নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূপালী আলোর পথে

বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে

একরামুল হক শামীম

http://www.facebook.com/samimblog আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি। স্বপ্ব দেখতে এবং স্বপ্ন দেখাতে চাই আজীবন।

একরামুল হক শামীম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঝরা পালক : জীবনানন্দ দাশ

২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:৪৯

ঝরাপালক জীবনানন্দ দাশের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। ১৯২৭ সালে এটি প্রকাশিত হয়েছিল।



প্রকাশ : ১৩৩৪ [১৯২৭]

প্রকাশক: শ্রীসুধীরচন্দ্র সরকার, ৯০/২এ হ্যারিসন রোড, কলিকাতা

মূল্য: ১ টাকা

পৃষ্ঠা: ১০+৯৩

উৎসর্গ : ‘ – কল্যাণীয়াসু – ’

কবি রচিত ভূমিকা :

ঝরা পালকের কবিতাগুলি কবিতাপ্রবাসী, বঙ্গবাণী, কল্লোল, কালি-কলম, প্রগতি, বিজলী প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হইয়াছিল। বাকিগুলি নূতন।

কলিকাতা। ১০ই আশ্বিন ১৩৩৪ শ্রীজীবনানন্দ দাশ





কবিতাসমূহ

১. আমি কবি-সেই কবি ২. নীলিমা ৩. নব নবীনের লাগি ৪. কিশোরের প্রতি ৫. মরীচিকার পিছে ৬. জীবন-মরণ দুয়ারে আমার ৭. বেদিয়া ৮. নাবিক ৯. বনের চাতক- মনের চাতক ১০. সাগর-বলাকা ১১. চলছি উধাও ১২. একদিন খুঁজেছিনু যারে ১৩. আলেয়া ১৪. অস্তচাঁদে ১৫. ছায়া-প্রিয়া ১৬. ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল ১৭. কবি ১৮. সিন্ধু ১৯. দেশবন্ধু ২০. বিবেকানন্দ ২১. হিন্দু-মুসলমান ২২. নিখিল আমার ভাই ২৩. পতিতা ২৪. ডাহুকী ২৫. শ্মশান ২৬. মিশর ২৭. পিরামিড ২৮. মরুবালু ২৯. চাঁদিনীতে ৩০. দক্ষিণা ৩১. সে কামনা নিয়ে ৩২. স্মৃতি ৩৩. স্মৃতি ৩৪. সেদিন এ-ধরণীর ৩৫. ওগো দরদিয়া ৩৬. সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়





২২ অক্টোবর ১৯৫৪, শুক্রবার, রাত ১১-৩৫। রূপসী বাংলার কবির মৃত্যু হয়। এ মৃত্যু কবির চেতনাকে নিভিয়ে দিতে পারে নি। কবিতায় কবি বারবার ফিরে আসেন জলসিড়ি নদীটির তীরে। ৫৭তম মৃত্যুদিবসে কবির প্রতি অনেক শ্রদ্ধাঞ্জলি।



প্রিয় কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘ঝরা পালক’ কাব্যগ্রন্থটি অনলাইনে তোলা হলো ।







ঝরা পালক






০১



আমি কবি– সেই কবি



আমি কবি– সেই কবি,–

আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি ঝরা পালকের ছবি!

আন্‌মনা আমি চেয়ে থাকি দূর হিঙুল-মেঘের পানে!

মৌন নীলের ইশারায় কোন্ কামনা জাগিছে প্রাণে!

বুকের বাদল উথলি উঠিছে কোন্ কাজরীর গানে!

দাদুরী-কাঁদানো শাঙন-দরিয়া হৃদয়ে উঠিছে দ্রবি!

স্বপন-সুরার ঘোরে

আখের ভুলিয়া আপনারে আমি রেখেছি দিওয়ানা ক’রে!

জন্ম ভরিয়া সে কোন্ হেঁয়ালি হল না আমার সাধা–

পায় পায় নাচে জিঞ্জির হায়, পথে পথে ধায় ধাঁধা!

-নিমেষে পাসরি এই বসুধার নিয়তি-মানার বাধা

সারাটি জীবন খেয়ালের খোশে পেয়ালা রেখেছি ভ’রে!

ভুঁয়ের চাঁপাটি চুমি

শিশুর মতন, শিরীষের বুকে নীরবে পড়ি গো নুমি!

ঝাউয়ের কাননে মিঠা মাঠে মাঠে মটর-ক্ষেতের শেষে

তোতার মতন চকিতে কখন আমি আসিয়াছি ভেসে!

-ভাটিয়াল সুর সাঁঝের আঁধারে দরিয়ার পারে মেশে,–

বালুর ফরাশে ঢালু নদীটির জলে ধোঁয়া ওঠে ধূমি!

বিজন তারার সাঁঝে

আমার প্রিয়ের গজল-গানের রেওয়াজ বুঝি বা বাজে!

প’ড়ে আছে হেথা ছিন্ন নীবার, পাখির নষ্ট নীড়!

হেথায় বেদনা মা-হারা শিশুর, শুধু বিধবার ভিড়!

কোন্ যেন এক সুদূর আকাশ গোধূলিলোকের তীর

কাজের বেলায় ডাকিছে আমারে, ডাকে অকাজের মাঝে!



০২.



নীলিমা



রৌদ্র ঝিল্‌মিল,

উষার আকাশ, মধ্য নিশীথের নীল,

অপার ঐশ্বর্যবেশে দেখা তুমি দাও বারে বারে

নিঃসহায় নগরীর কারাগার-প্রাচীরের পারে!

-উদ্বেলিছে হেথা গাঢ় ধূম্রের কুণ্ডলী,

উগ্র চুল্লিবহ্নি হেথা অনিবার উঠিতেছে জ্বলি,

আরক্ত কঙ্করগুলো মরুভূর তপ্তশ্বাস মাখা,

মরীচিকা-ঢাকা!

অগণন যাত্রিকের প্রাণ

খুঁজে মরে অনিবার, পায় নাকো পথের সন্ধান;

চরণে জড়ায়ে গেছে শাসনের কঠিন শৃঙ্খল-

হে নীলিমা নিষ্পলক, লক্ষ বিধিবিধানের এই কারাতল

তোমার ও মায়াদণ্ডে ভেঙেছ মায়াবী।

জনতার কোলাহলে একা ব'সে ভাবি

কোন্ দূর জাদুপুর-রহস্যের ইন্দ্রজাল মাখি

বাস্তবের রক্ততটে আসিলে একাকী!

স্ফটিক আলোকে তব বিথারিয়া নীলাম্বরখানা

মৌন স্বপ্ন-ময়ূরের ডানা!

চোখে মোর মুছে যায় ব্যাধবিদ্ধ ধরণীর রুধির-লিপিকা

জ্বলে ওঠে অন্তহারা আকাশের গৌরী দীপশিখা!

বসুধার অশ্রু-পাংশু আতপ্ত সৈকত,

ছিন্নবাস, নগ্নশির ভিক্ষুদল, নিষ্করুণ এই রাজপথ,

লক্ষ কোটি মুমূর্ষুর এই কারাগার,

এই ধূলি-ধূম্রগর্ভ বিস্তৃত আঁধার

ডুবে যায় নীলিমায়-স্বপ্নায়ত মুগ্ধ আঁখিপাতে,

-শঙ্খশুভ্র মেঘপুঞ্জে , শুক্লাকাশে, নক্ষত্রের রাতে;

ভেঙে যায় কীটপ্রায় ধরণীর বিশীর্ণ নির্মোক,

তোমার চকিত স্পর্শে, হে অতন্দ্র দূর কল্পলোক!



০৩.



নব নবীনের লাগি



-নব নবীনের লাগি

প্রদীপ ধরিয়া আঁধারের বুকে আমার রয়েছি জাগি!

ব্যর্থ পঙ্গু খর্ব প্রাণের বিকল শাসন ভেঙে,

নব আকাঙক্ষা আশার স্বপনে হৃদয় মোদের রেঙে,

দেবতার দ্বারে নবীন বিধান-নতুন ভিক্ষা মেগে

দাঁড়ায়েছি মোরা তরুণ প্রাণের অরুণের অনুরাগী!

ঝড়ের বাতাস চাই।

চারি দিক ঘিরে শীতের কুহেলি, শ্মশানপথের ছাই,

ছড়ায়ে রয়েছে পাহাড় প্রমাণ মৃতের অস্থি খুলি,

কে সাজাবে ঘর-দেউলের পর কঙ্কাল তুলি তুলি?

সূর্যচন্দ্র নিভায়ে কে নেবে জরার চোখের ঠুলি!

মরার ধরায় জ্যান্ত কখনও মাগিতে যাবে কি ঠাঁই!

ঘুমায়ে কে আছে ঘরে!

মৃতুশিশু-বুকে কল্যাণী পুরকামিনী কি আজ মরে!

কে আছে বসিয়া হতাশ উদাস অলস অন্যমনা?

দোদুল আকাশে দুলিয়া উঠিছে রাঙা অশনির ফণা,

বাজে বাদলের রঙ্গমল্লী. ঝঞ্ঝার ঝঞ্ঝনা!

ফিরিছে বালক-ঘর পলাতক ঝরা পালকের ঝড়ে!

আমরা অশ্বরোহী!-

যাযাবর যুবা, বন্দিনীদের ব্যথা মোরা বুকে বহি,

মানবের মাঝে যে দেবতা আছে আমরা তাহারে বরি ,

মোদের প্রাণের পূজার দেউলে তাহার প্রতিমা গড়ি,

চুয়া-চন্দন-গন্ধ বিলায়ে আমরা ঝরিয়া পড়ি,

সুবাস ছড়াই উশীরের মতো, ধূপের মতন দহি!

গাহি মানবের জয়!

কোটি কোটি বুকে কোটি ভগবান আঁখি মেলে জেগে রয়!

সবার প্রাণের অশ্রু-বেদনা মোদের বক্ষে লাগে,

কোটি বুকে কোটি দেউটি জ্বলিছে-কোটি কোটি শিখা জাগে,

প্রদীপ নিভায়ে মানবদেবের দেউল যাহারা ভাঙে,

আমরা তাদের শস্ত্র, শাসন, আসন করিব ক্ষয়!

-জয় মানবের জয়!



০৪.



কিশোরের প্রতি



যৌবনের সুরাপাত্র গরল-মদির

ঢালো নি অধরে তব, ধরা-মোহিনীর

উর্ধ্বফণা মায়া-ভুজঙ্গিনী

আসে নি তোমার কাম্য উরসের পথটুকু চিনি

চুমিয়া চুমিয়া তব হৃদয়ের মধু

বিষবহ্নি ঢালে নিকো বাসনার বধূ

অন্তরের পানপাত্রে তব;

অম্লান আনন্দ তব, আপ্লুত উৎসব,

অশ্রুহীন হাসি,

কামনার পিছে ঘুরে সাজো নি উদাসী।

ধবল কাশের দলে, আশ্বিনের গগনের তলে

তোর তরে রে কিশোর, মৃগতৃষ্ণা কভু নাহি জ্বলে!

নয়নে ফোটে না তব মিথ্যা মরুদ্যান।

অপরূপ রূপ-পরীস্থান

দিগন্তের আগে।

তোমার নির্মেষ চক্ষে কভু নাহি জাগে!

আকাশকুসুবীথি দিয়া

মাল্য তুমি আনো না রচিয়া

ছলাময় গগনের নিচে!

-রূপ-পিপাসায় জ্বলি মৃত্যুর পাথারে

স্পন্দহীন প্রেতপুরদ্বারে

করো নিকো করাঘাত তুমি

সুধার সন্ধানে লক্ষ বিষপাত্র চুমি

সাজো নিকো নীলকন্ঠ ব্যাকুল বাউল!

অধরে নাহিকো তৃষ্ণা, চক্ষে নাহি ভুল,

রক্তে তব অলক্ত যে পরে নাই আজও রানী,

রুধির নিঙাড়ি তব আজও দেবী মাগে নাই রক্তিম চন্দন!

