নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লঘু বুদ্ধির লঘু মানব!

তন্ময় সাগর

ব্যাক্কল কথন!

তন্ময় সাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যাংকের চাকুরিকে Essential Service ঘোষনা দেয়া যেতে পারে!

১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৩৯

বাংলাদেশে ব্যাংকের চাকুরীকে অত্যাবশ্যকীয় (Essential Service) সেবা খাত ঘোষনার দাবিটি অনেক পুরনো। ইতোপূর্বে বিশেষত ঈদের ছুটির সময় অন্তত ব্যাংকে কর্মরতরা অস্থিমজ্জায় উপলব্ধি করেন, ব্যাংকের চাকুরিটি আদতে অত্যাবশ্যকীয় (Essential Service) সেবা খাতের চাকুরি । ঈদের আগের দিন অর্থাৎ চাঁদ রাতেও ব্যাংকে কর্মরতদের অফিস করতে হয় এদেশে। থাকতে হয় গরুর হাটে , হাট শেষ হওয়া অবধি। এদেশের ব্যাংকিং সেবা গ্রহণকারী বা গ্রহণেচ্ছুদের এমনকি ঈদের দিনেও ব্যাংকিং সার্ভিস দিলে তাদের সুখ লাভ করতে দেখবো আমরা। এদেশের বাস্তবতায় অদ্ভুত শোনালেও ঈদের দিন ব্যাংক খোলার এই দাবীটিও বাজারে চালু আছে কিন্তু। এদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ক্ষেত্রবিশেষে একটানা ৩৬৬ দিন ব্যাংক শাখা খোলা রাখার দায়বদ্ধতা আছে। কতক ক্ষেত্রে পালাবদল করে দিন রাত অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা ব্যাংকিং সেবা দিতে হয় ব্যাংকে কর্মরতদের। অন্যান্য দপ্তর সমূহে সাপ্তাহিক ছুটি সম্পূর্ণরুপে দুই দিন হলেও ব্যাংক খাতে আদতে একদিন। দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনকারী শাখা সমূহ, বড় বা কর্পোরেট শাখা সমূহ শনিবার খোলা রাখার নির্দেশনা আছে এবং সে মতোবেক খোলা থাকেও ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পত্রের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ০৮ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে ডিওএস সার্কুলার লেটার নং ০৮ মূলে বাংলাদেশে কার্যরত সকল তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকায় সপ্তাহে ০৭ (সাত) দিন ২৪ ঘন্টা শাখা খোলা রাখার নির্দেশনা জারী করে রেখেছে। জানামতে পরবর্তীতে, অনুরুপ নির্দেশনা আশুগঞ্জ বন্দরের ক্ষেত্রেও দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, সম্মানিত আয়করদাতাদের আয়কর পরিশোধের সুবিধার্থে, নির্বাচনের প্রার্থীতার উদ্দেশ্যে টাকা জমাদানের সুবিধার্থে, প্রতি ঈদে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ভাতা বোনাস পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সময়ে সময়ে এলাকাভিত্তিক বা সংশ্লিষ্ট বা সব শাখা খোলা রাখার সার্কুলার জারী করে থাকে। এই সময়গুলোতে সাপ্তহিক বন্ধের শুক্র শনিবারসহ এমনকি যেমনটা বলা হয়েছে ঈদের আগের রাতেও ব্যাংক কর্মীদের অফিস করতে হয়। বন্ধের দিন কাজ করার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বা যথাযথ প্রণোদনার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা থাকলেও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে এ বিষয়ে গৎবাধা সামান্য ব্যবস্থা নেয়ার অভিযোগও আছে।

