নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ধ্বংসের দায় কার?

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:০৭

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমাদের বিরোধী রাজনীতিকরা এবং অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিগত কয়েকটি নির্বাচনে কিভাবে বিবর্তিত এবং প্রয়োগ হয়েছিল সে ব্যাপারে স্মৃতিবিভ্রাট বা স্মৃতিভ্রমে ভুগছেনে। তাদের বক্তব্যে বা পর্যালোচনায় মনে হচ্ছে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল হঠাৎ করেই বর্তমান সরকার সেটাকে সংবিধান থেকে সরিয়ে ফেলেছে। এ বক্তব্যের অর্থ এ নয় যে, আমি এ পরিবর্তনকে সমর্থন করছি।

আসলে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী যখন আনা হয় তখন ঢাকার ডেইলী স্টারে ‘একটি আত্মঘাতী সংশোধন’ শিরোনামে আমি আমার লেখা নিবন্ধে সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী সংবিধান থেকে ছেঁটে ফেলার সমালোচনা করেছিলাম। অবশ্য এ ব্যাপারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের বাইরেও সরকারের সিদ্ধান্তকে বিচার করার সময় কি কারণসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেটা ধর্তব্যের মধ্যে না আনলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে।

স্মৃতির পাতা কিছুটা সতেজ করলে দেখা যাবে মাগুরা উপনির্বাচনে চরম কারচুপির কারণে আওয়ামী লীগের সর্বাত্মক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে এ ব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেটার নেতৃত্বে ছিলেন বিচারপতি মুহম্মদ হাবিবুর রহমান। তাঁকে একজন দলীয় রাষ্ট্রপতির অধীনে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল এবং দুর্ভাগ্যক্রমে সে অভিযাত্রা খুব একটা মসৃণ ছিল না। তাঁর বিজ্ঞতা সেসময় জাতিকে এক রাজনৈতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছিল এবং তিনি মোটামুটিভাবে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পেরেছিলেন।

ঠিক একইভাবে ১৯৯১ সালে তাঁর উত্তরসূরি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ, যদিও এক ভিন্ন সাংবিধানিক ব্যবস্থার মাঝে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, বিচারপতি আব্দুর রউফ নামে একজন চরম দলীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও একই ধরনের একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করতে পেরেছিলেন।

এই রউফ সাহেব এমনই একজন নৈতিকতা বিবর্জিত ব্যক্তি যে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতির বাইরেও এমন ধরনের একটি গুরত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে যিনি নিয়োজিত ছিলেন, তিনি বেগম জিয়ার তথাকথিত জন্মদিন পালনের ধিকৃত অনুষ্ঠানে কোন বছরই অনুপস্থিত থাকেন না।

আগের দু’টো তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়ে সর্বস্তরের জনগণের প্রশংসা অর্জন করতে পেরেছিলেন, তেমনটি অর্জন করতে পারেনি বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রথম থেকেই বিতর্কে পতিত লতিফুর রহমান সরকারের শেষ অবধি সে বিতর্ক থেকে মুক্ত হতে পারেনি। যদিও ঐ নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি।

কিন্তু লতিফুর রহমানের কার্যাবলী বিএনপি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আর সে আলোকে তারা পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়োগে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর না করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ওই লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন করে, যা তাদের নিজস্ব দলীয় এক প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে। অতএব বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী যখন বলেন, ‘আপনি বিচারপতি হাসানকে মানেননি, আমরাও আপনাকে মানব না’Ñ এটা যুক্তিপূর্ণ নয়। যেহেতু বিচারপতি হাসান স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হওয়ার প্রার্থী ছিলেন না; তাঁকে এক অসৎ উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ঐ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল।

এরপর যা কিছ ঘটল সেটাকে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বললে কম বলা হয়। সংবিধানের একটা নয়; তিনটা ধারা লঙ্ঘন করে সেদিনকার প্রধানমন্ত্রীর বশংবদ রাষ্ট্রপতি (অধ্যাপক বিডি চৌধুরীকে অসাংবিধানিকভাবে বঙ্গভবন থেকে বিতাড়িত করার পর যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল) অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। সেদিনের রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষ তাঁকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করে তাঁদের রাষ্ট্রনায়কসূলভ আচরণের মাধ্যমে তাঁকে তাঁর নিরপেক্ষতা প্রমাণের সুযোগ প্রদান করেন। কিন্তু তাঁদের প্রত্যাশাকে পূরণ করার পরিবর্তে তিনি কুখ্যাত ‘হাওয়া ভবনের’ নীলনকশা বাস্তবায়নে একের পর এক যড়যন্ত্র লিপ্ত হন।

ক্ষুব্ধ রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কোন দেশের বিচার পাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল উচ্চ আদালতে অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিনের সংবিধান ভঙ্গ করে নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে ঘোষণার বিরুদ্ধে রিট করে। বিধি মাফিক শুনানির পর উচ্চ আদালত যখন রায় দেয়ার জন্য প্রস্তুত, তখনই সেদিনের এ্যাটর্নি জেনারেল এবং আজকের বিএনপিপন্থী আইনজীবী প্রধান বিচারপতির দ্বারা সাদা কাগজের চিরকুটে লেখা এ রায় দেয়া স্থগিতাদেশ নিজে রায় দানের জন্য প্রস্তুত বেঞ্চে বহন করেন। এদেশের আইন প্রক্রিয়ার ঘটনাপঞ্জিতে এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। অতএব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৌলিক নিরপেক্ষতার ধারণাকে যিনি ইয়াজউদ্দিন পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে সমূলে ধ্বংস করেছেন তিনি, অন্য কেউ নন।