কারাগার নাহি তব, নাহিকো বন্ধন,

দীঘল পতাকা, বর্শা তন্দ্রাহারা প্রহরীর লও নি তুলিয়া,

-সুকুমার কিশোরের হিয়া!

-জীবনসৈকতে তব দুলে যায় লীলায়িত লঘুনৃত্য নদী,

বক্ষে তব নাচে নিকো যৌবনের দুরন্ত জলধি;

শূল-তোলা শম্ভূর মতন

আস্ফালিয়া উঠে নাই মন

মিথ্যা বাধাবিধানের ধ্বংসের উল্লাসে!

তোমার আকাশে

দ্বাদশ সূর্যের বহ্নি ওঠে নিকো জ্বলি

কক্ষচ্যুত, উল্কাসম পড়ে নিকো স্খলি,

কুজ্ঝটিকা আবর্তের মাঝে

অনির্বাণ স্ফুলিঙ্গের সাজে!

সব বিঘ্ন সকল আগল

ভাঙিয়া জাগো নি তুমি স্পন্দন-পাগল

অনাগত স্বপ্নের সন্ধানে

দুরন্ত দুরাশা তুমি জাগাও নি প্রাণে!

নিঃস্ব দুটি অঞ্চলির আকিঞ্চন মাগি

সাজো নিকো দিকভোলা দিওয়ানা বৈরাগী!

পথে পথে ভিক্ষা মেগে কাম্য কল্পতরু

বাজাও নি শ্মশান-ডমরু!

জোছনাময়ী নিশি তব, জীবনের অমানিশা ঘোর

চক্ষে তব জাগে নি কিশোর!

আঁধারের নির্বিকল্প রূপ,

স্পন্দহীন বেদনার কূপ

রুদ্ধ তব বুকে;

তোমার সম্মূখে

ধরিত্রী জাগিছে ফুল্ল সুন্দরীর বেশে,

নিত্য বেলাশেষে

যেই পুষ্প ঝরে,

যে বিরহ জাগে চরাচরে,

গোধূলির অবসানে শ্লোকম্লান সাঁঝে,

তাহার বেদনা তব বক্ষে নাহি বাজে,

আকাঙ্খার অগ্নি দিয়া জ্বালো নাই চিতা,

ব্যথার সংহিতা

গাহ নাই তুমি!

দরিয়ার তীর ছাড়ি দেখ নাই দাব-মরুভূমি

জ্বলন্ত নিষ্ঠুর!

নগরীর ক্ষুব্ধ বক্ষে জাগে যেই মৃত্যুপ্রেতপুর,

ডাকিনীর রুক্ষ অট্টহাসি

ছন্দ তার মর্মে তব ওঠে না প্রকাশি!

সভ্যতার বীভৎস ভৈরবী

মলিন করে নি তব মানসের ছবি,

ফেনিল করে নি তব নভোনীল, প্রভাতের আলো,

এ উদভ্রান্ত যুবকের বক্ষে তার রশ্মি আজ ঢালো, বন্ধু, ঢালো!





০৫.



মরীচিকার পিছে-



ধূম্র তপ্ত আঁধির কুয়াশা তরবারি দিয়ে চিরে

সুন্দর দূর মরীচিকাতটে ছলনামায়ার তীরে

ছুটে যায় দুটি আঁখি!

-কত দূর হায় বাকি!

উধাও অশ্ব বগ্লাবিহীন অগাধ মরুভূ ঘিরে

পথে পথে তার বাধা জমে যায়-তবু সে আসে না ফিরে!

দূরে-দূরে আরো দূরে-আরো দূরে,

অসীম মরুর পারাবার-পারে আকাশ সীমানা জুড়ে

ভাসিয়াছে মরুতৃষা!

-হিয়া হারায়েছে দিশা!

কে যেন ডাকিছে আকুল অলস উদাস বাঁশির সুরে

কোন্‌ দিগন্তে নির্জন কোন্‌ মৌন মায়াবী-পুরে!

কোন্‌-এক সুনীল দরিয়া সেথায় উত্থলিছে অনিবার!

-কান পেতে একা শুনেছে সে তার অপরূপ ঝঙ্কার,

ছোটে অঞ্জলি পেতে,

তৃষার নেশায় মেতে,

উষর ধূসর মরুর মাঝারে এমন খেয়াল কার!

খুলিয়া দিয়াছে মাতাল ঝর্ণা না জানি কে দিলদার!

কে যেন রেখেছে সবুজ ঘাসের কোমল গালিচা পাতি!

যত খুন যত খারাবীর ঘোরে পরান আছিল মাতি,

নিমেষে গিয়েছে ভেঙে

স্বপন-আবেশে রেঙে

আঁখিদুটি তার জৌলস্‌ রাঙা হ’য়ে গেছে রাতারাতি!

কোন্‌ যেন এক জিন্‌-সর্দার সেজেছে তাহার সাথী।

কোন্‌ যেন পরী চেয়ে আছে দুটি চঞ্চল চোখ তুলে!

পাগলা হাওয়ায় অনিবার তার ওড়না যেতেছে দুলে!

গেঁথে গোলাপের মালা

তাকায়ে রয়েছে বালা,

বিলায়ে দিয়েছে রাঙা নার্গিস্‌ কালো পশমিনা চুলে!

বসেছে বালিকা খর্জুরছায়ে নীল দরিয়ার কূলে।

ছুটিছে ক্লিষ্ট ক্লান্ত অশ্ব কশাঘাত জর্জর,

চারি দিকে তার বালুর পাথার-মরুর হাওয়ার ঝড়;

নাহি শ্রান্তির লেশ,

সুদুর নিরুদ্দেশ-

অসীম কুহক পাতিয়া রেখেছে তাহার বুকের পর!

পথের তালাসে পাগল সোয়ার হারায়ে ফেলেছে ঘর!

আঁখির পলকে পাহাড়ের পারে কোথা সে ছুটিয়া যায়!

চকিত আকাশ পায় না তাহার নাগাল খুঁজিয়া হায়!

ঝড়ের বাতাস মিছে

ছুটছে তাহার পিছে!

মরুভূর প্রেত চকমিয়া তার চক্ষের পানে চায়-

সুরার তালাসে চুমুক দিল কে গরলের পেয়ালায়!





০৬.



জীবন-মরণ দুয়ারে আমার



সরাইখানার গোলমাল আসে কানে,

ঘরের সার্সি বাজে তাহাদের গানে,

পর্দা যে উড়ে যায়

তাদের হাসির ঝড়ের আঘাতে হায়!

-মদের পাত্র গিয়েছে কবে যে ভেঙে!

আজও মন ওঠে রেঙে

দিলদারদের দরাজ গলায় রবে,

সরায়ের উৎসবে!

কোন্‌ কিশোরীর চুড়ির মতন হায়

পেয়ালা তাদের থেকে থেকে বেজে যায়

বেহুঁশ হাওয়ার বুকে!

সারা জনমের শুষে-নেওয়া খুন নেচে ওঠে মোর মুখে!

পান্ডুর দুটি ঠোঁটে

ডালিম ফুলের রক্তিম আভা চকিতে আবার ফোটে!

মনের ফলকে জ্বলিছে তাদের হাসি ভরা লাল গাল,

ভুলে গেছে তারা এই জীবনের যত কিছু জঞ্জাল!

আখেরের ভয় ভুলে

দিলওয়ার প্রাণ খুলে

জীবন-রবাবে টানিছে ক্ষিপ্ত ছড়ি!

অদূরে আকাশে মধুমালতীর পাপড়ি পড়িছে ঝরি-

নিভিছে দিনের আলো

জীবন মরণ দুয়ারে আমার করে যে বাসিব ভালো

একা একা তাই ভাবিয়া মরিছে মন!

পূর্ণ হয় নি পিপাসী প্রাণের একটি আকিঞ্চন,

নি একটি দল,-

যৌবন শতদলে মোর হায় ফোটে নাই পরিমল!

উৎসব-লোভী অলি

আসে নি হেথায়

কীটের আঘাতে শুকায়ে গিয়েছে কবে কামনার কলি!

সারাটি জীবন বাতায়নখানি খুলে

তাকায়ে দেখেছি নগরী-মরুতে ক্যারাভেন্‌ যায় দুলে

আশা-নিরাশার বালু-পারাবার বেয়ে,

সুদূর মরুদ্যানের পানেতে চেয়ে!

সুখদুঃখের দোদুল ঢেউঢের তালে

নেচেছে তাহারা- মায়াবীর জাদুজালে

মাতিয়া গিয়েছে খেয়ালী মেজাজ খুলি,

মৃগতৃষ্ণার মদের নেশায় ভুলি!

মৃগতৃষ্ণার মদের নেশায় ভুলি!

মস্তানা সেজে ভেঙে গেছ ঘরদোর,

লোহার শিকের আড়ালে জীবন লুটায়ে কেঁদেছে মোর!

কারার ধুলায় লুন্ঠিত হ’য়ে বান্দার মতো হায়

কেঁদেছে বুকের বেদুঈন মোর দুরাশার পিপাসায়!

জীবনপথের তাতার দুস্যুগুলি

হুল্লোড় তুলি উড়ায়ে গিয়েছে ধূলি

মোর গবাক্ষে কবে!

কন্ঠ-বাজের আওয়াজ তাদের বেজেছে স্তব্ধ নভে!

আতুর নিদ্রা চকিতে গিয়েছে ভেঙে,

সারাটি নিশীথ খুন রোশনাই প্রদীপে মনটি রেঙে

একাকী রয়েছি বসি,

নিরালা গগনে কখন নিভেছে শশী

পাই নি যে তাহা টের!

-দূর দিগনে- চ’লে গেছে কোথা খুশরোজী মুসাফের!

কোন্‌ সুদুরের তুরাণী-প্রিয়ার তরে,

বুকের ডাকাত আজিও আমার জিঞ্জিরে কেঁদে মরে!

দীর্ঘ দিবস ব’য়ে গেছে যারা হাসি-অশ্রুর বোঝা

চাঁদের আলোকে ভেঙেছে তাদের “রোজা”

আমার গগনে ঈদরাত কভু দেয় নি হায় দেখা,

পরানে কখনও জাগে নি রোজা’র ঠেকা!

কী যে মিঠা এই সুখের দুখের ফেনিল জীবনখানা!

এই যে নিষেধ, এই যে বিধান-আইনকানুন, এই যে শাসন মানা,

ঘরদোর ভাঙা তুমুল প্রলয়ধ্বনি

নিত্য গগনে এই যে উঠিছে রণি

যুবানবীনের নটনর্তন তালে,

ভাঙনের গান এই যে বাজিছে দেশে দেশে কালে কালে,

এই যে তৃষ্ণা-দৈন্য-দুরাশা-জয়-সংগ্রাম-ভুল

সফেন সুরার ঝাঝের মতন ক’রে দেয় মজ্‌গুল

দিওয়ানা প্রাণের নেশা!

ভগবান, ভগবান, তুমি যুগ যুগ থেকে ধ’রেছ শুড়ির পেশা!

-লাখো জীবনের শূণ্য পেয়ালা ভরি দিয়া বারবার

জীবন-পান্থশালার দেয়ালে তুলিতেছে ঝঙ্কার-

মাতালের চিৎকার

অনাদি কালের থেকে;

মরণশিয়ারে মাথা পেতে তার দস্তুর যাই দেখে!

হেরিলাম দূরে বালুকার পরে রূপার তাবিজ প্রায়

জীবনের নদী কলরোলে ব’য়ে যায়!

কোটি শুঁড় দিয়ে দুখের মরুভ নিতেছে তাহারে শুষে,

ছলা-মরীচিকা জ্বলিতেছে তার প্রাণের খেয়াল-খুশে!

