নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তৌফিক জোয়ার্দার

তৌফিক জোয়ার্দার

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট শেষ করে দেশে ফিরেছি ২০১৫ সালের শেষ দিকে। যারা ফলো করতো, তাদের কাছে বারবারই বলেছি দেশে ফিরবো। সামুতে লিখেওছিলাম এ নিয়ে। অনেকেই সাধুবাদ দিয়েছিলেন, আবার অনেকে প্রকাশ করেছিলেন সন্দেহ ও অনাস্থা। এ ক’টা বছর কেটে গেল ফিরে আসার ধাক্কাটা সামলাতে। অনেক দিন পর আবার এলাম সামুতে। আবারো লেখালেখির দুর্মর আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে। আবার ঘন ঘন দেখা হবে বন্ধুরা।

তৌফিক জোয়ার্দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিডিও ব্লগ (বা ভ্লগ-Vlog): ঈদে আমার গ্রাম

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১৬

ঢাকায় কিম্বা বাবা মা অথবা নিজের কর্মসূত্রে দেশের বাইরে জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটালেও নিজেকে 'গ্রামের ছেলে' পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও বছরে অন্তত একবার গ্রামের বাড়ি যাই, জীবনরস সংগ্রহ করে পরবর্তী ভ্রমণ পর্যন্ত বেঁচে থাকার নিমিত্তে। অল্প সময়ের জন্য দেশে ফিরলেও, মায়ের স্নেহকাতর চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে, কয়েকটি দিন বরাদ্দ রাখি প্রিয় গ্রামটির জন্য। ঈদেই যাওয়া হতো সবচেয়ে বেশি, তাই বছর দু'ই তিনেক আগে এমনই এক ভ্রমণের ভিডিওচিত্র ধারণ করেছিলাম বাবার কাছ থেকে সদ্য উপহার পাওয়া হ্যান্ডিক্যামে।



বৈশিষ্ট্যপূর্ণভাবে (typically শব্দটির আর ভাল অনুবাদ কি হতে পারে?) এ যাত্রাগুলোর সঙ্গী হয় আমার চাচাতো ভাই, বয়সে খানিকটা বড় হওয়া সত্তেও বন্ধুত্বের উষ্ণতায় যিনি পুরো ভ্রমণটি চাঙ্গা করে রাখেন। আর তাঁর বিশাল বন্ধুচক্রের নিদর্শণ হিসেবে সঙ্গী হয় অন্য কোন cousin, বন্ধু, colleague, অথবা স্রেফ পরিচিত কেউ। যাত্রাপথের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হয়ে ওঠে ফেরি ও ঘাটের সময়টি, যখন নানারঙের মানুষের সান্নিধ্য ও কথোপকথন ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলে। আর ফেরির ওপরে ঘোল, ঝালমুড়ি, ডাব, ছোলা, পেঁয়াজু আর ঘাটের দোকানে গরম ডিমভাজা আর পরোটার (আগে বেশ মজাদার ইলিশভাজা পাওয়া যেত, এখন চোখে পড়েনা) ভোজনবিলাস যেন ভ্রমণে মণিকাঞ্চনযোগ ঘটায়। ঢাকার গ্যাস চেম্বার থেকে বেরিয়ে পদ্মার উদ্দাম বাতাস যে কতটা শ্রান্তিহর মনে হয় তা কেবল যাঁরা এ পথে ভ্রমণ করেছেন তাঁরাই বুঝতে পারবেন।



এরপর গ্রামের সবুজ মাঠ, ক্যানালের ধার ঘেঁষে হেঁটে বেড়ানো, বয়োবৃদ্ধদের সাথে অলস আলাপন, গ্রামের রাস্তার মোড়ে বসে গুড়ের চা খাওয়া, চাচীমার হাতের পিঠা, নাড়ু আর নানাপদের মুখরোচক খাবার (এ কাজটি দাদু বেঁচে থাকতে তাঁর জিম্মায় চলত) এসবের কথা কী আর বলব? গ্রামে পৌঁছার পরদিনটি সাধারণত সংরক্ষিত থাকে জেলা শহর (চুয়াডাঙ্গা) কিম্বা নিকটবর্তী অবস্থানে বসবাস করা আত্মীয় স্বজনদের জন্য। সেসময় ঢাকা থেকে আনা (মূলত: আমার চাচাত ভাই কর্তৃক) উপহার সামগ্রী বিলি করা হয়।



