নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
পুরোপুরি এক দশকের ব্যবধান। ২০০৩ সালের আগস্ট মাসে প্রথম আলোতে ছাপা হওয়া লেখা রিপোর্টের শিরোনাম ছিল ‘যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ অক্টোবরে শুরু হচ্ছে’। সেই ফ্লাইওভার অবশেষে উদ্বোধন হচ্ছে আগামী শুক্রবার ১১ অক্টোবর। এই ফ্লাইওভারের নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফের নামে নামকরণ করা হয়েছে। মোহাম্মদ হানিফ ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ছিলেন। যথার্থ নামকরণ হয়েছে। মেয়র হানিফের সময় রাজধানীর তিনটি আন্ডারপাস আর বেশকিছু ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ হয়েছিল। ঢাকাইয়া হানিফ নিজের শহরকে তথাকথিত তিলোত্তমা নয়, বরং নগরবাসীর জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় এক রাজধানী উপহার দিতে চেয়েছিলেন। এজন্য রাজধানী ঢাকার জন্য মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্টের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি। এখন অবশ্য দুভাগে ভাগ করা হয়েছে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে। আর গত দুই বছর যাবৎ রাজধানীতে নেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মেয়র নামের জনপ্রতিনিধিরা। রাজধানীর উন্নয়নে হাতিরঝিল, কুড়িল ফ্লাইওভার, মিরপুর ফ্লাইওভার, বনানী ওভারপাস আর সর্বশেষ মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার করার উন্নয়নের দাবিদার মহাজোট সরকারের নেতারা কী জবাব দেবেন সেই প্রশ্নের, কেন নগর ভবনের সেবা থেকে বঞ্চিত নগরবাসী। একটি জন্মসনদ বা নাগরিকত্বেও সনদ নিতে কেন ভোগান্তিতে আছেন রাজধানী ঢাকার মানুষ।
২০০৩ সালে ঢাকার মেয়র ছিলেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। তখন ফ্লাইওভার নিয়ে তার আশাবাদ ছিল ‘শুধু যানজট নিরসনই নয়, ফ্লাইওভার হলে ঢাকার পার্শ্ববর্তী ৫০ কিলোমিটার এলাকার মানুষ প্রতিদিন ঢাকায় এসে কাজ করে আবার নিজের এলাকায় ফিরে যেতে পারবেন।’ এরপর আরো তিন বছর বিএনপি এবং তারপরে আরো দুবছর মেয়র হিসেবে সাদেক হোসেন খোকা নগর ভবনে ছিলেন। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফ্লাইওভার করার সিদ্ধান্ত বাতিল করেছিল। ফলে নিজের বক্তব্যকে বাস্তবে রূপান্তর করতে পারেননি মেয়র খোকা। কিন্তু সাবেক একজন মেয়রের নামে এই ফ্লাইওভারটি বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা সিটি করপোরেশন। আর দেশের প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় ১১ কিলোমিটারের এই আধুনিক উড়াল সড়ক নির্মাণের কৃতিত্ব নিয়ে নিজেদের সাফল্যকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেলো ওরিয়ন গ্রুপ।
২০০৩ সালে যখন ফ্লাইওভারের প্রাথমিক পরিকল্পনা হচ্ছিল তখন মূল ফ্লাইওভারের আয়তন ছিল চার কিলোমিটার, আর র্যাম্পসহ তা ছিল সাত কিলোমিটার। ফ্লাইওভারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রায়ই বলেন এই ফ্লাইওভারটি হলো শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ইচ্ছাতেই। বলা যায় তিনিই নতুন ফ্লাইওভারের নকশাকারও। কারণ প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী বারবার নকশা বদলেছে। অনেকেই বলতে পারেন এটা হয়তো প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্যই একজন ব্যবসায়ীর অতিশয় উক্তি। কিন্তু এটাতো ঠিক যে ২০১০ সালের জুনে শুরু হয়ে তিন বছরের মধ্যেই এতোবড় একটি ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হলো। যে প্রধানমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সেই প্রধানমন্ত্রীই সেটির উদ্বোধন করেন, এমন উদাহরণ কিন্তু আমাদের দেশে খুবই কম। আবারো পুরোনো লেখা থেকে উদ্ধৃত করতে চাই ‘গত ৫ এপ্রিল (২০০৩) প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় আগামী তিন বছরের মধ্যে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে চলতি বছরেই নির্মাণকাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল।’
