নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ইতিহাসের রাখিবন্ধন
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ইতিহাসের যে রাখিবন্ধন হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত বিল (১১৯ তম সংবিধান সংশোধনী বিল-২০১৩) পাস হওয়ার মাধ্যমে ৪১ বছরের অমীমাংসিত ও জটিল স্থল সীমান্ত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান হল। এর মাধ্যমে অবসান ঘটতে যাচ্ছে প্রায় সাত দশকের বঞ্চনা, কষ্ট আর ভোগান্তির। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিলটি পাস হয়।
বিল পাসের মাধ্যমে যেমন বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ রাজনৈতিক পর্যায়ে বোঝাপড়া ও কূটনীতির ক্ষেত্রে একটা ইতিহাস সৃষ্টি হলো তেমনি ভারতের পার্লামেন্টেও কোন বিল পাসের ক্ষেত্রেও নজির হয়ে থাকলো। গত দুই দিনে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাস হয়। বিল উত্থাপনকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন, একইভাবে তিস্তা চুক্তির সমস্যারও সমাধান হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী বিলের পক্ষে ভোট দেয়ায় কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধীসহ সব বিরোধীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদী বিল পাসের এই ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফোনে এ ব্যাপারে বাংলায় কথা বলেছেন। বিলটি পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মোদী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। লোকসভায় পাসের পর এখন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধানসভার সমর্থন লাগবে যা পেতে কোনো সমস্যা হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লোকসভায়ও বিরল ভোট
নয়াদিল্লির স্থানীয় সময় গতকাল ৬টা ২০ মিনিটে লোকসভায় বিলটি পাস হয় ৩৩১-০ ভোটের ব্যবধানে। এর মাধ্যমে ১৯৭৪ সালের মে মাসে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মধ্যে যে চুক্তিটি সই হয়েছিল, তার ঠিক ৪১ বছরের মাথায় এসে ভারতের দিক থেকে বিলটির র্যাটিফিকেশন বা অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হল। ভারতীয় লোকসভায় এই সংক্রান্ত ১১৯ তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি পেশ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি সভার সব সদস্যকে দলমত নির্বিশেষে সবুজ বোতাম টিপে বিলটি সমর্থন করার আবেদন জানান—যাতে একটি ভোটও বিপক্ষে না পড়ে এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশকে একটা ‘ভালো সংকেত’ পাঠানো যায়। বিলটি নিয়ে লোকসভার বিতর্কে অংশ নেন মোট ১৬ জন সংসদ সদস্য।
দার্জিলিংয়ের (একটি অংশ বাংলাদেশ সীমান্তে পড়েছে) এমপি সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া বাংলা ভাষায় আবেগপূর্ণ ভাষণ দেন। বিতর্কে অধিকাংশ এমপি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার কথা বললেও শিব সেনা বা বিজেপি’র কোন কোন এমপি ভারত থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের তাড়ানোর ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান। এর আগে বুধবার রাজ্যসভায় বিলটি নিয়ে ভোটাভুটির সময়ও এর বিপক্ষে কোন ভোট পড়েনি। তারও আগে মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আসামকে বিলের অন্তর্ভুক্ত রেখেই অনুমোদন করে। বুধবার রাজ্যসভার বিতর্কের শেষে বিলটি নিয়ে ভোটাভুটির সময় একজন সদস্যও আপত্তি জানাননি, দলমত নির্বিশেষে রাজ্যসভায় উপস্থিত সব সংসদ সদস্যই বিলটির পক্ষে ভোট দেন যে কারণে বিলটি পাস হয় ১৮০-০ ভোটে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী রাজ্যসভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিলটি পাস হওয়ায় বিরোধী সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কাছে একটা বার্তা গেছে। সেটা হলো তারা বুঝতে পারবে, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকলেও জাতীয় ইস্যুতে তারা ঐক্যবদ্ধ। লোকসভায় একইভাবে বিলটি পাস হলে বাংলাদেশের কাছে একটা ভালো বার্তা পৌঁছাবে।
মোদীর কৃতজ্ঞতা
গতকাল সন্ধ্যায় লোকসভায় সর্বসম্মতভাবে বিলটি পাস হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৪ সালের ১৮ মে আপনার পিতা বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন আজ আপনার সরকারের সময় সেই মে মাসেই ওই চুক্তিটি বিল আকারে পাস হল।’
