![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এর আগে একটি আলোচনামূলক লেখায় তিনটি প্রশ্ন করেছিলাম। প্রশ্ন গুলি হলো-
১. বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট কোন রাজার সাথে যুদ্ধে কুলাইতে না পেরে পিছু হটেছিলেন??
২. পৃথিবীতে প্রথম যেখানে চুম্বকের সন্ধান মেলে তা হলো এশিয়া মাইনর। এই এশিয়া মাইনরের বর্তমান নাম কি??
৩. মন, প্রাণ ও হৃদয় কাকে বলে এবং মস্তিষ্কের সাথে আত্মার সম্পর্ক কি??
প্রথম ও দ্বিতীয় প্রশ্ন দুটি ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত এবং তৃতীয় প্রশ্ন মনোবিজ্ঞান ও দর্শনের সাথে সম্পর্কিত। তাই প্রথম দুটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আজকে এবং তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর নিয়ে অন্য এক সময় আলোচনা করব।
প্রথম প্রশ্নের উত্তর হলো-
যে রাজার সাথে যুদ্ধে কুলাইতে না পেরে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট পিছু হটেছিলেন ধ্রুপদী গ্রিক ও ল্যাটিন বর্ণনায় সে রাজার নাম আগ্রাম্মেস। তিনি ছিলেন নীচকূলোদ্ভব নাপিতের পূত্র। হিন্দু পুরাণে তিনি মহাপদ্মনন্দন এবং বৌদ্ধ শাস্ত্র মাহাবোধিবংশে উগ্রসেন, অর্থ এমন এক ব্যক্তি যাঁর ‘প্রকান্ড ও পরাক্রান্ত সেনাবাহিনী’ আছে।
সেই রাজার প্রকান্ড সেনাবাহিনী বর্ণনার
ক্ষেত্রে ভারতীয় ও ধ্রুপদী ইউরোপীয় রচনাগুলির উল্লেখে প্রচুর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ডিওডোরাস ও ক্যুইন্টাস কার্টিয়াস রুফাস উভয়েই উল্লেখ করেছেন নন্দরাজের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগ সম্বন্ধে। যথা- পদাতিক সৈন্য ২ লক্ষ, অশ্বারোহী সৈন্য ২০ হাজার, রথ ২ হাজার, এবং তিন থেকে চার হাজার হাতি।
আলেকজান্ডারের পিছু হটা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে কিছু মতভেদ রয়েছে। কিছু ঐতিহাসিক বলেছেন তিনি যুদ্ধ করেন নি, যুদ্ধ না করেই তিনি ভারত ত্যাগ করেন। কারণ, তার সেনাবাহিনী যুদ্ধ করতে আর আগ্রহী ছিল না। তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাচ্ছিলো। কিন্তু কিছু ঐতিহাসিক বলেছেন আলেকজান্ডার রাজা আগ্রাম্মেসের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন এবং যুদ্ধে তিনি আহত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হন। কারন, রাজা আগ্রাম্মেসের হস্তীবাহিনীর সাথে তাদের পেরে উঠা সম্ভব ছিল না।
এখন কোনটা ঠিক বা বেঠিক তা বলা মুশকিল। কারন এ ব্যাপারে তেমন জুড়ালো কোনো প্রমাণাদি পাওয়া যায়নি। তবে এটা সত্য যে তিনি অসুস্থ হয়ে ফিরে যান। এখন অসুস্থ কি যুদ্ধে আহত হয়ে নাকি অন্য কারনে সেটাই ঘোলাটে।
অলিভার স্টোন ইতিহাস বিশ্লেষণ করে 'Alexander 2004' মুভিটি তৈরি করেন এবং সেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে আলেকজান্ডার রাজা আগ্রাম্মেসের সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং যুদ্ধে তিনি আহত হন। তবে যে যাই বলুক এই কথা সত্য যে রাজা আগ্রাম্মেস ছিলেন খুবই শক্তিশালী।
এখন কথা হলো রাজা আগ্রাম্মেসের রাজ্যের নাম কি?
এটা শুনার পর একটু অন্য রকম ভাল লাগা কাজ করবে। কারন, নিজের গৌরবের গল্প কার না শুনতে ভাল লাগে!
