![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"ইন্ডিয়ার সুপ্রিমকোর্ট সেকশন ৩৭৭ এর আওতায় সকল প্রকার ভালোবাসা ও বিবাহের অনুমতি দিল। মানে হলো ‘গে ম্যারিজ’ ‘লেসবিয়ান ম্যারিজ’ ‘হোমোসেক্সুয়ালিটি’ কোন কিছুই আর অবৈধ হিসেবে উল্লেখ করা যাবে না। এই সবকিছুকেই এখন আইনিভাবে বৈধতা দেয়া হলো।"
কারো বাসায় কি ছারপোকা আছে?
যদি না থাকে তাহলে ভাল। আর যদি থাকে তাহলে ছারপোকা কি যন্ত্রনাদায়ক তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন নিশ্চয়ই। আপনি কি জানেন ছারপোকা মারার জন্য কার্যকরী তেমন কোনো কীটনাশক আবিষ্কৃত হয়নি। যা আবিষ্কৃত হয়েছে তা তেমন ফলপ্রসূ না।
ছারপোকা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই উপায় আর তা হলো কাপড় চোপড়, কাথা বালিশ, লেপ তোষক কাঠফাটা রোদে রেখে দিন এবং বিল্ডিং বাড়ি হলে উচ্চতাপমাত্রায় গরম করা উত্তপ্ত পানি রুমের আনাচে কানাচে মারুন। এরপর দেখুন ফলাফল। ছারপোকা মরে ছারখার।
উপরে হোমোসেক্সুয়ালিটি নিউজের সাথে ছারপোকার কোনো সম্পর্ক নেই। ছারপোকার কথা এনেছি স্ট্যাটাসে আকর্ষণ আনার জন্য। যদি ধৈর্য থাকে এবং সমকামিতা সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে বাকিটুকু পড়তে পারেন।
ইন্ডিয়ার হোমোসেক্সুয়ালিটি বৈধতা দেওয়া এই নিউজ শুনার পর অনেকেই হয়তো মনে কষ্ট পেয়েছে, অনেকে রাগে ক্ষোভে ইন্ডিয়ার সুপ্রিম কোর্টকে অভিশাপ দিয়েছে, আবার অনেকে এই খবর শুনে ঈদের চেয়েও বেশি খুশি হয়েছে। এই নিউজ শুনে শুধু গে এবং লেসবিয়ানরা খুশি হয়নি সাথে কিছু অন্যান্য মানুষও খুশি হয়েছে। তারা আর কেউ নয় তারা ঐসব লোক যারা ধর্মকে মানেনা এবং যারা ঈমানদার তাদের ধ্বংস চায়।
বর্তমানে হোমোসেক্সুয়াল শব্দটি বিদ্বৎসমাজে এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হলেও ‘গে’ এবং 'লেসবিয়ান’ শব্দদুটি অধিক জনপ্রিয়। গে শব্দটির দ্বারা পুরুষ সমকামীদের বোঝানো হয় এবং নারী সমকামীদেরকে বোঝানো হয় লেসবিয়ান শব্দটির দ্বারা।
আসুন একটা গল্প বলি, বাস্তব গল্প।
আমি যখন ছোট তখন দোহারের ফিরিঙ্গি বাড়ি স্কুলের মাঠে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একটি ছেলে মেয়েদের মত করে এত সুন্দর করে নেচেছিল যে দর্শক তাকে করতালির মাধ্যমে ১০০ তে ১০০ মার্ক দিয়ে দিছিলো।
তার কিছুদিন পর এক ভাইয়ের সাথে রিক্সায় করে আমি এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে ঐ ছেলেটাকে দেখলাম এবং পাশের ভাইকে বললাম ভাই দেখেন ঐ ছেলেটা এত সুন্দর করে নাচে বিটিভির কোনো নৃত্য অনুষ্ঠানে গেলে নিশ্চিত ফার্স্ট হবে।
সেই ভাই আমাকে বললো তুমি কি তার সমন্ধে একটা ঘটনা শুনেছো! আমি বললাম কোন ঘটনা। সে বললো এই ছেলেটা আরেকটা ছেলেকে বিয়ে করতে চাইছিলো। এ নিয়ে এলাকায় সেই রকম একটা হাসি তামাশার ঝড় উঠেছিল এবং চায়ের দোকানেও চলতো এ নিয়ে কথাবার্তা। আমিতো এইটা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। বললাম একটা ছেলে আরেকটা ছেলেকে কিভাবে বিয়ে করে??
