নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন মহসিন আলী এবং কতিপয় মিডিয়া

০৬ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৫৭

বঙ্গবন্ধুকন্যা ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়ই চমক দিতে পছন্দ করেন। তিনি যখন ১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠন করেন তখন ঐকমত্যের সরকার গঠন করে যেমন চমক দিয়েছিলেন, তেমনি ২০০৮ সালে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও শরিক সকল দলের সমন্বয়ে মহাজোটের সরকার গঠন এবং মন্ত্রিসভায় অধিক হারে নবীনের সমাবেশ ঘটিয়ে আরেকটি চমক দিয়েছিলেন। সেখানে অনেক ভিআইপি ব্যক্তিদের স্থান না দিয়ে তৃণমূল থেকে উঠে আসা, ভদ্রলোকদের কাছে ‘খ্যাত’ বলে পরিচিত নেতাদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছিলেন, এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও মন্ত্রিসভায় অনেকেই আছেন ভিআইপি পর্যায়ের যাদের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই বললেই চলে। মন্ত্রিসভায় যে কজন তৃণমূল থেকে উঠে আসা ব্যক্তি রয়েছেন তাদের মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী অন্যতম। আর আজকের কাহিনীর নায়কও তিনি।
২০১৪ সালের নির্বাচনের পর যখন মন্ত্রিসভা ঘোষিত হয়, তখন বৃহত্তর সিলেটের একজন সন্তান হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই দৃষ্টি ছিল সিলেট অঞ্চল থেকে কারা কারা মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন, বিশেষ করে নতুন মুখ কারা মন্ত্রিসভায় যোগ হচ্ছে তার দিকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ যে পূর্বপদে বহাল থাকবেন, সে ব্যাপারে সকলের মতো আমিও শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম। তবে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী মোস্তফা শহীদের স্থলে বা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্থলে কে হতে পারেন সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, যিনি বৃহত্তর সিলেটের প্রতিনিধিত্ব করবেন, সে নিয়ে একটু ভাবনা তো ছিলই। আর গত সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদের প্রতি যে নেত্রী নাখোশ তাও ছিল অনুমেয়। যাই হোক শেষ পর্যন্ত যখন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষিত হলো, তখন অন্যদের সাথে সৈয়দ মহসিন আলীর নাম দেখে অবাক হলেও আশ্চর্য হইনি। কেননা, আমার কাছে মনে হয়েছে শেখ হাসিনা সঠিক কাজটি করেছেন। সৈয়দ মহসিন আলীর মতো পোড় খাওয়া নেতাকে মন্ত্রী করে তিনি সারাদেশের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সম্মানিত করেছেন। শুধু মহসিন আলী কেন, ময়মনসিংহের বর্ষিয়ান নেতা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকেও মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারিদের মূল্যায়ন করেছেন। জীবন যাবে তবুও এই মানুষগুলো বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ছেড়ে যাবেন না, যাননি কখনো। কিন্তু নগরকেন্দ্রিক কতিপয় ভদ্রলোক বা সুশীল-বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা সম্পাদিত কিছু মিডিয়া সৈয়দ মহসিন আলীদের মতো লোকদের মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি বলেই আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। নতুবা তারা শুরু থেকেই সৈয়দ মহসিন আলীর সব ধরনের বক্তব্য বা কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপনার চেষ্টা করতো না। শুধু মিডিয়া কেন, অনেক আওয়ামী লীগারদেরই বুঝে হোক না বুঝে হোক তার ব্যাপারে নাক সিটকাতে দেখেছি।
