নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ক্রিং! ক্রিং.....প্রধানমন্ত্রী কে ফুন!
সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন -বানকি মুন
সহিংসতার নিন্দা করি - জন কেরি
এবার সামলাঃ
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে প্রধান দুই দলকে সমঝোতায় রাজি করাতে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর ঢাকায় অবস্থানের মধ্যেই টেলিফোন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলেছেন বান কি মুন। অপরদিকে জন কেরি ফোন করে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত তা বন্ধ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। একইসঙ্গে বিশ্বের এ দুই প্রভাবশালী নেতাই চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধ এবং আলোচনার মাধ্যমে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফোনালাপ ছাড়াও বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে অবিলম্বে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, সহিংসতা কখনই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পার না, এটা অগ্রহণযোগ্য। অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। গত কয়েকদিনের অযৌক্তিক সহিংস ঘটনাবলী বিশেষভাবে নিন্দনীয় কারণ শিশু-কিশোরসহ নির্দোষ মানুষ এসব বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার শিকার হয়েছে। এসব ঘটনার জন্য দায়ীদের প্রতি আমরা সহিংসতা বন্ধ করে বাংলাদেশী জনগণকে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা ব্যতীত তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধান এবং সমঝোতার মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে ছয়দিন ক্লান্তিহীনভাবে দূতিয়ালি চালিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত ফার্নান্দেজ তারানকো। পরিষ্কারভাবে তিনি প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতায় আনতে না পারলেও পর পর দু’দিন দল দুটির শীর্ষ নেতাদের এক টেবিলে বসাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ মিশন শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাওয়ার আগে সাংবাদিক সম্মেলন করে তারানকো বলেন, জাতিসংঘের প্রথম লক্ষ্য ছিল দুটি দলকে আলোচনায় নিয়ে আসা। আমরা তা শুরু করেছি। সমাধান এখনও সম্ভব, তবে তা আসতে হবে তাদের নিজেদের (দুই দল) মধ্য থেকে। ফার্নান্দেজ ফিরে যাওয়ার পর দু’দলের মধ্যে শুরু হওয়া সমঝোতার সংলাপ শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাবে কিনা, এমন আশঙ্কা সৃষ্টির মধ্যেই জাতিসংঘের মহাসচিব ও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিসংলাপ সমঝোতার নতুন পথ সৃষ্টি করতে পারে বলেই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল। তাঁদের মতে, এই দুই বিশ্বনেতার টেলিফোন দু’দলকে শুরু হওয়া আলোচনা চালিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আর সংলাপের মাধ্যমেই একটি গ্রহণযোগ্য পথ বেরিয়ে আসবে বলেই তাঁরা বিশ্বাস করেন।
বান কি মুনের টেলিফোন ॥ তারানকোর দূতিয়ালির মধ্যেই বিকেল পাঁচটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে কথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। টেলিসংলাপে জাতিসংঘের মহাসচিব আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে এবং এ নির্বাচনে দেশের গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন জাতিসংঘের মহাসচিব। ফোনালাপে বান কি মুন বাংলাদেশে চলমান সহিংসতার নিন্দা জানান এবং আশা প্রকাশ করেন এ ধরনের কর্মকা- অবিলম্বে বন্ধ হবে। জাতিসংঘের মহাসচিব তাঁর বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া চলমান সঙ্কট নিরসন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও তাঁদের মধ্যে কথা হয়। প্রেসসচিব আরও জানান, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও টেলিফোনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং বাংলাদেশের চলমান ঘটনাবলী নিয়ে আলোচনা করেন।
জানা গেছে, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধে সহিংসতায় প্রাণহানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে, তা এখনি বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। বান কি মুন এর আগেও বাংলাদেশে চলমান সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। দুই প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে এর আগেও টেলিফোন করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