এই রিপোর্ট করার কথা মাথায় ছিল। তাই যখন ওরিয়ন গ্রুপের কর্মকর্তা খালেদ মাসুদ আমন্ত্রণ জানালেন ফ্লাইওভার পরিদর্শনের তখন একবাক্যে রাজি হলাম। কারণ যখন পুরোদমে চালু হবে হানিফ ফ্লাইওভার তখন অনেকের পক্ষেই বোঝা কঠিন হবে কী কর্মযজ্ঞ তিন বছর ধরে চলেছে প্রকল্প এলাকায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু যেদিন উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন ওই সেতুর ওপর দিয়ে কিছুদূর হাঁটার সৌভাগ্য হয়েছিল। এজন্যই দেশের বৃহত্তম ফ্লাইওভারে হাঁটার সুযোগ ছাড়িনি। সোমবার রাতে ফ্লাইওভারের ওপরে হাঁটা এবং গাড়ি চালিয়ে যাত্রাবাড়ী থেকে মাত্র কয়েক মিনিটে কুতুবখালী থেকে বঙ্গভবনের পাশে এসে নামার সময় সঙ্গে ছিলেন জনকণ্ঠের চিফ রিপোর্টার ওবায়দুল কবীর, যুগান্তরের চিফ রিপোর্টার রফিকুল ইসলাম রতন এবং সমকালের সবুজ ইউনুস। ফ্লাইওভার নির্মাণ চলার কর্মকা- নিয়ে গত তিন বছর গণমাধ্যমে যথেষ্ট আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষদের ভোগান্তি ছিল সাংবাদিকদের এক প্রিয় বিষয়। তারপরও বুধবার রাতে যখন দেখা হলো ওরিয়ন গ্রুপের তরুণ এমডি সালমান করিমের সঙ্গে, তখন তিনি কৃতজ্ঞতাই জানালেন গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি। তার বক্তব্য ‘সাংবাদিকরা রিপোর্ট করা মানেই আমাদের সতর্ক হওয়া। কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ছাড়াই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকায় এমন একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করাটাই ছিল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।’
ফ্লাইওভারে হাঁটতে হাঁটতে জানা গেলো এটি একটি ওয়াটার প্রুফ ফ্লাইওভার, আর এজন্য ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিকতম নির্মাণপ্রযুক্তি। খালেদ মাসুদ জানালেন এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে এই ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় যাতে অচিরেই কোনো যানবাহন না থামিয়েই টোল পরিশোধ করতে পারবে। কুতুবখালী পয়েন্টে নামার সময় দুটি টোল প্লাজা করা হয়েছে উড়াল সড়কের ওপরে যানজট এড়ানোর জন্য। এই ফ্লাইওভার দিয়ে লম্বা ট্রেইলারসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। আমরা যখন সমালোচনা করলাম কেন নীলক্ষেত বা পলাশী এলাকার মানুষ সেখান থেকে ফ্লাইওভারে উঠতে পারবে না, তখন জানানো হলো আসলে নিচে প্রয়োজনীয় জায়গা না থাকার জন্যই এটা করা সম্ভব হয়নি। সবাই টোল বাড়ার আশঙ্কা করছেন। ওরিয়ন গ্রুপ কি নগরবাসীকে জিম্মি করে টোল বাড়িয়ে নিজের মুনাফা বাড়াবে? দ্রুতই জবাব দিলেন সালমান করিমÑ ‘২০০৩ সালের টোল দিয়ে তো ২০১৩ সালের ফ্লাইওভারের খরচ উঠবে না। কিন্তু আমরা মুনাফা না প্রকল্প শেষের বিষয়টিতেই জোর দিয়েছি এতোদিন। এই প্রকল্প নিয়ে নানা কথা নানা সমালোচনা শুনতে হচ্ছে এখনো। নিশ্চয় নগরবাসীর যানজট ভোগান্তি দূর হলে আর তারা যদি উপকৃত হয় তবে সেবার বিনিময়ে কিছু দিতে কেউই কার্পণ্য করবে না বলেই আমার বিশ্বাস।’
দুই হাজার ১০৮ কোটি টাকার খরচ তোলার জন্য এই ফ্লাইওভার ব্যবহারকারীদের টোল দিতে হবে আগামী ২৪ বছর। যানবাহনভেদে এই টোল লং ট্রেইলারের (১৪ চাকার গাড়ি) জন্য সর্বোচ্চ ২০০ টাকা আর মোটরসাইকেলের জন্য সর্বনিম্ন পাঁচ টাকা টোল দিতে হবে। চার লেনের এই উড়াল সড়কে ছয়টি প্রবেশ ও সাতটি বেরোনোর পথসহ মোট ১৩টি রেম্প থাকার কথা। তবে যে তিনটি রেম্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি সেগুলো হচ্ছে সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা ও ডেমরামুখী তিনটি রেম্প।
ওরিয়নের কর্মকর্তা খালেদ মাসুদ আমাদের আশ্বস্ত করলেন নির্মাণকাজের নির্ধারিত সময় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজ শেষ হবে। আমরা আশা করছি ওরিয়ন গ্রুপ যে কষ্টসাধ্য পরিশ্রম করে যেভাবে এতোদূর এসেছে, তারা অবশ্যই তাদের কমিটমেন্ট রক্ষা করবে। কারণ রাজনৈতিক কারণে কিছুটা অসম্পূর্ণ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উড়াল সড়কের উদ্বোধন করলেও নিশ্চয় এটা অসম্পূর্ণ অবস্থায় ব্যবহার অনুপযোগী থাকাটা রাজধানীবাসী মেনে নেবে না। এটা জেনেছি যে প্রথম থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে নানা অনিশ্চয়তা ছিল। নানা রাজনৈতিক মুখরোচক কথাও শুনেছি। এমনকি গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় ফ্লাইওভারের উদ্বোধন নিয়ে নানা কথা হয়েছে।
আমরা আশা করি সব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার রাজধানীর যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সোমবার রাতে ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান আশ্বাস দিলেন এবার ঈদের মধ্যে যদি কিছু মানুষও যাত্রাবাড়ীর যানজট এড়িয়ে গুলিস্তান যেতে পারেন ফ্লাইওভার ব্যবহার করে তাহলে সেটাও অনেক খুশির বিষয় হবে তাদের কাছে। আমরা চাই মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে শুধু রাজধানীবাসী নয় পুরো দেশবাসীই খুশি হোক।
সুত্র
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭
ডাক্তার আমি বলেছেন: যানজট দূর হলেই হল ....