ভাই বললো এটার একটা কারন আছে। তুমি বড় হও তাহলে অনেক কিছু জানবে এবং বুঝবে। আসলে ঐ ভাইটি ঠিকই বলেছিল বড় হলে বুঝবো। তবে আমার আঠারো প্লাস বয়স হওয়ার আগেই এই বিষয় মোটামুটি জানতে পেরেছিলাম সামহোয়ারইনব্লগ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
একটা স্টুডন্টকে মনোবিজ্ঞান পড়াতে হতো। আমিতো মনোবিজ্ঞান সমন্ধে আগা মাথা কিছুই জানিনা। তাই মনোবিজ্ঞানের উপর কয়েকটা বই কিনেছিলাম। সেখানে হোমোসেক্সুয়ালিটি নিয়ে একটা টপিক ছিল। সেখানে আমেরিকান সাইকোলজি এসোসিয়েশন এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে,
"হোমোসেক্সুয়ালিটি বা সমপ্রেম বলতে সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি রোমান্টিক আকর্ষণ, যৌন আকর্ষণ অথবা যৌন আচরণকে বোঝায়। যৌন অভিমুখীতা হিসেবে সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি "আবেগীয়, রোমান্টিক বা যৌন আকর্ষণের একটি স্থায়ী কাঠামোবিন্যাস।"
এই সংজ্ঞাটি এখন উইকিপিডিয়া ব্যবহার করে থাকে সমকামিতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে।
খাস বাংলায় বললে যা দাড়ায় তা হলো একটা ছেলের প্রতি আরেকটা ছেলের যৌন আকর্ষণ বা যৌনক্রিয়া এবং একটা মেয়ের প্রতি আরেকটা মেয়ের যৌন আকর্ষণ বা যৌনক্রিয়া। আপনারা গুগলে সার্চ দিয়ে এই বিষয়ে পড়লে আরো ক্লিয়ার হতে পারবেন।
আপনি কি জানেন আপনার আমার আশেপাশেই এমন অনেক হোমোসেক্সুয়াল পার্সন রয়েছে। যাদের সাথে স্বাক্ষাত হয়েছে বা যারা হোমোসেক্সুয়াল পার্সনের ব্যবহার সমন্ধে জ্ঞাত তারা এইসব বিষয়ে জানে এবং এসব মানুষকে খুব সহজে চিনে ফেলে। আপনি যদি হোমোসেক্সুয়াল পার্সনকে চিনতে চান তাহলে গুগলে সমকামীদের আচরণ লিখে সার্চ দিতে পারেন।
আপনি কি জানেন সমকামিতা বিশ্বের অনেক গুলি উন্নত দেশে বৈধ! এবং বিশ্বের অনেক গুলি দেশে এটা বৈধ করার জন্য সমকামীরা আন্দোলোনও করতেছে। এমন কি কিছু মুসলিম দেশেও এটা বৈধ করার পক্ষে আন্দোলন হয়েছে।
গত কয়েকদিন আগে একটি দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হয়,
"ভারতের সুপ্রিমকোর্ট বৈধতা দিলো সকল প্রকার সম্পর্ক ও বিবাহের"
এই হেডলাইন দেখে এক আংকেল মুখখানা চিরতার পানি খাওয়ার পর চেহারার যেমন অবস্থা হয় সেই রকম ভঙ্গি করে বললো,
- ছ্যা! ছ্যা! দেশটা যেন রসাতলে গেলো। বাংলাদেশেও যে বৈধতা দেওয়া হবেনা তারও কোনো গ্যারান্টি নেই।
আমি পাশেই ছিলাম। তার সাথে কথার তাল মিলিয়ে বলিলাম,
-আংকেল আমরাও ভারতের চেয়ে এখন কম রসাতলে না। ভারতে তো সমকামিতার বৈধতা দিয়েছে আর আমরা তো আপন মায়ের সাথে যিনা করা বৈধ করে নিয়েছি।
- এই ছেলে তুমি এসব বেলাহাইজ্জা কথা বলো কেন? কোথায় আমরা বৈধ করেছি এটা??
