![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাহিদা আক্তার তান্নি
কে তুমি?
নাহিদা তান্নি
---------------
অপি,তরুণ, মাহা,অন্তিম, মিমি প্রিয় ৫জন বন্ধু। কিছুদিন পরই ভার্সিটি লাইফকে বিদায় জানাতে হবে তাদের। আর মাত্র ৩/৪মাস বাকি। কেউ হারাতে চায় না কাউকে। কিন্তু সময়কেতো আর কেউ ধরে রাখতে পারে না।
পড়াশোনায় সবচেয়ে মেধাবী ও মনযোগী মিমি। প্রত্যেক সেমিস্টারে ১ম/২য় হয়।পৃথিবীতে মনে হয় পড়ালেখাই তার সবচেয়ে শখের বিষয়।
অপি আজ গোমড়ামুখ করে ক্যাম্পাসে এসেছে । বোঝা যাচ্ছে অন্তিম এর সাথে তুমুল ঝগড়া হয়েছে। আর ঝগড়ার বিষয় নিশ্চয় অপির নেইলপেইন্টের কালার অথবা তার নতুন হেয়ার স্টাইল অথবা এরকমই ছোটখাটো কোন বিষয়। অপি হল স্টাইলিশ কুইন। সবসময় নতুন নতুন স্টাইল তার মধ্যে দেখা যায়। আর অন্তিমের কাজ হল কোন না কোন নেগেটিভ কমেন্ট করে অপিকে রাগিয়ে দেওয়া।এই নিয়ে সারা বছর তাদের ঝগড়া চলতেই থাকে। তরুণ খুব ভাল গান করে। গানের গলা অসাধারণ।তার গান শুনলে মন ভাল হয়ে যায়। ক্যাম্পাসের যে কোন প্রোগ্রামে সে গান গায়। গানের জন্যই সে ভার্সিটিতে সবার প্রিয়। একটু চেষ্টা করলে সে একদিন খুব ভাল গায়ক হতে পারবে।
মাহা হল এদের মধ্যে সবচেয়ে শান্ত স্বভাবের। ব্যাগের মধ্যে সবসময় গল্পের বই থাকে। মোটা মোটা বই নিমিষেই শেষ করে ফেলে।বাংলা, ইংলিশ সব বই সে পড়ে।বই পড়া তার সবচেয়ে শখের বিষয়। আজ ক্লাস শেষে অন্তিম সবাইকে নিয়ে মিটিং এ বসল। বিষয় স্টাডি ট্যুর। সবাই মিলে ঠিক করল এবার তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম পুরোটা ঘুরে দেখবে। এবারের ট্যুরটা তাদের সবার কাছেই স্পেশাল।এটাকে তারা জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ট্যুর বানাতে চায়। ১০ দিনের জন্য তারা পিকনিক প্ল্যান করল। পিকনিক নিয়ে ওরা ৫জন সবচেয়ে বেশি এক্সাইটেড। এখন সমস্যা হল মাহাকে নিয়ে। মাহার আব্বু খুব কড়া মেজাজের। ১০ দিনের জন্য মাহাকে তিনি কখনো হাতছাড়া করবেন না। কিন্তু অন্তিম, অপি, মিমি, তরুণ কেউই মাহাকে ছাড়া যাবেনা। অবশেষে অনেক কষ্টের পর মাহার আব্বুকে রাজি করানো গেল। এ জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাদের। ক্লাসের প্রায় সবাই গিয়ে অনুরোধ করল। মিলন স্যারও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিলেন। সবার অনুরোধ মাহার আব্বু ফেলতে পারেননি।
তাঁর এটা ভেবে খুব গর্ব হল যে মাহাকে তার শিক্ষকেরা,বন্ধুরা এত ভালবাসে। দেখতে দেখতে চলে এল অতি আকাঙ্ক্ষিত সে দিনটি। সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বাস ছাড়বে।সবাই চলে এসেছে। বাকি শুধু তরুণ। ১০মিনিট বাকি মাত্র।তরুণ এখনো আসছে না। কারো ফোনও ধরছে না। তাকে ছাড়াই বাস ছেড়ে দিল। ছুটতে ছুটতে ১৫মিনিট পর তরুণ এল।সে ভেবেছিল এসে দেখবে কেউ নেই। কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখল তার প্রিয় চারজন বন্ধু তার জন্য অপেক্ষা করছে। বাকিরা অবশ্য চলে গেছে। তরুণকে দেখামাত্র সবাই তাকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন, বকাবকি শুরু করে দিল। কেন এসেছেন এখন? আরো কিছুক্ষণ পরে আসতেন… শালা ফোন ধরিস নি কেন এতক্ষণ?