সেই রাজা আগ্রাম্মেসের রাজ্যের নাম গ্রিকরা বলতেন গঙ্গারিডই এবং স্থানীয় মানুষেরা বলতো গঙ্গারিদ্ধি। এই গঙ্গারিদ্ধি অন্য আর কিছু না, এটা আমাদের বঙ্গ অঞ্চল। অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।
ইতিহাসবিদ ডিওডোরাস গঙ্গারিডাই রাজ্য এবং যুদ্ধে লিপ্ত নিয়ে বলতে গিয়ে লিখেছেন-
‘ভারতের সমূদয় জাতির মধ্যে গঙ্গারিডাই সর্বশ্রেষ্ঠ। এই গঙ্গারিডাই রাজার সুসজ্জিত ও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত চার হাজার হস্তী-বাহিনীর কথা জানিতে পারিয়া আলেকজান্ডার তাহার বিরূদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হইলেন না’
আলেকজান্ডারের সেনাপতি ও বন্ধু সেলুকাসের রাজত্বকালে গ্রিক দূত হিসাবে ভারতে এসেছিল। তিনি লিখেন- ‘গঙ্গারিডাই রাজ্যের বিশাল হস্তী-বাহিনী ছিল। এই বাহিনীর জন্যই এ রাজ্য কখনই বিদেশি রাজ্যের কাছে পরাজিত হয় নাই। অন্য রাজ্যগুলি হস্তী-বাহিনীর সংখ্যা এবং শক্তি নিয়া আতংকগ্রস্ত থাকিত’
সেলুকাসের নাম যেহেতু চলে আসলো সেহেতু তাকে নিয়ে অর্থা সেলুকাস শব্দ নিয়ে বাঙ্গালিদের একটা ভুল জ্ঞান আছে। সেটা খোলাসা করার জন্য নুসরাত জাহান পান্না আপুর ওয়ালের লেখা টা হুবহু তুলে ধরতেছি-
" 'বিচিত্র এ দেশ! সেলুকাস!' - শিরোনামে কোন একটা পত্রিকায় একটা কলাম ছিল। আমরাও হর হামেশা বলে থাকি -
কী বিচিত্র! সেলুকাস!
কী অদ্ভুত! সেলুকাস!
কিন্তু এ সেলুকাস এর মানে কি?
এমনি অভিধানে সেলুকাসের কোন অর্থ নেই। এই শব্দটা অদ্ভুত, বিচিত্র প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে ব্যবহৃত হয়।
‘সেলুকাস (Seleucus) ছিলেন একজন গ্রীক বীর যোদ্ধা, আলেকজান্ডারের সেনাপতি, এবং আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর সফল শাসক। আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭ সালে আলেকজান্ডারের ভারত দখলের অভিযানে প্রধান সেনাপতি হিসেবে তার
অবস্থান ইতিহাসে পাওয়া যায়। সিন্ধু উপত্যকা দিয়েই তারা ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে।
ইউরোপ থেকে আসা এই দল ইরান-আফগানিস্তান এলাকা পার হয়ে ভারতে এলে এখানকার মানুষের গঠন, চালচলন, কৃষ্টি, সভ্যতা... ইত্যাদির ভিন্নতা ও বিচিত্রতা দেখে অবাক ও বিস্মিত হয়। অনেকেই ধারনা করেন এই বৈচিত্র দেখেই সিন্ধু নদের তীরে দাড়িয়ে ঐ সেনাপতিকে উদ্দেশ্য করে সম্রাট আলেকজান্ডার কোন হতাশামূলক উক্তি করেছিলেন।
হতে পারে এরকম "সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ"... যেমন আমরা বলি "হায়! কি বিচিত্র এই দেশ" সেলুকাস বলতে "হায়" শব্দের সমর্থক শব্দ বোঝানো হলেও এ ব্যাপারে পরিষ্কার করে কোথাও কিছু বলা নেই।’
আরেকটি সূত্র বলে-
‘গ্রীক ভাষায় আলেকজান্ডার সেলুকাসকে কি বলেছিলেন তা জানা না গেলেও(সম্ভবত) দিজেন্দ্রলাল রায় তার একটি লেখায় আলেকজান্ডারের এই মুহূর্তটির অনুভুতি সম্পর্কে লিখেছেন “সত্যিই সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!” সেই থেকে বাংলা ভাষায় এই বাক্যটির প্রচলন... তবে আলেকজান্ডারের অনুভুতিটুকু (হয়তোবা) প্রশংসার বহিঃপ্রকাশ হলেও কালের বিবর্তনে আমরা এটিকে অবাস্তব, অসম্ভব, অসহনীয় বা আজগুবি অবস্থার উদ্ভবেই বেশী ব্যবহার করে থাকি।' "
