নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে, গণমাধ্যমে প্রধানত দুটি বিষয় আলোচনা হচ্ছে। এক. ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে যে ২২টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যেসব প্রশ্নে মতৈক্য হয়েছে, সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের প্রটোকল বিনিময় এবং অন্যান্য সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে প্রায় সর্বত্র। আলোচনার একটি মুখ্য বিষয় হচ্ছে তিস্তার জলবণ্টন চুক্তির অনিশ্চয়তা। আলোচনা হচ্ছে এইসব চুক্তি, সমঝোতা স্মারক এবং সিদ্ধান্তের ফলে কোন দেশ বেশি লাভবান হবে, ভারত না বাংলাদেশ? দুই. নরেন্দ্র মোদির কাছে ব্যর্থ ধরনা দেয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতি, আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয় বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক কি হবে? বিএনপি কি জামায়াতকে ত্যাগ করে আদর্শিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হিসেবে, উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতিতে জায়গা করে নেয়ার উদ্যোগ নেবে? নাকি, এখন যেমন রয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের উৎস জামায়াতের ইসলামীর সঙ্গে আদর্শিক গাঁটছড়া বেঁধে 'ক্ষমতার রাজনীতির' ধারায় থাকবে? এই প্রশ্নগুলো উঠছে এই কারণে যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেমন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে জামায়াতে ইসলামী কানেকশান সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন, তেমনি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কিছু সংস্থা থেকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের জন্য চাপ রয়েছে বিএনপির ওপর।
প্রথম ইস্যু অর্থাৎ 'মোদির সফরে বাংলাদেশ কি পেল' আলোচনাটি আসলে দুই তরফ থেকেই করা হচ্ছে। এক. যারা রাজনৈতিক কারণে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে চুক্তি বা সমঝোতা যাই হোক, তার বিরোধিতা করতে হবে। তাদের যুক্তিগুলো এরকম সীমান্ত চুক্তি করে দশ হাজার মানুষের (ছিটমহলবাসী) সমস্যার সমাধান করা হলো, কিন্তু তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি না করে উত্তরবঙ্গের দুই কোটি মানুষের সমস্যার সমাধান করা হলো না। এরা সেই প্রতিবেশী যারা সব সময়ই মনে করে, 'ছেলেটি পরীক্ষা দিলে কি হবে পাস করবে না। পাস করলে কি হবে চাকরি পাবে না। চাকরি পেলে কি হবে বেতন পাবে না। বেতন পেলে কি হবে বাজারে কিছু কিনতে পারবে না।' এরা হচ্ছে রাজনৈতিক-জ্ঞানপাপী, যে কোন অজুহাতে ভারত বিরোধিতাই এদের চিন্তা বা রাজনীতির প্রধান উপজীব্য। এরা ঠিকই জানে সীমান্ত চুক্তির গুরুত্ব, এরা ঠিকই জানে কোস্টাল নৌ পরিবহন চুক্তির গুরুত্ব, এরা ঠিকই বোঝে চারদেশীয় সড়ক যোগাযোগের গুরুত্ব, নৌ প্রটোকল চুক্তি বা কানেকটিভিটির গুরুত্ব, কিন্তু কিছুতেই স্বীকার করবে না। স্বীকার করলে যে তাদের রাজনীতির জায়গাটি, অর্থাৎ যুক্তিহীন ভারত বিরোধিতার জায়গাটি থাকে না, তাদের রাজনীতিতে পাকিস্তানের 'ডমিনেটিং' এবং 'কনট্রোলিং' অবস্থানটি যে আর থাকে না।
নরেন্দ্র মোদির সফরে বাংলাদেশ কি পেল না দেখার চেয়ে আগে তো দেখতে হবে বাংলাদেশ কি পেল আর কি পেতে পারে। কিন্তু আমাদের কিছু মানুষের মন 'কি পাইনি তার হিসাব মেলাতে'ই প্রবলভাবে আগ্রহী, কিছুতেই 'কি পেয়েছি'র হিসাব মেলাতে চায় না, যদি তাদের রাজনীতির বা রাজনৈতিক চিন্তার দেউলিয়াপনা ধরা পড়ে যায়। সেই কারণেই বিএনপি এবং তাদের থিংক-ট্যাঙ্ক ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে পূর্ব নির্ধারিতভাবে, আগে সিদ্ধান্ত পরে এর পক্ষে যুক্ত উত্থাপনের চেষ্টা। প্রশ্ন নয়, সন্দেহ এবং অনাস্থাই এদের চিন্তার ভিত্তি। অর্থনীতি, বিনিয়োগ, অনুদান, যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, কানেকটিভিটি বিষয়গুলোকে তাৎক্ষণিকতায় মূল্যায়ন করা যায় না, বিবেচনা করতে হয় চলমানতার নিরিখে, বাস্তবায়ন এবং অগ্রসরমানতার আলোকে এই বোধটি হয় তাদের নেই, অথবা থাকলেও তারা এর ধার কাছ দিয়ে যেতে আগ্রহী নন। একে বলা যায় সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে বাস্তবতা আর আগামীকে অস্বীকার করা। অন্ধ ভারত বিরোধিতার কারণেই এদের নেতি কোন ইতি দেখে না।