আমরা কত টেনশনে ছিলাম জানিস? ইত্যাদি ইত্যাদি…. উত্তর শুনে তো সবার মেজাজ আরও গরম হয়ে গেল। তরুণের দেরি হওয়ার কারণ হল তার গিটার।বাসা থেকে বেরিয়ে কিছুদূর আসার পর তার মনে পড়ল সে তার গিটারটা বাসায়ই ফেলে এসেছে। আবার বাসায় ফিরে গিয়ে আসতে আসতেই তার এত দেরি। এবার তারা ভাবছে এখন কি করা যায়।অবশেষে দিদ্ধান্ত হল তারা ৫জন এখন অন্য গাড়িতে রওয়ানা হবে। সামনে কোন বাস স্টপ থেকে পিকনিক এর বাস ধরবে। হঠাৎ অপি বলে উঠল, চল আজ সবাইকে সারপ্রাইজ দেব।কাউকে ফোন দিবি না। কিচ্ছু বলবি না।ওখানে গিয়ে সবাইকে চমকে দেব। আর আমাদের ওদের আগে পৌঁছতে হবে। প্রস্তাবটি সবার পছন্দ হল।
পিকনিকের বাস প্রথমে খাগড়াছড়ি গিয়ে থামল। এখান থেকেই তারা ভ্রমণ শুরু করবে।আসতে আসতে পুরো পাহাড়ী এলাকাটা ঘুরে দেখবে। তরুণদের ৫জন কে সবাই খুব মিস করছে। পিকনিক নিয়ে ওরাই সবচেয়ে বেশি এক্সাইটেড ছিল। আর এখন তারাই নেই সাথে। কিছু হালকা নাশতা করেই সবাই ঘুরতে বের হল। প্রথমে খাগড়াছড়ির আলুটিলা দেখতে এল তারা। সেখানে অনেক সুন্দর একটি গুহা রয়েছে। তারা এখন সুড়ঙ্গপথ দিয়ে অন্ধকার গুহাটি আবর্তন করবে। মশাল হাতে সবাই তৈরি।
তিথি ও মিনা হল ভীতুর রানী। তাই সবাই ঠিক করল এই দুই জনই প্রথমে ঢুকবে। গুহায় ধুকতেই তিথি ও মিনা এমন জোরে চিৎকার দিল যে সবাই কেঁপে উঠল। তারা দেখল গুহার ভেতর আগে থেকেই অন্তিম, মিমি, অপি, তরুণ,মাহা বসে আছে। মুহূর্তেই সবার মধ্যে হৈচৈ পড়ে গেল। যাদেরকে তারা ফেলে এসেছিল তারা তাদের আগেই এসে পৌঁছে গেল!আর এভাবে ভয়ানক সারপ্রাইজ পাবে এটা তো কল্পনাতীত। খুশিতে সবাই যেন পাগল হয়ে গেল। একে একে পার্বত্য চট্টগ্রাম পুরোটা বেড়ানো শেষ।
কাল সকালে তারা ফিরে যাবে ঢাকায়।এ কয়টা দিন খুব মজা করেছে সবাই।পাহাড়ী অঞ্চলের উপজাতিদের সাথে মেলামেশা, তাদের ভাষা শেখার চেষ্টা, রামগড়ের চা বাগান থেকে চা পাতা তোলা, রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রীজ, পাহাড়ীদের জুম চাষ, উঁচু উঁচু পাহাড়ের সমারোহ ইত্যাদি সবকিছু তাদের খুব মুগ্ধ করেছে। সবার মধ্যে বন্ধুত্বও আগের চেয়ে অনেক গভীর হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যার পর সবাই খোলা আকাশের নিচে বসে গল্প করছে।তরুণ মাঝে মাঝে গিটার বাজিয়ে গান গাইছে।
