নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাম্প্রতিক রাজনীতির একটি পর্যালোচনা

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৪০

এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিএনপির রাজনীতির নামে সন্ত্রাসের পর এখন দেশে এক ধরনের শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। মানুষ তাতে খুশি। নির্বিঘ্নে মানুষ তাদের কাজকর্ম করতে পারছে। এই শান্তি এবং স্থিতিশীলতাই স্বাভাবিক জীবন যাপন ও কাজকর্মের নিশ্চয়তা দেয়। ফলে উন্নয়নের পথও সুগম করে। অবরোধ ও হরতাল ডেকে এবং পেট্রল বোমা মেরে উৎপাদন ও উন্নয়ন ঘটানো যায় না। তেমনি গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আর এই ধ্বংসাত্মক কাজটিতেই নিয়োজিত হয়েছিল বিএনপি। তাই তাদের তথাকথিত আন্দোলনকে কোন 'যৌক্তিক পরিণতিতে' পেঁৗছাতে তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়। তাদের আন্দোলন আসলে ছিল একটি গণবিচ্ছিন্ন এবং গণবিরোধী আন্দোলন। আর তাই এই লজ্জাজনক ব্যর্থতা। সেই সঙ্গে দেশে এক ভয়াবহ আতঙ্কের সৃষ্টি হলো। পেট্রল বোমার আগুনে বেশ কিছু নিরীহ মানুষ মারা গেল। কিন্তু আজ ছয় মাস পরেও যখন সেই সব অগি্ন সন্ত্রাসীদের বিচারের তেমন কোন তোড়জোড় দেখছি না, বিশেষত মূল হোতাদের, তখন মানুষ বিস্মিত এবং হতাশ হচ্ছে, প্রসঙ্গক্রমে এটা বলা দরকার, এই বিচারহীনতা কিংবা বিচারের বিলম্ব দেশে সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি উৎসাহিত হওয়ার একটি বড় কারণ।
যা হোক, বর্তমান সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা এবং সমালোচনা সত্ত্বেও এটা স্বীকার করতে হবে যে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ব্যাপারে তাদের সাফল্য প্রশংসনীয়। উন্নয়নের আগে 'অর্থনৈতিক' শব্দটির সংযোজন দরকার ছিল বলে অনেকের কাছে মনে হবে না। কারণ উন্নয়ন বলতে সাধারণত অর্থনৈতিক উন্নয়নই বোঝায়। কিন্তু রাজনৈতিক উন্নয়ন তথা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের সম্প্রসারণও উন্নয়নের অংশ। দুটোই পাশাপাশি চলতে পারে এবং চলা দরকার। জনগণের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন যেমন দরকার, তেমনি দরকার রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। দেশে বেশ কিছু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বহাল আছে। কিন্তু তাদের খুব সক্রিয় বলে মনে হয় না। এ ব্যাপারে বেশ কিছু সরকারি উদ্যোগ মানুষ আশা করে। বিএনপির গণবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পর দেশে কোন কার্যকর বিরোধী দল দেখা যাচ্ছে না। অথচ বিরোধী দল গণতন্ত্রের অপরিহার্য অংশ। তবে সেটা হবে সত্যিকার দায়িত্বশীল এবং গণমুী বিরোধী দল।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে বর্তমান সরকারের কৃতিত্বের কথা আগেই বলা হয়েছে। সেগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা না দিলে প্রশংসাটি নেহায়েতই স্তূতিবাক্যে পরিণত হবে। খাদ্যাভাব তথা ক্ষুধা এবং অনাহার আমাদের একটি দীর্ঘদিনের বড় সমস্যা। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে বিদেশে খাদ্য রপ্তানি শুরু করেছে। খাদ্য উৎপাদনে আমাদের এই সাফল্য বহাল থাকলে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন করতে পারব। উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতের গুরুত্ব বিরাট। বিএনপি আমলে ব্যাপক বিদ্যুৎ সঙ্কটের কথা কারও অজানা নয়। বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উপাদন দ্বিগুণের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা বিস্তারে এ সরকারের উদ্যোগ দেশ বিদেশে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সর্বজননী প্রাথমিক শিক্ষায় তাদের কৃতিত্ব আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। তাছাড়া সর্বস্তরে শিক্ষায় উন্নয়নে তারা নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছেন। স্বাস্থ্য খাতে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানাবিধু উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানাতে হয়। তবে বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় সরকারের আরও অধিক করণীয় আছে। জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদনেও আমাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক। প্রশংসনীয় অগ্রগতির জন্য তার হার বর্তমান ৬ শতাংশের স্থানে ৭ শতাংশ হওয়া উচিত। তবে সম্প্রতি আশার কথা শুনিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা অউই। তাদের মনে চলমান অর্থনৈতিক বছরে জিডিপির হার বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৭ শতাংশে উন্নীত হবে, যা ৭ শতাংশের কাছাকাছি। তবে ইতিমধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী আমরা একটি স্বল্প মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি। এখন আমাদের মাথাপিছু গড় আয় ১৩২৩ ডলার এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। সর্বোপরি দেশে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। পরিশেষে বলা যায়, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধু ইতিবাচক নয়, আশাব্যঞ্জকও বটে। আর এ ব্যাপারে বর্তমান সরকারকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারা যায় না।
