নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাহিদা আক্তার তান্নি। বিবিএ ৪র্থ বর্ষ (হিসাববিজ্ঞান)।নোয়াখালি সরকারী কলেজ, নোয়াখালী।

নাহিদ তান্নি

নাহিদা আক্তার তান্নি

নাহিদ তান্নি › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্তাক্ত রক্তিম

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৩

রক্তাক্ত রক্তিম
নাহিদা আক্তার তান্নি
____________________________

পেছন থেকে আনোয়ারা ডাকতে লাগলো, যাস নে খোকা। যাস নে। তুই ছাড়া আমার কেউ নেই এ পৃথিবীতে। তোর কিছু হলে আমি বাঁচবো না।

পেছন ফিরে রক্তিম বললো, যদি আর ফিরে না আসি কেঁদো না, মা। প্রাণের বিনিময়ে হলেও এই বাংলা ভাষাকে রক্ষা করতে হবে।তা না হলে যে তোমাকে মন খুলে “মা” বলে ডাকতে পারবো না।

ছুটে গেল রক্তিম মিছিলে। ছাত্রসমাজের প্রতিবাদী কণ্ঠে ধ্বনিত হল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি। মিছিল এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর আরো গাঢ় হচ্ছে। হঠাৎ শুরু হল পুলিশের বেপরোয়া গুলিবর্ষণ। বুলের এসে লাগলো রক্তিমের কপালে। রাজপথে লুটিয়ে পড়লো রক্তিম। তার মুখের সামনে ভেসে উঠলো দু’খানা ছবি। একটি ছবি তার মমতাময়ী মায়ের, অন্যটি রেশমার। রেশমার দেওয়া শেষ চিঠিটা পড়া বাকি রয়ে গেছে। নাহ, সেটা আর পড়া হল না। সময় ফুরিয়ে গেছে। রক্তিম নিষ্প্রাণ হয়ে শুয়ে আছে। পাশে আরও কিছু লাশ।


আনোয়ারা বাড়ির উঠানে বসে আছে। ছেলের অপেক্ষা করছে। হঠাৎ দেখলো কয়েকজন লোক রক্তিমকে ঠেলাগাড়িতে করে নিয়ে আসছে। রক্তাক্ত রক্তিম।আনোয়ারা ছুটে গেল। একি! এত রক্ত কেন ওর শরীরে?
কেউ জবাব দিল না। রক্তিমকে জোরে জোরে নাড়াচাড়া করতে করতে আনোয়ারা ডাকতে লাগলো, খোকা! খোকা! রক্তিম কথা বললো না। কথা বলার ক্ষমতা তার আর নেই। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে আনোয়ারা চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।রক্তে তাঁর শাড়ী ভিজে লাল হয়ে গেল। আশেপাশের মহিলারা ছুটে এলো কান্নার শব্দে। কেউ তাঁর কান্না থামাতে পারছে না।

ওদিকে রেশমা একরাশ অভিমান নিয়ে তার চিঠির উত্তরের অপেক্ষা করছে। সে এখনো জানেনা রক্তিম আর নেই। তার দেওয়া চিঠিটা পড়ার সুযোগও যে রক্তিম পায়নি এটাও সে জানে না। হঠাৎ রেশমার বান্ধবী লতা ছুটে এলো রেশমার কাছে।
-রেশমা! রেশমা! কিছু শুনেছিস?
-কি শুনবো? কি হয়েছে?
-রক্তিমের কথা কিছু শুনিস নি?
লতার মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ রেশমার ভয়ে বুক কেঁপে উঠলো।
-কি হয়েছে রক্তিমের? কি হয়েছে?
লতা এবার কিছু বলতে পারছে না। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।
-কি হয়েছে, লতা? কাঁদছিস কেন? কিছু বল।
-তোর রক্তিম আর নেই । ভাষা আন্দোলনে সে শহীদ হয়ে গেছে।

রেশমা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। মনে হচ্ছে সে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। চেয়েও কিছু বলতে পারছে না। কাঁদতেও ভুলে গেছে মনে হয়।