- আংকেল আপনি তো নামাজ রোজা করেন। নিশ্চয়ই সুনানে ইবনে মাজাহর ২২৭৪ নং হাদিসটি শুনেছেন যেখানে রাসুল (সাঃ) বলেছেন- "সুদের গুনার সত্তরটি স্তর রয়েছে, তার মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে আপন মায়ের সঙ্গে যিনা করা।" আংকেল তাহলে বলেন আমরা কি নিজেদের রসাতলে নিজেরাই নেমে যাচ্ছিনা সুদের ব্যবসা করে!!
- হ বাবা ঠিকই কইছো। আসলে এভাবে আমরা কখনো ভাবিনি। আমাদের দেশে তো সুদ ঘুষ বৈধ আমরা অঘোষিতভাবে নিজেরাই করে নিয়েছি।
সুদ এবং ঘুষ নিয়ে লিখতে গেলে ফেইসবুকের স্ট্যাটাস বক্স লিমিট হইয়া যাবে কিন্তু লেখা শেষ হবেনা। আর বলে রাখা ভাল আংকেলের গল্পটা কাল্পনিক।
বহু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যেমন - সক্রেটিস , লর্ড বায়রন, দ্বিতীয় এডওয়ার্ড, হাদ্রিয়ান, প্লেটো, মাইকেল এঞ্জেলো, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি, সিগমুন্ড ফ্রয়েড -এর ক্ষেত্রে সমকামী বা উভকামীর মত পরিভাষাগুলো মাঝেমধ্যে প্রয়োগ করা হয়। তবে অনেক বিশ্লেষক সক্রেটিস, প্লেটো, ভিঞ্চি এদের বিষয়ে সমকামিতার বিষয়টি সমর্থন করেনি।
যারা সমকামী তাদের চেনার একটি সহজ উপায় হলো এরা আপনার সাথে যখন মিশবে তখন অন্যান্য ৮/১০ মানুষের চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু আচরণ করবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো এরা আপনার স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতে চেষ্টা করবে। যেমন- ঘাড়, বুক, পেট এবং নিম্নদেশ। এরা আপনার পাশে ঘুমালে আপনাকে যৌন উত্তেজনায় উত্তেজিত করার চেষ্টা করবে। আর ফেইসবুকে যদি ফ্রেন্ডস হিসেবে থাকে তাহলে চ্যাটিং এর স্টাইল হবে একজন কামুকী মানুষের মত। আপনাকে সে দিতে পারে নগ্ন ছবি বা অন্য কোনো কিছু। আর যারা গে তাদের ব্যবহার মেয়েলী স্বভাবের এবং লেসবিয়ানদের ব্যবহার ছেলেদের মত। তবে কিছু চালাক গে ও লেসবিয়ান আছে যারা ৮/১০ জন মানুষের মত চলে।
মনোবিজ্ঞানে সমকামী হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে-
"সম্ভবত কোনো একটা কারণে এটা নির্ধারিত হয় না,বরং তা জিনগত, হরমোনগত ও পরিবেশগত একাধিক কারণ সমষ্টিগত প্রভাবেরই ফল।"
কিছু মনোবিজ্ঞানী বলেছেন-
'একজন সমকামী মানুষের সংস্পর্শে আরেকজন মানুষ সমকামী হতে পারে। কারণ, একজন সমকামী চায় তার বন্ধুরাও সমকামী হোক। তাই সে অপরকে সমকামী করার জন্য প্রভাবিত করতে চেষ্টা করে।'
সমাজ কর্তৃক জৈবিক লিঙ্গ ব্যক্তিবর্গের মানুষের আচরণ কেমন হবে তা মোটামুটি নির্ধারিত। যেমনঃ একজন ছেলে বাইরে কাজ করবে, শার্ট প্যান্ট পরবে, হাটার সময় গটগট করে হাটবে, আর নারীরা ঘরে বসে থাকবে, ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরবে; হাঁটার সময় ধীরে ধীরে হাটবে, এধরনের আচরণ একটা সমাজ জৈবিক ভাবে নির্ধারিত লিঙ্গের মানুষের কাছে প্রত্যাশা করে। কিন্তু সমকামী পুরুষেরা যখন কিছু মেয়েলী আচরণ জনসম্মুখে করে, তখন তাকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে সমকামী নারীদের এই সমস্যার মুখোমুখি কম হতে হয়। সমকামী ব্যক্তিরা প্রতিটা সমাজেই যৌন সংখ্যালঘু। আর নিজের যৌন প্রবৃত্তি এভাবে কম হওয়ার জন্য তাদের মধ্যে মানসিক উদ্বেগ সবসময় কাজ করে।