সেলুকাসকে নিয়ে যেহেতু কথা শুরু হয়েছে তাহলে সেলুকাসকে নিয়ে আরো দুই এক লাইন লেখা যায়।
আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর ব্যাক্ট্রিয়া ও সিন্ধু নদ পর্য্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্যের পূর্বদিকের অংশ সেনাপতি সেলুকাসের অধিকারে আসে। ৩০৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন।
এই সংঘর্ষের সঠিক বর্ণনা পাওয়া যায় না, কিন্তু যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সেলুকাস তাঁকে আরাখোশিয়া , গেদ্রোসিয়া ও পারোপামিসাদাই ইত্যাদি সিন্ধু নদের পশ্চিমদিকের বিশাল অঞ্চল অঞ্চল সমর্পণ করতে এবং নিজ কন্যাকে তাঁর সাথে বিবাহ দিতে বাধ্য হন।
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তির পর প্রথম সেলুকাস পশ্চিমদিকে প্রথম আন্তিগোনোস মোনোফথালমোসের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। চন্দ্রগুপ্ত সেলুকাস ৫০০টি যুদ্ধ-হস্তী দিয়ে সহায়তা করেন। যা ইপসাসের যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। তাঁকে জয়লাভে সহায়তা করে।
প্রশ্ন যেহেতু আলেকজান্ডারকে নিয়ে ছিল সেহেতু আমরা আবার তার দিকে ফিরে আসি। বিভিন্ন ধর্মে আলেকজান্ডার বা তার সাথে তুলনীয় সমসাময়িক ব্যক্তির উল্লেখ পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত আছে। পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লিখিত জুলকারনাইন ই আলেকজান্ডার ছিলেন কীনা তা নিয়েও মতপার্থক্য আছে।
আধুনিক যুগের গবেষক ও পন্ডিতদের মতে কুরআনে উল্লিখিত জুলকারনাইনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক সম্ভাব্য ৩ টি চরিত্র নির্দেশ করা যেতে পারে। তারা হলেন-
১. মহামতি আলেকজান্ডার,
২. সাইরাস দি গ্রেট,
৩. হিমায়ার সাম্রাজ্যের একজন শাসক।
জুলকারনাইন সমন্ধে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া দরকার। আসুন তার সমন্ধে জেনে নেই।
আল্লাহ তা'আলা বলেছেন-
"তারা আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুনঃ আমি তোমাদের কাছে তাঁর কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।
আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম।
অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।
অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।"
[সুরা কাহফঃ ৮৩-৮৬]
জুলকারনইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতীত, বঞ্চিত, শাসকের হাতে শোসিত লোকদের মুক্তি দিতেন। ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারণাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে।
ধারণা করা হয় এই জাতি ধাতুর ব্যবহার জানতো। তারা হাপর বা ফুঁক নল দ্বারা বায়ু প্রবাহ চালনা করে ধাতুকে উত্তপ্ত করে গলাতে পারতো এবং তারা লোহার পিন্ড ও গলিত সীসাও তৈরি করতে পারতো। পরবর্তী
আয়াতের বিভিন্ন বাংলা অনুবাদে গলিত তামার উল্লেখ আছে; ইংরেজি অনুবাদে তামার স্থলে সীসার উল্লেখ আছে। জুলকারনাইন তাদের প্রতিরোধ প্রাচীর তৈরি করার জন্য উপাদান ও শ্রম সরবরাহ করতে বললেন। তারা নিজেরাই জুলকারনাইনের আদেশ মত দুই পর্বতের মাঝে শক্ত লোহার প্রাচীর বা দ্বার তৈরি করলো।
