নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
মহামান্য উচ্চ আদালত আজ (২৫ আগস্ট ২০১৫) খুলনা শহরের খান এ সবুর রোড এবং কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের নাম রাজাকার মুক্ত করার লক্ষে এক অবিস্মরণীয় রায় প্রদান করেছেন। এই রায়ের প্রতি আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা। মহামান্য উচ্চ আদালতের এই রায় শুনে আজ কিছুটা আপ্লুত হলাম। সন্দেহ নেই আমার মতো আরো অনেকেই উচ্চ আদালতের নির্দেশনামূলক এই রায়টিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও আবেগের সঙ্গে গ্রহণ করবেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসীরা মহামান্য উচ্চ আদালতের এরূপ রায়কে গভীর শ্রদ্ধা জানাবেন- এ কথা উল্লেখের অবকাশ রাখে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধীদের নামে থাকা সড়ক, স্থাপনা এবং অবকাঠামোর নাম পরিবর্তনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, কেন সেগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করা হবে না তাও মহামান্য উচ্চ আদালতের ওই রায়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই রায়ে আরো জানতে চাওয়া হয়েছে যে, স্বাধীনতা বিরোধীদের নামে ওইসব সড়ক, স্থাপনা বা অবকাঠামোসমূহের নামকরণের পশ্চাতে যারা জড়িত ছিল কেন তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে না? মহামান্য উচ্চ আদালতের এই রায়ে আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছি- এ দেশের আগামী প্রজন্ম রাজাকারের নামমুক্ত সড়কে স্বাধীনতার চেতনায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে চলাচল করতে পারবে। একইভাবে, বিভিন্ন স্থাপনা বা অবকাঠামোসমূহেও তাদের বিচরণ হয়ে উঠবে স্বচ্ছন্দ।
মহামান্য উচ্চ আদালতের এই রায়ে আমরা আরো আশাবাদী হয়ে উঠেছি- আমাদের জাতীয় চেতনা এবং অস্তিত্বের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে লগ্ন হয়ে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা, অবকাঠামো বা এলাকাও দ্রুত রাজাকার-নামমুক্ত হবে এই ভরসায়। বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে যখন সরকার গঠন করে তখন থেকেই আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম- আমরা সত্যিকার অর্থেই রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশে বসবাস করতে পারব। বর্তমান সরকার যখন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তখন আমাদের প্রত্যাশা আরো বেড়ে গিয়েছিল। এ দেশের জাতীয় যে সব সড়ক, স্থাপনা বা অবকাঠামোর সঙ্গে রাজাকারদের নামফলক এমনকি কবরস্থান রয়েছে তাও দ্রুত সরিয়ে ফেলা হবে বলেও আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু বিগত ছয় বছরে সেরকম কোনো উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়েনি। সে জন্য মহামান্য উচ্চ আদালতের আজকের রায়টিকে ‘ঐতিহাসিক রায়’ বলেও আমরা মান্য করি। আর আজকের এই ঐতিহাসিক রায়ের নির্দেশিত প্রেরণায় আমরা চাই- আমাদের গভীরতম প্রত্যাশা মহান জাতীয় সংসদ ভবনের ‘সৌন্দর্য বিনষ্টকারী’ স্বাধীনতা বিরোধী রাজকারদের কবর স্থাপনাগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলা হোক। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রেরণার সঙ্গে সংসদ ভবন চত্বরে রাজাকারদের কবর থাকা সাংঘর্ষিকই শুধু নয় অন্যায়, অনৈতিক, অশোভন এবং ‘অপরাধ’ও বটে। সুতরাং কালবিলম্ব না করে সংসদ ভবন চত্বর রাজাকারের কবর মুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে- এটাই জাতি দেখতে চায়।
২০০৯ সালে জুলাই মাসের ৭ তারিখে দৈনিক ভোরের কাগজে এ বিষয়ে একটি ছোট নিবন্ধ লিখেছিলাম। তার বিষয়বস্তু ছিল জাতীয় সংসদ ভবন চত্বর থেকে রাজাকারদের কবর সরিয়ে ফেলা সংক্রান্ত। সে বছর অর্থাৎ ৩ জুলাই ২০০৯ তারিখে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা সংসদ ভবন চত্বর থেকে রাজাকারদের কবর সরিয়ে ফেলার আবেদন জানিয়ে তৎকালীন মাননীয় স্পিকার মহোদয়ের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেছিলেন। আমার লেখার অবস্থান ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের দাবির পক্ষে। আজ ২৫ আগস্ট ২০১৫ মহামান্য উচ্চ আদালত খুলনা শহরের খান এ সবুর রোড এবং কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজ হলের নাম রাজাকারমুক্ত করার যে নির্দেশনা প্রদান করেছেন তাতে পুরনো সেই বিষয়টি আবার আমার এবং সম্ভবত মুক্তিযোদ্ধাদের সেইসব সন্তানদের মাথায়ও নতুন করে চিন্তার উদ্রেক ঘটাল। আমাদের আবার চিন্তিত হতে ইচ্ছা করে- মহামান্য উচ্চ আদালতের ফরিয়াদ জানাতেও ইচ্ছে করে- সংসদ ভবন চত্বর থেকে কুখ্যাত রাজাকারদের কবরগুলো সরিয়ে আমাদের মহান জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরকেও রাজাকারমুক্ত করা হোক। প্রসঙ্গত, ‘অন-লাইন’-এ ২০১১ সালের পূর্বেকার তথ্য না পাওয়ার জন্য ২০০৯ সালের ৭ জুলাই দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের যথার্থ দাবির পাশে’ শিরোনামের নিবন্ধটি নিম্নে তুলে ধরছি:
“কবর বা সমাধি স্থানান্তর কোনো নতুন বিষয় নয়। জাতীয় জীবন এবং দেশ-হিতৈষী নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গের কবর বা সমাধির স্থানান্তর ইতোপূর্বে আমাদের দেশেও আমরা লক্ষ করেছি। একাধিক বীরশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধার সমাধি বিদেশের ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে এনে এ দেশে পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। এ কথা আমরা সবাই কম-বেশি জানি। জাতীয় এই বীর সন্তানদের সমাধি-স্থান নিয়ে জটিলতাও কম সৃষ্টি হয়নি। পাশাপাশি, মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা রাখা সত্ত্বেও একাধিক স্বাধীনতা বিরোধীর কবর জাতীয় সংসদ ভবনের বুকের ওপর রচিত হয়েছে! জাতির জন্য এরচেয়ে দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে!
৪ জুলাই ২০০৯ দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রপত্রিকায় মুদ্রিত সচিত্র একটি খবর অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। খবরটি ছোট হলেও এর ব্যঞ্জনা অনেক গভীর তাই আমি অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে খবরটি পড়ি এবং খবরটিতে যে দাবির কথা ব্যক্ত হয়েছে তার সঙ্গেও একমত পোষণ করি। ‘জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণ থেকে স্বাধীনতা-বিরোধীদের কবর অন্যত্র স্থানান্তরের দাবিতে সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সংসদ অভিমুখে জাতীয় পতাকা মার্চ এবং মাননীয় স্পিকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান’- শীর্ষক ব্যানার সংবলিত মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ছবি ছিল সেটি। ক্যাপশন থেকে জানা যায় যে, ৩ জুলাই ২০০৯ মুক্তিযোদ্ধাদের এইসব সন্তানরা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ থেকে জাতীয় পতাকা নিয়ে মার্চ শুরু করে সংসদ ভবন প্রাঙ্গনে পৌঁছান। পরে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সংখ্যায় অত্যল্প হলেও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা যে দাবি মাননীয় স্পিকারের কাছে উত্থাপন করেছেন তা মোটেই গৌণ নয়- বরং এটি স্বাধীনতাকামী ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে অবস্থান গ্রহণকারী সব বাঙালিরই প্রাণের দাবি।
একদলীয় শাসনের অপবাদ আওয়ামী লীগের কাঁধের ওপর চাপিয়ে একদা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী-বলয়ের নিশ্চুপ ভূমিকা জিয়া শাসনামলের বহুদলীয় গণতন্ত্রায়নের প্রতিমূর্তিকে কিভাবে প্রতিষ্ঠা করে তা বোঝা কষ্ট হলেও জিয়াউর রহমানের তল্পিবাহকদের কাছে সেটিই নাকি এ দেশে সুশাসনের স্বর্ণযুগ বলে কথিত। এই ‘সব সম্ভবের দেশে’- এমনটিই হয়ে থাকে! এরকমই হয়! যেমন জিয়াউর রহমান শাসনামলে সব রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীই স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তির ঝাণ্ডাবাহীতে পরিণত হতে পেরেছিল- আর কর্নেল তাহেরসহ দেশপ্রেমিক অনেক সেনা অফিসারকে প্রাণও দিতে হয়েছিল জিয়াউর রহমানেরই লেলিহান ক্ষমতার লোভে।
কীর্তিমানের কীর্তির আর শেষ নেই! রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা একাকার করতে জিয়াউর রহমান সুচতুর কৌশলে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’-বির্তকের মাধ্যমে বাঙালির সহস্রবর্ষের চেতনার জগতকে দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন। খণ্ডিত জাতীয়তার বোধে উৎসাহী করে তুলতে জিয়াউর রহমানকে সেইসব বুদ্ধিজীবীরাই পালে বাতাস দিয়েছিলেন- রাজনৈতিকভাবে যারা আওয়ামী বিদ্বেষী এবং অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষা করার অতন্দ্র প্রহরী। সামরিক শাসক থেকে গণতন্ত্রায়নের পথে হাঁটার জন্য জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে সেইসব বুদ্ধিজীবীদেরই প্রয়োজন ছিল যারা বানিয়ে তোলা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ বিতর্কের পালে হাওয়া দিতে ঘটের বুদ্ধি নিগড়ে দিয়েছিলেন। বিনিময়ে তারা পেয়েছিলেন মাত্রাহীন যশোলাভ-খ্যাতিলাভ আর ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’- সূত্র থেকে অর্থলাভও বটে!