গত কিছুদিন আগে পরকীয়া নিয়ে একটা স্ট্যাটাস লেখার পর এক বন্ধুর সাথে রাস্তায় দেখা হয়। বন্ধু বললো- কিরে বেডা ফেইসবুকে এগুলা লিখতে লজ্জা লাগেনা। আমি বললাম- ছোট বেলায় আই লাভ ইউ শব্দের মানে টা শুনতে লজ্জা পেতাম। তাই লজ্জা পেলে অনেক নিজে কিছু জানা এবং অপরকে কিছু জানানো যায় না। আমি বুঝার পরেও যদি একটু সচেতনতামূলক লেখা না লিখি তাহলে দেখা যাবে কিছুদিন পর আমারই কাছের কেউ না কেউ এই পাপে পতিত হবে। বন্ধু বললো- হ বুঝছি, তুই যেন পতিত না হছ সেই দিকে খেয়াল রাখিস। হুম আমার বন্ধুর কথা আসলেই ঠিক আমি আপনি কেউ যেন পতিত না হই সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।
সমকামী নারী পুরুষের মধ্যে যারা আত্মহত্যা করতে চায় তারা সমকামী বিদ্বেষী বিভিন্ন আচরণের শিকার হয়। দেখা যায়, যারা আত্মহত্যা করে না তাদের তুলনায় আত্মহত্যা করতে ইচ্ছুক সমকামীরা অধিক বিচ্ছিন্নতা, একাকিত্ব, বৈষম্য ও পরিবার থেকে ত্যাজ্য, এরকম ঘটনার মধ্য দিয়ে যায়।
আরেকটি গবেষনা থেকে দেখা গিয়েছে যেসব সমকামীরা আত্মহননের পথ বেছে নেয় তারা অধিক হারে যৌন ক্রিয়ায় নারীর ভূমিকা পালন করে। যারা অবিষমকামী পরিচয় তরুণ বয়সেই গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে অনেকেই যৌন নির্যাতনের, মাদকাসক্তের শিকার হয়, বিভিন্ন আচরণগত কারণে গ্রেফতার হয়।
একটি গবেষনা থেকে দেখা গিয়েছে নরওয়ের যেসব কিশোররা আত্মহত্যা করতে যায় তাদের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়া যায় এই কিশোররা সমলিঙ্গে যৌনাচারণ করতে ইচ্ছুক। তবে তারা সমকামী এমনটা বলা যাবে না।
আসুন এখন দেখে নেই বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্ম এই সমকামিতা সম্পর্কে কি বলে! ওল্ড টেস্টামেন্ট আর নিউ টেস্টামেন্ট মিলে হলো বাইবেল। ওল্ড টেস্টামেন্ট ধর্মীয় গ্রন্থ হিসেবে ব্যবহার করে ইহুদিরা এবং নিউ টেস্টামেন্ট ব্যবহার করে খ্রিস্টানরা।
ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় পান্ডুলিপিগুলোতে 'লট' নামক প্রাচীন প্রফেটের সময় তার সম্প্রদায়ের সমকামী আচরণের নিন্দা করা হয়েছে এবং উক্ত সম্প্রদায়কে ঐশী বিপর্যয়ের মাধ্যমে ধ্বংস করার ইতিহাস বর্ননার মাধ্যমে স্বীয় অনুসারীদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।
হিন্দু ধর্মে বিষ্ণু ও মহাদেব শিবের হরিহর রুপে মিলন এইরকম একটি পৌরানিক আখ্যান থেকে অনেকের মতে সমকামিতা নির্দেষ করে থাকে। এখানে বিষ্ণু মোহিনী বা নারী বেশ ধারণ করে শিবকে আকৃষ্ট করেন শিব এই মায়া বুঝে উঠার আগেই শিবের বীর্য স্থালিত হয় এবং সেই বীর্য থেকে অযৌনভাবে অয়াপ্পান নামে একটি পুত্রসন্তান জন্ম হয় । যেহেতু এইসব কাহিনী পুরানসমুহ হতে জানা যায় তাই হিন্দু পন্ডিতরা এই কাহিনিকে আধ্যাত্মিক বিষয় মনে করে থাকেন।