ইয়াজুজ মাজুজ জাতি কে বাইবেলে 'গগ ম্যাগগ' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ইয়াজুজ মাজুজ নিয়ে লেখার অনেক ইচ্ছা আছে। তবে তা অন্য কোনো একদিন লিখব।
আলেকজান্ডারের টপিকে আবার ফিরে আসা যাক। তখন একটি ক্ষমতাধর রাজ্য ছিল মিশর। তিনি মিশর জয় করেন গৌরবের সাথে এবং তাঁর নামানুসারে নগরীর নাম রাখলেন আলেকজান্দ্রিয়া।
আলেকজান্ডার শুধু অভিযানে পটু ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন বই প্রেমিকও। বই পড়া ছিল তাঁর অন্যতম সখ। গ্রিক মনীষী এরিস্টোটল ছিলেন সম্রাট আলেকজান্ডারের গৃহ শিক্ষক। এই আদর্শবান খ্যাতিমান শিক্ষকের কাছে তিনি পেয়েছিলেন জীবনে সংগ্রামী হওয়ার অনুপ্রেরণা এবং বই পাঠের অদম্য বাসনা।
প্রিয় শিক্ষকের উৎসাহে আলেকজান্ডার ধীরে ধীরে গ্রন্থ পাঠে মনোযোগী হয়ে উঠেন। বই তাঁকে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত করত। বই থেকে তিনি জীবনের পথ চলার দিক নির্দেশনা পেতে চাইতেন সবসময়। তাঁর প্রিয় বই ছিল মহাকবি হোমার রচিত ইলিয়াড। বইটি তিনি বহুবার একাগ্রচিত্তে পাঠ করেছিলেন। মহাকাব্যটি পড়ে তিনি আয়ত্ত করেন অমিত সাহসের কথা, বীরত্বের কথা, দৃপ্তপথে এগিয়ে যাওয়ার কথা।
এরিস্টটলের কথা যেহেতু চলে আসছে সেহেতু একটা ইনফরমেশন জেনে রাখা ভাল। আর তা হলো-
এরিস্টটল ছিলেন আলেকজান্ডারের শিক্ষক,
এরিস্টটলের শিক্ষক ছিলেন প্লেটো,
প্লেটোর শিক্ষক ছিলেন সক্রেটিস।
শিক্ষক ও ছাত্র ক্রমানুসারে সাজিয়ে দেখা যাক,
সক্রেটিস → প্লেটো → এরিস্টটল → আলেকজান্ডার।
আলেকজান্ডারকে নিয়ে অনেক লেখক লিখে গেছেন। জনগোষ্ঠীর রাজ্যে
বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। পারস্যের অমর কবি শাহানামা’র রচয়িতা মহাকবি ফেরদৌসী বিশ্ব-নন্দিত বীর পুরুষ আলোকজান্ডারের বীরত্বগাথা রচনা করে ধন্য হয়েছেন।
তাঁর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মতৎপরতার আলোকে সফল অভিযানের মাধ্যমে মহামতি সম্রাট বলে আখ্যায়িত হয়েছিলেন আলেকজান্ডার। তিনি এশিয়া মাইনর, সিরিয়া, মিশর, মধ্য এশিয়া, ভারত বর্ষের বিস্তৃত অঞ্চল অধিকার করেছিলেন।
এশিয়া মাইনরের কথা চলে আসায় দ্বিতীয় প্রশ্নের কথা মনে পড়ে গেলো।
দুই নং প্রশ্নঃ পৃথিবীতে প্রথম যেখানে চুম্বকের সন্ধান মেলে তা হলো এশিয়া মাইনর। এই এশিয়া মাইনরের বর্তমান নাম কি??
এশিয়া মাইনরের বর্তমান নাম হলো আনাতোলিয়া। তবে প্রাচীন কালে এশিয়া মাইনর বলতে যে অঞ্চল বুঝানো হতো তা শুধু আনাতোলিয়া না, তুরষ্কের অধিকাংশ অঞ্চল ছিল এশিয়া মাইনরের অন্তর্ভুক্ত। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা আনাতোলিয়াতেই অবস্থিত।
ট্রয় নগরীর নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই! বর্তমানে ট্রয় একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নাম। হোমারের ইলিয়াডে যে ট্রয়ের উল্লেখ রয়েছে সেটিকেই এখন ট্রয় নামে আখ্যায়িত করা হয়। এর অবস্থান আনাতোলিয়া অঞ্চলের হিসারলিক নামক স্থানে। ট্রয়ের তুর্কী নাম ত্রুভা। গ্রীকপুরাণ অনুযায়ী দীর্ঘ দশ বছর ব্যাপী রক্তক্ষয়ী ট্রয় যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধের আরেক নাম হলো ট্রোজান যুদ্ধ।
কেনো এই ট্রয় যুদ্ধ শুরু হয়েছিল? আসুন জেনে নেই বিস্তারিত।