সৈয়দ মহসিন আলী সর্বপ্রথম সংবাদের শিরোনাম হন শপথ নেয়ার পরপরই। তিনি যখন শপথ নিয়ে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে আসেন, তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার সাথে কোনো সংলাপ নয়। সেই সংবাদটিই কোনো কোনো পত্রিকায় এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল যে, তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করার কে? অথচ ভিআইপি বা ভদ্রলোকদের(?) প্রতিনিধি কোনো মন্ত্রী যদি এ রকম মন্তব্য করতেন তাহলে হয়তো অন্যভাবে উপস্থাপন করা হতো। মহসিন আলী দ্বিতীয়বার শিরোনাম হন সিলেটে বিজিবি কর্তৃক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের সামনে মঞ্চে ধূমপান করার কারণে। নিঃসন্দেহে এটি একটি গর্হিত কাজ। মন্ত্রী কেন, কোনো বিবেকবান সচেতন ব্যক্তিরই উচিত নয় এভাবে ধূমপান করা। সমাজকল্যাণমন্ত্রী তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরে তার ফেইসবুকের স্ট্যাটাসে প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে মাফ চেয়েছেন এবং এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আমার জানা মতে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। কোনো মন্ত্রী বা ভিআইপি মর্যাদার কেউ ইতোপূর্বে তার কৃতকর্মের জন্য প্রকাশ্যে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন বলে আমার জানা নেই, কারো জানা থাকলে সেই তথ্যটি দিলে উপকৃত হবো। মহসিন আলী একজন বড় মাপের মানুষ বলেই নিজের দোষ স্বীকার করে নিতে দ্বিধাবোধ করেননি, তাও আবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে।
আর যত্রতত্র গান গাওয়ার জন্য তো তিনি মিডিয়ার শিরোনাম হচ্ছেনই। সর্বশেষ সংসদে বাজেট বক্তৃতায় সৈয়দ মহসিন আলী গান গেয়েছেন বলে বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি সংবাদপত্র শিরোনাম করেছে। এর আগেও গান গাওয়ার কারণে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে তাকে নিয়ে সংবাদ হয়েছে, প্রতিটি সংবাদের সুরই হলো নেতিবাচক। তাদের সংবাদ পরিবেশনের ভাবসাব দেখে মনে হয়, মন্ত্রীরা অভিনয় করতে পারবেন, আবৃত্তি করতে পারবেন কিন্তু গান গাইতে পারবেন না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধানের কোথাও কি লেখা আছে মন্ত্রী হলে গান গাওয়া যাবে না অথবা মন্ত্রীদের গান গাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ? কিংবা বাংলাদেশে কি সংবাদের আকাল পড়েছে যে মহসিন আলীর গান গাওয়া নিয়ে বার বার সংবাদ শিরোনাম করতে হবে? অথচ প্রবাদই আছে- যারা গান পছন্দ করে না, তারা মানুষ খুন করতে পারে। তাহলে মহসিন আলী কি গান ছেড়ে মানুষ খুন করলে আমাদের কতিপয় মিডিয়া খুশিতে বগল বাজাবে?
সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো তিনি নাকি একবার সাংবাদিকদের যাচ্ছে তাই কথাবার্তা বলেছেন। এটাও নিঃসন্দেহে গর্হিত এবং নিন্দনীয় কাজ। বিশেষ করে জাতির বিবেক বলে পরিচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে এবং তাদের নিয়ে অবশ্যই যথাযথ সম্মানের সঙ্গে কথা বলা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমরা যারা সংবাদে মাধ্যমে জড়িত আছি বা ছিলাম, তারা কি সবাই শতভাগ খাঁটি? আমাদের কেউ কেউ কি অর্থ-বিত্তের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছি না? সম্পাদকীয় নীতিমালার সাথে সঙ্গতি রেখে আমরা কি তিলকে তাল করে বা কোনো সংবাদকে টুইস্ট করে অথবা আংশিক প্রকাশ করে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াতে বা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ চরিতার্থে ব্যবহৃত হচ্ছি না? আর সাংবাদিকদের মাঝে রাজনৈতিক বিভাজন তো প্রকাশ্য এবং ভয়াবহ ও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে আজ।