মরণ-সাহারা আসি

নিতে চায় তারে গ্রাসি!-

তবু সে হয় না হারা

ব্যথার রুধিরধারা

জীবনমদের পাত্র জুড়িয়া তার

যুগ যুগ ধরি অপরূপ সুরা গড়িছে মশালাদার!



০৭.



বেদিয়া



চুলিচালা সব ফেলেছে সে ভেঙে, পিঞ্জরহারা পাখি!

পিছুডাকে কভু আসে না ফিরিয়া, কে তারে আনিবে ডাকি?

উদাস উধাও হাওয়ার মতন চকিতে যায় সে উড়ে,

গলাটি তাহার সেধেছে অবাধ নদী-ঝর্ণার সুরে;

নয় সে বান্দা রংমহলের, মোতিমহলের বাঁদী,

ঝোড়ো হাওয়া সে যে, গৃহপ্রাঙ্গণে কে তারে রাখিবে বাঁধি!

কোন্ সুদূরের বেনামী পথের নিশানা নেছে সে চিনে,

ব্যর্থ ব্যথিত প্রান্তর তার চরণচিহ্ন বিনে!

যুগযুগান্ত কত কান্তার তার পানে আছে চেয়ে,

কবে সে আসিবে ঊষর ধূসর বালুকা-পথটি বেয়ে

তারই প্রতীক্ষা মেগে ব’সে আছে ব্যাকুল বিজন মরু!

দিকে দিকে কত নদী-নির্ঝর কত গিরিচূড়া-তরু

ঐ বাঞ্ছিত বন্ধুর তরে আসন রেখেছে পেতে

কালো মৃত্তিকা ঝরা কুসুমের বন্দনা-মালা গেঁথে

ছড়ায়ে পড়িছে দিগ্‌দিগন্তে ক্ষ্যাপা পথিকের লাগি!

বাবলা বনের মৃদুল গন্ধে বন্ধুর দেখা মাগি

লুটায়ে রয়েছে কোথা সীমান্তে শরৎ উষার শ্বাস!

ঘুঘু-হরিয়াল-ডাহুক-শালিখ-গাঙচিল-বুনোহাঁস

নিবিড় কাননে তটিনীর কূলে ডেকে যায় ফিরে ফিরে

বহু পুরাতন পরিচিত সেই সঙ্গী আসিল কি রে!

তারই লাগি ভায় ইন্দ্রধনুক নিবিড় মেঘের কূলে,

তারই লাগি আসে জোনাকি নামিয়া গিরিকন্দরমূলে।

ঝিনুক-নুড়ির অঞ্জলি ল’য়ে কলরব ক’রে ছুটে

নাচিয়া আসিছে অগাধ সিন্ধু তারই দুটি করপুটে।

তারই লাগি কোথা বালুপথে দেখা দেয় হীরকের কোণা,

তাহারই লাগিয়া উজানী নদীর ঢেউয়ে ভেসে আসে সোনা!

চকিতে পরশপাথর কুড়ায়ে বালকের মতো হেসে

ছুড়ে ফেলে দেয় উদাসী বেদিয়া কোন্ সে নিরুদ্দেশে!

যত্ন করিয়া পালক কুড়ায়, কানে গোঁজে বনফুল,

চাহে না রতন-মণিমঞ্জুষা হীরে-মাণিকের দুল,

-তার চেয়ে ভালো অমল উষার কনক-রোদের সীঁথি,

তার চেয়ে ভালো আলো-ঝল্মল্ শীতল শিশিরবীথি,

তার চেয়ে ভালো সুদূর গিরির গোধূলি-রঙিন জটা,

তার চেয়ে ভালো বেদিয়া বালার ক্ষিপ্র হাসির ছটা!

কী ভাষা বলে সে, কী বাণী জানায়, কিসের বারতা বহে!

মনে হয় যেন তারই তরে তবু দুটি কান পেতে রহে

আকাশ-বাতাস-আলোক-আঁধার মৌন স্বপ্নভরে,

মনে হয় যেন নিখিল বিশ্ব কোল পেতে তার তরে!



০৮.



নাবিক



কবে তব হৃদয়ের নদী

বরি নিল অসম্বৃত সুনীল জলধি!

সাগর-শকুন্ত-সম উল্লাসের রবে

দূর সিন্ধু-ঝটিকার নভে

বাজিয়া উঠিল তব দুরন্ত যৌবন!

পৃথ্বীর বেলায় বসি কেঁদে মরে আমাদের শৃঙ্খলিত মন!

কারাগার-মর্মরের তলে

নিরাশ্রয় বন্দিদের খেদ-কোলাহলে

ভ’রে যায় বসুধার আহত আকাশ!

অবনত শিরে মোরা ফিরিতেছি ঘৃণ্য বিধিবিধানের দাস!

-সহস্রের অঙুলিতর্জন

নিত্য সহিতেছি মোরা-বারিধির বিপ্লব-গর্জন

বরিয়া লয়েছ তুমি, তারে তুমি বাসিয়াছ ভালো;

তোমার পক্ষরতলে টগ্‌বগ্ করে খুন-দুরন্ত, ঝাঁঝালো!-

তাই তুমি পদাঘাতে ভেঙে গেলে অচেতন বসুধার দ্বার,

অবগুণ্ঠিতার

হিমকৃষ্ণ অঙুলির কঙ্কাল-পরশ

পরিহরি গেলে তুমি-মৃত্তিকার মদ্যহীন রস

তুহিন নির্বিষ নিঃস্ব পানপাত্রখানা

চকিতে চূর্ণিয়া গেলে-সীমাহারা আকাশের নীল শামিয়ানা

বাড়ব-আরক্ত স্ফীত বারিধির তট,

তরঙ্গের তুঙ্গ গিরি, দুর্গম সঙ্কট

তোমারে ডাকিয়া নিল মায়াবীর রাঙা মুখ তুলি!

নিমেষে ফেলিয়া গেলে ধরণীর শূন্য ভিক্ষাঝুলি!

প্রিয়ার পাণ্ডুর আঁখি অশ্রু-কুহেলিকা-মাখা গেলে তুমি ভুলি!

ভুলে গেলে ভীরু হৃদয়ের ভিক্ষা, আতুরের লজ্জা অবসাদ,-

অগাধের সাধ

তোমারে সাজায়ে দেছে ঘরছাড়া ক্ষ্যাপা সিন্দবাদ!

মণিময় তোরণের তীরে

মৃত্তিকায় প্রমোদ-মন্দিরে

নৃত্য-গীত-হাসি-অশ্রু-উৎসবের ফাঁদে

হে দুরন্ত দুর্নিবার-প্রাণ তব কাঁদে!

ছেড়ে গেলে মর্মন্তুদ মর্মর বেষ্টন,

সমুদ্রের যৌবন-গর্জন

তোমারে ক্ষ্যাপায়ে দেছে, ওহে বীর শের!

টাইফুন্-ডঙ্কার হর্ষে ভুলে গেছ অতীত-আখের

হে জলধি পাখি!

পে তব নাচিতেছে ল্যহারা দামিনী-বৈশাখী!

ললাটে জ্বলিছে তব উদয়াস্ত আকাশের রতœচূড় ময়ূখের টিপ,

কোন্ দূর দারুচিনি লবঙ্গের সুবাসিত দ্বীপ

করিতেছে বিভ্রান্ত তোমারে!

বিচিত্র বিহঙ্গ কোন্ মণিময় তোরণের দ্বারে

সহর্ষ নয়ন মেলি হেরিয়াছ কবে!

কোথা দূরে মায়াবনে পরীদল মেতেছে উৎসবে-

স্তম্ভিত নয়নে

নীল বাতায়নে

তাকায়েছ তুমি!

অতি দূর আকাশের সন্ধ্যারাগ-প্রতিবিম্বে প্রস্ফুটিত সমুদ্রের

আচম্বিত ইন্দ্রজাল চুমি

সাজিয়াছ বিচিত্র মায়াবী!

সৃজনের জাদুঘর-রহস্যের চাবি

আনিয়াছ কবে উন্মোচিয়া

হে জল-বেদিয়া!

অল্য বন্দর পানে ছুটিতেছ তুমি নিশিদিন

সিন্ধু বেদুঈন!

নাহি গৃহ, নাহি পান্থশালা-

লক্ষ লক্ষ ঊর্মি-নাগবালা

তোমারে নিতেছে ডেকে রহস্যপাতালে-

বারুণী যেথায় তার মণিদীপ জ্বালে!

প্রবাল-পালঙ্ক-পাশে মীননারী ঢুলায় চামর!

সেই দুরাশার মোহে ভুলে গেছ পিছুডাকা স্বর

ভুলেছ নোঙর!

কোন্ দূর কুহকের কূল

লক্ষ্য করি ছুটিতেছে নাবিকের হৃদয়-মাস্তুল

কে বা তাহা জানে!

অচিন আকাশ তারে কোন্ কথা কয় কানে কানে!



০৯.



বনের চাতক–মনের চাতক



বনের চাতক বাঁধল বাসা মেঘের কিনারায়-

মনের চাতক হারিয়ে গেল দূরের দুরাশায়!

ফুঁপিয়ে ওঠে কাতর আকাশ সেই হতাশার ক্ষোভে-

সে কোন্ বোঁটের ফুলের ঠোঁটের মিঠা মদের লোভে

বনের চাতক-মনের চাতক কাঁদছে অবেলায়!

পুবের হাওয়ায় হাপর জ্বলে, আগুনদানা ফাটে!

কোন্ ডাকিনীর বুকের চিতায় পচিম আকাশ টাটে!

বাদল-বৌয়ের চুমার মৌয়ের সোয়াদ চেয়ে চেয়ে

বনের চাতক-মনের চাতক চলছে আকাশ বেয়ে,

ঘাটের ভরা কলসি ও-কার কাঁদছে মাঠে মাঠে!

ওরে চাতক, বনের চাতক, আয় রে নেমে ধীরে

নিঝুম ছায়া-বৌরা যেথা ঘুমায় দীঘি ঘিরে,

“দে জল!” ব’লে ফোঁপাস কেন? মাটির কোলে জল

খবর-খোঁজা সোজা চোখের সোহাগে ছল্‌ছল্ !

মজিস নে রে আকাশ-মরুর মরীচিকার তীরে!

মনের চাতক, হতাশ উদাস পাখায় দিয়ে পাড়ি

কোথায় গেলি ঘরের কোণের কানাকানি ছাড়ি?

ননীর কলস আছে রে তার কাঁচা বুকের কাছে,

আতার ক্ষীরের মতো সোহাগ সেথায় ঘিরে আছে!

আয় রে ফিরে দানোয়-পাওয়া, আয় রে তাড়াতাড়ি।

বনের চাতক, মনের চাতক আসে না আর ফিরে,

কপোত-ব্যথা বাজায় মেঘের শকুনপাখা ঘিরে!

সে কোন্ ছুঁড়ির চুড়ি আকাশ-শুঁড়িখানায় বাজে!

চিনিমাখা ছায়ায় ঢাকা চুনীর ঠোঁটের মাঝে

লুকিয়ে আছে সে-কোন্ মধু মৌমাছিদের ভিড়ে!



১০.



সাগর - বলাকা



ওরে কিশোর, বেঘোর ঘুমের বেহুঁশ হাওয়া ঠেলে

পাতলা পাখা দিলি রে তোর দূর-দুরাশায় মেলে!

ফেনার বৌয়ের নোন্‌তা মৌয়ের মদের গেলাস লুটে,

ভোর-সাগরের শরাবখানায়–মুসল্লাতে জুটে

হিমের ঘুণে বেড়াস খুনের আগুনদানা জ্বেলে!

ওরে কিশোর, অস্তরাগের মেঘের চুমায় রেঙে

নীল নহরের স্বপন দেখে চৈতি চাঁদে জেগে

ছুটছ তুমি চ্ছল চ্ছল জলের কোলাহলের সাথে কই!

উছলে ওঠে বুকে তোমার আল্‌তো ফেনা-সই

ঢেউয়ের ছিটায় মিঠা আঙুল যাচ্ছে ঠোঁটে লেগে!