অন্যরাও তাল মেলাচ্ছে সাথে। ‘‘এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হত তুমি বলতো? যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয় তবে কেমন হত তুমি বলতো?” সবার থেকে একটু দূরে একা বসে আছে মিমি।তার খুব মন খারাপ লাগছে।পুরনো স্মৃতিগুলো মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে অনবরত।চার বছর আগে প্রণয়ের সাথে তার সম্পর্কটি ভেঙ্গে গিয়েছে কোন এক অজানা কারণে।এরপর থেকে পড়াশোনার সাথেই বন্ধুত্ব করে নিয়েছে সে।পড়ালেখা করে মানুষ হওয়া ছাড়া ২য় কোন স্বপ্ন এরপর থেকে তার চোখে কেউ দেখেনি।কিন্তু আজ কেন যেন তার বার বার মনে পড়ছে প্রণয়ের কথা। হঠাৎ সে দেখল দূর থেকে কেউ হেঁটে আসছে তার দিকে। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তার হাতে একগুচ্ছ সাদা গোলাপ।সাদা গোলাপ মিমির সবচেয়ে প্রিয় ফুল।কিন্তু এ কথা তো প্রণয় ছাড়া সে কাউকে বলেনি। তাহলে কে আসছে তার দিকে? প্রণয়? নাহ।এটা অসম্ভব। তাহলে কে? আর একটু কাছে আসতেই মিমির কাছে চেহারাটি স্পষ্ট হল। এ কি ! এতো অন্তিম
হঠাৎ অন্তিমকে দেখে মিমি কেমন যেন চমকে উঠল। অন্তিম! অন্তিম জানেনা সে কিভাবে কি বল্বে।তবে এটা জানে আজ থেকে মনের মধ্যে বয়ে বেড়াবে না কোন লুকনো ভালবাসা।সবকিছু আজ সে মিমিকে বলে দেবে। আমি জানিনা কখন থেকে আমি তোমাকে ভালবাসি… কতটা ভালবাসি… জানিনা তুমি একটি মুহূর্তের জন্য আমাকে কখনো ভালবেসেছো কিনা… শুধু জানি আমি তোমাকে ভালবাসি… জানিনা তুমি আমাকে গ্রহণ করবে কিনা।তবে এটুকু কথা দিতে পারি , একটি বার যদি আমার হাতটি ধর তবে মৃত্যুর আগে এ হাত আমি ছাড়ব না। মিমি নির্বাক দাঁড়িয়ে রইল।
অন্তিম জানেনা এখান থেকে যাওয়ার পর আর কখনো মিমি তার সাথে কথা বলবে কিনা।নাকি এ পর্যন্তই ছিল তাদের একসাথে পথচলা… তবে আজ মিমিকে কথাগুলো না বললে সে নিজের কাছে অপরাধী হয়ে থাকত সবসময়।তখন মনে হত , কেন আমি আমার ভালবাসাকে একটি সুযোগ দিলাম না?… একটু পর দু’জন হাঁটতে শুরু করল।কেউ কোন কথা বলছে না।
হঠাৎ নীরবতা ভেঙ্গে মিমি বলে উঠলো, আমি কি তোমার হাতটি ধরতে পারি?..
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩
নাহিদ তান্নি বলেছেন: হুম ভাল।
২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫১
সামি আক্তার বলেছেন: ভাল লাগল।
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩
নাহিদ তান্নি বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৮
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: ভালো লেখা।
৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৪
নাহিদ তান্নি বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৩৮
টোকাই রাজা বলেছেন: আন্নেরা সব ভালাতো!