রীতিমতো প্রথায় পরিণত হয়েছে। দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের পর পঞ্চম সংসদে (১৯৯১-১৯৯৫) প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ৪০০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদের বাইরে ছিল ২৬৫ কার্যদিবস। তারা পঞ্চম সংসদে উপস্থিত থাকে ১৩৫ কার্যদিবস। আবার সপ্তম সংসদে (১৯৯৬-২০০১) প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ৩৮২ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদের বাইরে ছিল ২১৯ কার্যদিবস। বিএনপি সপ্তম সংসদে উপস্থিত থাকে ১৬৩ কার্যদিবস। আর অষ্টম সংসদে (২০০১-২০০৬) কার্যদিবস ছিল ৩৭৩ দিন। এই সংসদে ৩৭৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সংসদের বাইরে ছিল ২২৩ দিন; সংসদে উপস্থিত ছিল ১৫০ দিন।
বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা পঞ্চম সংসদে উপস্থিত ছিলেন ১৩৫ দিন আর অষ্টম সংসদে ৪৫ দিন। অন্যদিকে খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সপ্তম সংসদে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২৮ দিন।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, কার্যদিবসের দিক থেকে নবম জাতীয় সংসদ আর অনুপস্থিতির দিক থেকে বর্তমানে বিরোধী দল বিএনপি শীর্ষে রয়েছে। বিএনপির সংসদ সদস্যরা চলতি সংসদের ৪০১ কার্যদিবসের মধ্যে (এই কার্যদিবস আরো বাড়বে) মাত্র ৭৭ কার্যদিবস উপস্থিত ছিলেন। নবম সংসদের চলমান ১৯তম অধিবেশন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সদস্যরা এখন পর্যন্ত যোগদান না করায় বলা যায় নবম সংসদের মোট কার্যদিবস ৪১০/৪১৫; যা-ই হোক বিএনপির উপস্থিতি তাঁরা যদি যোগ না দেয় তাহলে ৭৭ কার্যদিবসেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী পঞ্চম জাতীয় সংসদে মোট ৪০০ কার্যদিবসে আওয়ামী লীগের সংসদে উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির হার যথাক্রমে ১৩৫ দিন ও ২৬৫ দিন। অবশ্য পঞ্চম সংসদেই দেশে মাগুরা উপনির্বাচনে ভোট কারচুপির প্রতিবাদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধীদলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে প্রথমে সংসদে ও পরে বাইরে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। মাগুরা নির্বাচনে ভোট কারচুপির রেকর্ড দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিএনপি সরকার। যা দেশে-বিদেশে প্রবলভাবে নিন্দিত হওয়ার পরও সংসদে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর বেফাঁস মন্তব্যের প্রতিবাদে বিরোধীদল সংসদ থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়। পঞ্চম সংসদে বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ মাত্র ১৩৫ দিন উপস্থিত থাকলেও এই সংসদেই বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ও দক্ষতা দেখিয়েছেন শেখ হাসিনা। পঞ্চম সংসদে সংবিধানের একাদশ ও দ্বাদশ সংশোধনী পাস হয় এবং দুটি সংশোধনীতেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধীদল সমর্থন দেয়।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উপস্থিতি মাত্র ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পুরো পাঁচ বছরে ৩৮২ কার্যদিবসে বিরোধী দল বিএনপি ১৭৫ দিনই সংসদে অনুপস্থিত ছিল। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সপ্তম সংসদে ৩৮২ কার্যদিবসের মধ্যে ২৯৮ দিনই সংসদে আসেন। তাঁর উপস্থিতির হার ছিল ৭৮ দশমিক ১ শতাংশ। সপ্তম জাতীয় সংসদে সর্বোচ্চ উপস্থিতির তালিকায় শেখ হাসিনা ছিলেন সাত নম্বরে। সপ্তম সংসদে সর্বনিম্ন উপস্থিতির বিবেচনায় তৃতীয় ছিলেন খালেদা জিয়া। বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী মাত্র ৩ দিন সংসদে উপস্থিত হয়ে সংসদ সদস্যপদ টিকিয়ে রেখেছিলেন।
