নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৈশাচিকতা-নৃশংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান হোক কঠোর

১৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯

সিলেটে শিশু রাজনকে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ এখনো চলছে। প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের চারজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং মূল আসামির একজনকে সৌদি আরবে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার সব ধরনের প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে। গত ৮ জুলাই ২০১৫ তারিখে শিশু রাজনকে চুরির অপবাদ দিয়ে মানুষরূপী কিছু অমানুষ তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় এবং এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে লাশ গুম করার সময় স্থানীয় জনতার কাছে একজন ধরা পড়ে। অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা পুরো ঘটনাটিকে ভিডিওতে ধারণ করে। পরবর্তীতে এটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশের সচেতন মানুষরা এ ধরনের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। আটাশ মিনিটের এই ভিডিও ক্লিপটি কোনো সুস্থ, স্বাভাবিক ও মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষের পক্ষে পুরোপুরি প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। কিন্তু ভিডিওতে ধারণকৃত চিত্রে হত্যাকারীদের এমনভাবে উল্লাস করতে দেখা যায় যেন তারা কোনো আনন্দমুখর উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে! মানুষের মধ্য থেকে মনুষ্যত্ব কতটা লোপ পেলে একটি শিশুর ওপর নির্যাতন চালানোর সময় এভাবে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করা সম্ভব তা ভাববার বিষয়। ১৪ জুলাই ২০১৫ তারিখে মানবকণ্ঠসহ সহযোগী সব ক’টি দৈনিকে রাজন হত্যার বিরূদ্ধে গণমানুষের ক্ষোভ, প্রতিবাদ এবং বিচার দাবিতে যে জাগরণ তৈরির সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, এদেশের অধিকাংশ মানুষের অবস্থান অন্যায়, অপরাধ এবং সব ধরনের অরাজকতার বিরুদ্ধে। মূল আসামি কামরুলকে গ্রেফতারের ব্যাপারে সৌদি প্রবাসীদের ভূমিকা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আমরা তাদের আন্তরিক সাধুবাদ জানাই।
ইতোমধ্যে রাজনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রকাশিত রিপোর্টে রাজনের শরীরে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মাথায় আঘাত করে মাথার হাড় চূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। রাজনের শরীরে অন্তত দুই লিটার পরিমাণ রক্ত জমাট বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং চরম আঘাতে রাজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর থেকেই প্রমাণ হয়, ছোট্ট এই শিশুটির ওপর কী নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল। এলাকাবাসী রাজনকে একজন ভালো চরিত্রের ছেলে বলেই জানত এবং সে যে একজন পুরোপুরি সুস্থ একটি শিশু নয় বলেও অনেকে তথ্য দিয়েছেন। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী রাজন দু’বছর আগেও স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারত না, যদিও তার বয়স তেরো পেরোচ্ছিল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত রাজনের ভিডিও চিত্রও এলাকাবাসীর এই বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত করে। চিত্রে ক্রন্দনরত রাজনকে কোনোভাবেই পরিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠা একটি শিশু বলে মনে হয়নি। কিন্তু দুর্বৃত্তদের এসব কিছুই নজরে পড়েনি। তারা তাদের উš§ত্ততায় এতই ব্যস্ত ছিল যে, কোনো মানবিক বোধই এদের মধ্যে জাগ্রত হতে পারেনি।
আমাদের সমাজে প্রায় প্রতিনিয়তই নানা রকম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। তবে রাজন হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা সব কিছুকে যেন ছাড়িয়ে গেছে। রাজনের কান্নামাখা করুণ মুখ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে শুধু আন্দোলিতই করেনি সীমাহীন মর্মবেদনায় বিবেকের আয়নার সামনে দাঁড়াতেও বাধ্য করেছে। মুখ থুবড়ে পড়া মনুষ্যত্বকে আবারো একবার নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে বলে গেছে, সমাজের অভ্যন্তরে সব ধরনের অন্যায়, অবিচার, অনাচারের বিরুদ্ধে নির্লিপ্ত থাকার আর কারো কোনো সুযোগ নেই। অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে আমাদের সবার নির্লিপ্ততাই রাজনদের অকালে চলে যাওয়ার জন্য দায়ী। শুধু রাজন নয়, সব ধরনের পৈশাচিকতা-নৃশংসতার বিরুদ্ধে সবার কঠোর অবস্থান নিতে হবে। অপরাধীদের বিচারও নিশ্চিত করতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতিই যে অপরাধীদের এভাবে বেপরোয়া করে তুলছে তা আর অস্বীকার করার জো নেই। সুতরাং রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার। রাজন হত্যার বিচার দ্রুত হোক এবং তা হোক দৃষ্টান্তযোগ্য এটাই কাম্য।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.