নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
দেশের সুশীল সমাজ প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। কাজেই রাজনৈতিক কূটকৌশল তাদের জানার কথা নয়, এমনকি কূটকৌশলজনিত প্রভাব তাদের পক্ষে সহ্য করাও কঠিন। গত কয়েক মাস পশ্চিমা কূটনীতিকদের লম্ফঝম্পের সঙ্গে সঙ্গে সুশীল সমাজও প্রচ-ভাবে লাফালাফি করেছে। এতে দেশের দুই নেত্রীর অঙ্গুলি এক মিলিমিটারও নাড়াতে পারেনি।
প্রায় সাত বছর আগে ড. ইউনূস রাজনীতি করার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। অনেকের মতো আমিও উজ্জীবিত হয়েছিলাম। পরবর্তী পরিস্থিতি সবারই জানা। রাজনৈতিক কূটকৌশল ড. ইউনূসের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয় বলেই শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন।
ভাবতে অবাক লাগে সুশীল সমাজ উঠে-পড়ে লেগেছিলেন তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের জন্য। তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলেই অগণতান্ত্রিক হয়ে গেল? একটি নির্ভেজাল নবম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। তাদের মতো করেই তো সরকার চলবে। আইন পাস করবে। মেজরিটি রুল প্রতিষ্ঠিত করবে। গণতন্ত্র তো তাই বলে। মিঃ মজেনার দেশে কি অন্য কিছু হয়? কংগ্রেস ও সিনেটে যখন ডেমোক্র্যাট মেজরিটি ছিল, ঠিক তখনই ওবামা তাদের হেল্থ কেয়ার বিল পাস করিয়ে নেয়। আবার যখন কংগ্রেসে রিপাবলিকান মেজরিটি হলো তখন কতই না চেষ্টা সেই হেল্থ কেয়ার বিল নাকচ করার জন্য। দুই সপ্তাহের জন্য ওবামা গবর্নমেন্ট শাটডাউন করা হয়েছিল। একজন রিপাবলিকান সিনেটর চব্বিশ ঘণ্টা ধরে বক্তব্য রেখেছিল। কিন্তু আইন তো আইনই। সুপ্রীমকোর্টেও পাস করা আইন। ওবামার হেল্থ কেয়ার আইন এখন চালু। রিপাবলিকানরা কখনও ক্ষমতায় আসলে সেই আইনের কাটাকুটি অবশ্যই হবে। সভ্য সমাজে কথামালার মাধ্যমেই মারামারিটা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যখন আইনগতভাবে বাদ দেয়া হয়েছে তখন সেই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য মজেনাসহ সুশীল সমাজ কেন এতটা বাড়াবাড়ি করলেন? আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর শাসনকালে যত নির্বাচন হয়েছে- কারচুপির অভিযোগ তো ওঠেনি। পাঁচ পাঁচটি মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা হারলেন। কারচুপির কথা তো ওঠেনি। হয়ত পরিচ্ছন্ন নির্বাচন করাটাই ছিল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশল এবং এর ওপর ভিত্তি করেই বিশ্বকে বলতে পেরেছে– ‘আমাদের নির্বাচনে কারচুপির প্রশ্নই আসে না’। রাজনৈতিক কূটকৌশলে তাই সুতীক্ষন বুদ্ধির প্রয়োজন পড়ে বৈকি। অন্যদিকে এক সময় বিএনপির আমলে মাগুরা নির্বাচনে তেমন সুচিন্তিত বুদ্ধির পরিচয় দিতে পারেনি তখনকার বিএনপি সরকার আর সেই জন্যেই তখন তাদের তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারে আসতে হয়েছিল।
নবম সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সেই তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়েছে। তাতে কার কি বলার আছে? বিএনপির যদি তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা এতই ভাললাগে, ক্ষমতায় এসে তা আবার প্রতিষ্ঠিত করুন। এটাই তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কাজেই বিএনপির পক্ষে দশম সংসদীয় নির্বাচনে না আসাটা এবং তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারের জন্য গোঁ ধরে থাকাটা শুধুমাত্র বোকামি হয়নি, বড় কথা বিএনপির একটা সম্ভাবনাময় বিজয়ও হাতছাড়া হয়ে গেল।
দশ বছর আগে নির্বাচনে কারচুপি যতটা সহজ ছিল বর্তমান ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার যুগে ততটাই কঠিন। বিএনপি বরং নির্বাচন ঠিকঠাক সম্পন্ন করার জন্য আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে দাবি দাওয়া তুলে ধরতে পারত। কারচুপি করে এখন কেউ পার পেয়ে যাবে– এমনটা ভাবা উচিত হয়নি। রাজনীতির কূটকৌশলে বিএনপি অবশ্যই হেরে গেল। সেই সঙ্গে সুশীল সমাজও হেরে গেল। মাঝখান থেকে কয়েক ডজন নিরীহ মানুষের মৃত্যু, সেই সঙ্গে হাজারো কোটি টাকার জনগণের সম্পত্তি বিনষ্ট এবং নিরীহ গরিব সংখ্যালঘুদের নিঃস্ব করে দেয়া। কে বা কারা এর দায়ভার নেবে?
