নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা সড়ক-নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির ‘ন্যাচারাল ডেথ’ বা স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে মন্তব্য খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের। আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত বা প্রত্যাহারের ঘোষণা ছাড়াই স্মৃতির অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে মাঠের বিরোধী দলের বহুল আলোচিত এ কর্মসূচি। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বছরের ৬ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আন্দোলন ঘোষণার সময়ও আনুষ্ঠানিকতার তেমন কোনো ছাপ ছিল না। গণমাধ্যম কর্মীদের নানা প্রশ্নের একপর্যায়ে এ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। পরে ৫ এপ্রিল খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় থেকে বাসায় ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দৃশ্যত পরিসমাপ্তি ঘটেছিল এ আন্দোলনের। অদ্যাবধি আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার বা স্থগিতের ঘোষণা আসেনি। ফলে এ অবরোধ কর্মসূচি এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা!
যে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হল তা স্থগিত বা প্রত্যাহারের প্রয়োজন বোধ করেনি দলটির নীতিনির্ধারকরা। এর মধ্য দিয়ে দলটির হাইকমান্ড দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের। তাদের মতে, এমন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে সাধারণ মানুষ এমন কি নেতাকর্মীদের মাঝেও নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। যা পরবর্তী আন্দোলনে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশংকা থাকছেই। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে দলটির ভঙ্গুর অবস্থাও ফুটে ওঠেছে। তবে বিএনপি নেতারা মনে করেন, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে স্থগিত বা প্রত্যাহার করা না হলেও বাস্তবে অবরোধ কর্মসূচি নেই।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে অবরোধ স্থগিত বা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়নি। আর এখন তো এর কোনো কার্যকারিতাও নেই। তবে কাগজে-কলমে তা বহাল রয়েছে। কেন ঘোষণা দেয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ন্যাচারাল ডেথ বলতে একটা শব্দ আছে। এটা হয় তো সেরকম হয়েছে।’ অবরোধ শুরুর পর কিছুদিন পর্যন্ত মোটামুটি কার্যকর ছিল বিএনপির এ কর্মসূচি। কিন্তু সেটি ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ে। সারা দেশে টানা নৌ-সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ডাক দিলেও এক সময় রাস্তায় নেমে আসে গাড়ি, সিডিউল অনুযায়ী চলতে থাকে ট্রেন আর লঞ্চ চলাচল সবসময়ই ছিল স্বাভাবিক। এমন অবস্থায় পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে ওই অবরোধ কর্মসূচি।
পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে অবরোধ ঘোষণার সময় এমন কথা বলা হলেও এখনও দেয়া হয়নি সেই নির্দেশ। অবরোধ স্থগিত বা প্রত্যাহারে আদৌও কোনো নির্দেশনা দেয়া হবে কিনা বা এর আগে কেন এমন ঘোষণা দেয়া হল না, সে ব্যাপারে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা কিছুই জানেন না। রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে হাস্যরসের। অনেকেই রসিকতা করে বলছেন, ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপিকে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে না। শুধু সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলে দিলেই চলবে যে, ‘কৌশলগত কারণে আমাদের পূর্বঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি এতদিন শিথিলভাবে পালন করা হয়। এখন থেকে আবার তা লাগাতারভাবে শুরু হবে।’
বতর্মান সরকারের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি নয়াপল্টনে সমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। ওইদিন গুলশান কার্যালয় থেকে নয়াপল্টনে যেতে প্রস্তুতি নেন খালেদা জিয়া। কার্যালয়ে ভেতরে রাখা গাড়িতে ওঠেন তিনি। কিন্তু মূল গেট বন্ধ থাকায় তার পক্ষে বেরোনো সম্ভব হয়নি। এরপর গাড়িতে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইকে দেয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ঘোষণা করেন, অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি। দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত সারা দেশের নৌ-সড়ক ও রেলপথে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ চলবে বলে জানান। এরপর ১৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া আবারও বলেন, পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। ২৬ এপ্রিল গুলশান কার্যালয়ে সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জোটগতভাবে অবরোধ ডাকা হয়েছে। জোটের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আপনারা জানেন, অবরোধ এখন ততটা সক্রিয় নেই।’ এরপর জোটের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি তিনি।
বিএনপির মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা ড. আসাদুজ্জামান রিপন মনে করেন, দলের চেয়ারপারসনের এমন ঘোষণায় ধরে নিতে হবে যে অবরোধ কর্মসূচি আর নেই।
সুত্র
©somewhere in net ltd.