প্রধানমন্ত্রী মোদী বিল পাসের ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, আসামের তরুণ গগৈ, ত্রিপুরার মানিক সরকার, মেঘালয়ের মুকুল শংমা এবং মিজোরামের লালথানহাওয়ালাকে ফোন করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। লোকসভায় বিলটি পাসের পর মোদী কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধীসহ পার্লামেন্টে দলটির নেতা মল্লিকার্জুন খার্গের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে ধন্যবাদ জানান। এরপর মোদী পার্লামেন্টে বিরোধী নেতা এআইএডিএমকে প্রধান জে জয়ললিতা, ডিএমকে প্রধান এম করুণানিধি, সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, বিএসপি নেতা মায়াবতী, সমাজবাদী পার্টির নেতা মুলায়েম সিং যাদব, বিজেডি নেতা বিজু পাটনায়েক এবং জেড (ইউ) নেতা শারদ যাদবকে ফোন করে ধন্যবাদ জানান। এরপর এক টুইটার বার্তায় বিরোধী সকল নেতাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে প্রতিবেশীর সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক বজায় রাখতে জাতির সমষ্টিগত আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হলো।
যা বললেন সুষমা স্বরাজ
পার্লামেন্টে বিলটি পেশ করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এটি অনুমোদিত হলে ভারতের মানচিত্রে কিছুটা বদল হবে ঠিকই, তবে তাই বলে বিরাট সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দেশান্তরী হতে হবে ব্যাপারটা সেরকম নয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে ছিটমহলগুলোতে এখন ভারতীয়রা আছেন, তারা চাইলে সেখানেই থেকে যেতে পারবেন এবং বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন। আবার অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে যে ছিটমহলগুলোতে এখন বাংলাদেশিরা আছেন, তাদেরও সেখান থেকে উঠে যেতে হবে না—ভারত তাদের নাগরিকত্ব দেবে। সুষমা স্বরাজ জানান, এই বিল পাসের মাধ্যমে ভারত পাবে ৫১০ একর এবং বাংলাদেশ পাবে ১০ হাজার একর জমি। তবে এটা নির্দিষ্ট কিছু নয়। অনুমোদিত হওয়ার পর এটি হল ভারতের ১০০তম সংবিধান সংশোধনী বিল আর পার্লামেন্টে এই সেঞ্চুরি করার জন্য অনেক এমপিই সুষমা স্বরাজকে অভিনন্দন জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেকে সমালোচনা করেন যে, ভারত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বিগ ব্রাদারের (বড় ভাই) ভূমিকা পালন করে। সেটা আসলে সত্যি নয়। ভারত মূলত প্রতিবেশীর সঙ্গে এল্ডার ব্রাদার (সহোদর ভাই) হিসেবে ভূমিকা রাখে। বড় সহোদর ভাইয়ের মতই ভারত তার প্রতিবেশীর সঙ্গে স্নেহসুলভ আচরণ করে। লোকসভার এক সদস্য যখন রহস্য করে বলেন, বিগ ব্রাদার নাকি বিগ সিস্টার? তখন সুষমা স্বরাজ হেসে বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি পুরুষ, স্ত্রী নন।
সুষমা স্বরাজ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তের ৮০ শতাংশে কোন সমস্যা নেই। সীমানা চিহ্নিত করা এবং বেড়া দেয়া আছে। এই বিল চূড়ান্ত হওয়ার পর বাকি সীমান্তও চিহ্নিত হবে এবং অনুপ্রবেশ বন্ধ করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যেভাবে নৌ-সীমান্ত এবং স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধান হচ্ছে একই গতিতে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সমস্যার সমাধানও হবে। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশ থেকে যারা আসবে তাদের পুনর্বাসনের জন্য পররাষ্টমন্ত্রী প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ( এক রুপি সমান ১ টাকা ২১ পয়সা হিসেবে) একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এসব মানুষের সংখ্যা ৩০ হাজার পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৯৩৮ কোটি টাকা ব্যয় হবে অবকাঠামো খাতে।
নাটকীয় পরিবর্তন
আসাম বিজেপির পক্ষ থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতার মুখে চুক্তি থেকে আসামের ছিটমহলগুলো বাদ দেয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিবেচনা করছেন বলে এর আগে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর স্থল সীমান্ত চুক্তি থেকে আসামকে বাদ না দিতে মোদীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ। আসামকে বাদ দিলে রাজ্যসভায় এ বিল পাসে সমর্থন দেয়া হবে না বলে ইঙ্গিতও দিয়েছিল কংগ্রেস, যারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এই বিল পার্লামেন্টে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপরই অপরিবর্তিত অবস্থায় বিলটি পাসের ব্যাপারে আশার আলো দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত সোমবার রাতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর বাসভবনে এক বৈঠকে আসামকে রেখেই প্রস্তাবটি পাসের জন্য তোলার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী মোদীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার ভারতের মন্ত্রিসভা সংবিধান সংশোধনের খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করে। কাল শুক্রবার লোকসভার চলতি অধিবেশন শেষে চীন, মঙ্গোলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী। এরপর জুন বা জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসতে চান তিনি। তবে ভারতীয় কূটনীতিকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ‘খালি হাতে’ ঢাকা সফরে যাওয়া মোদীর ‘ঠিক হবে না’। এ কারণে লোকসভার চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস করিয়ে আনতে মোদীর এই তাড়াহুড়ো। এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসেই প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নেন। সকল বিরাজমান বিরোধ নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নেন। স্থল সীমান্ত চুক্তিতে মূলত আশার আলো দেখা যায় গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বৈঠকে। ওই বৈঠকেই মোদী শেখ হাসিনাকে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন।
ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি
ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে পরিচিত ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। বাংলাদেশ ওই চুক্তিতে অনুসমর্থন দিলেও জমি হস্তান্তরে ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হওয়ায় বিষয়টি আটকে থাকে। ভারতের বিগত কংগ্রেস সরকার কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও বিজেপি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় রাজ্যসভা ও লোকসভায় তা পাস করাতে ব্যর্থ হয়। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অংশ হিসাবে ৬৮ বছর ধরে ঝুলে থাকা সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নেন। শুরু থেকে আপত্তি করে আসা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও নানা চাপের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেন।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকাশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি ও এর প্রটোকল বাস্তবায়িত হলে কয়েক দশকের পুরনো সীমান্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধান হওয়ার পাশাপাশি সীমান্তে আসবে শান্তি। ছিটমহলের বাসিন্দাদের গত সাত দশকের মানবিক সংকটের অবসান ঘটবে। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার বাস্তবায়নের সুযোগ হবে তাদের। একই সঙ্গে খুলবে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত। দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময় এবং সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত করাই এই স্থল সীমান্ত চুক্তির লক্ষ্য। সাড়ে ৬ কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমানা চিহ্নিত করা হবে। ছিটমহলগুলোর মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি (৭ হাজার ১১০ একর জমি) এবং বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহলের (১৭ হাজার ১৬০ একর) জমি বিনিময় হবে। ৫১টি ছিটমহলে বাসিন্দা আছে ১৪২১৫ জন এবং ১১১টি ছিটমহলে বাসিন্দা আছে ৩৭৩৩৪ জন। বাংলাদেশ পাবে ১১১টি ছিটমহলের জমি এবং ভারত পাবে ৫১টি ছিটমহলের জমি। অপদখলীয় জমি রয়েছে ৫০৪৪ একর। এর মধ্যে বাংলাদেশের কাছে থাকবে ২২৬৭ একর এবং ভারতের কাছে যাবে ২৭৭৭ একর।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত সমস্যার সমন্বিত সমাধানে পৌঁছার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ১৯৫৮ সালের নেহেরু-নুন চুক্তি এবং ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে সীমানা জটিলতার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে ওই দুই চুক্তিতে প্রায় ৬.১ কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমান্ত, ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় ভূমির বিষয়ে কোনো সমাধান ছিল না। ১৯৭৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী, দহগ্রাম-আঙ্গুরপোতা ছিটমহলে যাওয়ার জন্য ভারত বাংলাদেশকে তিন বিঘা করিডর শর্তসাপেক্ষে ব্যবহার করতে দিতে রাজি হয়। ১৯৯২ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের সরকার বাংলাদেশকে তিন বিঘা করিডর ব্যবহারের সুযোগ দেয়। প্রাথমিকভাবে দৈনিক ১২ ঘন্টা করে ব্যবহারের সুযোগ পায় বাংলাদেশিরা। ২০১১ সালের প্রটোকল অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর কোনো বাসিন্দাকেই নিজ বসতবাড়ি ও জীবিকা ছেড়ে অন্যত্র যেতে হবে না। ছিটমহলগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে উভয় দেশের প্রতিনিধিদল সেগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ব্যাপক পরিসরে মতবিনিময় করেছে। ভারতীয় সংবিধানের ৩৬৮ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব ভারতের পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে পাস হওয়ায় তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করলেই সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
সূত্রঃ সফল বাংলাদেশ
©somewhere in net ltd.