নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
লন্ডন সফরে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দাবি করে আসছেন, শেখ হাসিনার শাসনে বাংলাদেশ এখন 'গণতন্ত্রহীন'। লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা 'গার্ডিয়ান' খালেদা জিয়ার বয়ান প্রকাশ করেছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের বক্তব্য আসে; তারা আওয়ামী লীগ সরকারের কার্যক্রমের সমালোচনা করেন। আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কর্তৃত্বমূলক শাসন এখন এক ব্যক্তির শাসনের দিকে যাচ্ছে। এর ফল হিসেবে গণতন্ত্র এখন খাদের কিনারায়। বাংলাদেশ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দাবি করে মাহফুজ আনাম বলেন, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নিঃশেষ করে ফেলছে। এখন গণমাধ্যমের সমালোচনায় নেমেছে। বিরুদ্ধ মত সহ্য করতে পারছে না তারা। বাংলাদেশের পরিস্থিতি অবনতিশীল দাবি করে তার প্রভাব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও সুখকর হবে না বলে মন্তব্য করেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক।
এসব কথার উত্তর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গার্ডিয়ানকে দিয়েছেন। গার্ডিয়ান শেখ হাসিনার জবাব খালেদা জিয়ার লন্ডনে অবস্থান কালেই প্রকাশ করেছে। পাঠক তা পড়েছেন। বিএনপি জামায়াতের বাদ্যবাদক হয়ে যারা মাঠে নেমেছেন নানান নামের আড়ালে, নানান ভেক ধরে তাদের মনের মাধুরী মেশানো কাব্যই গণতন্ত্র, এমন নয়।
গণতন্ত্রের আরো কার্যকর সংস্থা আছে। যারা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসে সব ক্ষমতা বগলদাবা করেছিলেন, ক্ষমতায় বসে দল গঠন করেছিল, রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে ছিল, নিজেই নিজেকে সেনাপ্রধান ঘোষণা দিয়েছিল আইয়ুব খানের মতো, গণভোটের প্রহসন করেছিল, তাদের গণতন্ত্র বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে চারদলীয় জোটের ভয়াবহ গণতন্ত্র সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। ওই সময়ের গণতন্ত্রের ১০ ট্রাক অস্ত্র এসে পেঁৗছেছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। এই অস্ত্র আনা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে চিরতরে নির্মূল করার জন্য। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এই অস্ত্র পাঠানোর চক্রান্ত চলছিল।
বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের ভয়াবহ চেহারা দেখেছে ২১ আগস্ট আর ১৭ আগস্টে। এক অদ্ভুত রক্তাক্ত গণতন্ত্র কায়েম করেছিল বাংলাভাই ও শায়খ রহমানরা। তাদের পক্ষে সাফাই গেয়েছিল চারদলীয় জোট সরকার। সংখ্যালঘু নিরীহ নরনারী, শিশুর ওপর বর্ণনাতীত, জঘন্য গণতন্ত্রের নির্যাতন নেমে এসেছিল তখন। চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মহুরীর মৃত্যুদৃশ্যটি গণতন্ত্রের প্রকট চেহারা নিয়ে ফুটে উঠেছিল। তখন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা বিতাড়িত হয়ে গোপালগঞ্জে এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অফিসে আশ্রয় নিয়েছিল। সংখ্যালঘু পরিবারের ছোট ছোট মেয়েরা ধর্ষিতা হয়েছিল। এক অসহায় মা বলেছিল 'বাবারা তোমরা একজন একজন করে যাও, আমার মেয়েটা ছোট।' এমন পাশবিক গণতন্ত্রও আমরা দেখেছি। এমন গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিল ইসলামের ধ্বজাধারীরা। বিসমিল্লাহর খাদেনরা।
এক শিশুকে পিতার কোল থেকে কেড়ে নিয়ে আছাড় দিয়ে মেরে ফেলেছিল এই জন্য যে, শিশুটি বড় হলে নৌকায় ভোট দেবে। গণতন্ত্রের এমনটি বীভৎস চেহারা আমরা দেখেছি।
বিএনপির বাদ্যবাদকরা মনে করেন, যেহেতু ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অংশগ্রহণ করেনি, সেহেতু ওই নির্বাচনের মাধ্যমে কোনো গণতন্ত্র কায়েম হয়নি। জামায়াত একটি অশুভ শক্তি, এ কথা না হয় আপাতত ছেড়েই দিলাম। বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন বয়কট করার মধ্যে কতটুকু গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছিল? ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের টার্মে খালেদা জিয়া ও নিজামীরা কতদিন সংসদে উপস্থিত থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা করেছিলেন? বিরোধীদলীয় নেত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার জাতীয় সংসদে অনুপস্থিত বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছে। খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তিনি নাকি ক্ষমতায় এলে গোপালগঞ্জের নাম পাল্টে দেবেন। এসব কথা কতটুকু গণতন্ত্রের অনুকূল? হুমকি দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া যে, শেখ হাসিনার পালাবারই পথ খুঁজে পাবেন না। এসব কথাই বা কতটুকু গণতন্ত্রের অনুকূলে?