জন কেরির সঙ্গে দীর্ঘ ফোনালাপ ॥ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। সঙ্কট নিরসনে জাতিসংঘের দূতের সফরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে চলমান ঘটনাপ্রবাহ ও যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের বাস্তবায়ন নিয়ে কথা বলেন জন কেরি। একইসঙ্গে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথপোকথন প্রসঙ্গে বুধবার গণভবনের ফটকে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জন কেরির টেলিফোনে কথা হয়েছে। জন কেরির ‘অনুরোধ পেয়েই’ প্রধানমন্ত্রী সকালে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। টেলিফোনে দুই নেতার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, চলমান সংলাপ ও বাংলাদেশের সমসাময়িক এবং অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ও ট্রাইব্যুনালের বিচারের রায় কার্যকর সম্পর্কে জন কেরি জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া চলছে তা বিচারিক প্রক্রিয়ায় বিচারকার্য সম্পন্ন হবে বলে তাঁকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানকেও জন কেরি স্বাগত জানিয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর এই তথ্য উপদেষ্টা।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখা হাসিনাকে সকাল ৯টায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি টেলিফোন করেন। বাংলাদেশের সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে দুইজন আলোচনা করেছেন। কেরি বাংলাদেশে হরতাল-অবরোধ এবং চলমান সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সংলাপে সম্মত হওয়ায় রাজনৈতিক ঐকমত্যকে স্বাগত জানান। এ ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক সংলাপের ওপরও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন বলে জানান উপদেষ্টা।
কেরি আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, হরতাল, সহিংসতা ও অবরোধের কারণে বাংলাদেশে সংলাপ-সমঝোতার যে অনিশ্চিত-পরিবেশে বিরাজ করছে, তা দুই দলের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে এবং বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে তা অচিরেই বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করেন জন কেরি। ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সহিংসতার কারণে জনগণের জানমালের যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে তা নিরাপত্তা প্রদানের জন্য বলা হয়। একইসঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আলোচনার পরিবেশ অব্যাহত রাখা এবং দু’দলের মধ্যে যে আলোচনা চলছে তার পরিবেশ যাতে বজায় থাকে সে কথাও বলেন জন কেরি। এই আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান আশা করে যুক্তরাষ্ট্র, সেটিও প্রধানমন্ত্রীকে জানান জন কেরি। সাংবাদিকদের তথ্য উপদেষ্টা আরও জানান, টেলিফোনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গীবাদ ও মৌলবাদ মোকাবেলায় যে সফলতা অর্জন করেছে তারও প্রসংশা করেন। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তারও প্রশংসা করে কেরি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক।
মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতি ॥ রাজনৈতিক সহিংসতায় একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা বন্ধ করতে বাংলাদেশের দলগুলোর প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের এক বিবৃতিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে শান্ত থেকে সাধারণ মানুষকে নির্ভয়ে, নিরাপদে তাদের দৈনন্দিন কাজে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতেও অনুরোধ করা হয়।
জাতিসংঘ দূতের সফরে বড় দুই দল আলোচনায় সম্মত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা আগেও বলেছি যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে প্রধান দুই দলের জন্য এটা এখন আরও জরুরী হয়ে পড়েছে যে তারা যেন বাংলাদেশী জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুঁজে বের করে। সাম্প্রতিক উন্নয়নে আমরা অনুপ্রাণিত এবং আমাদের বিশ্বাস যে, সদিচ্ছার মাধ্যমে প্রধান দুই দল এমন একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ খুঁজে বের করতে পারবে যেমনটি বাংলাদেশী জনগণের চাওয়া ও প্রাপ্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে, সব দলেরই অবাধে ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকতে হবে। এই সুযোগ নিশ্চিত করার সরকারের দায়িত্ব এবং বিরোধী দলের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণভাবে এই সুযোগের ব্যবহার করা। আর সহিংসতা কখনই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে না, এটা অগ্রহণযোগ্য। অবিলম্বে এ সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। সুত্র
©somewhere in net ltd.