নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাপ্নিক

তানভীর মুহাম্মাদ

মানুষের সৌন্দর্য তার চিন্তায়; তার কল্পনায়। আমাদের চিন্তা ও কল্পনার জগত অধিকতর সুন্দর হয়ে উঠুক। এ-ই কামনা।

তানভীর মুহাম্মাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধূসর ক্যানভাস

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২১

‘সাবধানে থাকিস বাবা। কখন কী হয়ে যায়!’ আরে মা, তুমি এত্তো ভেবো না তো- এই বলে বিদায় নিই আমি। চোখে-মুখে কিসের যেন উত্তাপ। উত্তেজনায় বারবার শিহরিত হয়ে উঠছি। ফিরে যাচ্ছি ঢাকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রাণের স্পন্দন যেখানে।

ছোট বোন একটা চিঠি দিয়েছে। দিয়েই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে কোথাও। বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার আগে যেন না পড়ি। তাই পড়ি নি। পড়বো ভাবছি। এসেই তো পড়েছি প্রায়। এই তো আর কিছুক্ষণ। হাঁটছি। যাচ্ছি। ভাবছি। বন্ধুদের কথা। কিন্তু কোথায় যেন শোরগোল শোনা যাচ্ছে। ঢাকায় কি তবে ঝামেলা হচ্ছে? ও। শুনেছিলাম ওরা নাকি বাংলা কেড়ে নিতে চায়। তার বিরুদ্ধেই কি কিছু হচ্ছে? ভাবতে ভাবতেই চোখে জ্বলন অনুভব করলাম। আমার গতি বাড়িয়ে দিলাম। আমাকে যেতেই হবে। মা’র মুখের ভাষা রক্ষার্থে আমাকে যেতেই হবে।

স্রোতে মিশে গেলাম। কোন এক ছাত্রনেতা বক্তৃতা দিচ্ছে। আর সবাই শ্লোগান দিচ্ছে। বাংলা বলার দাবিতে। বাংলা শোনার দাবিতে; মা’র আঁচলে মুখ ঢেকে। রাস্তায় অসংখ্য ইট পড়ে আছে। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ইটের। বিদ্রোহের। আমি শুধু দেখেই যাচ্ছি। এবার হাতে তুলে নিলাম ক’খণ্ড ইট। ছুঁড়ে মারতে লাগলাম অশুভ সে শক্তির প্রতি। সহসা শব্দ হলো। গুলির শব্দ। সবাই বিস্ময়ে হতবাক। গুলি ছুঁড়ছে ওরা? গুলি?

অনেক পরে অনুভব করলাম। আমার শার্ট রক্তে ভিজে গেছে। কোত্থেকে যেন রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। খুঁজে পাচ্ছি না। আমি পড়ে যাচ্ছি। সত্যিই পড়ে যাচ্ছি! গুলি লেগেছে আমার বুকে। মাকে মনে পড়ছে খুব। ছোট্ট বোনটিকেও। আমার বিদায় সহ্য করতে না পেরে ও শেষ দেখাটিও করলো না। আচ্ছা, ও না একটা চিঠি দিয়েছিলো? সেটা কি আছে পকেটে? হাত নাড়ানোর শক্তি ক্রমেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

তসলিম ভাই আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে এলেন। ফুটপাতে বসে তার কোলে আমার মাথা রাখলেন। তার চোখ অশ্রুসজল। আমি বোনের চিঠিটা তাকে পড়ে শোনাতে বললাম। রক্তে ভেজা চিঠি। হাতে নিলেন তিনি। পড়তে শুরু করলেন-ভাইয়া, তোমার মনে আছে আমাকে জোছনারাতে গল্প শোনাতে? তোমার সে গল্পগুলো না আমার সব মনে আছে। একটাও ভুলি নি। শৈশবে তোমার কোলে উঠে নিয়ে যেতে বলতাম এখানে-সেখানে। আর কৈশরে; তোমাকে নিয়ে ছুটে যেতাম। আমরা দু’জন কত ঘোরাঘুরি করেছি। তাই না? সেগুলো আমি কখনও ভুলবো না। তোমার আদর। তোমার মায়া। আমি কখনও ভুলবো না। তোমাকে ভালোবাসি খুব। তুমি যখন আমাকে রেখে ঢাকায় চলে যাও। আমার তখন খুব কষ্ট হয়। চোখের অশ্রু আদেশ মানে না। কিন্তু এবারের বিদায় কেমন যেন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে তুমি আর কখনও ফিরবে না। কখনও না। মনে রেখো। দেখা হবে। অন্য কোন জগতে।

পড়তে পড়তে তসলিম ভাই সজোরে কেঁদে উঠলেন। আমার চোখেও মনে হয় অশ্রু টলোমল। ঝাপসা চোখে দেখলাম। একটা কাক উড়ে যাচ্ছে। মনে হয় খুকি বোনটিকে আমার সংবাদ দিতে। আমার চিৎকার করে ওকে বাধা দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু শক্তি পেলাম না। ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৩

সুমন কর বলেছেন: এটা কি সংগৃহীত?

যদি না হয়ে থাকে, তবে ভালো লিখেছেন।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৮

তানভীর মুহাম্মাদ বলেছেন: না ভাই, সংগৃহীত না। গতবছর মাদরাসার দেয়ালিকার জন্য লিখেছিলাম। টাইপ করে পোস্ট করলাম আর কী! ভালো লাগলে স্বার্থক। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৭

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনি ভালো লেখকদের বইগুলো পড়ুন। আপনার লেখার হাত ভালো। ভালো লেখা পড়লে লেখার মধ্যে শব্দ গাঁথুনি আরো মজবুত হবে, বৈচিত্র্য পাবে। এই ধরনের গল্প প্রাথমিক লেখার হাতে খড়ি হিসেবে সমাদৃত হতে পারে, তবে মানের দিক দিয়ে খুব একটা নয়।

শুভ কামনা রইল।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪১

তানভীর মুহাম্মাদ বলেছেন: সত্যিকার অর্থেই সত্য বলেছেন আপনি। পড়া হচ্ছে না তেমন। তার ওপর লেখার চর্চাও খুব কমে গেছে। নিজের অভাবটা নিজের কাছে দিবালোকের মতোই স্পষ্ট। আপনাকে মন থেকে ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.