বন্ধের দিন সহ বিশেষ বিশেষ সময়ে অফিস করার বাধ্যবাধকতার কারনেই ব্যাংকের চাকুরীকে অত্যাবশ্যকীয় (Essential Service) সেবা খাত ঘোষনার দাবী করে আসছে ব্যাংকে কর্মরতরা দীর্ঘদিন থেকে। এর আগে বিশেষত ঈদের ছুটির দিনগুলোর সময়ে ব্যাংকে কর্মরতদের এ বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমুহে সোচ্চার হতে ও নিজেদের হতাশা ব্যাক্ত করতে দেখা গেছে। চলমান করোনা দূর্যোগেও অনেকে সেই একই দাবী করছেন জীবন সংশয় মাথা নিয়ে।

সারা বিশ্বে চলমান Covid-19 দূর্যোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সীমিত আকারে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখা নিয়ে ইতোমধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ব্যাংক কর্মী ছাড়াও সচেতন মহল , করোনা মহামারীতে যে উপায়ে বা পদ্ধতিতে এদেশে ব্যাংক চালু রাখা হয়েছে তা বুমেরাং হতে পারে মর্মে আশংকা ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে ০৯ এপ্রিল পুনরায় সার্কুলার দিয়ে সীমিত আকারে ব্যাংকিং চালু রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক সকাল ১০ টা হতে ১২.৩০ পর্যন্ত লেনদেন হবে। এডি অর্থাৎ অথোরাইজড ডিলার শাখা সমূহ আরো এক ঘন্টা বেশি অর্থাৎ দেড়টা অবধি গ্রাহক সেবা দিতে পারবে। এই সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক Novel Coronavirus সংক্রমন রোধে সোস্যাল ডিসটেনসিং সংক্রান্ত WHO গাইডলাইন এবং ব্যাংকটির অপর দুটি সার্কুলার পরিপালনের নির্দেশনা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ১১ এপ্রিল শনিবার আরেক দফা সার্কুলার দিয়ে লকডাউন ঘোষিত এলাকা সমূহে কেবলমাত্র সরকারি ব্যাংক সমূহ খোলা রেখে দুপুর ১ টা ও এডি শাখার ক্ষেত্রে ২ টা অবধি ব্যাংকিং সেবা দেবার নির্দেশনা দিয়েছে যা অনেককেই হতবিহ্বল করেছে! এর মাধ্যমে ব্যাংকে কর্মরতদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে এমন অভিযোগও পত্রিকায় খবরে ইতোমধ্যে প্রকাশিত।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় সাধারণ সময়েই যেখানে অন্য যে কোন সংকটে বা চিকিৎসা প্রয়োজনে WHO গাইডলাইন মেনে চলা সম্ভবপর হয় না সেখানে এই Covid-19 মহাদুর্যোগে WHO গাইডলাইন মেনে চলা এদেশের জনগন ও ব্যাংক কর্মীদের পক্ষে কতটা সম্ভব সেই আশংকা ব্যাক্ত করছেন খোদ ব্যাংক কর্মীরাই। সাথে সচেতন মহলও শংকিত। ব্যাংকে গাদাগাদি করে ব্যাংকিং সেবা নেবার ছবি ইতোমধ্যে আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি। WHO গাইডলাইন বা স্বাস্থ্যবিধি মানা নিয়ে গ্রাহকদের সাথে ব্যাংক কর্মীদের বচসার খবরও আমরা পাচ্ছি। দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে যেমন ব্যাংক খোলার বিকল্প যেমন নেই, তেমনি Novel Coronavirus ছড়াবার ‘হটস্পট’ যেন না হয়ে উঠে ব্যাংক শাখা সমূহ সে ব্যাপারে অতি সতর্কতারও কোন বিকল্প নাই। হটস্পট হয়ে উঠা ব্যাংক শাখা সমূহ পুরো এলাকা বা সারা দেশ লক ডাউন হবার কারন যেন না হয়ে উঠে আবার, সেই দিকটিও সকলকে বিবেচনা করতে হবে। দেশ ও অর্থনীতি বাঁচাবার যে আকাঙ্খা থেকে সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা রাখা হচ্ছে, পুরো দেশ লক ডাউন হয়ে গেলে কিন্তু সেটাই ভেস্তে যাবে। কাজেই অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যাংক ও ব্যাংক কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ব্যাংক খাত সচল রাখতে হবে। চট্টগ্রামে বেসরকারি খাতের ব্যাংকের শাখা লক ডাউন করতে হয়েছে। ঢাকায় রাষ্ট্রয়াত্ব খাতের একটি ব্যাংকের প্রধান শাখা লক ডাউন করে পরিবর্তীত তথ্যের প্রেক্ষিত আবারো চালু করা সম্ভব হয়েছে। ব্যাংকে কর্মরতরা চিকিৎসক, নার্স, সংবাদকর্মী ও পুলিশের মতই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের অর্থনীতি সচলে জোর ভুমিকা রাখছেন। করোনায় সেটা আবারো স্পষ্ট।