রে মুসাফের, পাতাল-প্রেতপুরের মরীচিকা

সাগরজলের তলে বুঝি জ্বালিয়ে দেছে শিখা!

তাই কি গেলে ভেঙে হেথায় বালিয়াড়ির বাড়ি!

দিচ্ছ যাযাবরের মতো সাগর-মরু-পাড়ি-

ডাইনে তোমার ডাইনীমায়া, পিছের আকাশ ফিকা!

বাসা তোমার সাতসাগরের ঘূর্ণী হাওয়ার বুকে!

ফুটছে ভাষা কেউটে ঢেউয়ের ফেনার ফণা ঠুকে!

প্রায়ণ তোমার প্রবালদ্বীপে, পলার মালা গলে

বরুণরানি ফিরছে যেথা, মুক্তপ্রদীপ জ্বলে

যেথায় মৌন মীনকুমারীর শঙ্খ ওঠে ফুঁকে।

যেই খানে মূক মায়াবিনীর কাঁকন শুধু বাজে

সাঁজ সকালে, ঢেউয়ের তালে, মাঝসাগরের মাঝে!

যায় না জাহাজ যেথায়- নাবিক, পায় না নাগাল যার,

লুঘ উদাস পাখায় ভেসে আঁখির তলে তার

ঘুরছে অবুজ সে কোন সবুজ স্বপন-খোজার কাজে!

ওরে কিশোর, দূর-সোহাগী ঘর- বিরাগী সুখ!

টুকটুকে কোন্‌ মেঘের পারে ফুটেফুটে কার মুখ

ডাকছে তোদের ডাগর কাঁচা চোখের কাছে তার!

-শাদা শকুনপাখায় যে তাই তুলছে হাহাকার

ফাঁপা ঢেউয়ের চাপা কাঁদন-ফাঁপর ফাটা বুক!



১১.



চলছি উধাও



চলছি উধাও, বল্গাহারা- ঝড়ের বেগে ছুটে

শিকল কে সে বাঁধছে পায়ে!

কোন্‌ সে ডাকাত ধরছে চেপে টুটি!

-আঁধার আলোর সাগরশেষে

প্রেতের মতো আসছে ভেসে!

আমার দেহের ছায়ার মতো, জড়িয়ে আছে মনের সনে,

যেদিন আমি জেগেছিলাম, সেও জেগেছে আমার মনে!

আমার মনের অন্ধকারে

ত্রিশূলমূলে, দেউলদ্বারে

কাটিয়েছে সে দুরন্ত কাল ব্যর্থ পূজার পুষ্প ঢেলে!

স্বপন তাহার সফল হবে আমায় পেলে, আমায় পেলে!

রাত্রিদিবার জোয়ার স্রোতে

নোঙরছেঁড়া হৃদয় হ’তে

জেগেছে সে হালের নাবিক

চোখের ধাধায় ঝড়ের ঝাঁঝে

মনের মাঝে মানের মাঝে

আমার চুমোর অন্বেষণে

প্রিয়ার মতো আমার মনে

অঙ্কহারা কাল ঘুরেছে কাতর দুটি নয়ন তুলে,

চোখের পাতা ভিজিয়ে তাহার আমার অশ্রুপাথার-কূলে!

ভিজে মাঠের অন্ধকারে কেঁদেছে মোর সাথে

হাতটি রেখে হাতে!

দেখিনি তার মুখখানি তো,

পাইনি তারে টের,

জানি নি হায় আমার বুকে আশেক-অসীমের

জেগে আছে জনমভোরের সূতিকাগার থেকে!

কত নতুন শরাবশালায় নাবনু একে একে!

সরাইখানার দিলপিয়ালায় মাতি

কাটিয়ে দিলাম কত খুশির রাতি!

জীবন-বীণার তারে তারে আগুন-ছড়ি টানি

গুঞ্জরিয়া এল-গেল কত গানের রানি,

নাশপাতি-গাল গালে রাখি কানে কানে করলে কানাকানি

শরাব-নেশায় রাঙিয়ে দিল আঁখি!

-ফুলের ফাগে বেহুঁশ হোলি নাকি!

হঠাৎ কখন স্বপন-ফানুস কোথায় গেল উড়ে!

-জীবন মরু- মরীচিকার পিছে ঘুরে ঘুরে

ঘায়েল হয়ে ফিরল আমার বুকের কেরাভেন-

আকাশ-চরা শ্যেন!

মরুঝড়ের হাহাকারে মৃগতৃষার লাগি

প্রাণ যে তাহার রইল তবু জাগি

ইবলিশেরই সঙ্গে তাহার লড়াই-হল শুরু!

দরাজ বুকে দিল্‌ যে উড়–উড়-!

ধূসর ধু ধু দিগন্তরে হারিয়ে যাওয়া নার্গিসেই শোভা

থরে থরে উঠল ফুটে রঙিন-মনোলোভা!

অলীক আশার, দূর-দুরশার দুয়ার ভাঙার তরে

যৌবন মোর উঠল নেচে রক্তমুঠি, ঝড়ের ঝুঁটির পরে!

পিছে ফেলে টিকে থাকার ফাটকে কারাগারে

ভেঙে শিকল ধ্বসিয়ে ফাঁড়ির দ্বার

চলল সে যে ছুটে!

শৃঙ্খল কে বাধল তাহার পায়ে-

চুলের ঝুটি ধরল কে তার মুঠে!

বর্শা আমার উঠল ক্ষেপে খুনে,

হুমকি আমার উঠল বুকে রুখে!

দুশমন কে পথের সুমুখে

-কোথায় কে বা!

এ কোন মায়া

মোহ এমন কার!

বুকে আমার বাঘের মতো গর্জাল হুঙ্কার!

মনের মাঝের পিছুডাকা উঠল বুঝি হেঁকে-

সে কোন সুদূরে তারার আলোরে থেকে

মাথার পরের খা খা মেঘের পাথারপুরী ছেড়ে

নেমে এল রাত্রিদিবার যাত্রাপথে কে রে!

কী তৃষা তার!

কী নিবেদন!

মাগছে কিসের ভিখ্‌!

উদ্যত পথিক

হঠাৎ কেন যাচ্ছে থেমে-

আজকে হঠাৎ থামতে কেন হয়!

-এই বিজয়ী কার কাছে আজ মাগছে পরাজয়!

পথ- আলেয়ার খেয়ায় ধোঁয়ায় ধ্রুবতারার মতন কাহার আঁখি

আজকে নিল ডাকি

হালভাঙা এই ভুতের জাহাজটারে!

মড়ার খুলি-পাহাড়প্রমাণ হাড়ে

বুকে তাহার জ’মে গেছে কত শ্মশান-বোঝা!

আক্রোশে হা ছুটছিল সে একরোখা, এক সোজা

চুম্বকেরই ধ্বংসগিরির পানে,

নোঙরহারা মাস্তুলেরই টানে!

প্রেতের দলে ঘুরেছিল প্রেমের আসন পাতি,

জানে কি সে বুকের মাঝে আছে তাহার সাথী!

জানে কি সে ভোরের আকাশ, লক্ষ তারার আলো

তাহার মনের দূয়ারপথেই নিরিখ হারালো!

জানি নি সে তোহার ঠোঁটের একটি চুমোর তরে

কোন্‌ দিওয়ানার সারেং কাঁদে

নয়নে নীর ঝরে!

কপোত-ব্যথা ফাটে রে কার অপার গগন ভেদি!

তাহার বুকের সীমার মাঝেই কাঁদছে কয়েদি

কোন্‌ সে অসীম আসি!

লক্ষ সাকীর প্রিয় তাহার বুকের পাশাপাশি

প্রেমের খবর পুছে

কবের থেকে কাঁদতে আছে-

‘পেয়ালা দে রে মুঝে!’



১২.



একদিন খুঁজেছিনু যারে



একদিন খুঁজেছিনু যারে

বকের পাখার ভিড়ে বাদলের গোধূলি-আঁধারে,

মালতীলতার বনে, কদমের তলে,

নিঝুম ঘুমের ঘাটে-কেয়াফুল, শেফালীর দলে!

-যাহারে খুজিয়াছিনু মাঠে মাঠে শরতের ভোরে

হেমন্তের হিম ঘাসে যাহারে খুজিয়াছিনু ঝরঝর

কামিনীর ব্যথার শিয়রে

যার লাগি ছুটে গেছি নির্দয় মসুদ চীনা তাতারের দলে,

আর্ত কোলাহলে

তুলিয়াছি দিকে দিকে বাধা বিঘ্ন ভয়-

আজ মনে হয়

পৃথিবীর সাঁজদীপে তার হাতে কোনোদিন জ্বলে নাই শিখা@

-শুধু শেষ নিশীথের ছায়া-কুহেলিকা

শুধু মেরু-আকাশের নীহারিকা, তারা

দিয়ে যায় যেন সেই পলাতকা চকিতার সাড়া!

মাঠে ঘাটে কিশোরীর কাঁকনের রাগিণীতে তার সুর

শোনে নাই কেউ

গাগরীর কোলে তার উত্থলিয়া ওঠে নাই আমাদের

গাঙিনীর ঢেউ!

নামে নাই সাবধানী পাড়াগাঁর বাঁকা পথের চুপে চুপে

ঘোমটার ঘুমটুকু চুমি!

মনে হয় শুধু আমি, আর শুধু তুমি

আর ঐ আকাশের পউষ-নীরবতা

রাত্রির নির্জনযাত্রী তারকার কানে কানে কত কাল

কহিয়াছি আধো আধো কথা!

আজ বুঝি ভুলে গেছে প্রিয়া!

পাতাঝরা আঁধারের মুসাফের-হিয়া

একদিন ছিল তব গোধূলির সহচর, ভুলে গেছ তুমি!

এ মাটির ছলনার সুরাপাত্র অনিবার চুমি

আজ মোর বুকে বাজে শুধু খেদ, শুধু অবসাদ!

মাহুয়ার, ধুতুরার স্বাদ

জীবনের পেয়ালায় ফোঁটা ফোঁটা ধরি

দুরন্ত শোণিতে মোর বারবার নিয়েছি যে ভরি!

মসজেদ-সরাই-শরাব

ফুরায় না তৃষা মোর, জুড়ায় না কলেজার তাপ!

দিকে দিকে ভাদরের ভিজা মাঠ-আলেয়ার শিখা!

পদে পদে নাচে ফণা,

পথে পথে কালো যবণিকা!

কাতর ক্রন্দন,-

কামনার কবর-বন্ধন!

কাফনের অভিযান, অঙ্গার সমাধি!

মৃত্যুর সুমেরু সিন্ধু অন্ধকারে বারবার উঠিতেছে কাঁদি!

মর্‌মর্‌ কেঁদে ওঠে ঝরাপাতাভরা ভোররাতের পবন-

আধো আঁধারের দেশে

বারবার আসে ভেসে

কার সুর!-

কোন্‌ সুদুরের তরে হৃদয়ের প্রেতপুরে ডাকিনীর মতো

মোর কেঁদে মরে মন!



(বাকি কবিতাগুলো কমেন্ট অংশে)

মন্তব্য ৫০ টি রেটিং +১৪/-০

মন্তব্য (৫০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:৫৫

শামীম আরা বীথি বলেছেন: অসাধারণ কাজ করেছেন। আমি অভিভূত।

নজরুলের প্রভাব যে কত প্রকট ছিল তা ঝরা পালক পড়লেই বোঝা যায়। কবির নাম উল্লেখ না থাকলে ঝরা পালকের অনেক কবিতা নজরুলের কবিতা বলে অনেকেই ভুল করতে পারেন।

২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:৫০

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:৫৫

নাজনীন১ বলেছেন: আখের ভুলিয়া আপনারে আমি রেখেছি দিওয়ানা ক’রে!
জন্ম ভরিয়া সে কোন্ হেঁয়ালি হল না আমার সাধা–
পায় পায় নাচে জিঞ্জির হায়, পথে পথে ধায় ধাঁধা!
-নিমেষে পাসরি এই বসুধার নিয়তি-মানার বাধা


-- চমৎকার!

