নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণায় বিএনপি সহ দেশজুড়ে স্বস্তির শ্বাস

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৪০

জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সক্রিয় সদস্যের একমাত্র সন্তান পড়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি স্কুলে। ওই যুবদল নেতা রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। বিরোধী দলের নেতা হয়েও গত পাঁচ বছরে অনেক সরকারি প্রকল্পের কাজ করেছেন। সর্বশেষ তিনটি প্রকল্পের কাজ চলছিল দেশের উত্তরাঞ্চলের দুই উপজেলায়। কাজের মেয়াদ শেষ পর্যায়ে এসে তা বন্ধ হয়ে যায় অব্যাহত অবরোধ-হরতাল আর সহিংসতায়। প্রকল্প এলাকায় মালামাল পাঠানো যায়নি। আটকে যায় কাজের বিল। অন্যদিকে পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকেন এখানে-সেখানে। ধারদেনা করে সংসার চলে তিন মাস। ব্যাংকের লোন শোধ করতে না পারায় প্রাইভেট কারটি জব্দ করে নেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শুধু তা-ই নয়, কর্জ করেই নতুন ক্লাসে ভর্তি করাতে হয় সন্তানকে। এর মধ্যেই গত বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে আসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা।

গতকাল বৃহস্পতিবার ওই যুবদল নেতা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে স্কুলে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেন, ‘ভাই, পথে বসার জোগাড় হয়েছিল। আতঙ্কে ছিলাম ম্যাডাম আবার নতুন করে হরতাল বা অবরোধ ঘোষণা করেন কি না! কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, তিনি তা করেননি। এখন যদি আটকে থাকা কাজগুলো দ্রুত শেষ করা যায়, তাহলেই বিলগুলো পাওয়া যাবে, সমস্যা কেটে যাবে। আমার সন্তানটাও হয়তো দ্রুত তার বাবার মুখ দেখতে পারবে।’

গতকাল সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে বেড়ে যায় অস্বাভাবিক ভিড়। বিশেষ করে ভর্তি হওয়ার উপযোগী রোগীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজশাহী থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগে অসুস্থ বাবাকে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে আসেন মনিরুল ইসলাম। কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডাক্তাররা প্রায় দুই মাস আগেই বাবার প্রস্টেটে অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের মধ্যে পথে সহিংসতার শিকার হওয়ার আশঙ্কায় এত দিন আসিনি। বুধবার খালেদা জিয়ার বক্তব্যে যখন বুঝলাম আপাতত আর সহিংসতার সম্ভাবনা নেই, সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে রাতের গাড়িতেই বাবাকে নিয়ে চলে এসেছি।’

গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সুন্দরবন-৮ লঞ্চে বরিশালে যাওয়ার জন্য টিকিটের খোঁজ করতেই ওই লঞ্চের স্টাফ মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মাফ করে দেন। এখন আর কোনো কিছুই খালি নেই, মনে হচ্ছে ঈদের ছুটিতে সব মানুষ বাড়ি ছুটছে। দুপুর থেকেই মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে এসে লঞ্চে ভিড় করেছে।’

বরিশালগামী যাত্রী রুহুল আমীন বলেন, ‘এত তাড়াতাড়ি দেশে স্বস্তি আসবে বুঝতে পারিনি। হরতাল-অবরোধে বাচ্চাদের নিয়ে এত দিন ঘর থেকে বের হতে পারিনি। তাই দুই দিন ছুটি পেয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।’

বুধবার বিএনপি নেত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর এভাবেই প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে জনমনে। দীর্ঘদিনের সহিংসতা-আতঙ্কের ঘোর কেটে মানুষ যেন ফিরে পেয়েছে কাক্সিক্ষত স্বস্তি।

গতকাল রাজধানীর রাজপথগুলো আবার জমে যায় চিরচেনা যানজটে। ব্যবসা-বাণিজ্যিক অঙ্গনেও ফিরে এসে নতুন প্রাণ। রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় স্থবির হয়ে থাকা সামাজিক অনুষ্ঠান ও কার্যক্রমেও ফিরে এসেছে গতি। নতুন করে শিডিউল করতে শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরীক্ষা থেকে শুরু করে উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর সভা-সেমিনারের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেবল ঢাকায়ই নয়, সারা দেশেই লেগেছে এমন স্বস্তির সুবাতাস।

প্রাণ ফিরেছে বন্দরে : চট্টগ্রাম বন্দরে আবারও প্রাণ ফিরে এসেছে। চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক এখন মুক্ত। চট্টগ্রামের সঙ্গে অন্যান্য জেলার সংযুক্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক ও জনপথে যানবাহন চলছে অবাধ ও আপনগতিতে। তবে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় এখনো কাটেনি। দেশের বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও রিয়াজউদ্দিন বাজারে এখন পণ্য বোঝাই ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের ভিড়। পণ্য সরবরাহ নির্বিঘ্ন হওয়ায় চাল, পেঁয়াজ ও সবজিসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৮ দলীয় জোট নেত্রী সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক দিক। তাঁর এই বক্তব্যে ব্যবসায়ী মহল আশ্বস্ত হয়েছে। তবে এই বক্তব্যের বাস্তবায়ন চায় ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, ‘খালেদা জিয়া নতুন যে ইতিবাচক কর্মসূচি দিয়েছেন তা অব্যাহত রাখলে ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য ভালো হবে।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের নেত্রী ঘোষিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালনে সরকার সহযোগিতা না করলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ যদি নষ্ট করতে চায় তাহলে দেশের পরিবেশ আবারও অশান্ত হতে পারে।’

