নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেঘে ঢাকা তারা আমি

মেঘে ঢাকা তারা আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প (৩) ~কোথাও কেউ নেই~

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫২

সেই দিনগুলিকে আজো ভুলতে পারিনি ।ভোলা যায়না ।আজ এই ছন্নছাড়া জীবনের কষ্টকর বালুকাবেলায় দাড়িয়ে সেই দিনগুলিকে বড়ো ইর্ষা হয় ।

জানিনা কবে মুক্তি মিলবে !

সেদিন রাতে খাবার সময় বাবা বললেন ,আগামী কাল যেতে পারবি ।সব ঠিক করেছি ।

আমার মনে খুশীর ঝিলিক বয়ে গেলো ।সাগর দেখার সাধ আমার কতকালের ।কতদিন স্বপন দেখেছি !কিন্তু বাবার ব্যস্ততা আমাকে সে সুযোগ দেয় নি ।বহুদিনের আশা পূর্ণ হতে যাচ্ছে ।বাবার কাছে জানতে চাইলাম তুমি কতদিন থাকতে পারবে ?কোন সৈকতে যাচ্ছি ।

কুয়াকাটা ।

তুই তো এখন বড়ো হয়ে গেছিস ।একাই যেতে পারবি ,আমার যেতে হবে কেনো ?

বাবার কথায় অবাক হলাম তারপর স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম ,তুমি না গেলে আমিও যাচ্ছিনা ।

-তা হলো তোর জীবনেও যাওয়া হচ্ছে না ।

-দরকার নেই যাওয়ার ।আমারো সাফ কথা ।

বিষন্ন মন নিয়ে ঘুমুতে গেলাম ।

সকালে বাবা টেনে উঠিয়ে বললেন রেডি হও ।

ঘন্টাখানেকের মধ্যেই গাড়িতে চড়লাম ।বাবা আর আমি ।মাওয়ার ফেরি পেরিয়ে গাড়ি ছুটে চললো কুয়াকাটার পথে ।

কতদিন আগের কথা ।তবু মনের ফ্রেমে সাজানো প্রতিটি ক্ষণ ।স্মৃতি মুছে ফেলার কোনো যন্ত্র আবিস্কার হলে ভালো হতো ।একটু শান্তি পেতাম ।

বরিশাল এসে একটা রেষ্টুরেন্টে দুপুরের খাওয়া শেষ করে আবার ছুট ।কিছুদূর এগিয়ে নির্জন একটা জায়গায় দেখলাম একটা জীপ থামানো ।ড্রাইভার বনেট তুলে খোঁচাখুচি করছে ।একজন মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক হাততুলে আমাদের থামালেন ।

তার গাড়িটা হঠাত্‍ করেই বিগড়ে গিয়েছে ,কিছুতেই ঠিক হচ্ছেনা ।তারা কুয়াকাটা যাচ্ছেন ।এই সময় এই মুসিবত ।এদিকে সন্ধে হয়ে আসছে ।আমাদের ড্রাইভারও গুতোগুতি করে রায় দিলো সমাধান আয়ত্বের বাইরে ।

বাবা তাদেরকে বললেন আমাদের সাথে যেতে আর ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে থাকুক ।পটুয়াখালী থেকে মেকানিক পাঠিয়ে দেয়া হবে ।

একটু ইতস্তত করে ভদ্রলোক রাজী হয়ে গেলেন ।গাড়ীর দরজা খুলে বললেন নেমে আয় নওশাবা ।গাড়ী থেকে নেমে এলো আপাদমস্তক হিযাবে ঢাকা একটি মেয়ে ।পেছনে তার মা ।নেমেই মেয়েটি গম্ভীর স্বরে ঘোষনা দিলো ,তোমার ওই ভাঙা গাড়িতে আমি আর চড়বো না ।দরকার হলে হেটে ফিরবো ।

আমি একটু শব্দ করে হেসে ফেললাম ।অমনি সে আমার দিকে চাইলো ।চোখে চোখ পড়লো ।চেহারা নেকাবে ঢাকা চোখে চশমা ।তার আড়ালে দুটি চোখে যেনো সাপের দৃষ্টি ।আমি সম্মোহিতের মত চেয়ে রইলাম ।দৃষ্টি ফিরাতে পারছিলাম না ।দুই বাবাই দেখলেন ।আবার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া দেখে দুজনেই জোরে হেসে দিলেন ।

আমি ড্রাইভারের পাশে ও তারা পিছনের সিটে বসলো ।প্রতিটি ফেরিতেই মেয়েটি নামলো ।আর আমি ভয়ে দূরে দূরে রইলাম ।ততক্ষণে জেনে গিয়েছি মা বাবার একমাত্র আদুরে কন্যা বোশেখ মাসের পূর্ণিমা দেখতে চলছে সাগরে ।এবারে এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছে ভিকারুন্নেসা থেকে ।

যা হোক প্রচন্ড খারাপ রাস্তায় জামভর্তা হয়ে পৌছলাম গোধূলী লগনে ।আকাশে এক অপূর্ব মায়ার খেলা ।নওশাবারা অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে আবার দেখা হবে বলে হোটেলে চলে গেলো ।আমাদের জন্য একজন দাড়িয়ে ছিলো ।সে এসে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলো একটা কটেজ টাইপ বাড়িতে ।ছোট্ট একটা ফুলের বাগান পেরিয়ে ঘরে ঢুকলাম ।বাবা ঘোষনা দিলেন এই বাড়িটা তোর ।আমি হতভম্ভ হয়ে গেলাম ।তারপরে বাবাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললাম ।মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন বাবা ।

কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে সৈকতে এলাম ।প্রচন্ড ঢেউ আর গর্জন ।তার মাঝে গলে গলে পড়ছে লাল সূর্য ।সারাদিনের ক্লান্তি মুছে গেলো ।আমি চেয়ে রইলাম অদ্ভুত অপার্থিব সে দৃশ্যের দিকে . . . . .

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.