নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাহিদা আক্তার তান্নি। বিবিএ ৪র্থ বর্ষ (হিসাববিজ্ঞান)।নোয়াখালি সরকারী কলেজ, নোয়াখালী।

নাহিদ তান্নি

নাহিদা আক্তার তান্নি

নাহিদ তান্নি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদেখা আগুন

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৭

তন্দ্রাকে খুব বিমর্ষ মনে হচ্ছে।অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে।বিশ্বাস হয় না ২০ বছর বয়সী শান্ত চেহারার এই মেয়েটি কাউকে খুন করতে পারে। তাও আবার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে।

অথচ কিছুদিন আগের অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তন্দ্রা ভার্সিটিতে সবার প্রিয়মুখ ছিল।যার সাথে কথা বলত তার মন জয় করে ফেলত।ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে বদমেজাজী শিক্ষকটাও তার সাথে হাসিমুখে কথা বলত।

কিন্তু হঠাৎ তন্দ্রা কেমন যেন অন্য রকম হয়ে গেল।দেখে মনে হয় তার মধ্যে কোন ভয় কাজ করছে।আর এই ভয়টা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।ভয়ের কারণ হল শফিক।কিছুদিন ধরে সে তন্দ্রার পিছু নিয়েছে।একদিন সরাসরি প্রপোজ করে দিল।তন্দ্রা ক্লাসে বসে অনর্গল ঘামছিল।অথচ মাথার উপর ফুলস্পীডে ফ্যান ঘুরছে।তন্দ্রা বুঝতে পেরেছিল শফিকের নজর যখন তার উপর পড়েছে, সহজে সে এ বিপদ থেকে রক্ষা পাবেনা।তাই সে তার মা বাবাকে বিষয়টি জানায়।
শুনে তার বাবা মা অনেক বেশি চিন্তিত হয়ে গেলেন।কারণ শফিক ছিল এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিটির ছেলে।শফিকের চরিত্র সম্পর্কে সবাই খুব ভালভাবে জানে। এলাকার এমন কোন মেয়ে নেই যার দিকে সে তার শকুনি দৃষ্টি দেয়নি।

তন্দ্রার বাবা মা এর একটি সহজ সমাধান বের করলেন।২দিনের মধ্যে তারা তন্দ্রার বিয়ে ঠিক করে ফেলল।ভাবলেন বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে হয়ত এ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

আজ তন্দ্রার হলুদ অনুষ্ঠান হচ্ছে।ঘর ভর্তি মেহামন।কিন্তু হঠাৎ বিয়ের প্রকৃত কারণটা তন্দ্রা ও তার বাবা মা ছাড়া কেউ জানেনা।
রাত ১০টা বাজে। হলুদ অনুষ্ঠান খুব জমে উঠেছে।সবাই খুব আনন্দ করছে। হঠাৎ সব আলো নিভে গেল।কেউ কেউ ভাবল হয়ত লোড শেডিং।কিন্তু আজ তো জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হঠাৎ তন্দ্রার মা ভয়ে কেঁপে উঠল।
২মিনিটের মধ্যে আলো জ্বলে উঠলো।সবকিছুই ঠিকঠাক আছে, শুধু তন্দ্রা নেই তার জায়গায়।
চারিদিকে হৈচৈ পড়ে গেল।তন্দ্রার বাবা মায়ের মনে প্রচণ্ড ভয় ঢুকে গেল।তারা নিশ্চিত যে শফিক বা তার লোকেরাই তন্দ্রাকে তুলে নিয়ে গেছে।ঘটনা আসলে তাই।চারদিকে খোঁজাখুঁজি শুরু হল। কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না তাকে। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারেই তন্দ্রার বাবা থনায় চলে গেলেন।কিন্তু কি আজব!
ওসি সাহেব শফিকের নামে কোন রিপোর্টই লিখলেন না।সাধারণ একটা নিখোঁজ এর রিপোর্ট লিখলেন।এত বড় একটা ঘটনা তার কাছে মনে হয় যে তুচ্ছ কোন ঘটনা।
পরদিন সকাল বেলা , সুর্যও তখন ভালোভাবে উঠেনি এমন সময় তন্দ্রা ছুটতে ছুটতে ঘরে ফিরে এল।গায়ে ছেঁড়াকাটা কাপড়।শরীরে আঘাতের চিহ্ন।দেখে কারোই বুঝতে বাকি নেই কি হয়েছে তার সাথে।
তন্দ্রাকে এ অবস্থায় দেখে কান্নায় মা তাকে জড়িয়ে ধরলেন।যে মেয়ের আজ বিয়ের কথা ছিল তার একি অবস্থা!
একটু পর তিনি তন্দ্রাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন।কিন্তু হাসপাতালের লোকেরা এমন ভাব করল যেন তন্দ্রাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা কোন মহাঅন্যায় হয়ে গেছে।অবশেষে একজন ডাক্তার তন্দ্রার চিকিৎসা করলেন।
বাসায় এসে তন্দ্রা তার মাকে সব খুলে বললেন কিভাবে শফিক ও তার বন্ধুরা তাকে তুলে নিয়ে গেছে, কিভাবে শফিক তাকে পৈশাচিকভাবে ধর্ষণ করেছে।শেষে তন্দ্রা অনেক কষ্টে প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছে।