কিন্তু তাতে গণতন্ত্রের জন্য মানুষের প্রবল আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি ঘটেছে বলা যাবে না। যথাযথ, নির্বাচন, আইনের শাসন ও সুশাসন এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকায়ন সংবলিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও রাজনীতির জন্য মানুষের চাহিদা সর্বজনীন। নানা প্রতিকূলতা এবং বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের একটি দুর্বার আকর্ষণ আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন। কারণ গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন। জনগণের ক্ষমতায়নই কেবল জনগণের শাসন নিশ্চিত করতে পারবে। জনগণের ক্ষমতায়নের কাজটি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না, যেমনটা গুরুত্ব পাচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন।
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে দুটি রাজনৈতিক দল দেশের রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। একটি বর্তমান শাসক দল আওয়ামী লীগ। অন্যটি বিএনপি, যদিও বর্তমান সংসদে তাদের অস্তিত্ব নেই। তবু কার্যত মানুষের কাছে তারাই বিরোধী দল বলে পরিচিত। দুটো দলই এতদিন যাবত পালাক্রমে দেশ শাসন করে এসেছে। দুটো দলেরই বেশ কয়েকটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য আছে। একটি হলো তাদের নেতৃত্ব ব্যক্তিকেন্দ্রিক। এক ব্যক্তি শীর্ষ নেতৃত্বের অধিকারী। শীর্ষ নেত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী দল পরিচালিত হয়। বলা যায়, তিনি প্রায় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আমরা সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সরকারি দলে টনি এবটের নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়া দেখলাম। দলের সর্বস্তরের সদস্য এবং নেতারা চাইল না বলে এবট সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন। আমাদের দেশে তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের বড় নেতৃবৃন্দ শীর্ষ নেত্রীর আদেশ-নির্দেশ পালনকারী মাত্র। এর ব্যতিক্রম হলে অধস্তনদের দলে কোন গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যক্রম ভূমিকা পালন করা অসম্ভব। এ ধরনের স্বৈরতান্ত্রিকতা বিএনপিতেই বেশি, যা দলের সাবেক মহাসচিব মান্নান ভঁূইয়াকে কোন কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া বহিষ্কারের ঘটনায় প্রমাণিত হয়। আওয়ামী লীগে শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা শোনা যায়। যদিও শেষ পর্যন্ত দল প্রধানের ইচ্ছাটিই প্রাধান্য পায়। তাই সেটিতেও গণতন্ত্র চর্চা বেজায় দুর্বল।
তবে বিএনপির ব্যবস্থাপনা অনেকটাই স্বৈরচারী এবং দল প্রধান তার জ্যেষ্ঠপুত্রের কথায় চলেন বলে জোর গুজব আছে। তাছাড়া উপরোক্ত ছেলেকে দল ও দেশের ক্ষমতার সিংহাসনে বসানোর বিষয়টিই দলীয় নেত্রীর কাছে প্রাধান্য পায় বলে জনমনে ধারণা। এটাও বলা দরকার, আওয়ামী লীগ একটি পুরনো দল, যাদের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস আছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আওয়ামী লীগের অবদান অতুলনীয়।
বিএনপির জন্ম সেনাছাউনিতে। এর দলীয় ম্যানিফেস্টো এবং বাস্তব কাজকর্ম (যেমন পেট্রল বোমা মারা) গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ব্যাপারে মানুষকে আশাবাদী করে না। অন্যদিকে বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার সন্তোষজনক উন্নয়ন কর্মকা-ে দেশবাসীকে উপহার দিচ্ছে। তার সঙ্গে দেশে একটি বেসামরিক সরকার, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহ (তারা যতই দুর্বল হোক) এবং সংবিধানের উপস্থিতি জনগণকে আশ্বস্ত করে। এখানে দুই নেত্রীর তফাতটিও ধরা পড়ে। এক নেত্রী স্বল্পশিক্ষিত ও দূরদৃষ্টি এবং প্রজ্ঞাহীন। একটি দেশ পরিচালনার জন্য দূরদৃষ্টি ও প্রজ্ঞার প্রয়োজন আছে। তাছাড়া ব্যক্তিগত সত্য এবং সততা প্রীতিও দরকার হয়। ৪টি জন্মদিন ব্যক্তিগত সততাকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এর বিপরীতে অন্য নেত্রী শিক্ষিত, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং দেশ ও দশকে কিছু দিতে চায় বলে প্রতীয়মান হয়। তাই তাদের একটি ঠরংরড়হ বা রূপকল্প আছে। আর বিশ্বাস হয়, তারা একটি গরংংরড়হ বা ব্রত নিয়ে কাজ করছে। এর ফলেই উপরোক্ত উন্নয়নসমূহ ঘটছে। তবে ক্ষমতাসীন দলকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে এক ধরনের অহমিকাবোধ এবং বেপরোয়া মনোভাব যেন তাদের পেয়ে না বসে। ক্ষমতার দর্প অনেক সময় দল ও দেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
- See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.