২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয় বিএনপি-জামায়াত জোট। সংসদ নেতা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত অষ্টম সংসদে মোট ৩৭৩
কার্যদিবসে ১৯৫ দিন খালেদা জিয়া এবং বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন ৪৫ দিন। এ সংসদে আওয়ামী লীগ ২২৩ দিন অনুপস্থিত ছিল। সংসদ নেতা খালেদা জিয়ার উপস্থিতির হার ছিল ৫২ দশমিক ২৮ শতাংশ।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয় বর্তমানে চলমান নবম জাতীয় সংসদ। যা আগামী ২৪ জানুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে পাঁচ বছর পূর্ণ করবে। বর্তমান সংসদে এখন পর্যন্ত মোট ৪০১ কার্যদিবস সম্পন্ন হয়। (এই কার্য দিবসের সংখ্যা আরো বাড়বে)। এই কার্যদিবসের মধ্যে বিরোধীদলীয় সদস্যরা জাতীয় সংসদে উপস্থিত ছিল মাত্র ৭৭ দিন আর অনুপস্থিত থাকে ৩২৪ দিন। ধারণা করা হয় বিএনপির উপস্থিতির হার আর না বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও অনুপস্থিতির হার নিশ্চিতভাবেই বাড়বে (যেহেতু চলমান সংসদে উপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনা তাদের নেই)। বিএনপির ৭৭ কার্যদিবস উপস্থিতির মধ্যে সংসদের ‘ছায়া প্রধানমন্ত্রী’ খ্যাত বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উপস্থিতির হার ছিল মাত্র ৮ কার্যদিবস; যা অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০ মার্চ সংসদের ১২তম অধিবেশনে যোগ দেন এবং সংসদে তার উপস্থিতির হার এখন পর্যন্ত মাত্র ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ওই অধিবেশনের শেষের দিকে ১৮ মার্চ বিএনপি সংসদে যোগ দিয়েছিল সংসদ সদস্যপদ রক্ষার রেওয়াজের জন্য।
নবম সংসদের প্রথম দিন ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সংসদে ছিলেন খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রপতির ভাষণের প্রতিবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ওয়াকআউট করে সেদিনই। শেষ দিন যোগ দেওয়ার আগে খালেদা জিয়া আগের ৬ দিন উপস্থিতির মধ্যে চার দিনে তিনি সংসদে মোট ৩ ঘণ্টা ২৫ মিনিট বক্তৃতা করেন।
২০০৯ সালে সংসদের আসনবিন্যাস নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে অধিবেশন বর্জন শুরু করে বিএনপি। পৌনে পাঁচ বছরে এ দাবির সঙ্গে যোগ হয় আরো নতুন অনেক দাবি। বিরোধী জোটের সবশেষ দাবি হল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল। বিরোধীদলের দাবি অনুযায়ী তাদের কোনো দাবিই পূরণ হয়নি এখন পর্যন্ত। সাবেক স্পিকার (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট ও বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েও কার্যকর সমাধান দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত হল, যদি রাজনৈতিক দলগুলো সংসদে এসে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করত, সহযোগিতা করত এবং সিদ্ধান্ত নিত; তাহলে তা বড় ধরনের অর্জন হতো। কিন্তু অতীতের মতো একই চিত্র দেখা যাচ্ছে নবম সংসদের বিভিন্ন অধিবেশনেও। বিশেষজ্ঞদের আরো মত হল, এবার সংসদে সরকারদলের প্রধানতম কাজ ছিল বিরোধীদলের উপস্থিতি নিশ্চিত করে সংসদকে কার্যকর করে তোলা। একইভাবে বিরোধীদলের উচিত ছিল জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে অধিবেশনে নিয়মিত যোগ দেওয়া। কিন্তু তা হয়নি; যা গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।
