নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ গ্রহণ করিয়া কোন কোন জায়গায় সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের উপর জুলুম ও নিপীড়ন চালানো হইতেছে ন্যক্কারজনকভাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলি এই ব্যাপারে তাহাদের উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা জানাইলেও দুর্বৃত্তদের বোধোদয় হইতেছে না। কেহ যাহাতে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি নষ্ট করিয়া দেশকে আরও বিপর্যয়ের দিকে ঠেলিয়া দিতে না পারে, সেই ব্যাপারে আমরা প্রথম হইতেই সতর্কতা অবলম্বন করিবার প্রয়োজনীয়তা তুলিয়া ধরিতেছি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী গত মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় দুইটি মন্দিরে হামলা চালাইয়াছে দুর্বৃত্তরা। এই দুইটি মন্দির শাহজাদপুরের পোরজনা ইউনিয়নের জামিরতা উত্তরাপাড়ায় পাশাপাশি অবস্থিত। একটি কালিমন্দির ও অন্যটি হরিমন্দির। মন্দির দুইটি ঐতিহ্যবাহী এবং শত বত্সরের পুরানো। অথচ কে বা কাহারা তাণ্ডবলীলা চালাইয়া এখানকার ১১টি প্রতিমা ভাঙচুর করিয়াছে দুষ্কৃতকারীরা। আগুন দিয়াছে মন্দিরের সেবায়েতের ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে। একই দিন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানাগরের রাজাভুবন শিবমন্দিরে অগ্নিসংযোগ করিয়াছে দুষ্কৃতকারীরা। আগুনে মন্দিরের আসবাবপত্র ও পুরোহিতের ঘরটি পুড়িয়া গিয়াছে। এই দুই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় হিন্দু সমপ্রদায়ের মধ্যে বিরাজ করিতেছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা। তাই এই ধরনের জঘন্য অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করিয়া গ্রেফতার ও আইনের হাতে সোপার্দ করা জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।
উল্লেখ্য, ইহার আগে মন্দিরের পাশাপাশি সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের বাড়ি-ঘরে হামলার ঘটনাও ঘটিয়াছে একাধিকবার। নির্বাচনী বত্সরে আসিয়া এই প্রবণতা বাড়িয়া গিয়াছে উদ্বেগজনকভাবে। সামপ্রতিককালে চট্টগ্রামের রামু বৌদ্ধ মন্দিরেও হামলা চালাইয়া গৌতম বুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। ইহাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় মারাত্মকভাবে। তবে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরসমূহ ইতোমধ্যে পুনঃনির্মাণ করা হইয়াছে। কিন্তু দেশের আনাচে-কানাচে যে সব মন্দির হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে তাহার সংস্কারের খবর তেমন একটা পাওয়া যায় না। এইখানে একটি বিষয় গভীরভাবে লক্ষণীয়, এই বত্সর এই পর্যন্ত এই ধরনের যতগুলি নগ্ন হামলা হইয়াছে তাহার সবই সংঘটিত হইয়াছে গভীর রাতে। ইহাতে বোঝা যায়, দুরাচার মতলববাজদের কর্মকাণ্ড। তবে হামলাকারীদের পরিচয় যাহাই হউক না কেন, তাহাদের মুখোশ উন্মোচন করা একান্ত প্রয়োজন।
অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হইল, মন্দির বা সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের উপর হামলার পর ইহার বিরুদ্ধে যেইভাবে আমাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে আগাইয়া আসা প্রয়োজন, তাহা আমাদের জনসমাজে আর প্রত্যক্ষ করা যাইতেছে না। আবহমান কাল হইতেই বাঙালির সমপ্রীতিময় সমাজ নির্মাণের একটি ঐতিহ্য আছে। কিন্তু এখন তাহাতে কি ফাটল দেখা দিয়াছে? একটার পর একটা এই ধরনের অপকর্ম সংঘটিত হইতেছে, অথচ সম্মিলিত বিবেক জাগ্রত হইতেছে না। এই ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা সবার আগেই প্রশ্নবিদ্ধ। তবে তাহার চাইতে বড় কথা হইল, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কী করিতেছেন? এমন অনেক এলাকায় হামলা হইতেছে, যেখানে সরকারি দলের এমপিরা রহিয়াছেন। কিন্তু আমরা তাহাদেরকে এই ব্যাপারে ভ্রূক্ষেপ করিতে দেখিতেছি না। স্থানীয় বিরোধী রাজনীতিবিদরাও ইহার বিরুদ্ধে সোচ্চার হইতেছে না। আবার দেশে বহু আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ রহিয়াছেন। তাহাদেরকেও আমরা প্রতিবাদমুখর হইতে দেখিতেছি না। কেহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করিয়া মানববন্ধন করিতেছেন এমন দৃষ্টান্তও বিরল। অথচ স্বাধীনতা লাভের আগের ইতিহাস পর্যালোচনা করিলে দেখা যায়, নোয়াখালীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মোকাবিলায় খোদ মাহাত্মা গান্ধী যোজন পথ পাড়ি দিয়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাজির হইয়াছিলেন। তাঁহার মত ব্যক্তিত্বের উপস্থিতির কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হইয়া আসিতে সময় লাগে নাই। আমরা ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার সময়ও দেখিয়াছি সাংবাদিকতার মহান পুরুষ মানিক মিয়া নিজেও এই ধরনের দুর্বৃত্তদের মোকাবিলায় রাজপথে নামিয়া আসিয়াছিলেন। আজ এই ধরনের সাহসী ও বিচক্ষণ মানুষদের বড়ই দরকার।
আমাদের পবিত্র সংবিধানে 'সংখ্যালঘু' বলিয়া কোন শব্দ নাই। নাগরিক হিসাবে এইখানে সকলেরই সমান অধিকার স্বীকৃত। কিন্তু কাজের বেলায় তাহার সঠিক প্রয়োগ হইতেছে না দেখিয়াই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমপ্রদায় দিন দিন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিতেছেন। আমরা এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে যথাসম্ভব শীঘ্র প্রশাসনিক ও সামাজিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।
সুত্র
©somewhere in net ltd.