প্রমাণিত ও কুখ্যাত রাজাকার আলবদররা এই বিতর্কে সহযোগিতা করায় তারা রাজকীয় সম্মানেও ভূষিত হয়েছিলেন তথাকথিত স্বর্ণযুগে। এরূপই এক স্বর্ণ যুগে জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম প্রান্তে জাতীয় সংসদ ভবনের নিজস্ব স্থানে স্বাধীনতা বিরোধীদের (এবং সম্ভবত যুদ্ধাপরাধীও বটে) কবরস্থ করা হয়।
লাখো প্রাণের রক্ত আর হাজারো নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশের মহান সংসদের একেবারে নাকের ডগায় রচনা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চরম বিরোধিতাকারী ব্যক্তিবর্গের কবর। স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মহান জাতীয় সংসদের পাশে থাকা এ কবরগুলো স্থানান্তর তাই জাতীয় দায়িত্বের আওতায় চলে আসে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পতাকা মার্চ তাই সময়োচিত দাবি বলে বিবেচনা করি। প্রসঙ্গত, বর্তমান সংসদে নানা বিষয়ের তদন্ত হচ্ছে। এসব তদন্তের ফলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ‘কেঁচো’ খুঁড়তে প্রকাণ্ড সব ‘সাপ’ বের হচ্ছে। আর সমগ্র জাতি জানতে পারছে ‘তথাকথিত-নীতিবাগিশ’ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এমনকি মহান সংসদের স্পিকার ও হুইপ সাহেবদের কুকীর্তির খতিয়ান। তাই আমরা মনে করি, সংসদ ভবন চত্বরে যে অনাকাক্সিক্ষত কবরগুলো দেখতে পাই তা সংসদের স্থাপত্য নকশার সৌন্দর্যহানি করে কিনা তারও তদন্ত হওয়া জরুরি। আরো তদন্ত হওয়া জরুরি যে, যথাযথ রীতি-পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে এসব কবর স্থাপন করা হয়েছিল কিনা। নিয়ম মাফিক হলেও সময়ের প্রয়োজনে, যুগের প্রয়োজনে, সচেতনতার প্রয়োজনে সর্বোপরি মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের জাতীয় সংসদ ভবন চত্বর থেকে রাজাকার ও স্বাধীনতা বিরোধীদের কবর স্থানান্তরের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার মহোদয়ের কাছে যে দাবি পেশ করা হয়েছে সে বিষয়ে সুবিবেচনা প্রত্যাশা করছি। তারুণ্যের যে দাবি উঠেছে তাকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।”
সুত্র
২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩
শয়তানের নাতী বলেছেন: রাজাকার মুক্ত দেশ গোড়বেন ভালো কথা, রাজাকার মুক্ত মন্ত্রী পরিষদ গোড়বেন কবে ???????????
৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮
তালপাতারসেপাই বলেছেন: " গোড়বেন" মানে কি?
রাজাকার মুক্ত দেশ গড়ার দায় আপনারও
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:৪৮
অদৃশ্য যোদ্ধা বলেছেন: আমি আপনার সাথে একমত। স্বাধীনতা বিরোধীদের স্থান বাংলাদেশে হওয়া উচিত নয়। হলেও সংসদ ভবন চত্বরে রাজাকার কুত্তাদের সমাধী কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।