নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোলকধাঁধায় বিএনপি

২১ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:১২

ভবিষ্যৎ রাজনীতির গন্তব্য নিয়ে গোলকধাঁধার মধ্যে পড়েছে বিএনপি। নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রেখে দলের ঐক্য ধরে রাখাই যেন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের দুই বছর পূর্ণ হবে আসছে জানুয়ারিতে। কিন্তু নতুন জাতীয় নির্বাচন আদায়ের কোনো লক্ষণ এখনো স্পষ্ট নয়। এমনকি আন্দোলনের মাধ্যমে সহসা নির্বাচন আদায়ের দাবি পূরণের আশাও দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন আদায়ে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনও আপাতত বন্ধ। শীর্ষ নেতাদের অনেকেই হয় কারাগারে নয় আত্মগোপনে। তৃণমূল নেতাকর্মীরাও দমন নির্যাতনে দিশাহারা। অনেকেই নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে দল ত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে দল ভাঙনের আশঙ্কা ও গুঞ্জনও রয়েছে। জোটের ঐক্য থাকবে কি-না তা নিয়েও রয়েছে ভিন্নমত। বিশেষ করে জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে পথচলা নিয়ে বিএনপির মধ্যেই দ্বিমত রয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দল ভাঙনের ষড়যন্ত্র রুখতেই প্রস্তুতি নিয়েও পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব যাননি। প্রতি বছরই তিনি সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে ওমরাহ পালন করে থাকেন। এবারো ওমরাহ পালনে সফরসঙ্গীসহ খালেদা জিয়া ভিসা করেছিলেন। গত ৮ জুলাই তার দুই সপ্তাহের সফরে সৌদি যাওয়ার কথা ছিল। তার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও সৌদি আরব আসার প্রস্তুতি ছিল। শেষ মুহূর্তে তিনি তার সৌদি সফর বাতিল করেন। জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও তার অনুপস্থিতি দল ভাঙনের চক্রান্ত হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই খালেদা জিয়া তার সৌদি আরব সফর বাতিল করেছেন। এমনকি দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকেও খালেদা জিয়া দল ভাঙনের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, দল ভাঙনের ষড়যন্ত্র না করে যারা দল ছাড়তে চান তারা যেতে পারেন। দলের মধ্যে যে কোনো ধরনের বিভেদ সৃষ্টি না করতে নেতাদের তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন। অন্যদিকে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের জামিনে মুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়েও তৈরি হচ্ছে জটিলতা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উচ্চ আদালতে জামিন পেলেও কয়েক দফা সরকার জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করে। অবশেষে আপিল বিভাগও ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিন বহাল রাখে। দীর্ঘ ৬ মাসের বেশি সময় কারাগারে থেকে গত মঙ্গলবার তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি পেয়ে তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য তিনি খুব শিগগিরই বিদেশ যাবেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামছুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবীর রিজভী আহমেদ, আমান উল্লাহ আমানসহ অনেকেই জামিন পেয়েও সরকার পক্ষ আপিল করায় মুক্তি পাচ্ছেন না। যারাও মুক্তি পাচ্ছেন তারাও এ মুহূতে দলের কাজে সক্রিয় না হয়ে কিছুটা সময় নিতে চাইছেন।
এদিকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে ছয় মাসের দীর্ঘ আন্দোলনে কোনো সাফল্য না আসায় ঘরে-বাইরে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ব্যাকফুটে রয়েছে। আন্দোলনে সফলতা দূরের কথা বরং উল্টো সরকারের দমন-নিপীড়নের মুখে পড়ে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থাই বিপর্যস্ত। একটি কার্যকর রাজনৈতিক রণকৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে সহসা আন্দোলনে ফিরে আসার বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না নতুনভাবে তাদের আন্দোলন কবে শুরু হবে। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে দল পুনর্গঠনের কাজ করছেন। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও সাম্প্রতিক একাধিক সভায় জানিয়েছেন, দল পুনর্গঠনের মাধ্যমে বিএনপি খুব শিগগিরই আন্দোলনে ফিরবে। কিন্তু আন্দোলন থেকে সরে আসার চার মাস পেরিয়ে গেলেও দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াই এখনো শুরু হয়নি। রোজার মাসে ইফতার মাহফিল ছাড়া তেমন কোনো কর্মসূচিও ছিল না বিএনপির। এর মধ্যে গত ৬ জুলাই সোমবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বিগত সময়ের আন্দোলন পরবর্তী সময়ে এটাই বিএনপির শীর্ষ নেতাদের প্রথম বৈঠক ছিল। বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, সারোয়ারি রহমান, নজরুল ইসলাম খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, শাহজাহান ওমর ও যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা করেছেন। দল পুনগর্ঠনে নেতাদের মতামত নিয়েছেন। দল পুনর্গঠনের বিষয়টিই আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে। পাশাপাশি বিগত সময়ের আন্দোলনে দলের যেসব নেতাকর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে দল পুনর্গঠনের বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপির একজন নীতি নির্ধারক জানান, বৈঠকে দল পুনর্গঠনের আলোচনা হলেও কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের মুক্তির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা মানবকণ্ঠকে জানান, আলোচনার এক পর্যায়ে দল ভাঙনের কথা তোলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। তিনি দলের সিনিয়র সব নেতাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে ঈদের পর দল পুনর্গঠনের পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি। নেতাদের সেভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জানা গেছে, ঈদের পরই দল পুনর্গঠন ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটি কার্যকর কর্মপন্থা নির্ধারণে খালেদা জিয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবেন। সূত্র জানায়, বিএনপির এখন সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কারাগারে আটক শীর্ষ নেতাদের মুক্তি না পাওয়া। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দল ও জোটের ভাঙনের কানাঘুষা। দল ভেঙে যাচ্ছেÑ সরকারি দলের নেতাদের এমন বক্তব্য ও দলীয় শীর্ষ নেতাদের একের পর এক টেলিফোন আলাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনাকে মোটেই হালকাভাবে দেখছেন না বিএনপি হাইকমান্ড। দলের ঐক্য ধরে রাখতে তাই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব আপাতত দলের কারো বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। অভ্যন্তরীণভাবে দলের শীর্ষ নেতাদের টেলিফোনে আলাপ-আলোচনার বিষয়ে শুধু সতর্ক করেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, দ্রুত জোটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঈদের পর ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায় দলের নেতাকর্মীরা আরো হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন।
আগামীদিনে বিএনপির রাজনীতির কৌশল কী হবে জানতে চাইলে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন মানবকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে দল পুনর্গঠনে কাজ করছে। কিন্তু দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাগারে থাকায় সে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিএনপি নেতারা জামিন পেলেও সরকারের হস্তক্ষেপে তারা মুক্তি পাচ্ছেন না। কারণ সরকার জানে বিএনপি পুনর্গঠিত হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নামলে তারা তা সামলাতে পারবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি সব ধরনের প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবে। একটু সময় লাগলেও জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নতুন জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকার বাধ্য হবে। কারণ দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে মেনে নেয়নি।
গত এপ্রিলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তাদের লাগাতার অবরোধ-হরতালের কর্মসূচি স্থগিত করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। সরকারের বলপ্রয়োগ ও কারচুপির অভিযোগ তুলে বিএনপি ভোটের দিন নির্বাচন বয়কট করে। কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার চিত্র বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে। সিটি নির্বাচনের পর আন্দোলনে না ফিরে বিএনপি সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দেয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান হচ্ছে না। বিএনপি নেতারা বলছেন, কারাগারে আটক নেতাদের মুক্তি না পাওয়ায় দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া আটকে আছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী আহমেদসহ শীর্ষ নেতাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি। ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এখনো আত্মগোপনে। ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুকসহ অনেকেই মামলা হুলিয়া নিয়ে আছেন দেশের বাইরে। ইচ্ছা থাকলেও নির্যাতন-নিপীড়নের ভয়ে তারা দেশে ফিরতে পারছেন না।
- See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.