একটু পর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে লতাকে বললো, এসব কি বলছিস তুই? মজা করছিস, তাই না?
রেশমার কথা শুনে লতার আরও কষ্ট হতে লাগলো। টেনে নিয়ে গেল সে রেশমাকে রক্তিমের লাশের কাছে। রক্তিমের শরীর তখন সাদা কাফনে ঢাকা। রক্তিমকে এভাবে দেখে রেশমার চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হতে লাগলো। দু’চোখের কান্না যেন আর থামছে না।

রক্তিম চলে গেছে যে তিন দিন হয়ে গেল। আনোয়ারা এক ফোঁটা ঘুমায়নি।ছেলের শোকে পাগলপ্রায় হয়ে গেল। বাড়ির সামনে দিয়ে রক্তিমের বয়সী কোন ছেলেকে যেতে দেখলে ছুটে যায় “খোকা, খোকা” করে। কাছে গিয়ে দেখে অন্য কেউ। আবার ফিরে আসে।


রেশমা যে কতটা আঘাত পেয়েছে তা অনুমান করলেও কষ্ট হয়।রক্তিমকে হারিয়ে সে বিধবার বেশ ধরেছে। সাদা থান ছাড়া আর কোন পোশাকে তাকে এখন দেখা যায় না। সামনের মাসের প্রথম শুক্রবার রেশমা ও রক্তিমের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। রক্তিমের সাথে তার প্রায় দু’বছরের সম্পর্ক ছিল। অনেক কষ্ট করে রেশমা তার পরিবারকে রাজি করিয়েছিল এ বিয়েতে। সবকিছু যখন ঠিক হল তখন রক্তিমই হারিয়ে গেল এ পৃথিবী থেকে। রেশমার এই বিধবা সাজ তার পরিবারকে খুব কষ্ট দেয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তারা রেশমাকে বোঝাতে পারে না।


এরপর দেখতে দেখতে পাঁচটি বছর পার হয়ে গেল।হুম, রেশমা বিধবার বেশ ছেড়েছে। কিন্তু বিয়ে করেনি। সারা দেশ জুড়ে গত পাঁচ বছর ধরে শহীদদের স্মরণে অনেক সভা,মিটিং হয়েছে। তাদের নিয়ে অনেক ইতিহাস, কাব্য রচনা হয়েছে। তাদের সম্মানার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শহীদ মিনার বানানো হয়েছে।প্রতি বছর শহীদ দিবসে সেখানে ফুল দিয়ে তাদের সম্মান জানানো হয়। দেশের মানুষ এখন স্বাধীনভাবে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে। কিন্তু রেশমার মনে রয়ে গেছে শূণ্যতা। তার চোখে আজও সেই বুক ফাটা আর্তনাদ। আজও যেন সে রক্তিমকে খুঁজে ফিরে। রেশমা এখন একটা প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করে। স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে তার খুব আপন মনে হয়। তারাই এখন রেশমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।

আজও একুশে ফেব্রুয়ারী। শহীদদের স্মরণে অনেক আয়োজন শহীদ মিনারে। রেশমাকে মঞ্চে ডাকা হল ভাষা শহীদদের নিয়ে কিছু বলার জন্য। স্পর্শকাতর এ বিষয়টি রেশমা এমনভাবে গভীরভাবে বর্ণনা করলো যে,সামনে বসে থাকা প্রায় সবার চোখে পানি চলে এলো।

মঞ্চ থেকে নেমে আসার পর হঠাৎ একটি ছোট্ট ছেলে রেশমাকে বলে উঠলো, “আপু, তোমার গল্পটি খুব সুন্দর হয়েছে।” সাথে সাথে রেশমা কান্না করে ফেললো। ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে বললো, “ এ কোন গল্প নয়, এ আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, এ আমাদের শহীদদের ত্যাগের ইতিহাস, এ আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করার ইতিহাস।”


-----০------

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:১১

আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: বাহ,চমৎকার পোস্ট!

একুশ নিয়ে আমার এ পোস্টটা পড়ার জন্য অনুরোধ রইল,
পোস্ট লিংক

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩১

নাহিদ তান্নি বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২১

সুমন কর বলেছেন: মোটামুটি লাগল !

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩১

নাহিদ তান্নি বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.