হিন্দুদের নিকট সবচেয়ে পবিত্রতম গ্রন্থ হলো বেদ। বেদের আবার চারটি অংশ, যথা- ঋক্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ এবং অথর্ববেদ। এই বেদের কোথাও সমকামিতা নিয়ে কথা বলা হয়নি এবং সমকামিতার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো সম্মতিও দেয়নি।
হিন্দু ধর্মের কথা বলতে গিয়ে এক হিন্দু ছেলের কথা মনে পড়ে গেলো। দুই বছর আগে ফেইসবুকে এক হিন্দু ছোট ভাই আমার সাথে চ্যাটিং করে। হাই হ্যালো ইত্যাদি চ্যাটিং এর পরে সে আমাকে বললো 'দাদা আপনাকে আমার খুব ভাল লাগে'। আমি যেহেতু দোহারে সামাজিক টুকটাক কাজ করি তাই অনেকের নিকট থেকেই এমন প্রশংসামুখর বাক্য শুনতে হয়। আর আমিও প্রতি উত্তরে তাদের বলি 'আপনাকেও আমার ভাল লাগে'। তাই সেই চিন্তা ধারা থেকেই ঐ হিন্দু ছোট ভাইকে আমিও মেসেজের প্রতিউত্তরে বলি- 'তোমাকেও আমার ভাল লাগে ভাই'। এই মেসেজ দেওয়ার পরপরই ছোট ভাইটি লাভ ইমুজি দিয়ে কিছুক্ষণ পর তার অনেক গুলি অর্ধনগ্ন পিক সেন্ড করে এবং লিখে দেয় যে 'দাদা আমাকে এখন আপনার কেমন লাগে'। আমিতো পুরাই 'থ' হইয়া গেলাম। বুঝতে দেরি হলো না যে এই ছেলেটি সমকামী। তাই সাথে সাথে তাকে ব্লক লিস্টে পাঠাইয়া দিলাম। হিন্দু ভাইয়েরা মনে কিছু করবেন না। এমন অনেক কাহিনী শুনেছি অনেকের থেকে। দোহার নবাবগঞ্জে বেশকিছু খ্রিস্টান এবং মুসলিম সমকামী রয়েছে। একজন মুসলিম সমকামীর কাহিনী জানি যে পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। তার সমকামিতার জন্য তার বিয়ের বছর খানেকের মাথায় তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। যাক এসব কথা, ধানে চিটা থাকে এটা সকলেরই জানা। তাই সকল ধর্মে এমন কিছু মস্তিষ্ক বিকৃত কীট রয়েছে।
এবার আসুন দেখি, ত্রিপিটক কী বলে?? ত্রিপিটকে সমকামী ব্যক্তিদেরকে পণ্ডক বলা হয়ে থাকে। "জন্মগতভাবেই এদের মধ্যে এধরনের সমকামী মানসিকতা থাকে। অতীত কর্মের কারণেই জন্মগতভাবে তাদের সেধরনের মানসিকতা হয়।"
[মহাবর্গ অ.১০৫]
বৌদ্ধধর্ম স্বাধীন ধর্ম হওয়ায় এটি গৃহী সমকামীদের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করে না। অন্যান্যদের মতোই তাদেরকেও দান ও শীল পালন করতে।উৎসাহিত করা হয়ে থাকে।
'কনফুসীয় ধর্ম' মূলত একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক দর্শন হওয়ার ফলে এতে সম বা বিপরীত কোনো রকম কাম সংক্রান্ত বিস্তৃত বিধিনিষেধ নেই। মিং সাহিত্যকীর্তিতে সমকামী প্রণয়কে বিপরীতকামী প্রণয় অপেক্ষা অধিক উপভোগ্য ও অধিক "সামঞ্জস্যপূর্ণ" বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
ইসলাম ধর্মে সমকামিতা নিয়ে কি বলা আছে তার আগে বাংলাদেশের সমকামিতা নিয়ে একটু আলোচনা করতে চাই। কারন উইকিপিডিয়ার মতে বাংলাদেশের জনসংখ্যার মধ্যে ৮৬.৬% ইসলাম ধর্মাবলম্বী তবে অন্যান্য সমীক্ষাতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ৯০% মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাই আমাদের বাংলাদেশের সমকামিতা নিয়ে আলোচনা না করলেই নয়।