দ্বিতীয় ইস্যু. জামায়াতকে ত্যাগ করে ক্ষমতার ধারা ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতির ধারায় বিএনপিকে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নটি সম্পর্কে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার মতো খবর রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। জামায়াতের সঙ্গে জোট করা নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বহুদিন ধরেই চাপের মুখে রয়েছে বিএনপি। প্রথম যখন জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্যে জোট করে বিএনপি তখনই সমালোচনার মুখে পড়ে, মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে জোট করার কারণে। একই কারণে আওয়ামী লীগও সমালোচিত হয়েছিল ১৯৯৪-৯৬ সালে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সময় জামায়াতকে সঙ্গে নেয়ার জন্য। দলের বাইরে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রবল সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় আওয়ামী লীগকে। একইভাবে বিএনপিকেও প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় প্রথম থেকেই। বিশেষ করে জামায়াতুল মুজাহিদিন (জেএমবি), বাংলা ভাই এবং হরকাতুল জেহাদের উত্থান এবং জঙ্গি তৎপরতার উৎস যে জামায়াতে ইসলামী, সেটা বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট যখন ক্ষমতায় ছিল তখনই পরিষ্কার হয়েছে দেশবাসীর কাছে। সুতরাং বিএনপি-জামায়াত জোট যে বাংলাদেশে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রে জঙ্গিবাদ তৈরি করবে এটাই তো স্বাভাবিক। বস্তুত ঘটেছেও তাই। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে যে জঙ্গি তৎপরতা উদ্ঘাটিত হয় তার সরাসরি কানেকশান বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। এর দায় জোটের সঙ্গী হিসেবে বিএনপির ওপরও বর্তায়। কারণ বিএনপি নেতৃত্ব প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করেনি বা নিন্দাও করেনি। এই দায় সম্পর্কেই নরেন্দ্র মোদি প্রশ্ন করেছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে, তিনি এর জবাব দেননি বা দিতে পারেননি। আসলে জবাব দেয়ার কিছুই ছিল না খালেদা জিয়ার কাছে।
এখন যে প্রশ্নটি সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে কি হবে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক? বিএনপি কি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করবে? নরেন্দ্র মোদি ঢাকা ত্যাগের পর একটি পত্রিকা রিপোর্ট করেছে- দুশ্চিন্তায় জামায়াত! অর্থাৎ এতদিন ছিল দূরের চাপ, দেশের ভেতরের মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির চাপ, এখন নিকটতম প্রতিবেশী সরাসরি বিষয়টি উত্থাপন করেছে। কি করবে বিএনপি? জামায়াতকে ছেড়ে পরিষ্কার রাজনীতি করবে? না, জামায়াতের বিএনপি হয়েই থাকবে? ইতোমধ্যে এ নিয়ে মিডিয়ায় বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির প্রথম মহাসচিব ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'বাঁচতে হলে বিএনপি'কে জামায়াত ছাড়তে হবে। তিনি বর্তমান বিএনপিকে জামায়াতের বিএনপি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, প্রতিষ্ঠার সময় বিএনপি ছিল জিয়ার বিএনপি, এরপর খালেদার বিএনপি এখন সেটা আর জিয়ার বিএনপি নেই। ভুল বকেছেন ডা. বি চৌধুরী প্রতিষ্ঠা থেকেই বিএনপি জামায়াতের-বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীর যে আদর্শ-মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতা-সেক্যুলাজিমবিরোধী, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পক্ষে অর্থাৎ পাকিস্তানি রাজনীতির আদর্শ সেই আদর্শেই পাকিস্তানের আদলে গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান। জিয়া-খালেদার আমলে একটা মুখোশ বিএনপির জামায়াত চরিত্রটি দেশবাসীর উন্মোচিত হতে দেয়নি। মুখোশটি মুক্তিযুদ্ধের। বাইচান্স মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার হওয়ার কারণে এই মুখোশটি তার পক্ষে ব্যবহার করা সহজ হয়েছিল। ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট এই মুখোশ থেকে বেরিয়ে এসে তাদের অভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শে আত্মপ্রকাশ করে। যদিও বিএনপির কোন কোন নেতা বলবার চেষ্টা করছেন জামায়াতের সঙ্গে তাদের কোন আদর্শিক ঐক্য নেই। জন্ম থেকে বিএনপির রাজনীতি- আদর্শ এবং জামায়াতের আদর্শ বিশ্লেষণ করলে এটাই প্রমাণিত হয় বিএনপি-জামায়াতের ঐক্য নির্বাচনী ঐক্য নয় আদর্শের ঐক্য। এখানে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কোন উপায় নেই।
আদর্শিক ঐক্য বলেই এখনও খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে আগ্রহী নয়। গতকালের একটি ইংরেজি দৈনিকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে 'খালেদা এখনো অনিচ্ছুক'। যদিও দলের ভেতরে এ নিয়ে যথেষ্ট চাপ রয়েছে। অল্পসংখ্যক অনুগত ছাড়া সকলেই 'জামায়াত' ছাড়তে আগ্রহী। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নন এবং অবশ্যই তার পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নন।
বস্তুত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ছিন্ন করা হলে দলটির 'জিয়ার রাজনীতি বা রাজনৈতিক আদর্শের' জায়গাটি যে আর থাকে না। জিয়াউর রহমান তো আর হা-ডু-ডু খেলার জন্য স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেননি, সংবিধান পরিবর্তন করে নিষিদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে বৈধ করেননি, পাকিস্তানি পাসপোর্টধারী যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করেননি। এসবই তিনি করেছিলেন জামায়াতের আদর্শে বিএনপি করবেন বলে, বাংলাদেশবিরোধী শক্তিকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করবার লক্ষ্যে, সর্বোপরি বাংলাদেশে আবার পাকিস্তানি রাজনীতি ফিরিয়ে আনবার লক্ষ্যে, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই'র নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে। মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদের জন্য রাজনীতির দরজা খুলে দিতে। সুতরাং এখনকার বিএনপি আর জিয়ার বিএনপি নেই এই কথা বলার কোন বাস্তবতা নেই। বরং এখনই জিয়ার অর্থাৎ জামায়াতের আদর্শের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বি চৌধুরী সাহেব বোধ হয় নিজের দায়টি এড়াবার জন্য জিয়া আর জামায়াতকে আলাদা করে দেখাবার চেষ্টা করেছেন। কারণ জিয়ার তথা জামায়াতের বিএনপি প্রতিষ্ঠার তিনিও ছিলেন একজন উদ্যোক্তা। এখন তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে ক্ষোভ ছাড়ছেন কিনা সেটা তিনিই বলতে পারবেন।
জামায়াত নিয়ে বিভক্ত বিএনপি শিরোনাম করেছে আরেকটি দৈনিক। ২০ দলীয় জোটে জামায়াতের থাকা নিয়ে বিরোধিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। কিন্তু তাতে কি খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান জামায়াতকে ছাড়বেন? এর কোন লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না, ভবিষ্যতেও যে দেখা যাবে না সেটাও নিশ্চিত করে বলা যায়। রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির পাকিস্তানি রাজনীতির বিরোধটা জিইয়েই রাখবেন খালেদা-তারেকের জাময়াতী বিএনপি। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আর জঙ্গিবাদের আদর্শ অব্যাহত থাকবে জামায়াতী বিএনপির রাজনীতিতে। সুত্র
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৬
saruar15 বলেছেন: জামাতের সাথে আ.লীগ জোট বাধলে তখন লীগের চেতনা কোথায় থাকে?