সংসদ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হল, গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হলো ঐকমত্য। কিন্তু ’৯১ এর পর কোনো সংসদেই দু’-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সে ধরণের ঐকমত্য দেখা যায়নি। তবে সংসদ সদস্যদের নিজস্ব সুযোগ-সুবিধা, বেতন, শুল্কমুক্ত গাড়ি ইত্যাদির ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ঐকমত্য প্রবলভাবে দেখা গেছে; যা ভোটারদেরকে ব্যথিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাতিসংঘ বাংলাদেশ মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচন চাইলে নির্বাচনকালীন সরকারপদ্ধতি সম্পর্কে সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে। জাতির স্বার্থে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে আমি যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সাংবিধানিক উপায়েই নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিণœ করুন, সংসদে আসুন, পরিষ্কার করে বলুন কী চান।’
চলতি নবম সংসদের ১৯তম অধিবেশনকেই বলা হচ্ছে চলমান সংসদের শেষ অধিবেশন। এই অধিবেশনে এখনো যোগ দেয়নি বিএনপি। অথচ প্রধানমন্ত্রী দেশে ও বিদেশে বরাবরই বলছেন, সংসদে আসুন, কথা বলুন। সংবিধানের ভেতরে থেকে কীভাবে উদ্ভুত সমস্যার সমাধান করা যায়, তার রূপরেখা দিয়ে সংসদে বিল আনুন। কিন্তু ১৮ দলীয় জোট তথা বিএনপি এর কিছুই করছে না। তাদের একটাই কথা নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।
সম্প্রতি খুলনার জনসভায় খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার একা নির্বাচন করতে চায়। কাউকে সঙ্গে নিতে চায় না। কেননা, পরাজয় হবে জেনে তারা সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকে ভয় পায়।
খালেদা জিয়ার খুলনায় দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মত হলো, খালেদা জিয়া আসলেই চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ একা নির্বাচন করুক। কারণ সব দলকে বাদ দিয়ে একা নির্বাচন করার দুর্নাম বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আছে। বিএনপি ১৯৯৬ সালে এবং জাতীয় পার্টি ১৯৮৮ সালে কোনো দলের অংশগ্রহণ ছাড়া ভোটারবিহীন নির্বাচন আয়োজন করেছিল এবং ধিক্কৃত হয়েছিল। বলা বাহুল্য, ওইসব নির্বাচনে গঠিত সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচনে দল দুটির একটিও ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ১৯৮৮ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন করে এরশাদকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল, জেলে যেতে হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করে বিএনপিকে জনগণ দ্বারা ধিক্কৃত হয়ে পরবর্তীতে তাদেরকে বিরোধীদলে যেতে হয়েছিল। তাই বিএনপি এখন চাচ্ছে, আওয়ামী লীগও একা একটা নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা লাভ করুক। আওয়ামী লীগ যদি একা নির্বাচন করে তাহলে তারাও দেশে-বিদেশে সমালোচিত হবে। বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির কাতারে সামিল হবে। তাই তারা নির্বাচন প্রশ্নে সংসদের ভিতরে বা বাইরে কোথাও আলোচনা করতে চাচ্ছে না।
তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশ্নে বিএনপি যে সংসদে কোনো আলোচনা করতে চাচ্ছে না, তার উদাহরণ দলটি নিজেই সম্প্রতি তৈরি করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বিএনপি দলীয় সাংসদ ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নবম সংসদের ১৮তম অধিবেশনে একটি মুলতবি প্রস্তাব সংসদে জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই প্রস্তাবটি পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনার নোটিশটি ব্যারিস্টার খোকনের ব্যক্তিগত, এটি দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল না।
