![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২৬সে সেপ্টেম্বর সকাল ১১:১০ বাজে, আবিরের মাত্রই ঘুম ভাঙলো। মোবাইলটা অন করলো মাত্র। ফজরের নামাজের পর ঘুমায়ছে, ঘুমানোর আগে লিমাকে এসএমএস করে ঘুমায়ছে যাতে ফোন বন্ধ পেয়ে টেনশন না করে, লিমার সাথে ২ মাসের পরিচয়, প্রথমে ফেসবুকে এরপর ফোনে। আবিরের আজকে প্রথমবারের মতো মনে হইলো যা “না আর সহ্য করতে পারতেছিনা, সুইসাইড করে ফেলবো”। এই প্রথম ওর মনে সুইসাইড করার চিন্তাটা আসলো। উঠে মনে হইলো আজকে সাফিকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে ১টার মধ্যে।
আজকে থেকে ঠিক ১১৬ দিন আগে সায়মার ছোট ভাই ফোন করে বলছিলো যে ওর বিয়ে হয়ে গেছে ওকে যাতে আর ডিস্টার্ব না করে। শুনার পর থেকে আজকে পর্যন্ত ও এখনও স্বাভাবিক হতে পারে নাই। প্রায় ৬ বছরের সম্পর্ক ছিলো। ওই একটা ফোন যেনো সবকিছু শেষ করে দিয়েছিলো ওর। ওই ফোনের একটু আগেও সায়মার সাথে ওর কথা হয়েছিলো। আবির তখনও ওর গলা শুনে কিছু বুঝেনাই। ওরা তখনও শনিবারে কখন দেখা করবে এইটা নিয়েই কথা বলছিলো। বিকাল ৪ টার সময় দেখা করবে ঠিক করছিলো। আবিরের সিলেট থেকে আসতে আসতে ২.৩০-৩ টা বেজে যাবে বলে বিকালে দেখা করবে ঠিক করছিলো। ও প্রথমে মনে করছিলো যে সায়মার মা-বাবা ওকে জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিছে তাই ওর ভাইয়ের কল পেয়ে ড্রাইভার কে ফোন দিয়েছিলো। ড্রাইভার যখন বললো যে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে হইছে, এইকথা শুনে আবিরের মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো। ও কোনমতেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না যে সায়মা ওর সাথে এরকম ভাবে বেঈমানি করতে পারে। এরপর থেকে ওর মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছে। আসলে ওই রাতে কি হইছিলো। ওই দিনের পর থেকে আজকে পর্যন্ত সায়মার সাথে একবারও দেখা হয়নাই এমনকি কথাও হয় নাই। যাক এইসব মনে করে আবার আবিরের মন খারাপ হয়ে গেলো। এই ১১৬ দিনের মধ্যে মনে হয় ১৫-২০ দিনই ও রাতে ঘুমায়ছে। বাকি প্রতেক রাত ও জেগে কাটায়ছে।
অনেক কিছু চেষ্টা করছে যাতে ওকে কোন ভাবে ভুলতে পারে, কিন্তু সে কোন ভাবেই ভুলতে পারে নাই। এখনও ওর মনে হয় সায়মা যদি ওর জীবনে ফেরত আসতো। আর একটা প্রশ্ন থেকে বেড়ই হতে পারছেনা, সেইটা হচ্ছে ওইরাতে আসলে কি হইছিলো? ৬টা বছর ওরা একসাথে ছিলো, আবির কে আবিরের চেয়ে বেশি ভালো বুঝতো সায়মা। আবির মনে মনে যা চিন্তা করতো সায়মা বুঝে ফেলতো আবিরের চেহারা দেখেই। তাই এতো কিছুর পরও ওকে পাশে চায়। এরমাঝে যতবারই চাইছে সায়মাকে ভুলে যাবে, ঠিক তখনই এমন কিছু একটা হইছে সায়মাকে মনে পরে গেছে। প্রথম যখন সায়মার বিয়ের/বৌভাতের ছবি দেখলো তখন ও অনেক অবাক হইছিলো, বিয়েতে একটু অন্যরকম দেখায়লেও বৌভাতে সায়মা অনেক হাসসজ্জল ছিলো। এরপর যখন কয়েকদিন আগে এক ছোট ভাই ফোন দিয়ে বলে সায়মা আপুতো আমার একাউন্টিং ক্লাসের স্টুডেন্ট। আজকেই প্রথম ক্লাস করতে আসছে।
