নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সারওয়ার জামান চন্দন

সারওয়ার জামান চন্দন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য গল্প : গোঁফ

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:০৯

গোঁফ



আমার চাচাত ভাই প্রথমবার গোঁফ কেটে ভোল পাল্টিয়ে যখন নিজেকে বড় মানুষ ভাবার চেষ্টা করছে ঠিক সে রাতেই চাচীর কান্না শুনে ছুটে গেলাম। চাচী ফুপিয়ে কাঁদছেন। কি কারনে কাঁদছেন তা বলছেন না। কিছুক্ষণ আগে নাকি হেঁচকি তুলে কাঁদছিলেন। মাঝে হাই হাই সর্বনাশ হয়ে গেল এমন ভঙ্গিতে নিজের কপালে কয়েকটা চাপড় মেরেছেন। অনেক পরে যখন কান্নার রেশ ঢিমে পড়ে গেল তখন আমি কান্নার কারন অনুসন্ধানে মাঠে নামলাম। বিচিত্র কারনে তিনি মুখ খুলতে চাইছেন না। এমনভাব যেন কোড অব কনডাক্টের বেড়াজালে আবদ্ধ! আমিও নাছোড়বান্দা। শেষে তাঁকে তেতুলের টক এনে দেবার লোভ দেখিয়ে গাই গুই শব্দের একটা জবানবন্দি পেলাম। আমি এর মাঝ থেকে একটা শানে নজুল দাঁড় করালাম। তাঁর সে সুদরপ্রসারী কান্নাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাই না। আমি চাচীকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম। তিনি আমার কথা বুঝলেন কিনা জানি না। নাকি ক্ষুধা আটকে রাখতে পারছিলেন না কে জানে, শেষ পর্যন্ত রাতের খাবার খেতে রাজি করাতে পারলাম এবং এর মধ্যে দিয়ে কান্না পর্বের সমাপ্তি ঘটল। চাচীর কান্নার কারন হল, ছেলে গোঁফ কেটেছে! তারমানে সে বড় মানুষ হয়ে গেল। এমনিতেই যে গুনধর পুত্র! কোন কথা শুনতে চাই না। এখন থেকেই বিয়ে করে ফেলবে বলে হুমকি দেই। গোঁফ কর্তন বোধহয় সে প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। তাই তার কান্না বউ নিয়ে আসলে ছেলে আরো কথা শুনতে চাইবে না।



আমি ভাগ্যবান! গোঁফ কর্তনের পর মা আমাকে নিয়ে কান্নাকাটি করে নি। তবে খুশি হয়েছিল কিনা বা তার মনোভাব কি ছিল সেটা এখন আর মনে নেই। ছোটবেলায় ভাইয়া নাকি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘ভাইয়া তোমার কি চাই?’ আমি বলেছিলাম, ‘আমার একটা ল্যাজার লাগবে!’ গোঁফ কাটার আগে পর্যন্ত এ নিয়ে আমাকে অনেকবার ক্ষেপানো হয়েছে।



বিয়ের দাওয়াতে একবার এক সপ্তাহের জন্য গিয়েছিলাম। মুখে তখন কেবলমাত্র চারা চারা গোঁফ গজিয়েছে। হঠাৎ করে মাথায় চিন্তা চাপল গোঁফ ফেলে দেয়ার জন্য। সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম যে বিয়ে খেয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ততটা আর বোঝা যাবে না, এই ভেবে। তারপর সেলুনে ঢুকলাম। চুল কাটার জন্য অনেকবার সেলুনে গেছি তবু এবার বুকের মধ্যে মনে হল কেউ দড়াম দড়াম করে ঢাক পিটছে!



বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরেই প্রাইভেট পড়তে দৌড় দিলাম। ইতিমধ্যে দেরী হয়ে গেছে। পৌছামাত্র আমাকে নিয়ে সবাই মুখ নিচু করে হাসছে। আমি যতবার জানতে চাইছি হাসির কারন ততবার সবাই মুখে হাত দিয়ে হাসছে। শেষে স্যার বললেন, ‘কিরে তোকে তো একেবারে রামছাগল লাগছে!’ সবাই এবার হো হো করে হেসে উঠল। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। সম্বিত ফেরামাত্র আমার সদ্য কৈশর পেরোনো মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে উঠল।

বাড়ি ফিরেও আমাকে নিয়ে কম হাসাহাসি হল না। দুপুরবেলা খাবার পর আব্বা আমার হাতে একশ টাকা গুঁজে দিলেন। আমার মাথা খারাপের জোগাড়। টিকটিকির ডিম বা লেবেনচুস খাবার জন্য আটআনা পয়সা চাইলেও যেখানে তিনি হাজার প্রশ্ন করেন সেখানে বিনা কথায় এত টাকা! আমি হিসাব মেলাতে পারছি না। ভাবলাম গোঁফ কাটার পর বোধহয় সুদিন ফিরতে আরম্ভ করল! বিকেল বেলায় বন্ধুদের বলাতে একজন বলল আমি কারনটা বুঝতে পেরেছি। আমি চিন্তায় খাবি খেতে খেতে বললাম, কি কারন দোস্ত? সে প্রস্তাব করল, আগে সবাইকে খাওয়াতে হবে তারপর বলবে। আমি গাঁই গুঁই করেও শেষ পর্যন্ত রাজি হলাম। খাবার শেষে কারন জানতে চাইলাম। সে মিটিমিটি হেসে বলল, আরে বুদ্ধু তোর আব্বা তোকে টাকা দিয়েছে ল্যাজার কেনার জন্য! আমি লাফিয়ে উঠে আর্তনাদ করে বললাম, তাহলে এখন আমি কি দিয়ে রেজার কিনব?

বেশ কিছুদিন পর নিজে নিজে শেভ করার প্রস্তুতি নিলাম। গ্রীষ্মের দুপুরবেলায় সবাই যখন ঘুমিয়ে তখন রেজার ক্রিম আয়না সামনে নিয়ে সব আয়োজন সম্পন্ন করলাম। ব্লেড দিয়ে মুখ কেটে যেতে পারে ভেবে অন টাইম রেজার নিয়ে এসেছি। গোঁফের একপাশ কাটা হয়েছে। তারপর বাম হাত দিয়ে রেজার থেকে লোমগুলো ছাড়াচ্ছিলাম আর অমনি হাত কেটে রক্ত পড়তে লাগল। বাইরে দৌড় দিয়ে সাথীকে বললাম, হাত কেটে গেছে তাড়াতাড়ি বেঁধে দে। সে আমার হাত বাঁধা বাদ দিয়ে আমার ঘরে দৌড় দিল। আব্বা বাইরে এসে গম্ভীর মুখে বললেন, এত উত্তেজিত হবার কিছু নাই। তুমি গোঁফের মাত্র একপাশ কেটেছো! এখনো একপাশ বাকি! আমি লজ্জায় গোঁফ ঢাকতে গিয়ে মুখ রক্তরক্তি করে ফেললাম। আব্বা হো হো করে হাসছেন। আমি সাথীকে বললাম, তুই আমার হাত বেঁধে না দিয়ে ঘরে দৌড়ালি কেন? সে জানাল, প্রথম গোঁফ কাটার পর ছেলেরা নাকি নতুন করে প্রেমে পড়ে এবং হাতটাত কেটে রক্ত দিয়ে প্রেমের চিঠি লিখে। সে সবের সন্ধানে সে আমার ঘরে দৌঁড় দিয়েছিল। পরে হতাশ সুরে বলল, সে রকম কোন ক্লু পাওয়া গেল না!



** লেখাটি 'আলপিন' ম্যাগাজিনে সেরা দশ রম্য গল্পে প্রকাশিত হয়েছিল।

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:১৭

অরুনাভ বলেছেন: মজার.........