চট্টগ্রাম পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটতে শুরু করেছে, তবে পুরোটা এখনো কাটেনি। চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, ‘নির্বাচনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করায় আমাদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরে আসছে।’ বেসরকারি শিপিং লাইন কন্টিনেন্টাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসান ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর দেশের সর্বস্তরে স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করেছে। আশা করা যায় আগামী সপ্তাহ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য পুরো দমে শুরু হবে।’

ধ্বংসের ভয় কেটেছে উত্তরে : ‘বিএনপি নেত্রী নতুন যে কর্মর্সূচি দিয়েছেন তাতে আমাদের মাঝে অনেকটাই স্বস্তি ফিরে এসেছে। উত্তরাঞ্চলে এখন ভয় কেটে গেছে। হয়তো কয়টা দিন নিশ্চিন্তেই রাস্তায় গাড়ি নামানো যাবে’, বলেন রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর রহমান পিটার। রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘তারা বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতে পেরেই দেরিতে হলেও নতুন এ রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছে।’

নগরীর নিউমার্কেট এলাকার গার্মেন্ট ব্যবসায়ী হোসেইন আলী বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষ আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে পারে না। আপাতত এ ধরনের কর্মসূচি না থাকার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।’

রাজশাহী নগরীর একটি স্বনামধন্য সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘এত দিন বিদ্যালয় খুলে রেখেও শিক্ষার্থী পাওয়া যেত না। এখন সে আতঙ্ক দূর হবে।’ নাটোরের ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি জহুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে ব্যবসা থমকে ছিল। এখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ফলে ব্যবসায় গতি আসবে।’

দক্ষিণাঞ্চলে ক্ষতি কাটানোর চেষ্টা : বরিশাল মহানগরের মাইনুল হাসান সড়কের ‘বিসমিল্লাহ’ নামের খাবার হোটেলের মালিক মো. তৈয়ব মিয়া বললেন, ‘অবরোধের কারণে গত দুই মাসে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।’ বরগুনার আমির হোসেন বৃহস্পতিবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আসেন ছেলেকে ভর্তি করাতে। তিনি বলেন, ‘এখন যদি দেশে শান্তি ফিরে আসে!’

নগরের বাংলাবাজারের হার্ডওয়্যারের ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বললেন, দুই মাস থেকে ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। মাঝেমধ্যে দোকান খোলা রাখলেও খুচরা বিক্রি ছাড়া বড় অঙ্কের বেচাকেনা বলতে গেলে নেই। কারণ মালামাল পাঠাতে পারছেন না।

বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি লঞ্চ মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘এক দিন, দুই দিন বা এক সপ্তাহ এমন অবস্থা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু মাসের পর মাস এই পরিস্থিতি একেবারেই অসহনীয়।’ তিনি জানান, বেশির ভাগ ব্যবসায়ী মোটা অঙ্কের ব্যাংকঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন। নিজেদের প্রতিষ্ঠানে বহু মালামাল তুলেছেন, ক্রেতারা আসছেন না।

সব খুলছে খুলনায় : হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারক, আমাম সি ফুডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম হুমায়ুন কবির প্রাণভরা স্বস্তি নিয়েই বলেন, ‘বিএনপি নেতা খালেদা জিয়ার বর্তমান কর্মসূচি অত্যন্ত সময়োপযোগী। এখন আবার সব কিছুই খুলে যাবে।’ এনজিওকর্মী মিজানুর রহমান পান্না বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বর্তমান কর্মসূচি প্রকৃতপক্ষে নিজেদের আবারও গুছিয়ে নেওয়ার একটি চেষ্টা। তবে বর্তমানে যে হরতাল-অবরোধ থাকছে না- এটাই স্বস্তির।’ গৃহবধূ মারুফা ইসলাম বলেন, ‘বছরের শেষে ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা নিয়ে খুবই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটাতে হয়েছে। বছরের শুরুতেও এই বিড়ম্বনা কাটবে কি না, তা নিয়ে খুবই চিন্তিত ছিলাম। আপাতত রক্ষা বিএনপি সেই ধরনের কর্মসূচি দেয়নি।’

পরিবহন শ্রমিক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বিরোধী দলের লাগাতার কর্মসূচিতে আমরা একেবারে পথে বসে গিয়েছিলাম। আমরা এই ধরনের কর্মসূচি চাই না। সরকারি দল, বিরোধী দল কেউ তো আমাদের খেতে দেয় না।’

ট্রেন যাত্রা নির্ভয়ে : বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস। নিরাপত্তাকাজে নিয়োজিত শাটল ট্রেন নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত ট্রেনটি ছেড়ে যাবে না। দীর্ঘ অপেক্ষায় বিরক্তির মধ্যেও কিছুটা শান্তির সুর ট্রেনযাত্রী লাকসামের ফয়েজ মিয়ার কথায়। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ভাই হরতাল-অবরোধের সময় ভয়ে ভয়ে ট্রেনে উঠেছিল মানুষ। এখন আর যাই হোক অন্তত লাইন উল্টে ফেলা কিংবা অন্য কোনো নাশকতার ভয় তো নেই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. তানজিল আহম্মেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের কারণে আমাদের বিদেশি ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। একজন সাধারণ কৃষক অনেক কষ্ট করে ফসল ফলিয়েও সঠিক দাম পাচ্ছিল না। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই যে তিনি অনেক দিন পরে হলেও মানুষের ক্ষতির দিক অনুধাবন করে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি থেকে সরে এসেছেন। ভবিষ্যতে যেন আর এ ধরনের কোনো কর্মসূচি না দেওয়া হয় সেই আহ্বান জানাই।’



- See more at: Click This Link

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:০৮

ফিলিংস বলেছেন: সমস্যা হল শান্তিপূ্র্ন কর্মসুচী আর শান্তিপূ্র্ন থাকেনা বা ওরা ইচ্চে করে শান্তিপূ্র্ন রাখেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.