নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লেখক নই, মাঝে মাঝে নিজের মনের ভাবনাগুলো লিখতে ভাল লাগে। যা মনে আসে তাই লিখি,নিজের ভাললাগার জন্য লিখি। বর্তমানের এই ভাবনাগুলোর সাথে ভবিষ্যতের আমাকে মেলানোর জন্যই এই টুকটাক লেখালেখি।

তারেক_মাহমুদ

পৃথিবীর সব ভাল টিকে থাকুক শেষ দিন পর্যন্ত

তারেক_মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদায় হ্যামিলনের বাশিঁওয়ালা

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:১০




শৈশব পেরিয়ে যখন দুরন্ত কৈশরে পর্দাপণ করেছি, ইন্টারনেট না থাকলেও আমাদের হাতে ছিল সেবা প্রকাশনীর বই ( তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা,কুয়াশা, কিশোর ক্লাসিক, ওয়েস্টার্ন, কিশোর পত্রিকা, রহস্য পত্রিকা) ।সেবার বইগুলো আমাদের কাছে ইন্টারনেটের চেয়ে কম আনন্দময় ছিলনা। সেই ছেলেবেলায় প্রথম জেনেছিলাম এই অফুরন্ত আনন্দের উৎস একজন ব্যক্তি তিনি কাজী আনোয়ার হোসেন। ছেলেবুড়ো সবার কাছে তিনি কাজী'দা নামে পরিচিত ছিলেন । কাজীদা আমার কাছে একজন হ্যামিলনের বাশিঁওয়ালা। যার মধুময় বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়েছিল আমার লাখো কিশোর। স্কুলের টিফিনের টাকা বাচিয়ে আমরা কিনতাম সেবা প্রকাশনীর বই।বাসস্ট্যান্ড কিংবা রেলস্টেশনের বুকস্টলসহ সব বইয়ের লাইব্রেরীতে পাওয়া যেতো সেবার বই। হকার কাকুকে বলে রেখেছিলাম প্রতিমাসে কিশোর পত্রিকা / রহস্য পত্রিকা দেওয়ার জন্য। নব্বইয়ের দশকের বই মেলার আমার কাছে প্রধান আকর্ষণ সেবা প্রকাশনীর স্টল,হাজারো কিশোর তখন লাইন দিয়ে কিনতো সেবা প্রকাশনীর বই। এখনো বইমেলায় গেলে অন্তত একবার সেবা প্রকাশনীর স্টলের সামনে থেকে ঘুরে আসি বড্ড আপন মনে হয় এই স্টলটাকে।



ক্লাস সেভেন/এইটে ওঠার পর প্রথম মাসুদ রানা পড়া শুরু করি এর আগে একশটার মত তিন গোয়েন্দা পড়ে শেষ করেছি। একদিন আমার এক বন্ধু ক্লাশচলাকানীন সময়ে মাসুদ রানার বইসহ স্যারের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়লো। আমার বুক তখন ধক করে উঠলো, মনে মনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ পড়তে লাগলাম কারণ আমার ব্যাগেও ছিল মাসুদ রানা। পরে জানলাম আমার মতো আরও দশবারো জনের ব্যাগেও ছিল একই বই।


ছেলেবেলায় প্রথম জেনেছিলাম সেবা প্রকাশনীর অফিস সেগুনবাগিচায়। অনেকবার মনে মনে সেবা প্রকাশনীর অফিস থেকে ঘুরে এসেছি তবে কোনদিন সাহস করে অফিসের আশেপাশেও যাইনি । আমার কাছে এখনো সেগুনবাগিচা এলাকার নাম শুনলে প্রথম মনে আসে সেবা প্রকাশনী এরপরই মনে আসে কাজীদা। জীবনে অনেকবার ইচ্ছা হয়েছিল কাজীদাকে সরাসরি দেখার তবে কোনদিন সেই সৌভাগ্য হয়নি।

সেবার কল্যানেই পৃথিবীর অনেক অনেক বিখ্যাত লেখকের লেখা পড়ার সুযোগ পেয়েছে আমাদের জেনারেশন। আমাদের জেনারেশনকে প্রথম বইপড়া শিখিয়েছেন কাজী আনোয়ার হোসেন এবং পরে হুমায়ুন আহমেদ। হুমায়ুন আহমেদ তার বইয়ে লিখেছেন, তিনি লেখালেখির শুরুতে অর্থকষ্টে ছিলেন, একসময় জানতে পারেন কাজী আনোয়ার হোসেন বিদেশি গল্পের অনুবাদ করে দিলে টাকা দেন। তিনি রাতদিন পরিশ্রম করে একটি বিদেশি বইয়ের অনুবাদ করেন যার নাম দেন 'অমানুষ'।পান্ডুলিপি নিয়ে তিনি কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে কাজী আনোয়ার হোসেন নিজেই বইটি অনুবাদ করেছিলেন 'অগ্নিপুরুষ' নামে, তবে হুমায়ুন আহমেদের অনুবাদ কাজী আনোয়ার হোসেনের পছন্দ হয়। তিনি হুমায়ুন আহমেদকে এক হাজার টাকা দেন এবং বইটি সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করেন। হুমায়ুন আহমেদ তার আত্মজীবনীতে এই ঘটনাটি স্বরণ করেছেন।


