নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্বন্ধে জানাতে আগ্রহী নই....

ওয়ায়েস তামিম

আমি তামিম

ওয়ায়েস তামিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

না পৌঁছানো চিঠি -২

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৫৫

" জানো,তোমার বিয়ের রাতে আমি অনেকক্ষণ ধরে আউটার স্টেডিয়ামের সামনে বসে ছিলাম।আশেপাশে অনেকে ছিলো.....
খানিকটা দূরে দিল্লী দরবার আর দ্যা গ্যালারির মধ্যে শয়ে শয়ে লোক ঢুকছিলো আর বের হচ্ছিলো।উৎসব উৎসব একটা ভাব।

আমার সেসব দেখে বড় হিংসে হয়েছিলো।মানুষ এত সুখী কেন?

যেখানে আমি ছিলাম,সেখান থেকে কয়েক কদম দূরেই তুমি ছিলে।আমার বড় ইচ্ছে হচ্ছিলো,কয়েক কদম হেঁটেই চট্টগ্রাম ক্লাবে ঢুকে যাই....তোমার বিয়েটা দেখে আসি।পারিনি।তোমাকে বউ সাজে অন্য কারো বুকের বাম পাশে হাত রেখে হাসিমুখে ছবি তোলার দৃশ্য সহ্য করতে পারবো কিনা,এটা নিয়ে আমার সন্দেহ ছিলো।অনেক রাতে তোমাকে নিয়ে কালো গাড়িটা ক্লাব থেকে বের হয়ে আমার চোখের সামনে দিয়ে চলে যায়।আমি তখনো সেখানে বসে ছিলাম।গাড়ির ভেতর থেকে কি তুমি আমাকে দেখেছিলে?নাকি চোখের পানিতে মেকাপ নষ্ট না হওয়ার দিকেই তোমার সবটুকু মনযোগ ছিলো?

এরপরের কয়েকটা দিন বড় কষ্টে কেটেছে....তুমি আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলে।সকালে উঠেই তোমার মেসেজ দেখা,সারাদিন ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে কথা বলা,এতকিছুতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম।হঠাৎ করেই মনে হতো,গলার কাছটায় কিছু একটা আটকে আছে।কি তীব্র যন্ত্রণা!তোমার সাথে একটু কথা বলতে ছটফট করতাম,পারতাম না একদমই।

তবে একটা সময় এসে আমি অভ্যস্ত হই।সব ধাক্কা সামলে নিয়ে আবার চলা শুরু করি।ভার্সিটিতে নিয়মিত ক্লাস,পরীক্ষা....এতসবের মধ্যে তোমাকে মনে পড়ার ফুরসত ছিল কই?তাছাড়া বিয়ের কিছুদিন পরেই তুমি স্বামীর সাথে অস্ট্রেলিয়া চলে গেলে।শুনে বুকটা হাহাকারে ভরে গেলো।অস্ট্রেলিয়ার হোয়াইট হেভেন বীচে যাওয়ার পরিকল্পনা করে কতটা রাত জেগে থাকতাম আমরা!সেখানে তুমি অন্য কাউকে নিয়ে চলে গেলে।

তবু কিছু একটা ছিলো....মাঝরাতে সেই "কিছু একটা" বড় যন্ত্রণা দিতো।হুট করেই ঘুম ভেঙে গেলে সব মনে পড়তো...তুমি তখন আরেকটা মানুষের পাশে শুয়ে আছো,মানুষটা তোমার গায়ে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে,এটা ভাবলেই আমার গা গুলিয়ে উঠতো।মনে পড়ে যেতো আমাদের একই বয়সী ভালোবাসাটা,পরিকল্পনাগুলো,সব।মনে পড়তো,ক্যান্টনমেন্টের আইএসএসবি সেন্টার থেকে একটা গ্রীন কার্ড পেলেই আজ সব অন্যরকম হতো....ট্রেনিংয়ে যাওয়ার আগেই তোমার বাসায় কথা বলে যেতাম।একজন আর্মি অফিসারের সাথে বিয়ে দিতে তোমার বাবা আর দ্বিতীয়বার ভাবতেন না বোধহয়।ওরকম হলে ভালো হতো.... জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অখ্যাত বিষয়ে পড়ার অপরাধে তোমাকে হারাতে হতো না।সাতপাঁচ সব ভেবে মরে যেতে ইচ্ছে হতো।

মরে যাওয়া হয়নি।অনেকদিন নতুন ব্রীজে গিয়ে ফিরে এসেছি।এত উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়ার সাহস ছিলো না আমার ভেতর।ট্রাকের সামনে পড়ার কথা ভাবতাম।তবে কয়েক টন ওজনের ট্রাকটা বুকের পাঁজরের উপর দিয়ে গেলে কেমন লাগবে ভেবে সেটাও আর করা হয়নি।

এভাবে দিনগুলো কেটে গিয়েছে.....কোনমতে পাশ করে বেরিয়ে এসে বিসিএসে বসে গেলাম।কিভাবে কিভাবে সেখান থেকে এএসপিও হয়ে গেলাম।সহকারি পুলিশ সুপার!ট্রেনিং শেষ করে আসতেই বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিলো.....রাজি হয়ে গেলাম।

যাই হোক,আজ আমার বিয়ে।কিছুক্ষণ পর শেরওয়ানি আসবে,গায়ে চাপিয়ে দিয়ে ক্লাবে চলে যাবো।আমার বউ গত কয়েকটা দিন আমার সাথে অনবরত ফোনে কথা বলেছে।মেয়েটাও একদম তোমার মত।কথাবার্তা,আচার আচরণ,সব।তুমি চলে গেছো অনেকদিন,তবে অনেক স্মৃতির সাথে "মতো" একটা শব্দ রেখে গেছো।আমি গত কয়েকটা দিন মেয়েটার প্রতিটা এক্টিভিটি দেখে মনে মনে বলেছি,আহ!ও তো একদম ওর মতো!

ওহ ভালো কথা......কেমন আছো তুমি?ভালো থাকারই কথা অবশ্য....কোন যন্ত্রণা-ই দীর্ঘদিন থাকে না।

আর হ্যাঁ,একই বয়সের ভালোবাসায় সফল হতে ভাগ্য লাগে....বলেছিলে তুমি।আমি যদিও বিশ্বাস করিনি তখন।

যাই আমি....গাড়ি চলে আসলো বটে!

(লেখাটি আমার ফেসবুক আইডিতে প্রথম পোস্ট করি এপ্রিল চার,দুই হাজার ষোলতে)

(আমার আরো লেখা ফেসবুকে : fb.com/owais.tamim.7

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.