বাংলাদেশে প্রথম এলজিবিটি সংক্রান্ত জনসচেতনতা গড়ে তোলার বৃহত্তর প্রয়াস শুরু হয় ১৯৯৯ সালে, যখন রেংগ্যু নামক এক উপজাতীয় ব্যক্তি বাংলাদেশের সমকামীদের জন্য প্রথম অনলাইন গ্রুপ "গে বাংলাদেশ" প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে 'বয়েজ অব বাংলাদেশ' হল দেশের বৃহত্তম পুরুষ সমকামী সংগঠন। এই দলটি বাংলাদেশের ৩৭৭ নং ধারাটির অবসান চায়।
এখন দেখা যাক ৩৭৭ নং ধারায় কি বলা হয়েছে!
"প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোন পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্টকালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও দিতে হবে।"
অর্থাৎ এর মানে দাঁড়ালো বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক সমকামিতা ও পায়ুমৈথুন শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ , যার শাস্তি দশ বছর থেকে শুরু করে আজীবন কারাদণ্ড এবং সাথে জরিমানাও হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশে সমকামিতার বিচার হলো মৃত্যুদণ্ড। এই জন্যই সমকামী মানসিকতা সম্পন্ন মিডিয়া গুলি মধ্যপ্রাচ্যের ইস্যু গুলি নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রোপাগান্ডা চালায়।
ইসলাম ধর্মে কোন পুরুষের সঙ্গে পুরুষের বা নারীর সঙ্গে নারীর বিবাহ হতে পারে না। তাই সমকামিতা বা একই লিঙ্গের ব্যক্তির সঙ্গে যৌনসঙ্গম যিনার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সমলিঙ্গীয় যৌন সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করেছে।
আল্লাহ তা'আলা বলেন-
"এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল- তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি? তোমরা তো কামবশত পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছো।"
[সুরা আল আরাফঃ ৮০-৮১]
'ডেড সী' এই নাম টা জানে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ডেড সী এর নাম আমরা সবাই জানি কিন্তু এর ইতিহাস তেমন জানিনা। লূত (আঃ) এর সম্প্রাদয়ের ধ্বংসপ্রাপ্ত রূপই আজকের ‘ডেডসি’ বা মৃত সাগর। আজও তাতে কোনো প্রাণির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
এই সমকামীদের শাস্তির কথা কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন-
"অতপর যখন আমার হুকুম এসে পৌছল, এরপর যখন আমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো, তখন আমি জনপদের উপরিভাগ নিচে এবং নিম্নভাগ উপরে উঠালাম। আর তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর-পাথর বর্ষণ করলাম।"
[সুরা হুদঃ ৮২]
সমকামিতার শাস্তি হিসেবে ইহকালে যে দণ্ডবিধি ইসলামে নির্ধারণ করা হয়েছে তার আগে সমকামিতার ইহকালিন ভয়াবহতা একটু বলতে চাই। ১৯৮১ সালে নিউইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়াতে প্রথম এইডস ধরা পড়ে। আপনারা জানেন কি সেই ব্যক্তি কারা ছিল?? তারা ছিলো সমকামী! আর সকলেরই জানা যে এখনও অবধি এইডসের প্রতিশেধক আবিষ্কৃত হয়নি। সমকামিতার ফলে শুধু এইডস না, এই এইডসের মত আরো ভয়াবহ রোগ পৃথিবীতে ছড়াতে পারে।