হুমায়ুন আহমেদকে আমরা আগেই হারিয়েছি গতকাল হারালাম আরও এক কিংবদন্তি পুরুষ কাজী আনোয়ার হোসেন কে।


অনেক ধন্যবাদ কাজী'দা আমাদেরকে স্বপ্নময় শৈশব উপহার দেওয়ার জন্য।





মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৪৯

ফারহানা শারমিন বলেছেন: ওপারে ভালো থাকুন কাজীদা।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:০৪

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: .আমিন

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:৫৪

আলমগীর সরকার লিটন বলেছেন: আল্লাহ্ জান্নাত বাসি করুণ আমিন--------

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:০৪

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: আমিন

৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৪০

নীল আকাশ বলেছেন: ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আল্লাহ উনাকে উনার দোষ ত্রুটি মাফ করে দিয়ে বেহেস্ত নসীব করুন, আমিন।
কালজয়ী মানুষের কখনো মৃত্যু হয় না, ঊনি রয়ে যাবেন আমাদের হৃদয়ের অন্তঃপুরে।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১৪

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই, তিনি বেচে থাকবেন পাঠকের হৃদয়ে।

৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৫৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদ আর কাজী আনোয়ার হোসেন মানুষ কে বই কিনে পড়তে শিখিয়েছিলেন।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১৪

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: একদম ঠিক বলেছেন ভাই, অনেক শুভকামনা

৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৫৭

ঢাবিয়ান বলেছেন: খুব সুন্দর টাইটেল দিয়েছেন। আসলেই হ্যমিলনের বাশিওয়ালা ছিলেন।পোস্ট পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল আমার মনের কথাগুলো অন্য আরেকজন লিখেছে। আসলে সেবার ভক্ত অনুরাগিদের অনুভুতিগুলো একই রকমের । +++++++


আমি এখনও দেশে গেলে বুকস্টল থেকে সেবার এক গাট্টি বই এই প্রবাসে নিয়ে আসি অবসরে পড়ার জন্য।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:০২

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: আপনার ভাবনার সঙ্গে একাত্ম হতে পেরেছি জেনে ভাল লাগলো, অনেক শুভকামনা

৬| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:৪৯

শায়মা বলেছেন: খুব সুন্দর শিরোনাম।

কেউ কেউ এই জীবনে এমনই হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে হৃদয়ে থাকে জাগরুক।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৪

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপু, ওপারে ভাল থাকুন প্রিয় লেখক

৭| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৩২

আমিন রবিন বলেছেন: আমারও খুব ইচ্ছা ছিল উনার কাছে কিছুক্ষণ বসার।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৫

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: আমার সঙ্গে মিলে গেল, অনেক শুভকামনা

৮| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৪০

জুন বলেছেন: তার কুয়াশা বই নিয়ে আমরা ভাই বোনেরা কাড়াকাড়ি করে পরতাম। এখনো মনে পরে কুয়াশার এক পর্বে আমার প্রিয় আফ্রিকা মহাদেশের উপরে লিখেছিলেন, তবে গল্প মনে নেই কিন্তু মনে আছে লিম্পপো নদীর ভয়ানক কুমীর আর আদিবাসীদের কথা। সেবা প্রকাশনীর একনিষ্ঠ পাঠক ছিলাম।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৫

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: সত্যি আপু তিনি আমাদের প্রজন্মের কাছে হ্যামিলনের বাশিওয়ালা

৯| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:১৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: এখনকার বাচ্চাদের মোবাইল ফোনে যেমন নেশা তার থেকেও কিছুটা বেশী নেশাই ছিলো আমার এই সেবা প্রকাশনীর বইগুলোর প্রতি। অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে তখন ১৬ থেকে ২০ টাকায় বইগুলো হাতে পাওয়ার পর মনে হতো স্বর্গ হাতে পেয়েছি........আমার প্রাণের লেখক ওপাড়ে ভালো থাকুক, সব সময়।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৪

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: সত্যি তাই সেবার বইগুলো আমাদের কাছে অনেক আনন্দময় ছিল, ওপারে ভাল থাকুন প্রিয় লেখক, অনেক শুভকামনা আপনার জন্য

১০| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৫২

এমজেডএফ বলেছেন: ৭০ ও ৮০'র দশকের তরুণ প্রজন্মকে বই পড়তে আগ্রহী করে তুলেছিলেন অসাম্প্রদায়িক ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী এবং বাংলাদেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক কাজী মোতাহার হোসেনের যোগ্য উত্তরসুরী, লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক, এবং জনপ্রিয় মাসুদ রানা ধারাবাহিকের স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত! মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