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৩২

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৪

রফিকুল ইসলাম ফারুকী১১ বলেছেন: জিপি চন্দন। আপনিও সেই কারণেই গোঁফ কেটেছেন। আপনার গল্পটি বেশ মজার। আপনাকে থুরি তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৫

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: বাংলা ভীষণ!! ফারুকী ভাই কেমুন আছেন।

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৮

আলী আরাফাত শান্ত বলেছেন: মজা পাইলাম।ভালো লিখছেন।+

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:০২

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৩:৫৮

মুহিব বলেছেন: সবারই এই দিন পার করতে হয়। আর যারা বিয়ের ফরদিন গোফ ফেলে দেয় ................

৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:১১

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: হা হা ... ভাল বলেছেন.... পরের বার বিয়ের ফরদিন গোফ পেলেছেন এমন কারো গল্প বলা যাবে.....

৬| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৩

মদন বলেছেন: দারুন :)

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৫১

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: ডন্যবাদ...

৭| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৪

মোঃ আমিন বলেছেন: মজা পাইছি....আরো লেখা চাই.....+ দিলাম

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৭

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: ধন্যবাদ... লিখতে পারলে দিমুনে... খালি চান্স পেলে ঘুমাতে ইচ্ছা করে ... কি করি কন তো?

৮| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৫৬

মেহরাব শাহরিয়ার বলেছেন: দারুণ মজার :) :)

গোঁফ কাটার প্রথম স্মৃতিটা মনে পড়ে গেলো :)

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৯

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: সব লিখেন না আপনার স্মৃতিটা...

৯| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৩

আকাশচুরি বলেছেন: জটিলল হইসেরে ভাই!!

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০১

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: জটিল হইয়া কি হবে! আমিতো আকাশচুরার মত লিখতে চাই!

লেখা কই??????

১০| ১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১০:৩২

ত্রিভুজ বলেছেন: হা হা.. জটিলস!

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১০:৩৯

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: ধন্যবাদ বস .... পড়া এবং ভিজিট করার জন্য

১১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১২:০৩

খারাপ লোক মাগার হাচা কতা কই বলেছেন: হা হা হা
হাসতেই আচি......

১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৫:৪৯

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: হি হি...

১২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:২০

রাশেদ বলেছেন: :)

১৩| ১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১২

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: রাশেদ ভাই.... ধন্যবাদ...

আইকন কিভাবে এ্যাড করে? আমি পারছি না!‍
হেল্প করেন প্লিজ....

১৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:৫০

আকাশচুরি বলেছেন: আমি নাইলে আইলসার হাড়

আপনার নতুন লেখা কই?:০

২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৭

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: কারেন্ট থাকে না ... আমার দোষ?!

১৫| ২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ দুপুর ২:৫০

আকাশচুরি বলেছেন: :)

২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ বিকাল ৪:৪৯

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন: জিহ্বা দেখাবেন না... কিভাবে জিহ্বা দেখাতে হবে হেউডা কন।:)

১৬| ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১০:২৫

মাজুল হাসান বলেছেন: ‘আমার একটা ল্যাজার লাগবে!’ গোঁফ কাটার আগে পর্যন্ত এ নিয়ে আমাকে অনেকবার ক্ষেপানো হয়েছে।

এই রকম ঘটনা কমবেশি সবারই থাকে মনে হয়, নাইলে এমন পাক্কু পোলাপাইন এই ব্লগে ভিড় করতাছে। আমিও একটা রেজার চাইছিলাম! তয় ভাইয়ের কাছে না, বাপের কাছে:)

১৭| ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১০:৪৬

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন:
হা হা .... ধইন্যেবাদ গুরু.... :)

১৮| ০৪ ঠা মে, ২০০৮ বিকাল ৩:৩৫

(অ)গাণিতিক বলেছেন: আপনার লেখা এখন থেকে নিয়মিত পড়তে হবে!! :)
শুভেচ্ছা!!

০৪ ঠা মে, ২০০৮ বিকাল ৫:১০

সারওয়ার জামান চন্দন বলেছেন:
হুম.. ;)

ধইন্যেবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.