তন্দ্রা ঠিক করেছে শফিক নামের পশুটিকে সে শাস্তি দিয়েই ছাড়বে।তার বাবা মা প্রথমে না করলেও পরে তারা তন্দ্রার কথায় রাজি হয়।
থানায় গেলেন তন্দ্রা ও তার বাবা শফিকের নামে মামলা করতে।কিন্তু তারা শফিকের নামে মামলা করতে চাইল না।বরং শফিকের অর্থ , ক্ষমতা , প্রভাব ইত্যাদির কথা বলে তাদের ভয় দেখাতে থাকে এবং তাদেরকে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে দিতে বলল।
তন্দ্রা তবুও শফিকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট লিখলো।কিন্তু রিপোর্ট লিখতে তাকে এমন অনেক প্রশ্ন করা হল যেগুলোর কোন প্রয়োজনই নেই।ওসি সাহেব মনে হয় যে নিজের মনোরঞ্জনের জন্যই প্রশ্নগুলো করছিলেন। এতেই তিনি ক্ষান্ত নন।তন্দ্রাকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে জখমের নাম করে তিনি যে আচরণ করলেন তা মোটামুটি আরেকটা ধর্ষণের পর্যায়ে চলে যায়।
কিন্তু কিছুই করার ছিল না তন্দ্রার।

শফিককে গ্রেফতার করে আনা হল।কিন্তু তাকে জেলে ঢুকনোর আগেই তার জামিন হয়ে গেল। শফিক নানাভাবে ভয় দেখাতে থাকে তন্দ্রার বাবাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য।কিন্তু তন্দ্রা তা করে নি।
কয়েকদিন পর মামলা কোর্টে উঠবে।এর মধ্যেই মেডিকেল রিপোর্ট নিতে হবে।নির্দিষ্ট সময়ে তন্দ্রাকে আনা হল মেডিকেল চেকআপ এর জন্য।কিন্তু সেখানে গিয়ে যা ঘটল তা তন্দ্রাকে অবাক করে দিল।ডাক্তার সাহেবের আচরণ দেখে এটাই বোঝাই মুশকিল যে, এখানে কি মেডিকেল চেকআপ হচ্ছে নাকি মেয়েটিকে পুণরায় ধর্ষণ করা হচ্ছে…

এত কিছুর পরও মেডিকেল রিপোর্ট এর ফলাফল শুণ্য।রিপোর্টে লেখা হয়েছে তন্দ্রার সাথে কোনরূপ ধর্ষণ হয়নি। যা হয়েছে তা নিজের ইচ্ছেতেই হয়েছে।অর্থ আর ক্ষমতা আজকাল সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য করে দিতে পারে।

কোর্টে কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি তন্দ্রা বা তার উকিল।শফিক নির্দোষ প্রমাণ হল।আর তন্দ্রা হয়ে গেলো সবার চোখে চরিত্রহীন একটি মেয়ে।সমাজে বসবাস করাটাই সে ও তার পরিবারের জন্য কথিন হয়ে উঠেছিল।ঘর থেকে বের হওয়া দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল।

কয়েকদিন পর তন্দ্রা ভার্সিটিতে গেল।সেখানে গিয়ে দেখল কেউ তার সাথে কথা বলছে না।এতদিন যাদের কাছে প্রিয়মুখ ছিল আজ তারাই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।বন্ধুরা তাকে দেখলেই দূরে সরে যাচ্ছে।পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সবাই তাকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে সমালোচনা করছে।ক্লাসে গিয়ে সে যে বেঞ্চে বসল সেখান থেকে অন্যরা উঠে চলে গেল। এসব আচরণ তন্দ্রার মনে খুব কষ্ট দিল।
বাসায় এসে সে খুব কান্না করতে লাগল।বিনা কোন অন্যায়ে আজ সে কেন এমন শাস্তি পাচ্ছে…
সে ঠিক করল যে আইনের কাছে সে তার সাথে ঘটে যাওয়া এরকম গর্হিত একটি অপরাধের বিচার পায়নি সেই আইনের কাছে সে আর বিচার চাইবে না।যা করার সে নিজে করবে এবার।

