অমুকের ছেলে এই পেয়েছে সেই পেয়েছে তুই কেন পেলি না !

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৪২

ছাত্র কতটুকু শিক্ষা অর্জন করেছে সেটা বড় কথা নয়, সে রেজাল্টে কি করেছে সেটাই এখন সকল বাবা-মা এবং অন্যান্যদের মুখ্য। আর এই নীতিটাই ধ্বংস করে দিয়েছে শিক্ষার্থীদেরকে, ধ্বংস করেছে শিক্ষাকে।
,
আমি আমার অনেক বন্ধু/ভাই-বোনকে দেখেছি হয়তো সে ভালো পারে, কিন্তু রেজাল্টের সময় তার ফলাফল ভালো হয় নি। আবার আমি এমনও দেখেছি যারা ততটা ভালো না পারলেও পরীক্ষায় নানা কৌশলে ভালো রেজাল্ট করে বের হয়েছে। স্কুলের পরীক্ষা থেকে বোর্ডের পরীক্ষায় এ ব্যাপারটা বেশী লক্ষনীয়।
,
রেজাল্টের দিন সবার নজর যেখানে থাকে সংবাদ পত্রের কিংবা নিউজের পাশের হার/এ+ এর হার এসব শিরোনামে, তখন আমার নজর থাকে কতজন শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত রেজাল্ট না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কারনটা হয়তোবা কারোরই অজানা নয়। গার্ডিয়ান-প্রতিবেশীদের কাছে হেয় হওয়ার ভয়ে, কীভাবে তাদের কাছে সামনে গিয়ে দাড়াবে!
,
"অমুকের ছেলে এই পেয়েছে সেই পেয়েছে তুই কেন পেলি না","ও ভাত-মাছ খায়, আর তুই কি ডাল- ভর্তা খাস?!" এরকম টাইপ কথাগুলো প্রায় সব বাবা-মা'ই বলে থাকেন। সে নিজেই রেজাল্ট খারাপ করে যেখানে হয়ে রয়েছে ব্যাথিত, সেখানে তাকে আরো মর্মাহত বানিয়ে দেয় এসব কথাগুলো। সোজা বাংলা ভাষায় বলতে গেলে যাকে বলে,"কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা !" আসলে তাদেরই বা দোষ দিয়ে লাভ কি, সমাজটাই তো আমাদের এমন মনস্ক বানিয়ে দিয়েছে। মাঝে মাঝে তো চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে," এ কোন সমাজে এলাম আমি!"
,
লেখাপড়ার মধ্যে প্রতিযোগীতা জিনিসটা এর জন্য অন্যতম কারণ। স্টুডেন্ট লাইফে ফাস্ট সেকেন্ডের প্রতিযোগীতা, চাকরী জীবনে কলিগদের সাথে প্রতিযোগীতা, ব্যাবসা করতে এলে সেখানেও প্রতিযোগীতা ! জীবন মানেই প্রতিযোগীতা না, জীবনের একটা অংশ হল প্রতিযোগীতা ! জীবনের আরও অনেক মানে আছে!"
কিন্তু কেন আমরা পারি না এরকম মন-মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে? ছাত্রদেরকে কেন দেই না তাদের স্বাধীনভাবে পড়ালেখার সুযোগ দিতে।
,
পেছনের সাড়িতে বসা স্টুডেন্টরা অমনোযোগী হয়ে থাকে, এরকম মানসিকতা থেকে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শিক্ষিকারা আজও বের হয়ে আসতে পারেননি। এখনো পড়া ধরার ক্ষেত্রে তারা পেছনের সাড়ির স্টুডেন্টদের বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন কিংবা মনের অজান্তেই তাদের চোখ, হাত ওদিকে গিয়েই পড়ে। আশ্চর্য হলেও ব্যাপারটা সত্যি। সামনের বেঞ্চে বসা ছাত্রগুলো মনোযোগী। প্রতিদিন পেছনে বসা সেই ছাত্রটাকে দিয়ে কিছুই হবে না, এরকম চিন্তাধারা থেকে আমাদের শিক্ষক মহোদয়রা কবে বের হয়ে আসবেন কে জানে !
,
শুধুমাত্র সুস্থ মানসিকতাই পারে এ থেকে আমার দূরে রাখতে।
নিচু লেভেলের মন-মানসিকতা আর প্রতিযোগিতার গন্ডি থেকে বেড়িয়ে আসুন, একটু উৎসাহ চাই।সেটাও না দিতে পারলে অন্তত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না দয়া করে। সুযোগ দিন আমাদের, দেখিয়ে দিব আমরাও !

০ টি +০/-০