নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল না আতঙ্কের হরতাল?

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫

দেশের মানুষের শান্তি ও অধিকার আদায়ের কথা বলে লাগাতার হরতাল দিচ্ছে বিএনপিÑজামাত জোট। বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করছেন, হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন ও সফল করছেন সাধারণ মানুষ। সত্যি নাকি? দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে চাইÑ এ দেশে হরতালের সমর্থক সাধারণ মানুষ একজনও নেই। যেখানে সমর্থনই নেই, সেখানে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের প্রশ্নই আসে না। যারা হরতালকে সমর্থন করেন তারা সাধারণ নন। তারা অসাধারণ, আপনাদের কর্মী, সমব্যথী ও সহযোগী। সুতরাং এইসব অসাধারণকে ‘আমজনতা’র সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। আর ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ শব্দটার অপব্যববহার না করার জন্যও অনুরোধ রইলো। বাংলা অভিধানে স্বতঃস্ফূর্ত শব্দের অর্থ দেয়া আছে স্বয়ং প্রকাশিত বা নিজে নিজেই প্রকাশিত। ‘আমজনতা’ তার জানমালের ক্ষতি, সম্পদ বিনাশের কার্যক্রমে কোনোভাবেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে পারে না ।

হ্যাঁ, এটা সত্য, যখন আপনারা হরতালের ডাক দেন তখন গাড়ি কম চলে, মানুষ কম বের হয়। আপনাদের মনে হতে পারে, গাড়ি বের না করা, দোকানপাট না খোলা, রাস্তাঘাটে কম মানুষের বের হওয়াটা আপনাদের প্রতি ‘আমজনতা’র সমর্থন। কিন্তু ভেবে দেখবেন, আসলেই কি তাই? আপনাদের এই ধারণা কি ঠিক? না, মোটেও ঠিক না। খবর রাখেন কি, আপনাদের শান্তি ও অধিকার আদায়ে ঘোষিত হরতাল কর্মসূচির কারণে গেলো ৮৪ ঘন্টার হরতালে প্রাণ দিতে হয়েছে ৬ জনেরও বেশি মানুষকে। দগ্ধ হয়েছেন ২০ জন ও আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। সহস্রাধিক সম্পদ ধ্বংস করেছে আপনাদের অনুসারীরা? দাবি আদায়ের নামে ঘোষিত কর্মসূচিতে সংগঠিত সহিংসতায় জীবন-মৃত্যুর সাথে লড়ছেন খেটে খাওয়া মানুষ, ছাত্র এমনকি কোলের শিশুও। ককটেল আর পেট্রোল বোমার আঘাতে দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুও সাথে পাঞ্জা লড়ছে অনেকই। আমাদের একটাই প্রশ্ন, ক্ষমতা দখলের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় এভাবে আর কতো বলি হবে জনগণ?

জানমালের ক্ষতি তো তাৎক্ষণিক, প্রত্যক্ষ। কিন্তু পরোক্ষ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ২ কোটি শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ার আশঙ্কার কথা বলছে শিক্ষাবোর্ড। সেই সাথে জেএসসি, জেডিসি পরীক্ষা বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় ক্লাস টেস্ট ও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় ফলাফল খারাপ হতে পারে বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা শঙ্কায় আছেন। এভাবে চলতে থাকলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম যে ভেঙ্গে পড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বাজারে কাঁচামালের সরবরাহ কম থাকায় বাড়তি টাকাও গুণতে হচ্ছে আমজনতাকে। শুধু কি কাঁচাবাজারে, অফিস-আদালত খোলা থাকায় যাতায়াত বাবদও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। বাড়তি আতঙ্ক হিসেবে থাকছে জীবনের ঝুঁকি, হতাহত হওয়ার ভয়। কে ক্ষমতায় যাবেন সে লড়াইয়ের চেয়ে নিজের জানমালের নিরাপত্তা ‘আমজনতা’র কাছে বেশি জরুরি। আগে সেটা নিশ্চিত করুন। বেঁচে থাকলেই তো অধিকার। তবেই না সে অধিকার রক্ষার আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ! আগে তো বাঁচতে দিন। তারপর অধিকার আদায়ে সামিল করুন। আর নিজেদের স্বার্থরক্ষার আন্দোলনের নামে যদি আমজনতার জানমালকে পুঁজি করেন, তাহলে প্রশ্ন করবোÑ অনুমতি নিয়েছেন? নিশ্চিত করেছেন, অধিকার আদায়ের প্রাণের আহুতি দিতে জনতা রাজি কি না? প্রমাণ দিতে পারবেন একটা? যদি না পারেন তাহলে বন্ধ করেন এ মৃত্যুর হোলি খেলা।

হরতালে আপনাদের হয়তো জীবিকার প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হয় না, হয়তো আপনাদের সব নেতা-কর্মীর ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা শেষ বা তারা দেশে নেই, হয়তো আপনাদের সবার ফ্রিজে যথেষ্ট পরিমাণ খাবার মজুদ আছে। কিন্তু আমাদের নেই। আমরা অনেকেই দিন এনে দিন খাই। আমরা অনেকেই একদিন অফিসে না আসলে সেদিনের টাকাটা পাই না। আমাদের অনেকেরই ছেলেমেয়ে সবে স্কুল-কলেজে ভর্তি হয়েছে। সুতরাং ১৮ দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ করবো, আপনারা ছাড়া দেশের সব পরিবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য, অর্থ ও বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে তবেই এরপর হরতালের ডাক দেবেন! সবাই যদি ঘরে বসে খাবার পাই, যতোদিন হরতাল, ততোদিন ঘরে বসে থাকার জন্য নগদ টাকা পাইÑ তাহলে কোন দুঃখে ঘরের বাইর হবো। তাহলে দেখবেন রাস্তায় কাকও উড়বে না। জনগণ সত্যিকার অর্থে হরতালে সমর্থন দেবে ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করবে। তার আগে এ ধরণের আত্মঘাতী কমসূচি দেবেন না। সময় থাকতে সাবধান। ঠিক এই মুহুর্তে উচ্চারণটা একার আমার, খেয়াল রাখবেন এটা যেনো দানা না বাঁধে? ওই দগ্ধ হওয়া মুখগুলো আপনাদের কষ্ট না দিলেও আমাদের আত্মাকে ছাই করে দেয়। ছোট শিশুর হারানো চোখ দেখে আপনারা উল্লাস করলেও আমরা মাতম করি, শোকাহত হই। ভেঙ্গে যাওয়া গাড়ি, দোকান-পাট, বাস-ট্রাক-ট্রেনের আগুন, ক্ষত-বিক্ষত করে আমাদের হৃদয়কে, নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি জমে আমাদের। নিত্য সকালের অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক বাধ্য করে আপনাদের বিপক্ষে দাঁড়াতে। ভিন্ন কাতারে নয়, এক কাতারে আসুন। সমব্যথী হোন, সহমর্মিতা দেখান। আমজনতাকে যা দেখাবেন তারই প্রতিপলন পাবেন। মনে রাখবেন ‘পাবলিক সব জানে, হিসেব হবে কড়ায়-গন্ডায়! এখন ‘চয়েজ ইজ ইউর’স? সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.