রাত ২টার সময় তন্দ্রা শফিককে ফোন দিল।সে শফিকের কাছে ক্ষমা চাইল শফিকের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ার জন্য, ক্ষমা চাইল শফিকের বিরুদ্ধে কোর্টে যাওয়ার জন্য। আরও বলল যে, সে শফিকের সাথে সম্পর্ক করতে চায়।
তন্দ্রার কথায় শফিক খুব অবাক হল।তন্দ্রার মত মেয়ে হঠাৎ এত কোমল কি করে হয়ে গেল?তাও আবার আবার তার সাথে!!!
তারপর ভাবল, সব তো হারিয়ে ফেলেছে।তাই এখন হয়ত শফিকের কাছে আসতে চাইছে।
সে রাজি হয়ে গেল তন্দ্রার সাথে সম্পর্ক করতে ।মনে মনে ভাবল, কয়দিন তন্দ্রাকে ইচ্ছেমত ব্যবহার করা যাবে।আগে যা জোর করে করেছে এখন থেকে তা স্বেচ্ছায় পাওয়া যাবে।এগুলো ভেবে তার ভালই লাগছে।
শফিক ও তন্দ্রার প্রেম চলছে ২/৩দিন হয়ে গেল।কিন্তু বিষয়টি তারা ২জন ছাড়া আর কেউ জানেনা।আজ শফিক তন্দ্রাকে দেখা করতে বলল।তন্দ্রা তাকে বলল শহরের সবচেয়ে উঁচু দালানটির ছাদে সে শফিকের সাথে দেখা করতে চায়।

বিকেল ৫টা।শহরের সবচেয়ে বড় ভবন সবুজ বাংলা টাওয়ারের ২২তলার ছাদে শফিক ও তন্দ্রা দাঁড়িয়ে আছে।তন্দ্রা শফিকের দিকে তাকিয়ে আছে।সে অবাক হয়ে দেখছে শফিকের চোখে বিন্দুমাত্র লজ্জাটুকু নেই তার কৃতকর্মের জন্য।কথা বলতে বলতে তন্দ্রা শফিককে ছাদের কিনারায় নিয়ে এল।শফিক কথা বলেই যাচ্ছে।তন্দ্রা তেমন কিছু বলছে না।

হঠাৎ তন্দ্রা শফিকের কাঁধে হাত রাখল।শফিক কিছু বুঝে ওঠার আগেই তন্দ্রা তাকে দু’হাতে ঠেলে ছাঁদ থেকে ফেলে দিল।রক্তে ভরে গেছে পিচঢালা রাস্তা।সাথে সাথেই মৃত্যু হয় শফিকের।মুহূর্তেই প্রচণ্ড মানুষের ভিড় জমে গেল।পুলিশ, এম্বুলেন্স সব চলে এল।তন্দ্রা উপর থেকে সব দেখছে।কিন্তু কি আজব! একটি মানুষকে খুন করে ফেলার পর তার একটুও খারাপ লাগছে না।
নিজ থেকেই নিচে নেমে এসে সে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করল।
৭দিন পর শফিক হত্যার রায় ঘোষণা করা হল।ফাঁসির আদেশ দেওয়া হল।শেষবারের মত যখন তন্দ্রাকে কিছু বলতে বলা হল তখন সে বললঃ
প্রাণ ভিক্ষা আমি চাইব না। আজ আমি খুব খুশি। আদালত যে ধর্ষকের বিচার করতে পারেনি আমি তার বিচার করতে পেরেছি।
ঘৃণা জানাই সেই আইন ব্যবস্থাকে যেখানে একটি মেয়ে ধর্ষণের বিচার চাইতে গেলে তাকে আরও কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হতে হয় পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে।ঘৃণা জানাই এরকম সমাজকে যে সমাজ ধর্ষককে ঘৃণা না করে ধর্ষিতা মেয়েটিকে ঘৃণার চোখে দেখে, আর বাধ্য করে তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে।
ঘৃণা এ দেশের আইনের প্রতি যা একটি তরুণীকে বাধ্য করে খুনীর খাতায় নাম লিখাতে …

এই ছিল তন্দ্রার কাহিনী। ফাঁসির সময় হয়ে গিয়েছে।তাকে কালো টুপি পরানো হচ্ছে।এক্ষুণি তার ফাঁসি হয়ে যাবে…
পৃথিবী থেকে একরাশ ঘৃণা নিয়ে হারিয়ে যাবে তন্দ্রা…


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০

আমি তুমি আমরা বলেছেন: আমাদের সমাজে ধর্ষকের স্থলে ধর্ষিতার সাথে অপরাধীর মত আচরণ করা হয়-ব্যাপারটা অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক।গল্পে ভাল লাগা রইল। :)

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৬

নাহিদ তান্নি বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৬

কালীদাস বলেছেন: ফিনিশিংটায় তাড়াহুড়ার ছাপ বেশি। কিন্তু লেখার থিমটা ভাল এবং আপনার চিন্তার ধরণটা আমার ভাল লেগেছে। চালিয়ে যান, এরকম পোস্ট যদি ভিকিটিমের সাইড থেকে ক্রাইম বাড়িয়েও সোসাইটির খুচরা ক্রিমিনালগুলোকে ডাস্ট করতে পারে, আর কেউ না করুক আমি সেন্ট পারসেন্ট সাপোর্ট করে যাব।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৫

নাহিদ তান্নি বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.