তিনি হলেন আজকের জোরগলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্প্রবর্তনের দাবিদার বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বয়ং। পরিশেষে ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘দেশনেত্রীর’ সে সময়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার সমস্ত ষড়যন্ত্রকে বিকল করে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দেন এবং যার মাধ্যমে বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। বর্তমান বিএনপি নেত্রী যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য দেশকে অচল করে দেয়ার ব্রতে ব্রতী হয়েছেন, সে ব্যাপারে আলোচনা করতে গেলে উপরোক্ত তথ্যগুলো জাগ্রত করা অবশ্য প্রয়োজনীয়। ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ পরিচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক পরিচালিত নির্বাচনের মাধ্যম্যেই আন্তর্জাতিক পরিম-লে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, যেটা কিনা বেগম জিয়া নির্দেশিত ইয়াজউদ্দিন সরকার ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছিল।

উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইদানিং দেয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবকে অবশ্যই অভিহিত করতে হবে ইতিবাচক এবং গঠনমূলক হিসেবে। এ প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করার কোন উঁচু নৈতিক অবস্থান বিএনপির নেই; বরঞ্চ এটাকে গ্রহণ করার মাধ্যমেই কোন মধ্যবর্তী অবস্থানে আসা সম্ভব।

হাওয়া ভবন পরিচালিত ইয়াজউদ্দিন সরকারের সময় যে অন্ধকার অবস্থা বিদ্যমান ছিল সে তুলনায় বর্তমান অবস্থা অনেক আশাপ্রদ বহুবিধ কারণে। প্রথমত দেশের ইতিহাসে এটাই প্রথম যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে সকল দলের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে। আজিজ গংয়ের দলীয় কর্মীর মতন কাজ করার বিপরীতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা অত্যন্ত নিরপেক্ষতার সঙ্গে নিজেদের এবং পাঁচ হাজারেরও অধিক নির্বাচন পরিচালনা করেছেন। এটা অবশ্যই বর্তমান সরকারের এক বড় অর্জন।

নির্বাচন কমিশন অবশ্যই সব ব্যাপারে সমালোচনার উর্ধে ছিল না, কিন্তু সে সমালোচনা কোন দলীয় আনুগত্য প্রদর্শনের কারণে হয়নি। দ্বিতীয়ত আওয়ামী লীগ নিয়োজিত কোন সিইসি এখন পর্যন্ত অসম্মানজনকভাবে বিদায় নেননি এবং বর্তমান সিইসি যে তার ব্যতিক্রম হবেন না, সে আশা না করার কোন কারণ নেই। তৃতীয়ত বর্তমানে প্রত্যেক ভোটারেরই আইডি কার্ড রয়েছে এবং ভোটার তালিকায় ১ কোটি ২০ লাখ বা সে ধরনের কোন ভুয়া ভোটার নেই। চতুর্থত প্রধানমন্ত্রীর পদ বাদ দিয়েও বিএনপি দরকষাকষির মাধ্যমে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পেতে পারে যেটা যে কোন ধরনের নির্বাচন কারচুপি প্রতিহত করার জন্য দৃঢ় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে। পরিশেষে দেশের অতিস্বাধীন সংবাদ মাধ্যমের বিদ্যমানতায় যাদের বেশিরভাগই সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়, মাগুরা বা ঢাকা-১০ আসনের মতো নির্বাচন করা কল্পনাতীত।

ঐতিহাসিকভাবে এটা হয়ত সত্য যে কোন দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। অবশ্য এটাও সত্য যে আওয়ামী লীগ কোন সময়ই ঐ ইতিহাসের অংশ ছিল না। সুত্র

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৭

পুলক ঢালী বলেছেন: আপনি সুন্দরভাবে ইতিহাস টেনে এনে বর্তমানকে ব্যখ্যা করেছেন । আসলে ভুলে যাওয়া মানসিকতা সম্পন্ন এ দেশের মানুষ ভুলেই গেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবী কেন উঠেছিলো ? এব্যপারে বিএনপি ১০০% দায়ী । তারা মাগূরা টাইপ নির্বাচন করে নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধংস করে দিয়েছিলো । ফলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবী সামনে চলে আসে । আবার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে ওরাই কলুষিত করেছিলো । আসলে সুস্থ্য পদ্ধতি বিএনপি কখনই অবলম্বন করেনি ৯০ সালের আন্দোলনের পর বিএনপি ক্ষমতায় এসেই এরশাদ বিরোধী ৩ জোটের রূপরেখা ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো । এগুলো না করে সঠিক ও সুস্থ্য ভাবে দেশ পরিচালনা করলে বিএনপি অনেক অনেক ভালো অবস্থানে থাকতো ।গনতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রকে মোকাবেলা করার জন্য শক্তিশালী বিরোধীদল থাকা প্রয়োজন তাহলে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলকে স্বেচ্ছচারিতা থেকে বিরোধীদল বিরত রাখতে পারে । জিয়াউর রহমান যে ভুল করে জামাতের রাজনিতি বৈধ করেছিলেন জামাতকে প্রশ্রয় না দিয়ে সেই ভুল বিএনপি সংশোধন করতে পারতো কারন সেই সময় বিএনপির রাজনিতির জন্য জামাত অপরিহার্য ছিলোনা । কিন্তু আমলা নির্ভর হালুয়া রুটি খাওয়া রাজনিতিবিদদের দ্বারা পরিচালিত বিএনপি জনগনের সঠিক প্রত্যাশা কখনোই পূরন করতে পারেনি । জিয়া মুক্তিযোদ্ধা অথচ বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করে এমন স্ববিরোধীতা সচরাচর দেখা যায়না । আপনাকে ধন্যবাদ ।

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১১

তালপাতারসেপাই বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.