সবশেষে যে কারণে সৈয়দ মহসিন আলী আবারো মিডিয়ার বিশেষ করে কতিপয় সংবাদপত্রের আলোচনা-সমালোচনার খোরাক যুগিয়েছেন তা হলো, তিনি প্রকাশ্যে সিলেটের ডিআইজি এবং মৌলভীবাজারের এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাদের বিষোদগার করেছেন এবং তাদেরকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এমনকি মৌলভীবাজারের এসপির বিরুদ্ধে তিনি টাকার বিনিময়ে জঙ্গিদের পুলিশে চাকরি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়টিকেও কতিপয় সংবাদপত্রে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে চেষ্টা করা হয়েছে; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মহসিন আলীর সমালোচনা করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তো আমরা সবাই সোচ্চার। এ ব্যাপারে সরকারের একজন মন্ত্রী যখন বলেন তখন তো তাকে বাহবা দেয়া উচিত, তা না করে আমরা তার সমালোচনা করছি। তা কতটুকু যৌক্তিক সচেতন মানুষ মাত্রেরই ভেবে দেখার দাবি রাখে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে চারপাশে লেখার উপযোগী এত বিষয় থাকতে একজন মহসিন আলীকেই বেছে নিলাম কেন? কারণ একটাই, আমার কাছে মনে হয়েছে সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলীকে নিয়ে কতিপয় মিডিয়া বাড়াবাড়িই করছে। আর এ বাড়াবাড়ির পেছনে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। মহসিন আলীর সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত পরিচয় নেই। তবে তার নাম শুনে আসছি সেই তরুণ বয়স থেকে, যখন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম। একবার তার বাড়িতে গিয়েছিলাম সম্ভবত আশির দশকের প্রথমদিকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মৌলভীবাজার সফরে গিয়ে তার বাড়িতে উঠেছিলেন। দোষে-গুণে মানুষ সৈয়দ মহসিন আলী উড়ে এসে জুড়ে বসা কোনো নেতা নন, তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজপথের লড়াকু সৈনিক। লোভ-লালসার কাছে কখনো নিজেকে বিক্রি করে দেননি, যেভাবে বিক্রি দেননি বাংলাদেশের হাজার হাজার রাজপথের লড়াকু মুজিব প্রেমিক। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। জীবনবাজি রেখে দেশমাতৃকার ডাকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অন্যদের সঙ্গে তিনিও দলের হাল ধরেছেন শক্ত করে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে রয়েছে তার আত্মার সম্পর্ক। তিনি অনায়াসে মিশে যেতে পারেন যে কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। সমাজের ভদ্রলোকদের কাছে যারা অচ্ছুৎ, ছোটোজাত বলে পরিচিত, তাদের সঙ্গে সখ্য গড়তেও মহসিন আলীর বাধে না। তাই অনায়াসেই তিনি জিতে আসতে পারেন পৌরসভা নির্বাচনে, যদিও দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে একবার তাকে পৌর নির্বাচনে পরাজিত হতে হয়েছিল। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি ঠিকই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আর ২০১৪ সালের কথা নাইবা বললাম।
আগেই বলেছি মহসিন আলীও দোষে-গুণে মানুষ। আর এখন তিনি যেহেতু মন্ত্রী, সুতরাং তাকে ঘিরে যে সুবিধাবাদী কোনো চক্র গড়ে উঠেনি, তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। ক্ষমতায় থাকলে চাটুকার ও স্তাবকের অভাব হয় না। আর বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের কয়জনই বা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন তিনি শতভাগ সৎ। এমনকি যারা সৎ-লোকের শাসন কায়েমের কথা বলেন বা শোষণমুক্ত সমাজ নির্মাণের স্লোগান দেন অথবা তথাকথিত সুশীল নাগরিক কিংবা সাংবাদিক জগতের কতজনই বা শতভাগ সততার দাবি করতে পারবেন। বরং অনেকেই আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। সৈয়দ মহসিন আলী সম্পর্কে আর কিছু না হোক, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় তিনি যা বিশ্বাস করেন তা বলেন এবং তিনি অনেকের চেয়ে অধিক মানবিক গুণের অধিকারী। তাই এতো সমালোচনার মাঝেও গাইতে পারেন ভূপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গান, ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য…’। সুত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.