৩১ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:৪১

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ নাজনীন আপু। ভালো থাকবেন।

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১০:৫৮

একরামুল হক শামীম বলেছেন:
১৩.

আলেয়া

প্রান্তরের পারে তব তিমিরের খেয়া
নীরবে যেতেছে দুলে নিদালি আলেয়া!
-হেথা, গৃহবাতায়নে নিভে গেছে প্রদীপের শিখা,
ঘোমটায় আঁখি ঘেরি রাত্রি-কুমারিকা
চুপে চুপে চলিতেছে বনপথ ধরি!
আকাশের বুকে বুকে কাহাদের মেঘের গাগরী
ডুবে যায় ধীরে ধীরে আঁধার সাগরে!
ঢুলু-ঢুলু তারকার নয়নের পরে
নিশি নেমে আসে গাঢ়-স্বপনঙ্কুল!
শেহালায় ঢাকা শ্যাম বালুকার কূল
বনমালীর সাথে ঘুমায়েছে কবে!
বেণুবনশাখে কোন্‌ পেচকের রবে
চমকিছে নিরালা যামিনী!
পাতাল-নিলয় ছাড়ি কে নাগকামিনী
আঁকাবাঁকা গিরিপথে চলিয়াছে চিত্রা অভিসারিকার প্রায়!
শ্মশানশয্যায়
নেভ-নেভ কোন্‌ চিতা-স্ফুলিঙ্গেরে ঘিরে
ক্ষুধিত আঁধার আসি জমিতেছে ধীরে!
নিদ্রার দেউলমূলে চোখ দুটি মুদে
স্বপ্নের বুদ্‌বুদে
বিলসিছে যবে ক্লান্ত ঘুমন্তের দল-
হে অনল-উন্মুখ, চঞ্চল
উন্নমিত আঁখিদুটি মেলি
সন্তরি চলিছ তুমি রাত্রির কুহেলি
কোন্‌ দূর কামনার পানে!
ঝলমল দিবা অবসান
বধির আঁধারে
কান্তারের দ্বারে
একি তব মৌন নিবেদন!
-দিগভ্রান্ত-দরদী-উন্মন!
পল্লীপসারিণী যবে পণ্যরত্ন হেঁকে গেছে চ’লে
তোমার পিঙ্গল আঁখি ওঠে নি তো জ্বলে
আকাঙ্কার উলঙ্গ উল্লাসে!
জনতায়-নগরীর তোরণের পাশে,
অন্তঃপুরিকার বুকে, মণিসৌধসোপানের তীরে,
মরকত-ইন্দ্রনীল-অয়স্কান- খনির তিমিরে
যাও নি তো কভু তুমি পাথেয় সন্ধানে!
ভাঙা হাটে-ভিজা মাঠে-মরণের পানে
শীত প্রেতপুরে
একা একা মরিতেছ ঘুরে
না জানি কী পিপাসার ক্ষোভে!
আমাদের ব্যর্থতায়, আমাদের সকাতর কামনায় লোভে
মাগিতে আস নি তুমি নিমেষের ঠাঁই!
-অন্ধকার জলাভুমি কঙ্কালের ছাই,
পল্লীকান্তারের ছায়া-তেপান্তর পথের বিস্ময়
নিশীথের দীর্ঘশ্বাসময়
করিয়াছে বিমনা তোমারে!
রাত্রি-পারাবারে
ফিরিতেছ বারম্বার একাকী বিচরি!
হেমন্তের হিম পথ ধরি,
পউষ, আকাশতলে দহি দহি দহি
ছুটিতেছ বিহ্বল বিরহী
কত শত যুগজন্ম বহি!
কারে কবে বেসেছিলে ভালো
হে ফকির, আলেয়ার আলো!
কোন্‌ দূরে অস-মিত যৌবনের স্মৃতি বিমথিয়া
চিত্তে তব জাগিতেছে কবেকার প্রিয়া!
সে কোন্‌ রাত্রির হিমে হয়ে গেছে হারা!
নিয়েছে ভুলায়ে তারে মায়াবী ও নিশিমরু,
আঁধার সাহারা!
আজও তব লোহিত কপোলে
চুম্বন-শোণিমা তার উঠিতেছে জ্ব’লে
অনল-ব্যথায়!
চ’লে যায়-মিলনের লগ্ন চ’লে যায়!
দিকে দিকে ধূমাবাহু যায় তব ছুটি
অন্ধকারে লুটি লুটি লুটি!
ছলাময় আকাশের নিচে
লক্ষ প্রেতবধূদের পিছে
ছুটিয়া চলিছে তব প্রেম-পিপাসার
অগ্নি অভিসার!
বহ্নি-ফেনা নিঙাড়িয়া পাত্র ভরি ভরি,
অনন্ত অঙ্গার দিয়া হৃদয়ের পান্ডুলিপি গড়ি,
উষার বাতাস ভুলি, পলাতকা রাত্রির পিছনে
যুগ যুগ ছুটিতেছ কার অন্বেষণে।

১৪.

অস্তচাঁদে

ভালোবাসিয়াছি আমি অস্তচাঁদ, -ক্লান্ত শেষপ্রহরের শশী!
-অঘোর ঘুমের ঘোরে ঢলে যবে কালো নদী-ঢেউয়ের কলসী,
নিঝ্ঝুম বিছানার পরে
মেঘবৌ’র খোঁপাখসা জোছনাফুল চুপে চুপে ঝরে,-
চেয়ে থাকি চোখ তুলে’-যেন মোর পলাতকা প্রিয়া
মেঘের ঘোমটা তুলে’ প্রেত-চাঁদে সচকিতে ওঠে শিহরিয়া!
সে যেন দেখেছে মোরে জন্মে জন্মে ফিরে’ ফিরে’ ফিরে’
মাঠে ঘাটে একা একা, -বুনোহাঁস-জোনাকির ভিড়ে!
দুশ্চর দেউলে কোন্-কোন্ যক্ষ-প্রাসাদের তটে,
দূর উর-ব্যাবিলোন-মিশরের মরুভূ-সঙ্কটে,
কোথা পিরামিড তলে, ঈসিসের বেদিকার মূলে,
কেউটের মতো নীলা যেইখানে ফণা তুলে উঠিয়াছে ফুলে,
কোন্ মনভুলানিয়া পথচাওয়া দুলালীর মনে
আমারে দেখেছে জোছনা-চোর চোখে-অলস নয়নে!
আমারে দেখেছে সে যে আসরীয় সম্রাটের বেশে
প্রাসাদ-অলিন্দে যবে মহিমায় দাঁড়ায়েছি এসে-
হাতে তার হাত, পায়ে হাতিয়ার রাখি
কুমারীর পানে আমি তুলিয়াছি আনন্দের আরক্তিম আঁখি!
ভোরগেলাসের সুরা-তহুরা, ক’রেছি মোরা চুপে চুপে পান,
চকোরজুড়ির মতো কুহরিয়া গাহিয়াছি চাঁদিনীর গান!
পেয়ালায়-পায়েলায় সেই নিশি হয় নি উতলা,
নীল নিচোলের কোলে নাচে নাই আকাশের তলা!
নটীরা ঘুমায়েছিল পুরে পুরে, ঘুমের রাজবধূ-
চুরি করে পিয়েছিনু ক্রীতদাসী বালিকার যৌবনের মধু!
সম্রাজ্ঞীর নির্দয় আঁখির দর্প বিদ্রূপ ভুলিয়া
কৃষ্ণাতিথি-চাঁদিনীর তলে আমি ষোড়শীর উরু পরশিয়া
লভেছিনু উল্লাস-উতরোল!-আজ পড়ে মনে
সাধ-বিষাদের খেদ কত জন্মজন্মান্তের, রাতের নির্জনে!
আমি ছিনু ‘ক্রবেদুর’ কোন্ দূর ‘প্রভেন্স্’-প্রান্তরে!
-দেউলিয়া পায়দল্-অগোচর মনচোর-মানিনীর তরে
সারেঙের সুর মোর এমনি উদাস রাত্রে উঠিত ঝঙ্কারি!
আঙুরতলায় ঘেরা ঘুমঘোর ঘরখানা ছাড়ি
ঘুঘুর পাখনা মেলি মোর পানে আসিল পিয়ারা;
মেঘের ময়ূরপাখে জেগেছিল এলোমেলো তারা!
-’অলিভ’ পাতার ফাঁকে চুন চোখে চেয়েছিল চাঁদ,
মিলননিশার শেষে-বৃশ্চিক, গোক্ষুরাফণা, বিষের বিস্বাদ!
স্পেইনের ‘সিয়েরা’য় ছিনু আমি দস্যু-অশ্বারোহী-
নির্মম-কৃতান্ত-কাল-তবু কী যে কাতর, বিরহী!
কোন্ রাজনন্দিনীর ঠোঁটে আমি এঁকেছিনু বর্বর চুম্বন!
অন্দরে পশিয়াছিনু অবেলার ঝড়ের মতন!
তখন রতনশেজে গিয়েছিল নিভে মধুরাতি,
নীল জানালার পাশে-ভাঙা হাটে-চাঁদের বেসাতি।
চুপে চুপে মুখে কার পড়েছিনু ঝুঁকে!
ব্যাধের মতন আমি টেনেছিনু বুকে
কোন্ ভীরু কপোতীর উড়ু-উড়ু ডানা!
-কালো মেঘে কেঁদেছিল অস্তচাঁদ-আলোর মোহানা!
বাংলার মাঠে ঘাটে ফিরেছিনু বেণু হাতে একা,
গঙ্গার তীরে কবে কার সাথে হয়েছিল দেখা!
‘ফুলটি ফুটিলে চাঁদিনী উঠিলে’ এমনই রূপালি রাতে
কদমতলায় দাঁড়াতাম গিয়ে বাঁশের বাঁশিটি হাতে!
অপরাজিতার ঝাড়ে- নদীপারে কিশোরী লুকায়ে বুঝি!-
মদনমোহন নয়ন আমার পেয়েছিল তারে খুঁজি!
তারই লাগি বেঁধেছিনু বাঁকা চুলে ময়ূরপাখার চূড়া,
তাহারই লাগিয়া শুঁড়ি সেজেছিনু-ঢেলে দিয়েছিনু সুরা!
তাহারই নধর অধর নিঙাড়ি উথলিল বুকে মধু,
জোনাকির সাথে ভেসে শেষরাতে দাঁড়াতাম দোরে বঁধু!
মনে পড়ে কি তা!-চাঁদ জানে যাহা, জানে যা কৃষ্ণাতিথির শশী,
বুকের আগুনে খুন চড়ে-মুখ চুন হয়ে যায় একেলা বসি!

১৫.

ছায়া-প্রিয়া

দুপুর রাতে ও কার আওয়াজ
গান কে গাহে, গান না!
কপোতবধূ ঘুমিয়ে আছে
নিঝুম ঝিঁঝির বুকের কাছে;
অস্তচাঁদের আলোর তলে
এ কার তবে কান্না!
গান কে গাহে, গান না!
সার্সি ঘরের উঠছে বেজে
উঠছে কেঁপে পর্দা!
বাতাস আজি ঘুমিয়ে আছে
জল-ডাহুরের বুকের কাছে;
এ কোন্‌ বাঁশি সার্সি বাজায়
এ কোন হাওয়া ফর্দা
দেয় কাঁপিয়ে পর্দা!
নূপুর কাহার বাজল রে ঐ!
কাঁকন কাহার কাঁদল
পুরের বধু ঘুমিয়ে আছে
দুধের শিশুর বুকের কাছে;
ঘরে আমার ছায়া-প্রিয়া
মায়ার মিলন ফাঁদল
কাঁকন যে তার কাঁদল!
খসখসাল শাড়ি কাহার!
উস্‌খুসাল চুল গো!
পুরের বধু ঘুমিয়ে আছে
দুধের শিশুর বুকের কাছে:
জুল্‌পি কাহার উঠল দুলে!
দুলল কাহার দুল গো!
উস্‌খুসাল চুল গো!
কাঁদছে পাখি পউষনিশির
তেপান্তরের বক্ষে!
ওর বিধবা বুকের মাঝে
যে গো কার কাঁদন বাজে!
ঘুম নাহি আজ চাঁদের চোখে,
নিদ্‌ নাহি মোর চক্ষে!
তেপান্তরের বক্ষে!
এল আমার ছায়া-প্রিয়া,
কিশোরবেলার সই গো!
পুরের বধূ ঘুমিয়ে আছে
দুধের শিশুর বুকের কাছে;
মনের মধূ-মনোরমা-
কই গো সে মোর কই গো!
কিশোরবেলার সই গো!
ও কার আওয়াজ হাওয়ায় বাজে!
গান কে গাহে, গান না!
কপোতবধূ ঘুমিয়ে আছে
বনের ছায়ায়-মাঠের কাছে;
অস্তচাঁদের আলোর তলে
এ কার তবে কান্না!
গান কে গাহে, গান না!