প্রাচীন যুগের বিশ্ব সুন্দরী হেলেনের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই! মজার ব্যাপার হলো হেলেন কিন্তু পুরুষবাচক শব্দ। তবে যাইহোক, ইতিহাসের হেলেন একজন মহিলা ছিলেন।
তিন হাজার বছরেরও আগের কথা। মাত্র একজন নারীকে উদ্ধার করতে এজিয়ান সাগর পাড়ি দিল এক হাজার জাহাজ। তখনও দুনিয়ার সেরা সুন্দরী হিসেবে তাকেই মনে করা হতো। যদিও এই সৌন্দর্যের কারনেই সুখী হতে পারেননি তিনি । তার জন্য ট্রয়ের যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিল হাজার হাজার যোদ্ধা। ধুলোয় মিশে গেলো সুখী ও সমৃ্দ্ধিশালী একটি জনপদ -ট্রয়। সেই তিনি হচ্ছেন হেলেন।
এশিয়া মাইনর অর্থাৎ আনাতোলিয়া যেনতেন জায়গা না, এটা শুধু আধুনিক যুগে বিখ্যাত না, এটা মধ্য যুগে যেমন বিখ্যাত ছিল তেমনি বিখ্যাত ছিল প্রাচীন যুগেও। পাথুরে যুগে তারা এই অঞ্চলে সভ্যতা গড়ে তুলে। এই অঞ্চলে তিনটি কৃষিভিত্তিক শহরের নাম পাওয়া যায়। তা হলো-
১. নেভালি কোরি (Nevalı Çori): খ্রিষ্টপূর্ব ৮৪০০ থেকে ৮১০০ অব্দ পর্যন্ত এই নগরীর অস্তিত্ব ছিল।
২. ক্যাটালহোয়য়িক (Çatalhöyük): খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫০০ থেকে ৫৭০০ অব্দ পর্যন্ত এই নগরীর অস্তিত্ব ছিল।
৩. ক্যায়ওনু (Çayönü): খ্রিষ্টপূর্ব ৭২০০ থেকে ৬৬০০ অব্দ পর্যন্ত এই নগরীর অস্তিত্ব ছিল।
প্রাচীন কালে এশিয়া মাইনরকে হস্তগত করার জন্য বিভিন্ন শক্তি চেষ্টা চালালেও খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪৯ অব্দে স্বাধীনতা লাভ করে। পরিবর্তীতে আলেকজান্ডার দখল করতে সক্ষম হয়। তবে তা বেশিদিন টিকে ছিল না।
এরপর এই অঞ্চলে বিভিন্ন শাসনের চড়াই উৎরাই হতে থাকে। গ্রীকদের পর হেলেনিকরা, হেলেনিকদের পর রোমানরা, রোমানদের পর আর্মেনিয়ানরা এরপর আবারও রোমানরা শাসন করে। তবে সর্বশেষ মুসলমানদের অধীনে আসলে এশিয়া মাইনরকে তুরষ্কের অধীনে করে ফেলে যা আজও একই অবস্থায় রয়েছে।
এখানে অনেক গুলি জাতির বসবাস রয়েছে। তারা হলো- তুর্কি, কুর্দি, আলবেনিয়ান, এরাবিয়ান, আর্মেনিয়ান, এসেরিয়ান, আজারবাইজানী, বসনিয়াক, বুলগেরিয়ান, চেচেনিয়ান, ককেশিয়ান, ক্রিমিয়ান,তাতার, গ্রীক, লাজি ইত্যাদি।
তবে এদের মধ্যে তুর্কি এবং কুর্দি হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ।
এশিয়া মাইনর বা আনাতোলিয়া হলো এমন জায়গা যেখানে প্রাচীনকাল, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগে অনেক গুলি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। তার মধ্যে ট্রয় যুদ্ধ এবং ক্রুসেড অন্যতম।
লিখতে গেলে অনেক কথাই লেখা যায়। কিন্তু পড়ার ধৈর্য সবার না থাকতেও পারে। যদি আলেকজান্ডার এবং এশিয়া মাইনর সমন্ধে আরো জানতে চান তাহলে গুগলে সার্চ দিন অথবা এই বিষয়ের উপগিরি রচিত বই গুলি পড়তে পারেন।
যেহেতু লেখা শুরু করেছিলোম মহামতি আলেকজান্ডারকে নিয়ে তাই তার একটি উক্তি দিয়েই লেখা শেষ করতে চাই-
"I am not afraid of an army of lions led by a sheep. I am afraid of an army of sheep led by a lion. অর্থাৎ আমি ভেড়ার নেতৃত্বে সিংহ বাহিনীকে ভয় পাই না, সিংহের নেতৃত্বে ভেড়ার পালকে আমি ভয় পাই।"
©somewhere in net ltd.