![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদিন থাকবো না, হয়তো চাপা পড়ে থাকবো কোনো বাস-ট্রাকের নিচে কিংবা বড় কোনো রোগ বাসা বাঁধবে শরীরে নাহয় নীরোগ থেকেই । সেটা যেভাবেই হোক বিদায় নিবোতো একদিন !
'
শেষ গোসল করিয়ে সাদা কাফনের কাপড়টা পড়াবে আমায়। শুনেছি মানুষ মৃত্যুর পর তার দেহটা কালো হয়ে যায়। আমিতো এমনিতেই কালো হয়তো হয়ে যাবো আরো কালো। পাতিলের কালো রঙটার মতো দেখাবে আমার বর্ণ। ওই সাড়ে তিন হাত মাটির নিচের গর্তটায় আমি হয়তো ঘুমাতে চাইবো না কিন্তু রীতিমতো জোড় করেই আমাকে ওরা সেখানে ফেলে রাখবে। আপন মানুষগুলো কিছুক্ষন সেই কবরটার পাশে দাঁড়িয়ে থাকবে, একসময় দিশেহারা হয়ে চলে যাবে। একা রয়ে যাবো আমি, সবাইকে পাশে থাকতো বলবো কিন্তু কেউ শুনবে না আমার আওয়াজ। চেয়ে চেয়ে আপন মানুষদের দূরে চলে যাবার দৃশ্য উপভোগ করবো !
'
দু-একদিন মানুষের মুখে মুখে আমার নামটা হয়তো থাকবে। বিশেষ করে যাদের সাথে পরিচিত ছিলাম অনেক জ্বালিয়েছি অনেক কষ্ট দিয়েছি। দু'এক ফোঁটা পানিও বের হবে চোখ দিয়ে। আমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো হয়তো মনে পড়বে তার। স্মৃতিচারণ ঘটবে বারেবার। দিন এগোতে থাকবে তাদের মন থেকে আমার নামটাও মুছে যাবে। হয়তোবা মনেই থাকবে এই আমি কোনোদিন তার বন্ধু ছিলাম।
'
আব্বু-আম্মু, ভাই-বোন খুব কান্না করবে। আম্মু কিছুদিন হয়তো না খেয়ে দিন পার করবে আর আমার কথা চিন্তা করবে। সারাক্ষন কত হইহুল্লুর করতো, এখন চোখের সামনে থেকে নাই হয়ে গেলো। পরিবারের মানুষগুলো হয়তো এসব চিন্তা করবে, আম্মুকে স্বান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করবে। আম্মুর হয়তো ওসব কথার দিকে খেয়াল থাকবে না। এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকবে। আমাকে নিয়ে চিন্তায় মিথ্যে স্বপ্ন আঁকবে, "কি করছি আমি, কেমন আছি" এসব ভাবনাগুলো মাথায় ঘুরবে।
'
স্কুলের বন্ধুগুলো ভাববে, ছেলেটা খারাপ থাকলেও অতটা খারাপ ছিলো না। সারাদিন কি যে ভাবা-চিন্তা করতো তা কেবল ও-ই জানে। স্যার এই অন্যমনস্ক থাকার কারণে কতবার ওকে মেরেছে কিন্তু কই, একটুও বদলায় নি। যে তিমিরে ছিলো, সে তিমিরেই থেকেছে। ফেসবুকে ওর লেখা পড়ার জন্য কতো জোর করতো ! কিন্তু এখন আর কেউ বলে না, "এই আমার ওই লেখাটা একটু পড়িসতো!"
'
যাদের সাথে আমি আড্ডা দেই, কাছের বন্ধুগুলো। মনটা খারাপ থাকলে থাকতেও পারে। আমাকে নিয়ে হাসি-কান্নার স্মৃতিগুলো চোখের সামনে ভাসবে হয়তো। দু-একফোঁটা পানি পড়লে হয়তো পড়তে পারে। হয়তো চায়ের দোকানে সেই আড্ডাটায় আমার অনুপস্থিতি টের পেয়ে বলে উঠবে,"এই তানবীর কোথায় রে? ওহ, ও তো মারা গেছে। ভালোই হয়েছে, আগে কতো জ্বালাতো। সেই রকমের চা-খোর ছিলো, আমার ****টা একটানের কথা বলে নিয়ে পুরোটা শেষ করে দিতো।" ভালোই হয়েছে এখন থেকে কেউ আর খাওয়ার সময় ডিস্টার্ব করবে না।
'
আমার ছোটবেলার বন্ধুগুলো সেই পিচ্চিকালের কথাগুলো ভাবতে চেষ্টা করবে, পড়বে না মনে অনেক কিছুই। আমাকে কত ক্ষ্যাপিয়েছে, দুষ্টামি করেছে, পরীক্ষার খাতা কতবার দেখিয়েছে। মনে করতে করতে হয়তো সে নিজেও কষ্ট অনুভুত করবে। বলবে,"শালায় মানুষ হইলো নাহ!"
'
সাদা-নীলের দুনিয়ায় কিছু মানুষ যাদের সাথে আমার মোটামোটি সখ্য তৈরি হয়েছিলো, তারা হয়তো পুরনো মেসেজগুলি পড়তে থাকবে। মাঝে মাঝে হয়তো আমার প্রোফাইলটাও এসে ঘুরে যাবে, ঘাটতে থাকবে পুরো প্রোফাইল। অতটা চেনা-পরিচিত নয় মানুষরাও আসবে। হয়তো আমার টাইমলাইনে তখন কিছু লিখতে চেষ্টা করতো কিন্তু দেখবে আমার টাইমলাইনটা অফ করা, ট্যাগ করলেও শেষ পর্যন্ত দেখে সেটাও অফ।
'
আশেপাশের প্রতিবেশিরা আমায় দেখতে আসবে, মনে মনে ভাববে "ছেলেটা এতো অল্প বয়সেই মারা গেলো, আহা। মা'টা হয়তো কত ভেঙে পড়েছে !" এই ভেবে মা'র কাছে যাবে, স্বান্তনা দিবে।
'
আমার আন্টিটা খুব কাঁদবে, আমি জানি। খুব স্নেহ আমায়, আমাকে বাবা বলে ডাকতো। আমার মেয়ের মতো ছিলো, নানুবাড়িতে গেলে আব্বাজান-আব্বাজান বলে সবার আগে এই আন্টিটাই চিৎকার করতো। মেতে থাকতো আমাকে নিয়ে সারাক্ষন।
'
খুব কষ্ট হচ্ছে, কেউ আমার আওয়াজ শুনতে পারছে না। আমি কত ডাকছি সবাইকে, কিন্তু কেউ তো আমার কথা উত্তর দিচ্ছে না...!
......
দিন যাবে, মাস যাবে। সবাই সবার কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, ধূলাবালি মুছতে মুছতে আমারেও মুছেই দিবে। কালো নিথর দেহটা পরে রবে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে, কীটপতঙ্গ এসে বিরক্ত করবে। জ্বালাতন হবো খুব, পরিষ্কার করে দিবে না কেউ। একা একা দম বন্ধ হয়ে আসছে, খুব কষ্ট হচ্ছে আমার... খুব মানে খুব !
©somewhere in net ltd.