এরপর নির্বাচন প্রতিহত করার নামে খালেদা জিয়া হুকুম দিয়ে শতশত মানুষ পুড়িয়েছেন পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। গণতন্ত্রের বাজনা বাজিয়ে এর দায় তিনি এড়াতে পারবেন না। নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা এবং তা যুদ্ধ ঘোষণার মতো গণতন্ত্রের পর্যায় পড়ে না। মানুষ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে না যেতে পারে তার জন্য জঙ্গিরা, শিবিরের ক্যাডাররা, বিএনপি-জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা তা-ব সৃষ্টি করেছিল। তার পরেও ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের চেয়ে তিনগুণ বেশি ভোটার হাজির হয়েছিল। ১৫ ফেব্রুয়ারিতে কিন্তু আওয়ামী লীগ কোনো অস্ত্রবাজি করেনি, ৫ জানুয়ারির চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারিতে পরিবেশ অনেক ভালো ছিল। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এরশাদ সাহেব দমে দমে শেখ হাসিনাকে মোচড়ে ফেলে বিএনপি-জামায়াতকে মনোবল জোগান দিয়েছিলেন। এরশাদ সাহেব গণজাগরণ মঞ্চেরও বিরোধিতা করেছিলেন এবং হেফাজতের জামায়াত খাদ্য জোগান দিয়েছিলেন। তবুও বেগম জিয়া শেখ হাসিনাকে প্রতিহত করতে পারেননি।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বেগম জিয়াকে অংশগ্রহণ করার সব রকম স্পেস দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া তা গ্রাহ্য করেননি। বেগম জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুল এটি। এই ভুলের খেসারত জনগণ দেবে কেন? রাজনীতিতে খালেদা জিয়া পলিসি প্রয়োগের চেয়ে অহমিকা প্রয়োগ করেন অনেক বেশি। শেখ হাসিনা যখন বেগম জিয়াকে টেলিফোন করেছিলেন তখন অনেক ইতিবাচক ঘটনাই ঘটতে পারত, গণতন্ত্রের স্বর্ণদুয়ার খুলে যেতে পারত। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে নূ্যনতম সৌজন্য দেখাননি। শেখ হাসিনাকে কোনো তোয়াক্কাই করেননি তিনি। ১৫ আগস্টের মতো একটি শোকের দিনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যিনি কৃত্রিম জন্মদিন পালন করেন, তার আচরণে সৌজন্যের প্রকাশ পাওয়া কঠিন। প্রধানমন্ত্রী অনেকবার বেগম জিয়াকে অনুরোধ করেছেন এই দিনটিতে জন্মদিন পালন না করতে। এই অনুরোধটি রক্ষা করলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ গঠনে সহায়ক হতো। রাজনীতিতে মানবতার পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন আছে, বড় মনের পরিচয় দেয়ারও প্রয়োজন আছে। বঙ্গবন্ধু তা দিয়েছেন। শেখ হাসিনাও দিয়েছেন। আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ছুটে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়াকে সান্ত্বনা দিতে, বেগম জিয়া তার কোনো মূল্য দেননি। তার দুয়ারে ১০ মিনেট দাঁড়িয়ে থেকে ফেরত এসেছিলেন। গণতন্ত্র তো সৌজন্য বোধেরই বহিঃপ্রকাশ। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করা কোন ধরনের গণতন্ত্র?
তারেক জিয়া লন্ডনে বাস স্বাধীনতার স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কদর্যমূলক বক্তব্য দিয়ে অসম্মান করেই যাচ্ছেন। এর পরিণাম কী হবে বিএনপির বাদ্যবাদকরা তা জানেন না? এতে রেষারেষি বাড়বে, জেদাজেদি বাড়বে, পরিবেশ উত্তপ্ত হবে, গণতন্ত্রের পরিবেশ খান খান হতে যাবে। জাতির পিতাকে অপমান করা কোন ধরনের গণতন্ত্র? অবশ্য এখন বিএনপির কৌশল হচ্ছে আসাদুজ্জামান রিপন ভালো ভালো কথা বলবেন আর তারেক জিয়া খারাপ খারাপ কথা বলবেন। বিএনপি নাকি গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে ব্যস্ত। তারেক জিয়ার ধৃষ্টতামূলক উক্তিগুলো গণতন্ত্র এনে দেবে? নাকি বিএনপির বাদ্যবাদকরা মনে করেন, বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলে গণতন্ত্র হয় না?
মনের মাধুরী মিশিয়ে মন গড়া সংজ্ঞা দিয়ে গণতন্ত্রকে দাঁড় করাতে চাইলে জনগণ তা মানবে কেন? যুদ্ধাপরাধীরা গণতন্ত্রের যে সংজ্ঞা দেবে, আমরা তা মানতে পারি না।
সুত্র
২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:২৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
শেখ হাসিনা ৩৪ বছর, খালেদা জিয়া ৩২ বছর, এরশাদ ৩০ বছর পার্টির সভাপতি; বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই।
৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০৪
গেম চেঞ্জার বলেছেন: গনতন্ত্র দিয়ে কি হইপে? ফ্রাই না আলুর দম?
৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০৫
© ইমদাদুল আজাদ বলেছেন: আপনার বক্তব্যটিও গণতন্ত্রের মধ্যে পড়ে না !!
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:০৬
বর্নিল বলেছেন: দরকার নাই গনতন্ত্রের।আমরা সর্বোচ্চ ভালটাই অাছি।