![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার সম্পর্কে কিছু বলার স্পর্ধা এখনও আমার হয়নি….
এই ধরনের লেখা সাধারনত বন্ধু দিবসের আগে লেখা যেতে পারে। ব্লগ, ফেইসবুক নোটের চল সেটাই। কিন্তু এই ‘অসময়ে’ বন্ধু নিয়ে একটা লেখা তৈরীর পেছনে টানা বেশ কয়েকটা ট্রেন ভ্রমন কারন হতে পারে। পরিস্কার করি। সায়ানের সেই গানটা কি সবার শোনা আছে? এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধু-অসাধারন একটা সৃষ্টি। আমার খুব কাছের এক বন্ধুর কাছ থেকে যেইদিন প্রথম গানটা শুনলাম সেইদিনই এই গানটার প্রতি এক অন্যরকম ভালোলাগা তৈরী হয়েছিলো। একটা গানের কথা যে কতটা আবিষ্ট করতে পারে সেটা রবীন্দ্রনাথের পর এই সায়ানের কাছ থেকে বুঝলাম। মাঝখানে সময় পার হয়েছে বেশকিছু। কিছুদিন আগে বিতর্কের প্রয়োজনে বেশ কয়েকটা ট্রেন ভ্রমন করতে হয়েছে। রাতের ট্রেন অন্ধকার কেটে চলেছে। জানালার পাশে, কানে হেড ফোন দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বিস্তৃত আকাশের দিকে। প্লেলিস্টের নিয়ম মেনে হঠাৎ বাজতে থাকলো সায়ানের এ গানটা। হঠাৎ বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে উঠলো। বন্ধুত্ব, যার মধ্যে ডুবে আছি, কি এই বন্ধু? প্রশ্নটা যখন বন্ধু নিয়েই তখন ভাবলাম তা বন্ধুদের সাথেই শেয়ার করি।
বন্ধুর কেতাবী সংজ্ঞার ধারে কাছ দিয়ে না গিয়ে যদি এমনিতেই নিজেকে জিজ্ঞাসা বন্ধু কি? তাহলে কি উত্তর আসবে? সেই ছোটবেরা থেকেই বন্ধুর সংস্পর্শে আছি। সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছি, পাল্টে গেছে বন্ধুরা, বদলে গেছে সম্পর্কের রুপ। কিন্তু বন্ধু আছে। একেক বয়সের বন্ধুরা একেক রকম। তবু বন্ধুর যায়গা আছে। বন্ধুত্বের প্রকোপ বাড়ছে বই কমছে না। ফেসবুকের নীল যাদুতে বন্ধুত্ব পেয়েছে নতুন ধাঁচ, মোবাইল ফোন দিয়েছে বন্ধুত্বের নতুন সংজ্ঞা। চারিদিকে এখন শুধু বন্ধু আর বন্ধু। এতো বন্ধুর ভীড়ে, আসলেই কি বন্ধু আছে?
আমার কাছে বন্ধু হলো পরিবারের বাইরে মানুষের নিজের তৈরী করা পরিবার। আমরা যেই পরিবারে জন্ম গ্রহন করি, সেটা ইশ্বর প্রদত্ত। সেটা নির্বাচনে আমাদের কোন হাত নেই। তাই খোদা তার সেরা জীবকে নিজের পছন্দমত আরেকটি পরিবার তৈরী করার ক্ষমতা দিলেন। আর আমরা তার নাম দিলাম বন্ধুত্ব। একজন মানুষের জীবনে বন্ধু হলো ‘অর্জন’। এই পৃথিবীতে চলার পথে সে নিজে যেই মানুষগুলোকে নিজের জীবনে অর্জন করতে পারে, তারাই তার বন্ধু।
তার মানে কি, আমাদের সব বন্ধুরাই আমাদের অর্জিত সম্পদ?