উন্নত বিশ্বের সাথে এদেশের ব্যাংক খাতের অমিলগুলো তুলে ধরে অনেকে জানাচ্ছেন, উন্নত বিশ্বে ব্যাংকিং প্রায় কাগজবিহীন অর্থাৎ অতি ডিজিটাল। শাখা পর্যায়ের ব্যাংকিং সেখানে প্রায় নেই বললেই চলে এবং লোকবলও তেমন লাগেনা তাদের। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংকিং এখনো মানুষের সংস্পর্শ ব্যতীত করা সম্ভব নয়। আধুনিকায়ন বলতে কেবলমাত্র এটিএম বুথ, অনলাইনে জমা ও চেক দিয়ে উত্তোলন এবং খুবই সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট ব্যাংকিং আছে এদেশে। এছাড়াও, দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য এখানো সেই মান্ধাতার আমলের নগদ টাকার বিনিময়ের উপরেই মানুষ নির্ভরশীল!

Covid-19 মহাদুর্যোগ এড়াতে পাশের দেশ ভারতেও সকাল ১০ টা হতে ২ টা অবধি সীমিত পরিসরে ব্যাংক খোলা রাখার পাশাপাশি ব্যাংকে গ্রাহক সমাগম এড়াতে বর্ষীয়ান নাগরিক, অসুস্থ ব্যক্তি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ পরিষেবা গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। ব্যাংকের ওয়েব সাইটে আবেদন জানালে অতিরিক্ত ৫০ থেকে ২০০ রুপি সেবামূল্যের বিনিময়ে ব্যাংক কর্মীরা গ্রাহকের বাড়ি গিয়ে টাকা প্রদান ও জমা গ্রহণের ব্যবস্থা করেছে ভারতের ব্যাংকগুলো।

এরকম বাস্তবতায় চিকিৎসা, পুলিশ, সংবাদপত্রের পাশাপাশি ব্যাংকের চাকুরীকেও অত্যাবশ্যকীয় (Essential Service) সেবা খাত ঘোষনার পুরনো দাবীটি আবারো জোরালো হয়ে উঠছে। Essential Service ঘোষনা হলে অনেক আইনগত সুরক্ষার পাশাপশি অন্তত আর্থিক সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে বলে ধারনা করছেন অনেকে যা এখন পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ চাকরি করতে হচ্ছে Essential Service এর দায়িত্ব ও ঝুঁকি নিয়েই। Essential Service ঘোষনা হলে আর্থিক প্রণোদনা সহ পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত হতে পারে মর্মে মনে করছেন এ খাতে কর্মরতরা।

ছবি সংগৃহীতঃ
করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব না মেনে গাদাগাদি করে ব্যাংকের সেবা নিচ্ছেন জনসাধারণ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: অন্য অনেক চাকরি থেকে ব্যাংকের চাকরি ভালো।

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:৩৮

পথের ধূলো বলেছেন: এখন পর্যন্ত কোন বক্তব্যতে ব্যাংকাররা নাম মাত্র ধন্যবাদও পেল না।

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:৪৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: চালিয়ে যান। সম্মানজনকভাবে চাকরী করা যায়

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:৩৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ব্যাংকের treasury department নিঃসন্দেহে একটি জরুরী সেবা। এটা ছাড়া সকল ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.