ঈদের দিনটি কাটে গ্রামেই, আত্মীয় পরিজনদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত আর মিষ্টি পায়েস খাওয়ার মধ্য দিয়ে। সাত সকালে টিউবওয়েলের নাতিশীতোষ্ণ পানিতে গোসল করে চাচার পিছু পিছু চাচাত ভাইদের সাথে লাইন ধরে ঈদগাহে যাওয়া এবং ফিরে এসে চাচীমাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম আর হাত পেতে সালামী গ্রহণ একটি অবিচ্ছেদ্য আচার (ritual)। বছরে ওই একটি বারই কদমবুসি নামক পুরোন রীতিটি পালন করা হয়। আর এত বড় হয়েছি, নিজে উপার্জন করি, তার পরও নিরুপার্জন চাচীমাকে (দাদু বেঁচে থাকতে তিনি) সালামীর অত্যাচারটুকু না করলে ঈদ যেন শুরুই হয়না। চাচীমাও অবশ্য অমোঘ নিয়তির মতো এটিকে মেনে নিয়ে হাসিমুখে আঁচলে যত সামান্যই হোক কিছু চকচকে নোট গুঁজে বাড়ির অন্দর দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ঈদুল আযহার সময় দু'টো অতিরীক্ত অনুষঙ্গ যোগ হয়- নামাজের পর কোরবানির আয়োজন, আর দুপুরের দিকে পেটুক চাচাত ভাইকে নিয়ে মাংস খাওয়ার জন্য আত্মীয়বাড়িতে হামলা। উপাদেয় মাংসের টুকরো শনাক্ত করার ভার ঐতিহ্যগতভাবে উনার ওপরই বর্তায়।



ঈদের পরের দিনটি আবারো বরাদ্দ হয় কিঞ্চিৎ দুরবর্তী আত্মীয়দের সাথে শুভেচ্ছা দর্শনের উপলক্ষ্যে। কখনো বেরিয়ে পড়ি চুয়াডাঙ্গার আশপাশের জেলা উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলো খুঁজে বের করতে এবং ঘুরে বেড়াতে। একাজে বরাবর সঙ্গী হয় হাতেগোনা ক'জন চাচাতো ভাই (আজমল ভাই, মুনির, রাজন, কখনোবা পূর্বোল্লিখিত চাচাতো ভাই বিপুল ভাই)। এপর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি, লালন আখড়া, আলমডাঙ্গা রেলস্টেশন ও আরো অনেক স্থান, মধুসূদন দত্তের পৈত্রিক ভিটা সহ যশোরের নানা দর্শনীয় স্থান, মেহেরপুরের আম্রকানন, চুয়াডাঙ্গার আনাচে কানাচে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিদর্শন, স্মৃতি ও সংগ্রহশালা সহ নানা জায়গায় ঘুরেছি। পাঠকদের মাঝে কেউ যদি চুয়াডাঙ্গার আশপাশের কোন দর্শনীয় স্থানের সন্ধান দিতে চান- মন্তব্যের ঘরটি খোলাই রইল।



এসবই ধারণ করেছিলাম ভিডিওতে। ভেবেছিলাম এসব লিখে কিম্বা ভিডিও শেয়ার করে কি হবে, এসব তো আমার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ভালো লাগার প্রিয় মুহূর্ত। এসবে পাঠকের কিইবা আগ্রহের হেতু? পরে ভাবলাম, আমি যেমন প্রবাসের নিস্তরঙ্গ একাকিত্বে ইউটিউব খুলে গ্রামের নির্মলতাকে আলিঙ্গন করতে উন্মুখ হই, হয়ত আমার মতো কেউ একইভাবে মিলিয়ে নিতে চাইবে তাঁর ফেলে আসা গ্রামকে। তাই নাহয় আমার চোখ দিয়েই দেখুন আপনার গ্রামকে; কিম্বা আপনার চোখ দিয়ে আমার গ্রাম।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:০১

খেয়া ঘাট বলেছেন: গ্রাম দেখার পাশাপাশি মিউজিকটা হৃদয়ের ভিতর টুনটুন করছিলো।তবে ভিডিওর বেশ কিছু রুক্ষ শব্দ মিউজিকের ভাবগম্ভীর আভিজাত্যটাকে নষ্ট করেছে।

২৮ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:১২

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: খেয়াঘাট, আপনার চমৎকার মন্তব্যের উপস্থিতি আমার পোস্টের সীমাবদ্ধতাকে পুষিয়ে দিয়েছে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.