১৬.

ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল

ডাকিয়া কহিল মোরে রাজার দুলাল,-
ডালিম ফুলের মতো ঠোঁট যার রাঙা, আপেলের মতো লাল যার গাল,
চুল যার শাঙনের মেঘ, আর আঁখি গোধূলির মতো গোলাপী রঙিন,
আমি দেখিয়াছি তারে ঘুমপথে, স্বপ্নে-কত দিন!
মোর জানালার পাশে তারে দেখিয়াছি রাতের দুপুরে-
তখন শুকনবধু যেতেছিল শ্মশানের পানে উড়ে উড়ে!
মেঘের বুরুজ ভেঙে অস্তচাঁদ দিয়েছিল উঁকি
সে কোন্‌ বালিকা ‌একা অন্তঃপুরে এল অধোমুখী!
পাথারের পারে মোর প্রাসাদের আঙিনার পরে
দাঁড়াল সে- বাসররাত্রির বধু-মোর তরে, যেন মোর তরে!
তখন নিভিয়া গেছে মণিদীপ-চাঁদ শুধু খেলে লুকোচুরি,-
ঘুমের শিয়রে শুধু ফুটিতেছে-ঝরিতেছে ফুলঝুরি, স্বপনের কুঁড়ি!
অলস আঢুল হাওয়া জানালায় থেকে থেকে ফুঁপায় উদাসী!
কাতর নয়ন কার হাহাকারে চাঁদিনীতে জাগে গো উপাসী!
কিঙ্খারে -গালিচা খাটে রাজবধু-ঝিয়ারীর বেশে
কভু সে দেয় নি দেখা- মোর তোরণের তলে দাঁড়াল সে এসে!
দাঁড়াল সে হেঁটমুখে চোখ তার ভরে গেছে নীল অশ্রুজলে!
মীনকুমারীর মতো কোন দূর সিন্ধুর অতলে
ঘুরেছে সে মোর লাগি!-উড়েছে সে অসীমের সীমা!
অশ্রুর অঙ্গারে তার নিটোল ননীর গলা, নরম লালিমা
জ্ব’লে গেছে-নগ্ন হাত, নাই শাখা, হারায়েছে রুলি,
এলোমেলো কালো চুলে খ’সে গেছে খোঁপা তার, বেণী গেছে খুলি!
সাপিনীর মতো বাঁকা আঙুলে ফুটেছে তার কঙ্কালের রূপ,
ভেঙেছে নাকের ডাঁশা,হিম স্তন হিম রোমকূপ!
আমি দেখিয়াছি তারে ক্ষুধিত প্রেতের মতো চুমিয়াছি আমি
তারই পেয়ালায় হায়! পৃথিবীর উষা ছেড়ে আসিয়াছি নামি
কান্তারে- ঘুমের ভিড়ে বাঁধিয়াছি দেউলিয়া বাউলের ঘর,
আমি দেখিয়াছি ছায়া, শুনিয়াছি একাকিনী কুহকীর স্বর!
বুকে মোর, কোলে মোর- কঙ্কালের কাঁকালের চুমা!
গঙ্গার তরঙ্গ কানে গায়,- ঘুমা, ঘুমা!
ডাকিয়া কহিল মোর রাজার দুলাল-
ডালিম ফুলের মতো ঠোঁট যার রাঙা আপেলের মতো লাল যার গাল,
চুল যার শাঙনের মেঘ, আর আঁখি গোধূলির মতো গোলাপী রঙিন;
আমি দেখিয়াছি তারে ঘুমপথে, স্বপ্নে-কত দিন!

৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:০১

একরামুল হক শামীম বলেছেন:
১৭.

কবি

ভ্রমরীর মতো চুপে সৃজনের ছায়াধূপে ঘুরে মরে মন
আমি নিদালির আঁখি, নেশাখোর চোখের স্বপনে!
নিরালায় সুর সাথি, বাঁধি মোর মানসীর বেণী,
মানুষ দেখে নি মোরে কোনোদিন, আমারে চেনে নি!
কোনো ভিড় কোনোদিন দাঁড়ায় নি মোর চারি পাশে-
শুধায় নি কেহ কভু-আসে কি রে,- সে কি আসে-আসে।
আসে নি সে ভরাহাটে-খয়াঘাটে-পৃথিবীর পসরায় মাঝে
পাটনী দেখে নি তারে কোনোদিন-মাঝি তারে ডাকে নিকো সাঁঝে।
পরাপার করে নি সে মণিরত্ন-বেসাতির সিন্ধুর সীমানা,-
চেনা-চেনা মুখ সবই-সে যে সুদুর-অজানা!
করবীকুঁড়ির পানে চোখ তার সারাদিন চেয়ে আছে চুপে,
রূপসাগরের মাঝে কোন্‌ দূর গোধূলির সে যে আছে ডুবে!
সে যেন ঘাসের বুকে, ঝিলমিল শিশিরের জলে;
খুঁজে তারে পাওয়া যাবে এলোমেলো বেদিয়ার দলে,
বাবলার ফুলে ফুলে ওড়ে তার প্রজাপতি-পাখা,
ননীর আঙুলে তার কেঁপে ওঠে কচি নোনাশাখা!
হেমন্তের হিম মাঠে, আকাশের আবছায়া ফুঁড়ে
বকবধুটির মতো কুয়াশায় শাদা ডানা যায় তার উড়ে!
হয়তো শুনেছ তারে-তার সুর, দুপুর আকাশে
ঝরাপাতাভরা মরা দরিয়ার পাশে
বেজেছে ঘুঘুর মুখে, জল-ডাহুকীর বুকে পউষনিশায়
হলুদ পাতার ভিড়ে শিরশিরে পুবালি হাওয়ায়!
হয়তো দেখেছ তারে ভুতুড়ে দীপের চোখে মাঝরাতে দেয়ালের পরে
নিভে যাওয়া প্রদীপের ধূসর ধোঁয়ায় তার সুর যেন ঝরে!
শুক্লা একাদশী রাতে বিধবার বিছানায় সেই জোছনা ভাসে
তারই বুকে চুপে চুপে কবি আসে সুর তার আসে।
উস্‌খুস্‌ এলো চুলে ভরে আছে কিশোরীর নগ্ন মুখখানি,-
তারই পাশে সুর ভাসে অলখিতে উড়ে যায় কবির উড়ানি!
বালুঘড়িটির বুকে ঝিরি ঝিরি ঝিরি ঝিরি গান যবে বাজে
রাতবিরেতের মাঠে হাঁটে সে যে আলসে, অকাজে!
ঘুমকুমারীর মুখে চুমো খায় যখন আকাশ
যখন ঘুমায়ে থাকে টুনটুনি, মধুমাছি,ঘাস
হাওয়ার কাতর শ্বাস থেমে যায় আমলকী সাড়ে,
বাঁকা চাঁদ ডুবে যায় বাদলের মেঘের আঁধারে,
তেঁতুলের শাখে শাখে বাদুড়ের কালো ডানা ভাসে,
মনের হরিণী তার ঘুরে মরে হাহাকারে বনের বাতাসে!
জোনাকির মতো সে যে দূরে দূরে যায় উড়ে উড়ে-
আপনার মুখ দেখে ফেরে সে যে নদীর মুকুরে-
জ্বলে ওঠে আলোয়ার মতো তার লাল আঁখিখানি।
আঁধারে ভাসায় খেয়া সে কোন্‌ পাষাণী!
জানে না তো কী যে চায়- কবে হায় কী গেছে হারায়ে।
চোখ বুজে খোঁজে একা-হাতড়ায় আঙুল বাড়ায়ে
কারে আহা।-কাঁদে হা হা পুরের বাতাস,
শ্মশানশবের বুকে জাগে এক পিপাসার শ্বাস!
তারই লাগি মুখ তোলে কোন মৃতা-হিম চিতা জ্বেলে দেয় শিখা,
তার মাঝে যায় দহি বিরহীর ছায়াপুত্তলিকা!

১৮.

সিন্ধু

বুকে তব সুরপরী বিরহবিধুর
গেয়ে যায়, হে জলধি, মায়ার মুকুর!
কোন্‌ দূর আকাশের ময়ুর-নীলিমা
তোমারে উতলা করে! বালুচরসীমা
উলঙ্ঘি তুলিছ তাই শিরোপা তোমার,-
উচ্ছৃঙ্খল অট্টহাসি-তরঙ্গের বাঁকা তলোয়ার!
গলে মৃগতৃষ্ণাবিষ, মারীর আগল
তোমার সুরার স্পর্শে আশেক-পাগল!
উদ্যত উর্মির বুকে অরূপের ছবি
নিত্যকাল বহিছ হে মরমিয়া কবি
হে দুন্দুভি দুর্জয়ের, দুরন্ত, আগধ।
পেয়েছি শক্তির তৃপ্তি, বিজয়ের স্বাদ
তোমার উলঙ্গনীল তরঙ্গের গানে!
কালে কালে দেশে দেশে মানুষসন্তানে
তুমি শিখায়েছ বন্দু দুর্মদ-দুরাশা!
আমাদের বুকে তুমি জাগালে পিপাসা
দুশ্চর তটের লাগি-সুদূরের তরে।
রহস্যের মায়াসৌধ বক্ষের উপরে
ধরেছ দুস্তরকাল; তুচ্ছ অভিলাষ,
দুদিনের আশা, শানি-, আকাঙক্ষা, উল্লাস
পলকের দৈন্য-জ্বালা-জয়-পরাজয়,
ত্রাস্তব্যথা-হাসি-অশ্রু-তপস্যা সঞ্চয়-
পিনাক শিখায় তব হল ছারখার
ইচ্ছার বাড়বকুন্ডে, উগ্র পিপাসার
ধু ধু ধু ধু বেদীতটে আপনারে দিতেছ আহুতি।
মোর ক্ষুধা-দেবতারে তুমি কর স্তুতি!
নিত্য নব বাসনার হলাহলে রাঙি
‘পারীয়া’র প্রাণ লয়ে আছি মোরা জাগি
বসুধার বাঞ্ছাকূপে, উঞ্ছের অঙ্গনে!
নিমেষের খেদ-হর্ষ-বিষাদের সনে
বীভৎস খঞ্জের মতো করি মাতামাতি!
চুরমার হয়ে যায় বেলোয়ারি বাতি!
ক্ষুরধার আকাঙ্খার অগ্নি দিয়া চিতা
গড়ি তবু বারবার-বারবার ধুতুরার তিতা
নিঃস্ব নীল ওষ্ঠ তুলি নিতেছি চুমিয়া।
মোর বক্ষকপোতের কপোতিনী প্রিয়া
কোথা কবে উড়ে গেছে-পড়ে আছে আহা
নষ্ট নীড়, ঝরা পাতা, পুবালিকা হা হা!
কাঁদে বুকে মরা নদী, শীতের কুয়াশা!
ওহে সিন্ধু,্‌ আসিয়াছি আমি সর্বনাশা
ভুখারি ভিখারি একা, আসন্ন-বিকাশ!
-চাহি না পলার মালা, শুক্তির কলস,
মুক্তাতোরণের তট মীনকুমারীর
চাহি না নিতল নীড় বারুণীরানির।
মোর ক্ষুধা উগ্র আরো, অলঙ্ঘ্য অপার!
একদিন কুকুরের মতো হাহাকার
তুলেছিনু ফোঁটা ফোঁটা রুধিরের লাগি!
একদিন মুখখানা উঠেছিল রাঙি
ক্লেদবসাপিন্ড চুমি সিক্ত বাসনার!
মোরে ঘিরে কেঁদেছিল কুহেলি আঁধার,-
শ্মশানফেরুর পাল, শিশিরর নিশা,
আলেয়ার ভিজা মাঠে ভুলেছিনু দিশা!
আমার হৃদয়পীঠে মোর ভগবান
বেদনার পিরামিড পাহারপ্রমাণ
গেঁথে গেছে গরলের পাত্র চুমুকিয়া;
রুদ্র তরবার তব উঠুক নাচিয়া
উচ্ছিষ্টের কলেজায়, অশিব-স্বপনে,
হে জলধি, শব্দভেদী উগ্র আস্ফালনে!
পূজাথালা হাতে ল’য়ে আসিয়াছে কত পান’; কত পথবালা
সহর্ষে সমুদ্রতীরে; বুকে যার বিষমাখা শায়কের জ্বালা
সে শুধু এসেছে বন্ধু চুপে চুপে একা
অন্ধকারে একবার দুজনার দেখা!
বৈশাখের বেলাতটে সমুদ্রের স্বর-
অনন্ত, অভঙ্গ, উষ্ণ, আনন্দসুন্দর!
তারপর, দূর পথে অভিযান বাহি
চলে যাব জীবনের জয়গান গাহি।