এই ভয়াবহ রোগ নিয়ে দেড় হজার বছর আগে প্রদত্ত রাসুল (সাঃ) এর সতর্কবানী কতোটা সত্যি হলো তা একটু দেখি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
"যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে তারা প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে থাকে তখন তাদের মধ্যে এমন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে যা তাদের পুর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল না।’
[ইবনে মাজাহঃ২/১৩৩২]
যেহেতু সমকামিতা পরকীয়া বা ব্যভিচারের চেয়েও ভয়ানক পাপ সেহেতু সমকামিতার ইহকালিন দণ্ডবিধির প্রেক্ষিতে রাসুল (সাঃ) বলেন-
"যাদেরকে তোমরা লুত (আঃ) সম্প্রদায়ের কাজের মত অর্থাৎ সমকামে লিপ্ত দেখবে
তাদের উভয়কেই হত্যা করো।"
[তিরমিজিঃ ৪/৫৭, আবু-দাউদঃ ৪/২৬৯, ইবনে মাজাহঃ ২/৮৫৬]
ইহকালিন এই রকম শাস্তির বিধান দেখে সুশীলরা বলবেন যে 'কি অমানবিক এবং নিষ্ঠুর শাস্তি!'
হ্যা আপনারা এটাকে নিষ্ঠুর এবং অমানবিক বলতে পারেন। কিন্তু আমরা মনে করি এটাই উত্তম শাস্তি। কারন, আমি চাই না আমাদের সমাজে মরনব্যাধী কোনো রোগ দেখা দিক। আমরা চাই না এই অপরাধের কারনে আল্লাহ আমাদের মাঝে কোনো আযাব প্রদান না করুক। তাই আমরা এই রকম গর্হিত কাজ থেকে মুক্তি চাই। আমরা চাই একটি সুন্দর এবং সুস্থ পৃথিবী।
যারা সমকামিতাকে বৈধতা দেয় এইডসের মতো মহামারির উত্থান তো তাদের দেশেই।
যারা এই রকম গর্হিত কাজ অতীতে করেছেন তাদের উচিৎ এখন থেকেই এসব কাজ থেকে দূরে সরে আসা এবং আশেপাশের মানুষদের এই সম্পর্কে সচেতন করা। আর অতীতের কাজের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করা। আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল, তিনি চাইলে যাকে খুশি ক্ষমা করতে পারেন। আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করার প্রেক্ষিতে বলেন-
"যদি তারা অনুতপ্ত হয় এবং সংশোধিত হয়, তবে তাদেরকে ছেড়ে দাও; কারণ নিশ্চয়ই আল্লাহ অনুতাপ-গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।”
[সুরা আন নিসাঃ ১৬]
পৃথিবী হলো আখিরাতের শষ্যক্ষেত্র। আমার কর্ম দ্বারাই আমার ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তাই এমন কোনো কর্ম করে যাওয়া উচিৎ না যা মানব জাতির ধ্বংসের কারণ হয়ে দাড়ায়। আমাদের সকলের হতে হবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী। কথায় আছে না ব্যবহারেই বংশের পরিচয়। তাই আমার দ্বারা আমার বংশের পূর্ববর্তীরা এবং উত্তরসূরিরা যেন সম্মানিত হয় সে চেষ্টা করা।
সবশেষে আমাদের সকলের প্রিয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার কিছু অংশ দিয়ে শেষ করতে চাই-
"প্রথমো যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে,
কেঁদেছিলে একা তুমি, হেসেছিলো সবে।
এমনো জীবন তুমি করিবে গঠন,
মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।"
©somewhere in net ltd.