এই ব্যাপারে আমি আসলে একটু দ্বিধাগ্রস্থ। আমরা আসলে এই সম্পর্কটাকে যাচ্ছেতাই ভাবে ব্যাবহার করেছি। বলা যায় কিছুটা অপচয় করেছি। সায়নের গানটার মূল কথাই ছিলো কোন এক বন্ধুকে হারানোর কষ্ট। আমাদরে প্রত্যেকের মধ্যেই কি এই কষ্টটা কাজ করে না?
একসময়ের খুব ভালো বন্ধুকে হারিয়ে কি ফেলিনি আমরা?
সেই হারানো বন্ধুকে মনে পড়ে কি? কষ্ট লাগে না?
কিন্তু বন্ধু হারায় কেন?
আমরা বড় হচ্ছি। বাড়ছে আমাদের চিন্তার পরিসর। পারসোনালিটি কনফ্লিক্ট কোন বন্ধুর সাথে তৈরী হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এই কনফ্লিক্টটা বড় হয়ে ধরা দিলেই মাঝেমধ্যে হারাতে হয় বন্ধুকে। আমরা আমাদের প্রিয় মানুষটিকে সহ্য করতে পারি না। কিন্তু কেন? দুটো মানুষ সম্পূর্ণ আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক। কেন আমরা জোড়জবরদস্তি করে একই ডায়াসের হতে চাই। হি ইজ নট মাই টাইপ-কেন আমাদের প্রিয় লাইন হচ্ছে। একজন বন্ধু যদি ভুল করে আমাদের মনে কষ্ট দেবার মতো কথা বলেও ফেলে তাকে কি ক্ষমা করা যায়? আরে, কাছের মানুষ বলেই তো তার কষ্টটা এত বড় লাগলো। রাগ বা অহংকারের কারনে সেই কাছের মানুষটিকে দুরে ঠেলে দেবার যৌক্তিকতা কতটুকু? যেই মানুসটাকে দুরে টেলে দিয়েছি তাকে ক্ষমা করে দিযে কাছে রাখলে ভালো হতো না?
কিছু বন্ধুত্ব ফিকে হয় সময়ের সাথে। দুরত্ব বাড়ে, দেহের, মনের। সেই বন্ধুদের কাছে আটকে রাখতে খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু কি আর করা, আমরা মহাপরাক্রমশালীর ইচ্ছের অধীন।
কিছু বন্ধুত্বকে চোখের সামনে নষ্ট হতে দেখেছি অকারনে। প্রেম নামক বস্তুটি কিছু বন্ধুত্বকে দিয়েছে স্বর্গের সন্ধান। কিছু বন্ধুত্ব ধুকছে নরকের কষ্টে।
কিছু বন্ধুকে হারিয়েছি এমনিই। হারিয়ে গেছে। চোখ বন্ধ করে সেই সব হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের খুঁজি। বরাবরের মতোই পা্ইনা।
আমিও আমার অনেক বন্ধকে ছোটখাটো অপরাধে ক্ষমা করতে পারিনি। আস্তে আস্তে সেই বন্ধুটি দুরে সরে গিয়েছে। আজ আফসোস হয়। ইশ যদি সেই সময় তার অপরাধকে ছোট করে দেখতাম, তাহলে এই কাছের মানুটিকে হারাতে হতো না।
হয়ত এখনও এমন অনেক ছোট ঘটনাকে বড় করে দেখছি, কিন্তু দেখছি না তার চেয়েও বড় বন্ধুত্বকে।
বন্ধুরা ভালো থেকো, ক্ষমা চাচ্ছি আমার অনাকাঙ্খিত অপরাধের জন্যে। তোমাদের সুচিন্তিত ভাবে কখনই হারাতে চাই না। কিন্তু তোমরাও হয়ত হারিয়ে যাবে। এরপর কোন এক লম্বা সময় পর হিসেব করবো, কার দোষ ছিলো, আমার না তোমার। হিসেব কষে ফল আসবে হয়ত, কিন্তু ফিরে আসবে না এই চমৎকার সম্পর্কটা।
সায়ানের অসাধারন গানটা এখানে দিযে দিলাম…..
এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে সকাল-বিকেল বেলা
কত পুরনো নতুন পরিচিত গান গাইতাম খুলে গলা
কত এলোমেলো পথ হেঁটেছি দু’জন হাত ছিল নাতো হাতে
ছিল যে যার জীবনে দুটো মন, ছিল জড়াজড়ি একসাথে
কত ঝগড়া-বিবাদ সুখের স্মৃতিতে ভরে আছে শৈশব
তোকে স্মৃতিতে স্মৃতিতে এখনো তো ভালবাসছি অসম্ভব
কেন বাড়লে বয়স ছোট্টবেলার বন্ধু হারিয়ে যায়
কেন হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভিড় হারানোর তালিকায়।।
আজ কে যে কোথায় আছি কোন খবর নেই তো কারো
অথচ তোর ওই দুঃখগুলোতে অংশ ছিল আমারও
এই চলতি জীবন ঘটনাবহুল দু-এক ইঞ্চি ফাঁকে
তুইতো পাবি না আমায় আর আমিও খুঁজি না তোকে
কত সুখ পাওয়া হয়ে গেল, তোকে ভুলে গেছি কতবার
তবু শৈশব থেকে তোর গান যেন ভেসে আসে বার বার
আজ চলতে শিখে গেছি তোকে নেই কিছু প্রয়োজন
তবু ভীষণ অপ্রয়োজনে তোকেই খুঁজছে আমার মন
তুই হয়ত ভালই আছিস আর আমিও মন্দ নেই
তবু অসময়ে এসে স্মৃতিগুলো বুকে আঁকিবুকি কাটবেই
তুই কত দূরে চলে গেলি তোকে হারিয়ে ফেলেছি আমি
এই দুঃখটা হয়ে থাক এই দুঃখটা বড় দামি
কেন বাড়লে বয়স ছোট্টবেলার বন্ধু হারিয়ে যায়
কেন হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভিড় হারানোর তালিকায়।।
সেই কোন কথা নেই মুখে শুধু চুপচাপ বসে থাকা
ছিল যার যার ব্যথা তার তার বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা
আমি ভাবিনি তখন ভুলেও এমন দু’জন দুদিকে যাবে
বুঝিনি আমারই হৃদস্পন্দন আমার অচেনা হবে
এই বিভক্ত পৃথিবীতে বড় শক্ত বাঁধন ছিল
হলো অহংকারের জয় সেই বন্ধন ছিঁড়ে গেল।
সেই অহংকারের খেলায় দুজনে জিতে গেছি একসাথে
প্রতি ইটের জবাব পাথরে দিয়েছি বিজয়ের মালা হাতে
সেই বিজয় উল্লাস প্রতিধ্বনিত মূর্ত আর্তনাদে
আজ বুকের ভেতর মিষ্টি একটা শৈশব শুধু কাঁদে
আজ অবেলার অবসরে কেন লাগছে ভীষণ একা
কত হাজার বছর তোর হাতটাকে হয়নিতো ছুঁয়ে দেখা
কেন বাড়লে বয়স ছোট্টবেলার বন্ধু হারিয়ে যায়
কেন হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভিড় হারানোর তালিকায়।।
আমি কত কতবার আঁকি তোর ছবি আমার কল্পনাতে
আজও জ্বলে যাই আজও পুড়ে যাই তোর দু’চোখের অবসাদে
দেখ নীল নীল নীল আকাশের মত অনন্ত হাহাকার
আজ বুকের ভেতর ভাঙ্গছে ভাঙ্গছে ভেঙ্গে সব চুরমার
কোন শত্রুরও যেন প্রাণের বন্ধু এমন দূরে না যায়
শোন বন্ধু কখনো কোন বন্ধুকে বলো না যেন বিদায়
কেন বাড়লে বয়স ছোট্টবেলার বন্ধু হারিয়ে যায়
কেন হারাচ্ছে সব বাড়াচ্ছে ভিড় হারানোর তালিকায়।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১১:১১
ফাইরুজ বলেছেন: ভাল লাগলো লেখাটা।