১৯.

দেশবন্ধু

বাংলার অঙ্গনেতে বাজায়েছ নটেশের রঙ্গমল্লী গাঁথা
অশান্ত সন্তান ওগো, বিপ্লবিনী পদ্মা ছিল তব নদীমাতা।
কাল বৈশাখীর দোলা অনিবার দুলাইতে রক্তপুঞ্জ তব
উত্তাল ঊর্মির তালে-বক্ষে তবু লক্ষ কোটি পন্নগ-উৎসব
উদ্যত ফণার নৃত্যে আষ্ফালিত ধূর্জটির কন্ঠ-নাগ জিনি,
ত্র্যম্বক-পিনাকে তব শঙ্কাকুল ছিল সদা শত্রু অক্ষৌহিণী।
স্পর্শে তব পুরোহিত, ক্লেদে প্রাণ নিমেষেতে উঠিত সঞ্চারি,
এসেছিলে বিষ্ণুচক্র মর্মন্তুদ–ক্লৈব্যের সংহারী।
ভেঙেছিলে বাঙালির সর্বনাশী সুষুপ্তির ঘোর,
ভেঙেছিলে ধূলিশ্লিষ্ট শঙ্কিতের শৃঙ্খলের ডোর,
ভেঙেছিলে বিলাসের সুরাভান্ড তীব্র দর্পে, বৈরাগের রাগে,
দাঁড়ালে সন্ন্যাসী যবে প্রাচীমঞ্চে-পৃথী-পুরোভাগে।
নবীন শাক্যের বেশে, কটাক্ষেতে কাম্য পরিহরি
ভাসিয়া চলিলে তুমি ভারতের ভাবগঙ্গোত্তরী
আর্ত অর্স্পশ্যের তরে, পৃথিবীর পঞ্চমার লাগি;
বাদলের মন্দ্র সম মন্ত্র তব দিকে দিকে তুলিলে বৈরাগী।
এনেছিলে সঙ্গে করি অবিশ্রাম প্লাবনের দুন্দুভিনিনাদ,
শানি-প্রিয় মুমূর্ষৃর শ্মশানেতে এনেছিলে আহব-সংবাদ
গান্ডীবের টঙ্কারেতে মুহুর্মুহু বলেছিলে, আশি আমি আছি!
কল্পশেষে ভারতের কুরুক্ষেত্রে আসিয়াছি নব সব্যসাচী।
ছিলে তুমি দধীচির অস্থিময় বাসবের দম্ভেলির সম,
অলঙ্ঘ্য, অজেয়, ওগো লোকোত্তর, পুরুষোত্তম।
ছিলে তুমি রূদ্রের ডম্বরুরূপে, বৈষ্ণবের গুপীযন্ত্র মাঝে,
অহিংসার তপোবনে তুমি ছিলে চক্রবর্তী ক্ষত্রিয়ের সাজে-
অক্ষয় কবচধারী শালপ্রাংশু রক্ষকের বেশে।
ফেরুকুল-সঙ্কুলিত উঞ্ছবৃত্তি ভিক্ষুকের দেশে
ছিলে তুমি সিংহশিশু, যোজনান্ত বিহরি একাকী
স্তব্ধ শিলাসন্ধিতলে ঘন ঘন গর্জনের প্রতিধ্বনি মাখি।
ছিলে তুমি নীরবতা-নিষ্পেষিত নির্জীবের নিদ্রিত শিয়রে
উন্মত্ত ঝটিকাসম, বহ্নিমান বিপ্লবের ঘোরে;
শক্তিশেল অপঘাতে দেশবক্ষে রোমাঞ্চিত বেদনার ধ্বনি
ঘুচাতে আসিয়াছিলে মৃত্যুঞ্জয়ী বিশল্যকরণী।
ছিলে তুমি ভারতের অমাময় স্পন্দহীন বিহ্বল শ্মশানে
শবসাধকের বেশে-সঞ্জীবনী অমৃত সন্ধানে।
রণনে রঞ্জনে তব হে বাউল, মন্ত্রমুগ্ধ ভারত, ভারতী;
কলাবিৎ সম হায় তুমি শুধু দগ্ধ হলে দেশ-অধিপতি।
বিবিবশে দূরগত বন্ধু আজ, ভেঙে গেছে বসুধা-নির্মোক,
অন্ধকার দিবাভাগে বাজে তাই কাজরীর শ্লোকে।
মল্লারে কাঁদিছে আজ বিমানের বৃন্তহারা মেঘছত্রীদল,
গিরিতটে, ভূমিগর্ভ ছায়াচ্ছন্ন-উচ্ছ্বাসউচ্ছল।
যৌবনের জলরঙ্গ এসেছিল ঘনস্বনে দরিয়ার দেশে,
তৃষ্ণাপাংশু অধরেতে এসেছিল ভোগবতী ধারার আশ্লেষে।
অর্চনার হোমকুন্ডে হবি সম প্রাণবিন্দু বারংবার ঢালি,
বামদেবতার পদে অকাতরে দিয়ে গেল মেধ্য হিয়া ডালি।
গৌরকানি- শঙ্করের অম্বিকার বেদীতলে একা
চুপে চুপে রেখে এল পূঞ্জীভূত রক্তস্রোত-রেখা।

২০.

বিবেকানন্দ

জয়, তরুণের জয়!
জয় পুরোহিত আহিতাগ্নিক, জয় জয় চিন্ময়!
স্পর্শে তোমার নিশা টুটেছিল, উষা উঠেছিল জেগে
পূর্ব তোরণে, বাংলা আকাশে , অরুণ-রঙিন মেঘে;
আলোকে তোমার ভারত, ইশয়া-জগৎ গেছিল রেঙে।
হে যুবক মুসাফের,
স্থবিরের বুকে ধ্বনিলে শ্‌ঙ্খ জাগরণপর্বের!
জিঞ্জির-বাঁধা ভীত চকিতেরে অভয় দানিলে আসি,
সুপ্তের বুকে বাজালে তোমার বিষাণ হে সন্ন্যাসী,
রক্ষের বুকে বাজালে তোমার কালীয়দমন বাঁশি!
আসিলে সবসাচী,
কোদন্ডে তব নব উল্লাসে নাচিয়া উঠিল প্রাচী!
টঙ্কারে তব দিকে দিকে শুধু রণিয়া উঠিল জয়,
ডঙ্কা তোমার উঠিল বাজিয়া মাভৈঃ মন্ত্রময়;
শঙ্কাহরণ ওহে সৈনিক, নাহিক তোমার ক্ষয়!
তৃতীয় নয়ন তব
ম্লান বাসনার মনসিজ নাশি জ্বালাইত উৎসব!
কলুষ-পাতকে, ধূর্জটি, তব পিনাক উঠিত রুখে,
হানিতে আঘাত দিবানিশি তুমি ক্লেদ-কামনার বুকে,
অসুর-আলয়ে শিব-সন্ন্যাসী বেড়াতে শঙ্খ ফুঁকে!
কৃষ্ণচক্র সম
ক্লৈব্যের হৃদে এসেছিলে তুমি ওগো পুরুষোত্তম,
এসেছিলে তুমি ভিখারির দেশে ভিখারির ধর মাগি
নেমেছিলে তুমি বাউলের দলে, হে তরুণ বৈরাগী!
মর্মে তোমার বাজিত বেদনা আর্ত জীবের লাগি।
হে প্রেমিক মহাজন,
তোমার পানেতে তাকাইল কোটি দরিদ্রনারায়ণ;
অনাথের বেশে ভগবান এসে তোমার তোরণতলে
বারবার যবে কেঁদে কেঁদে গেল কাতর আঁখির জলে,
অর্পিলে তব প্রীতি-উপায়ন প্রাণের কুসুমদলে।
কোথা পাপী? তাপী কোথা?
ওগো ধ্যানী. তুমি পতিত পাবন যজ্ঞে সাজিলে হোতা!
শিব-সুন্দর-সত্যের লাগি শুরু করে দিলে হোম,
কোটি পঞ্চমা আতুরের তরে কাঁপায়ে তুলিলে ব্যোম,
মন্ত্রে তোমার বাজিল বিপুল শানি- স্বসি- ওঁ!
সোনার মুকুট ভেঙে
ললাট তোমার কাঁটার মুকুটে রাখিলে সাধক রেঙে!
স্বার্থ লালসা পাসরি ধরিলে আত্মাহুতির ডালি,
যঞ্জের যূপে বুকের রুধির অনিবার দিলে ঢালি,
বিভাতি তোমার তাই তো অটুট রহিল অংশুমালী!
দরিয়ার দেশে নদী!
বোধিসত্ত্বের আলয়ে তুমি গো নবীন শ্যামল বোধি!
হিংসার রণে আসিলে পথিক প্রেম-খঞ্জর হাতে,
আসিলে করুণাপ্রদীপ হসে- হিংসার অমারাতে,
ব্যাধি মন্বন্তরে এলে তুমি সুধাজলধরি সংঘাতে!
মহামারী ক্রন্দন
ঘুটাইলে তুমি শীতল পরশে, ওগো সুকোমল চন্দন!
বজ্রকঠোর, কুসুমদুল, আসিলে লোকোত্তর;
হানিলে কুলিশ কখন ও ঢালিলে নির্মল নির্ঝর,
নাশিলে পাতক, পাতকীর তুমি অর্পিলে নির্ভর।
চক্রগদার সাথে
এনেছিলে তুমি শঙ্খ পদ্ম, হে ঋষি, তোমার হাতে;
এনেছিলে তুমি ঝড় বিদ্যুৎ পেয়েছিলে তুমি সাম,
এনেছিলে তুমি রণ-বিপ্লব-শানি- কুসুমদাম;
মাভৈঃ শঙ্খে জাগিছে তোমার নরনারায়ণ-নাম!
জয়, তরুণের জয়!
আত্মহুতির রক্ত কখনও আঁধারে হয় না লয়!
তাপসের হাড় বজ্রের মতো বেজে উঠে বারবার!
নাহি রে মরণে বিনাশ, শ্মশানে নাহি তার সংহার,
দেশে দেশে তার বীণা বাজে-বাজে কালে কালে ঝঙ্কার!

৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:০৭

আমিই রাকিব বলেছেন: ধন্যবাদ শামীম ভাই.....
প্রিয় কবির প্রিয় একটি কাব্যগ্রন্থ... তাই অবশ্যই প্রিয়তে...

৩১ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:৪৭

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ রাকিব ভাই।

৬| ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:০৯

সাগর রহমান বলেছেন: শামীম ভাই, এতগুলো টাইপ নিজে করছেন! সত্যিই অভিভূত হবার মত কাজ।
প্রিয়তে ...

অনেক শুভকামনা।।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:০৬

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৭| ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:১২

নীল কষ্ট বলেছেন: কি অসাধারণ কাজ করেছেন

অনেক প্রিয় একজন কবি

১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:১১

একরামুল হক শামীম বলেছেন: জীবনানন্দ আমারও অনেক প্রিয় কবি।

৮| ২২ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১১:২৫

ইসরা০০৭ বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট...

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

প্রিয়তে......

১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ২:১৮

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ।

৯| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:২৬

চাটিকিয়াং রুমান বলেছেন: পোষ্ট প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম কারণ জীবনানন্দ দাশ-এর বেশ কয়েকটি কবিতা রয়েছে এই পোস্টে। :)

১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২০

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ।

১০| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ২:০৯

জালিস মাহমুদ বলেছেন: আবার আসিব ফিরে |-) |-) |-) |-) |-) |-)

১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ রাত ১১:২১

একরামুল হক শামীম বলেছেন: হুমমম।

১১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৫:০১

হাদী নয়ন বলেছেন: পোস্ট টা প্রিয়তে নিতে লগইন করলাম।
আপনাকে ধন্যবাদ।পোস্টে +

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩২

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

১২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১১ দুপুর ১২:২৩

েরজা , বলেছেন:

আপনাকে শুধু ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করলাম না ।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৩

একরামুল হক শামীম বলেছেন: আচ্ছা। ভালো থাকবেন :)

১৩| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:৪০

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: প্রিয়তে।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৬

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৫:৪১

অ্যামাটার বলেছেন: ধুসর জীবনানন্দ।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৬

একরামুল হক শামীম বলেছেন: হুমম...

১৫| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১৪

শায়মা বলেছেন: :)


অনেক অনেক ধন্যবাদ!!!!

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৯

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধইন্যাপাতা :)

১৬| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৬:০০

নাআমি বলেছেন: অসাধারন !!

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪০

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ নাআমি :)

১৭| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১১ সকাল ১১:৪৩

চতুষ্কোণ বলেছেন: শামীম ভাই আরেক্টা দূর্দান্ত কাজ হৈছে! মাঝে মাঝে সময় করে এসে পড়ে যাব।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩০

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ চতুষ্কোণ ভাই।

১৮| ০১ লা নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:১০

রিয়েল ডেমোন বলেছেন: কেম্পে- এই কবিতাটা কি ঝরা পালকের না?

বলা হয়ে থাকে ঝরা পালক তার কাজিন শোভনাকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। শোভনাও ঠিক তেমনি বিবৃতি দিয়েছিল।

পোষ্ট প্রিয়তে নিলাম শামীম ভাই।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ২:১৮

একরামুল হক শামীম বলেছেন: না, ক্যাম্পে কবিতাটি ধূসর পান্ডুলিপি কাব্যগ্রন্থের।

ক্যাম্পে

এখানে বনের কাছে ক্যাম্প আমি ফেলিয়াছি;
সারারাত দখিনা বাতাসে
আকাশের চাঁদের আলোয়
এক ঘাইহরিণীর ডাকে শুনি –
কাহারে সে ডাকে!

কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
বনের ভিতরে আজ শিকারীরা আসিয়াছে,
আমিও তাদের ঘ্রাণ পাই যেন,
এইখানে বিছানায় শুয়ে শুয়ে
ঘুম আর আসে নাকো
বসন্তের রাতে।

চারি পাশে বনের বিস্ময়,
চৈত্রের বাতাস,
জোছনার শরীরের স্বাদ যেন্‌!
ঘাইমৃগী সারারাত ডাকে;
কোথাও অনেক বনে — যেইখানে জোছনা আর নাই
পুরুষহিরণ সব শুনিতেছে শব্দ তার;
তাহারা পেতেছে টের
আসিতেছে তার দিকে।
আজ এই বিস্ময়ের রাতে
তাহাদের প্রেমের সময় আসিয়াছে;
তাহাদের হৃদয়ের বোন
বনের আড়াল থেকে তাহাদের ডাকিতেছে
জোছনায় –
পিপাসার সন্ত্বনায় — অঘ্রাণে — আস্বাদে!
কোথাও বাঘের পাড়া বনে আজ নাই আর যেন!
মৃগদের বুকে আজ কোনো স্পষ্ট ভয় নাই,
সন্দেহের আবছায়া নাই কিছু;
কেবন পিপাসা আছে,
রোমহর্ষ আছে।

মৃগীর মুখের রূপে হয়তো চিতারও বুকে জেগেছে বিস্ময়!
লালসা — আকাঙক্ষা — সাধ — প্রেম স্বপ্ন স্ফুট হয়ে উঠিতেছে সব দিকে
আজ এই বসন্তের রাতে;
এই খানে আমার নক্‌টার্ন –|

একে একে হরিণেরা আসিতেছে গভীর বনের পথ ছেড়ে,
সকল জলের শব্দ পিছে ফেলে অন্য এক আশ্বাসের খোঁজে
দাঁতের — নখের কথা ভূলে গিয়ে তাদের বোনের কাছে অই
সুন্দরী গাছের নীচে — জোছনায়!
মানুষ যেমন করে ঘ্রাণ পেয়ে আসে তার নোনা মেয়েমানুষের কাছে
হরিণেরা আসিতেছে।

– তাদের পেতেছি আমি টের
অনেক পায়ের শব্দ শোনা যায়,
ঘাইমৃগী ডাকিতেছে জোছনায়।
ঘুমাতে পারি না আর;
শুয়ে শুয়ে থেকে
বন্দুকের শব্দ শুনি;
চাঁদের আলোয় ঘাইহরিণি আবার ডাকে;
এইখানে পড়ে থেকে একা একা
আমার হৃদয়ে এক অবসাদ জমে ওঠে
বন্দুকের শব্দ শুনে শুনে
হরিণীর ডাক শুনে শুনে।

কাল মৃগী আসিবে ফিরিয়া;
সকালে — আলোয় তারে দেখা যাবে –
পাশে তার মৃত সব প্রেমিকেরা পড়ে আছে।
মানুষেরা শিখায়ে দিয়েছে তারে এই সব।

আমার খাবার ডিশে হরিণের মাংসের ঘ্রাণ আমি পাব,
মাংস খাওয়া হল তবু শেষ?
কেন শেষ হবে?
কেন এই মৃগদের কথা ভেবে ব্যথা পেতে হবে
তাদের মতন নই আমিও কি?
কোনো এক বসন্তের রাতে
জীবনের কোনো এক বিস্ময়ের রাতে
আমারেও ডাকে নি কি কেউ এসে জোছনায় — দখিনা বাতাসে
অই ঘাইহরিণীর মতো?

আমার হৃদয় — এক পুরুষহরিণ –
পৃথিবীর সব হিংসা ভুলে গিয়ে
চিতার চোখের ভয় — চমকের কথা সব পিছে ফেলে রেখে
তোমারে কি চায় নাই ধরা দিতে?
আমার বুকের প্রেম ঐ মৃত মৃগদের মতো
যখন ধূলায় রক্তে মিশে গেছে
এই হরিণীর মতো তুমি বেঁচেছিল নাকি
জীবনের বিস্ময়ের রাতে
কোনো এক বসন্তের রাতে?

তুমিও কাহার কাছে শিখেছিলে!
মৃত পশুদের মতো আমাদের মাংস লয়ে আমারও পড়ে থাকি;
বিয়োগের — বিয়োগের — মরণের মুখে এসে পড়ে সব
ঐ মৃত মৃগদের মতো –
প্রেমের সাহস সাধ স্বপ্ন বেঁচে থেকে ব্যথা পাই, ঘৃণা মৃত্যু পাই;
পাই না কি?
দোনলার শব্দ শুনি।
ঘাইমৃগী ডেকে যায়,
আমার হৃদয়ে ঘুম আসে নাকো
একা একা শুয়ে থেকে;
বন্দুকের শব্দ তবু চুপে চুপে ভুলে যেতে হয়।
ক্যম্পের বিছানায় রাত তার অন্য এক কথা বলে;
যাহাদের দোনলার মুখে আজ হরিণেরা মরে যায়
হরিণের মাংস হাড় স্বাদ তৃপ্তি নিয়ে এল যাহাদের ডিশে
তাহারাও তোমার মতন –
ক্যাম্পের বিছানায় শুয়ে থেকে শুকাতেছে তাদের ও হৃদয়
কথা ভেবে — কথা ভেবে — ভেবে।

এই ব্যথা এই প্রেম সব দিকে রয়ে গেছে –
কোথাও ফড়িঙে — কীটে, মানুষের বুকের ভিতরে,
আমাদের সবের জীবনে।
বসন্তের জোছনায় অই মৃত মৃগদের মতো
আমরা সবাই।

১৯| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:১৬

সুপান্থ সুরাহী বলেছেন:
শামীম ভাই প্রিয়তে...

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩০

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২০| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ২:৩৭

আত্তার প্রতিধ্বনি বলেছেন: দারুন নhttp://www.dukascopy.com/tradercontest/?action=blog&trader=ksalam

১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:০৫

একরামুল হক শামীম বলেছেন: এইটা কী?

২১| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৫৫

তানজিলা হক বলেছেন:
এখন ও "জীবনানন্দ দাশ " থেকে বের হতে পারলে না!!! আর কত দিন নাবালক থাকিবা?

পত্রিকায় এই সব কি শুনছি তোমাদের সম্পর্কে!!

১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ ভোর ৪:০৪

একরামুল হক শামীম বলেছেন: জীবনানন্দ দাশ থেকে কখনই বের হতে পারবো না। :)

কি শুনছো তানজিলা আপু?

কি খবর? দিনকাল কেমন যায়?

২২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:৫২

মহাবিশ্ব বলেছেন:
বাঃ চমৎকার প্রয়াস।

খুব ভালো লাগলো শামীম।

একটা পিডিএফ ফাইল করতে পারলে অফলাইনেও পড়া যেতো।

সুপ্রভাত বন্ধু। সুন্দর দিনের শুভকামনা।
ভালো থাকবেন অনেক অনেক।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ২:৩৪

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। পরবর্তীতে পিডিএফ করবো। ভালো থাকবেন।

২৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৩৫

আউলা বলেছেন: কেমন আছেন ভাইয়া??

১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ২:২২

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ভালো আছি আফা। আপনি কি ভালো আছেন?

২৪| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:১০

আহমেদ চঞ্চল বলেছেন: এত সুন্দর একটি পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ। শামীম ভাই, আমার ব্লগে আসেননি অনেকদিন ।।।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৯

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

২৫| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৪৪

রাংরাং পাখি বলেছেন: পোস্ট দেখে আর দেরি করলাম না, সরাসরি প্রিয়তে।আর একটা কথা , প্রিয়তে কিভাবে নেয় সেটা আজ শিখলাম শুধু পোস্টটা প্রিয়তে নেবার জন্য।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:২৯

একরামুল হক শামীম বলেছেন: ধন্যবাদ।

২৬| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৪:৫৪

তানজিলা হক বলেছেন: কি যে শুনেছিলাম এখন কমেন্ট লিখতে গিয়ে আর মনে পরছে না।

আমি খুবি ভাল আছি। তোমার খবর কি?

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ২:৩২

একরামুল হক শামীম বলেছেন: আমার খবর ভালোই। ব্লগে নিয়মিত না কেন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.