নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশ এক সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। দুই রাজনৈতিক দলের বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে দেশের মানুষ এক অজানা আশঙ্কা নিয়ে দিনাতিপাত করছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। দশম সংসদ নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে। ২৪ অক্টোবরের পর কী ঘটবে? তাই নিয়ে জনগণের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি উপযুক্ত সময়ে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়েছেন। তাঁর এ বক্তৃতার ভেতর দিয়ে নতুন দিকনির্দেশনা পাওয়া গেল। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তৃতাকে ১৭টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। শুরুতেই তিনি পবিত্র ঈদ-উল-আযহা ও শারদীয়র শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দেশবাসীকে। মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতা, বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দেয়া বীর শহীদ ও নির্যাতিত মা-বোনদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন তিনি। বলেছেন তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের চেষ্টার কথা। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গণতন্ত্রকে একটি সুদৃঢ় এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর। গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হবে, যখন তা সাংবিধানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।’
এক-এগারোর দুঃসহ স্মৃতির কথা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘২০০৭ সালের ১/১১ এর মতো কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে যখন জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের বুকের ওপর চেপে বসে, তখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-ছাত্র-পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ সবার ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। এ ধরনের অসাংবিধানিক শাসনের পুনরাবৃত্তি আর কখনই হবে না, এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা।’
তাঁর সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি। ছয় সিটি কর্পোরেশনে পানির সমস্যা সমাধান, যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছেন। দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের কথাও স্থান পেয়েছে তাঁর বক্তৃতায়। তিনি বলেছেন, বিদ্যুত সঙ্কট সমাধানের কথা।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলছে। মানুষের মাথাপিছু আয় ১০৪৪ ডলারে উন্নীত করেছি। প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের ওপরে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। মূল্যস্ফীতি ১১ ভাগ থেকে কমিয়ে ৭-৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বকালের রেকর্ড অতিক্রম করে বর্তমানে ১৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’ সমুদ্র বিজয়ের যে বিপুল অর্জন, সে কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি তাঁর বক্তৃতায়।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা ছিল বহির্বিশ্বের। সে কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে যে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদের কারণে নিন্দিত ও সমালোচিত হতো, লজ্জায় আমাদের মাথানত হয়ে যেত, সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারাবিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে।’
দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। কঠোর হাতে জঙ্গীবাদ দমন করেছি, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করেছি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি। দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালীরা এখন মাথা উঁঁচু করে মর্যাদার সঙ্গে চলতে পারেন।’
কিছুদিন আগে বিরোধী দল তথা বিএনপির এক শীর্ষনেতা দা-বটি-কুড়াল নিয়ে মানুষকে মাঠে নামার জন্য উস্কানি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় সে প্রসঙ্গও উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ছুরি, দা, কুড়াল নিয়ে মানুষ মারার নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য আমি বিরোধীদলীয় নেতার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। শান্তি ও ঐক্যের পথই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। জনতার ওপর আস্থা রাখুন, সন্ত্রাসের পথ পরিহার করুন। আপনারা কী চান, তা সংসদে এসে বলুন। আলোচনা করুন। আলোচনার দরজা সবসময় আমাদের পক্ষ থেকে উন্মুক্ত আছে।’
কী নিয়ে আলোচনা হবে? বর্তমান সময়ে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে যে ইস্যুটি তা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড়। সরকারী দল চায় সংবিধানের বিধান মেনে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে। তাঁর বক্তৃতায় নির্বাচন সম্পর্কিত সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথাও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাতে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, সরকার আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংবিধানের ৭২-এর ১ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘সংসদের এক অধিবেশনের সমাপ্তি ও পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ৬০ দিনের অতিরিক্ত বিরতি থাকিবে না।’ এখানে আরও উল্লেখ আছে যে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফার (ক) উপধারায় উল্লিখিত ৯০ দিন সময় ব্যতীত অন্য সময়ে।’
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয় উল্লেখ আছে, ‘৩-এর (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে এবং (খ) মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্যকোন কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
এই সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে জাতির উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে। ২৫ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের হিসাব শুরু হবে।
সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের ১ দফা অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া লিখিত পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ৯০ দিনের মধ্যে যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সে জন্য আমি সব দলের সঙ্গে, বিশেষ করে মহাজোটের সঙ্গে পরামর্শ করে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে যথাসময়ে লিখিত পরামর্শ দেব। এক্ষেত্রে আমি বিরোধী দলের কাছেও পরামর্শ আশা করি।
গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় আস্থা আছে। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ গণতন্ত্রের মানসকন্যা তিনি। জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তাই আমরা পাই গণতন্ত্র সুসংহত রাখার আকুতি। নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে বিরোধী দলকে তিনি আহ্বান করেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শরিক হতে। তাঁর বক্তৃতায় যেমনটি শুনতে পাই, ‘আমরা সব দলকে সঙ্গে নিয়েই জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই। বিরোধী দলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন আমরা সব দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।সুত্র
©somewhere in net ltd.