"কাজী আনোয়ার হোসেন" নামটি এবং "কুয়াশা" শব্দটি দেখলে আমার ছেলেবেলার একটি স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। ৭০'র দশকে গ্রামে যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম তখন দেখতাম আমাদের সিনিয়র ভাইদের কুয়াশা সিরিজের বই নিয়ে মাতামাতি করতে। কেউ একজন একটা বই কিনে আনলে কার আগে কে পড়বে টানাটানি। তখনকার দিনে গ্রামে তরুণদের অবসর সময়ে করার মত কিছু ছিল না। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের এ ধরনের বই কেনার সামর্থ্যও ছিল না। তারা বন্ধুদের পেছনে দিনের পর দিন ঘুরতো বইটি ধার করে পড়ার জন্য। উল্লেখ্য এই বইগুলো হাত থেকে হাতে ঘুরতে ঘুরতে একসময় নিঁখোজ হয়ে যেতো :)

উল্লেখ্য, আমাদের সমাজে যে কোনো ভালো কাজে বাঁধা আসবেই। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাসুদ রানা সিরিজেও বাঁধা এসেছিলো। মৌলবাদী ও রক্ষণশীল পরিবারগুলোর অভিযোগ ছিল যে, তিনি মাসুদ রানা সিরিজে যৌনতার বেসাতি পেতেছেন। এই হাওয়ায় পাল এতোটাই উঠেছিলো যে, 'প্রজাপতি' মার্কাওয়ালা বই পড়াই নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো অনেক বাঙালি পরিবারে। যাই-হোক, সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন বাঙালি পাঠকদের স্মৃতির মণিকোটায় চিরস্থায়ী হয়ে থাকবেন।

(মন্তব্যটি ঠাকুর মাহমুদ ভাইয়ের পোস্টে যখন করেছিলাম তখন পোস্টটি প্রথম পাতা থেকে সরে গিয়েছিল, তাই এখানে আবার করলাম।)

১১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১:৩০

হাবিব ইমরান বলেছেন:
একটা প্রজন্মের নির্দিষ্ট একটা শ্রেণীকে বইয়ের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছিলেন তিনি। বইয়ের মধ্যে রেখে তিনি তাদের দিয়েছিলেন চমৎকার শৈশব-কৈশোর। না হলে তারা কবে যে কুপথে চলে যেত তা তারা জানতেও পারতো না।

কাজী দা, ওপারে ভালো থাকুন।

১২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ৭:২২

আহমেদ জী এস বলেছেন: তারেক_মাহমুদ,



কতো যে স্মৃতি " মাসুদ রানা"কে ঘিরে! মনে আছে, সেই কতোদিন আগে ক্লাসের বন্ধু আরিফ ক্লাসের মধ্যে একটা ভাব নিয়ে যেদিন একটা বই যার মলাট উল্টোতেই লেখা ছিলো- " প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মাত্র", দেখালো তখন আমরা বন্ধুরা প্রাপ্তবয়স্কদের কিছু দেখার লোভে বই নিয়ে অদম্য উৎসাহে কামড়াকামড়ি শুরু করে দিয়েছিলুম। বেশ মনোমালিন্যের পরে ঠিক হলো পালাক্রমে পড়বে সবাই। নামটি জানা গেলো ধংসপাহাড়, কাজী আনোয়ার হোসেন নামের কারো লেখা। আমার ভাগে যেদিন পড়লো সেদিন
বইটি কোমড়ে গুঁজে বাসায় । সন্ধ্যে হলে, কেরসিনের বাতি নিয়ে পায়খানায় ( তখন বাথরুম বা ওয়াশ রুম বলতে কিছু ছিলোনা) বসে দুরুদুরু বুকে বইখানার পাতা ওল্টানো। নেই থেকে শুরু, আজ অবধি চলছে। কাজী আনোয়ার হোসেনও সেই থেকে গেঁথে আছেন মনে। কতো কিছু যে শিখেছি মাসুদরানা পড়ে।

সৃষ্টিকর্তা তাকে মরনের ওপারে শান্তিতে রাখুন।

১৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১১:১৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমি ৯০ এর দশকে কুয়াশা খুজতে একবার হাটতে হাটতে সেগুন বাগিচায় সেবা প্রকাশনীতে গিয়েছিলাম। অফিসটা খুঁজতে আমার অনেক সময় লেগেছিল। কিন্তু বিফল মনোরথে ফিরেছিলাম কারণ কুয়াশা ওনাদের কাছে ছিল না।

১৪| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: সেবা প্রকাশনীর বই আমার মনে হয় বাংলাদেশের সবাই পড়েছে। বিশেষ করে রহস্য পত্রিকা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.