সুশীল সমাজ কি এর জন্য কিছুটা হলেও দায়ী নয়? এখনো সুশীল সমাজের কেউ কেউ বলছে ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ নিয়ে গণতন্ত্র হবে কি করে? পাঁচটি বছর তো শক্তিশালী বিরোধী দল, বিএনপি ছিল সংসদে– কী গণতন্ত্র কায়েম হয়েছে? পাঁচ বছরে কদিন তারা সংসদে উপস্থিত ছিল? সুতরাং দেখাই যাক না ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ দিয়ে কেমন গণতন্ত্র কায়েম হয়।
সুশীল সমাজ এবং বিএনপির এবার একটু সবুর করা উচিত। নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক না করে বরং অপেক্ষা করুন এই সরকার জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করছে কি না? যে দুই ডজন সাধারণ মানুষ মারা গেল তাদের প্রতি কি আপনাদের কারও দায়বদ্ধতা নেই। ভোটদানের জন্য সংখ্যালঘুদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের তেতাল্লিশ বছর পরেও। কাজেই সরকারকে অবশ্যই এসব নির্যাতিত জনগণের জন্য ভাল কাজ না করে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়াও অন্যায় হবে। তবে বর্তমান সরকার জনগণের মঙ্গল করতে অক্ষম হলে অবশ্যই ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন।
একাদশ সংসদের জন্য যখনই নির্বাচন হোক, আমি মোটামুটি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি তত্ত্ব¡াবধায়ক সরকারব্যবস্থা আর বাংলাদেশে ফিরে আসবে না। আসার কোন যৌক্তিকতাও নেই।
জনগণ যাতে নিজের খুশিমতো ভোট দিতে পারে তার জন্য আলোচনার মাধ্যমে পাকাপোক্ত ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। তবে হরতাল, অবরোধ আর নয়। বিশ্বজুড়ে দাবি-দাওয়ার জন্য লাগাতার হরতাল, অবরোধ মৃত্যু-মৃত্যু খেলার নজির আছে কি?
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা, একবার ভাবুন– বিশ্বজুড়ে সার্ভেতে প্রায়শ প্রকাশ পায় বাংলাদেশের মানুষ সবচাইতে সুখী। এর মানে ‘শুধু বেঁচে থাকার আনন্দ।’ ‘জনগণের এই বেঁচে থাকা’তে হাত দিবেন না। জনগণের স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন। কষ্টের মধ্যেও শুধুমাত্র বেঁচে থাকাই সুখের মাপকাঠি- এমন দেশ আর কোথায় আছে, বলুন?
সুত্র
রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বুদ্ধিজীবী কিংবা সুশীল সমাজ কম পরামর্শ দেননি। সরকারি দল কিংবা বিরোধীদলের সমর্থনে তাদের এ পরামর্শ কোনো কাজে আসেনি। কারণ তারাও দ্বিধাবিভক্ত। টেলিভিশনে ধারাবাহিক টকশো, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি, সেমিনার সিম্পোজিয়ামে তাদের বিতর্কে কোনো ফল হয়নি। কারণ তারা কেউ এ দলের অথবা ও দলের। তাই রাজনৈতিক সংকট যখন সংলাপে গড়ায়নি, সমঝোতার পথ খুঁজে পায়নি তখন বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ এখন অনেকটা ম্রিয়মান হয়ে পড়েছে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৩৩
মিতক্ষরা বলেছেন: ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন কি পরিমান আহামরি হয়েছে তা জানতে আবু সাইয়িদের সাক্ষাৎকারটি দেখুন। প্রশাসনের প্রতিটি পর্যায় কি করে কারচুপির পক্ষে ছিল। জানি দলকানাদের অবস্থান এর পরেও পরিবর্তন হবে না।