২৭শে সেপ্টেম্বর, সায়মার আজকে ৮টায় ক্লাস এখন ৭ টা বাজে। আজকে মা ওর সাথে ইউনিভার্সিটি যাবেনা। ওর আজকে একা যেতে হবে। সাকিব(সায়মার স্বামী) এর সাথে প্রায় ডেইলি ঝগড়া হয়। কানাডা যাবার পর থেকে যেনো ঝগড়ার পরিমান বেড়ে গেছে। বিয়ের ১ সপ্তাহ পর থেকেই সাকিবের সায়মাকে নিয়ে প্রবলেম শুরু হয়ে যায়। কোনভাবেই সায়মার আগের সম্পর্কের কথা মেনে নিতে পারে নাই। সায়মা অবশ্য এটা মেনে নিয়েছে, কারন আবিরের সাথে ও যা করছে ওর এইতাই প্রাপ্য। সায়মার সামনে ২টা রাস্তা ছিলো আবির অথবা মা কে বেছে নিতে হবে। ও অন্য মেয়েদের মতো ওর মা কেই বেছে নিয়েছে।
ও রেডি হয়ে যখন গাড়ীতে উঠলো, তখন ওর বারবার আবিরের কথা মনে পরছিলো। মাঝেমাঝেই ওর কথা মনে হইতো। কিন্তু আজকে একটু বেশিই মনে হচ্ছে। ছেলেটা অনেক বেশি কষ্ট পাইছে। আবিরকে যেমন ও বুঝতো ঠিক তেমনি আবিরও ওকে বুঝতো। আবিরের ফ্রেন্ড এখন ওর একাউন্টিং স্যার। আবির নিশ্চয় ওকে সব বলছে। আবিরের ফ্রেন্ড বলে এই ক্লাসটা একদমই করতে ইচ্ছা করে না। সকালের ক্লাসে ঢুকে বার বার ওর মনে হচ্ছে, বারবার ভুলে যাচ্ছে যে ও একজন বিবাহিতো মেয়ে। কি পেলো ও এই বিয়ে করে। সারাদিন একটা মানুষের অত্যাচার। হ্যা একটা জিনিষ পেয়ে সে খুশি সেইটা হচ্ছে ওর মা-বাবার মুখে হাসি। ক্লাস শেষ করে ক্যাম্পাস ৭ এর নিচে বসে আছে। ১১.৩০ এ ক্লাস। ১১.২৫ বাজে সায়মা গিয়ে লিফটে লাইন দিলো।
সায়মা আজকে ১১৭ দিন পর আবিরকে দেখলো। আবিরকে দেখে একটু অবাকই হইলো। অনেক অনেক শুকায় গেছে। আবির বললো
- আমি একটু তোমার সাথে কথা বলবো।
- বলো।
- আমি জানি তুমি আমাকে মিথ্যা বলছো। আমাকে একটু সাপোর্ট দাও। কারন তুমিতো দেখতেছো আমি কি পরিমানে কষ্ট পাচ্ছি।
- হ্যা বলো, আমি আছি(সায়মা কোন কিছু চিন্তা করার ছাড়াই ওর কথায় রাজি হয়ে গেলো)
আবিরের মনে একটা শান্তির হিমেল বাতাস বয়ে গেলো। ১১৭ দিনের সব কষ্ট জেনো এক মুহরতের মধ্যে সব গায়েব হয়ে গেলো। সায়মা কে সামনাসামনি পেয়ে আবিরের চোখে পানি চলে আসে।
[ আমার আগের গল্পে সবাই বলছে আমি কষ্টের মধ্যেই রেখে শেষ করে দিছি। এই গল্পটা কিছুটা আনন্দের মধ্যে শেষ করলেও কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
আসলেই কি আবিরের সায়মার জন্য অপেক্ষা করা ঠিক হইছে?
আসলেই কি সায়মার উচিৎ হইছে আবিরের সাথে আবার আরেকটা সম্পর্কে যাওয়া।
আসলেই কি সায়মার আবিরের সাথে এইভাবে বেঈমানি করা।
উপরে সবগুলাই ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। আমরা একটা ভুল করলে ওইটা ঠিক করতে বারেবারে ভুল করি]
©somewhere in net ltd.