এই প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে আন্দোলন করবে; কিন্তু সংসদে কোনো আলোচনা করবে না। তারা যদি সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মনোভাব পোষণ করত; তাহলে প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করতো না। প্রস্তাবটি প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তারা আরো বলেছে, যেহেতু সংসদে তাদের আসন খুব কম আওয়ামী লীগের রয়েছে দুই তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা সেহেতু সংসদে প্রস্তাবটি নিশ্চিতভাবে বাতিল হয়ে যেত।
প্রস্তাবটি বাতিল করে না দিয়ে তার সঙ্গে আরো কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে উদ্ভুত পরিস্থিতির সুরাহা করার কোনো সুযোগ বিএনপি সরকারি দল আওয়ামী লীগকে দেয়নি। এ জন্যই দেয়নি যে, প্রস্তাবটির আলোকে যদি তত্ত্বাবধায়ক না হোক; অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়ে সংসদের ভেতর থেকে একটি সমাধান বেরিয়ে আসে, তাহলে সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে যাবে। আওয়ামী লীগ সর্বাবস্থায় জাতীয় সংসদকে গুরুত্ব দেয় এ বিষয়টি জনগণের কাছে যাতে পরিষ্কার না হয় এবং আওয়ামী লীগকে যাতে একটি একদলীয় নির্বাচনের ফাঁদে ফেলা যায় সেই দুরভিসন্ধিতেই বিএনপি সংসদে প্রস্তাব দিয়েও প্রস্তাবটি ফেরত নিয়ে নেয়। আর এ থেকেই বোঝা যায় সংসদ ও সংসদে অংশগ্রহণের পেছনে ১৯৯৬ সাল থেকেই দলটির মধ্যে যে অনীহা কাজ করছে তার বিন্দু পরিমাণ ছেদ ঘটেনি আজও।
নবম জাতীয় সংসদের ১৯টি অধিবেশনে বিএনপি সংসদে উপস্থিত থেকেছে মাত্র ৭৭ দিন। গড় হিসেবে প্রতি অধিবেশনে ৪ দিন। এটা কোনো অবস্থাতেই একটা গণতন্ত্রমনা বিরোধীদলের কাছ থেকে জনগণ আশা করে না। জনগণ একজন প্রতিনিধিকে ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করার জন্য নির্বাচিত করেন না। সংসদে গিয়ে কথা বলার জন্য এবং তাঁর জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়নের অভিপ্রায়ে একজন ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি বানিয়ে সংসদে প্রেরণ করেন। অথচ সেই সাংসদ যদি পাঁচ বছর নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, সুযোগ-সুবিধা, ভাতা, গাড়ি-বাড়ি রক্ষার জন্য ও সদস্যপদ বাঁচানোর জন্য মাঝে মাঝে সংসদে হাজির হন; তাহলে জনগণের প্রতি সাংসদের শ্রদ্ধাবোধ রইল কোথায়? সে সরকারি দলের সাংসদই হোক কিম্বা বিরোধীদলের।
প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘বিএনপি নির্বাচন চাইলে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে। জাতির স্বার্থে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে তিনি যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।’ এই স্পষ্ট বাক্য উপলব্ধিতে নিতে হবে ১৮ দলীয় জোটকে। জাতির স্বার্থে, দেশ ও জনগণের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী যদি ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন তাহলে একই স্বার্থে বিরোধী দলকেও সংসদে যেতে হবে, নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করতে হবে। বিরোধীদল প্রস্তাব উত্থাপন না করে যদি মনে করে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করবে; তাহলে সংসদে না যাওয়ার জন্য আন্দোলনকারী খুঁজে পাওয়াটা তাদের জন্য কষ্টকরই হয়ে দাঁড়াবে। কারণ মাগুরা উপ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ যে আন্দোলন জমিয়ে তুলতে পেরেছিল, সেই ধরনের উদাহরণ কিন্তু বিএনপির হাতে নেই। সুত্র
©somewhere in net ltd.