নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তৌহিদ রাসেল

তৌহিদ রাসেল

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

তৌহিদ রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংসার এবং সংগঠন

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:২৮

চোখের সামনে অনেক সাজানো গুছানো এবং সুখে ভরা সংসার দেখবেন। তখন নিজের খুব হিংসে হবে যে, ইশ! আমাদের ফ্যামিলিটাও যদি এমন হতো!

চোখের সামনেই দেখবেন এই রকম সংসার ভেংগে তছনছ হয়ে যাচ্ছে। কিছুরই অভাব ছিল না। তবুও ভেংগে গেলো, ভেংগে গেলো বললে ভুল হবে, বলতে হবে ভেংগে চুড়ে গুঁড়ো গুড়ো হয়ে গেলো।

এই সংসারে শুধু সুখই ছিল না, ছিল একতা এবং ভালবাসায় ভরপুর। যেমন ছোট ভাইকে কেউ বকা দিলে বা থাপ্পড় দিলে বড় ভাই গিয়ে সেই ছেলের ১২ টা বাজিয়ে দিয়ে আসতো। কারন, ভাইকে সে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসতো। কিন্তু সংসার ভাংগার পর এই একই ভাই অপর জনের গীবত করা সহ বকাঝকা তো ফ্রী, আর উত্তেজনা চরম পর্যায় গেলে এক ভাইয়ের হাতে আরেক ভাই খুন।

অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আজকাল পেপার খুললে বা নিজের বাড়ির আশেপাশে তাকালেই এমন দেখতে পাবেন। আসলে সংসার ভাংগা শুরু হয় কয়েকটি কারণে। তবে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো নিজের অহংকার এবং স্বার্থপরতা। দেখবেন সংসার ভাংগার আগে ভাইদের মাঝে ঝগড়া হয় আর সেখানে একটি কথা শুনা যায় সংসারের জন্য আমি কি কম করেছি নাকি! সংসারের জন্য আমি কম ইনকাম করি নাকি!

ব্যাস এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য ভাইয়ের মাঝে কষ্টের সঞ্চার হয়। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। ফলাফল একটাই সংসার ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহতম সময়ের মাঝে পরে যায় তাদের বাবা-মা। তাদের মৃত্যু অবধি তাদের ইহকালিন জীবনে সুখ দেখতে পায় কি না তার নিশ্চয়তা খুবই কম।

এই সংসারের মতই হলো এক একটি সামাজিক সংগঠন। কিছু কিছু সামাজিক সংগঠনের সাফল্য দেখে অনেকেরই হিংসে হয়। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই এসব সামাজিক সংগঠনের ভাঙ্গন শুরু হয়।

কিছু কিছু সংগঠন ভেংগে খান খান হয়ে যায়। শুধু সংগঠনটি ভাংগে না। সাথে ভাংগে আত্মার সাথে সম্পর্কিত মানুষদের সাথে সম্পর্ক। কারণ, ঐ একই ঠিক যেন সংসারের মতই। আমি কি সংগঠনের জন্য কম করেছি নাকি! আমার অবদান কম নাকি! আমি না থাকলে আজ সংগঠন এখানে দাঁড়াতে পারতো নাকি! ইত্যাদি অহংবোধ।

সংগঠন ভেংগে গেলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট যে পায় সে হলো সংগঠক বা প্রতিষ্ঠাতা। সে না পারে নিজেকে বুঝাতে না পারে অপরজনকে বুঝাতে।

আমি চোখের সামনে অনেক সংগঠন ভেংগে যেতে দেখেছি। শুধু সংগঠনই না অনেক সংসারও। সেই সব সংসার বা সংগঠনের সদস্য আমি, আপনি এবং সে অর্থাৎ আমরা।

জন রে বলেছিলেন-
'লোভী ও অহংকারী মানুষকে বিধাতা সবচাইতে বেশী ঘৃণা করে।'
অর্থশাস্ত্রের লেখক কৌটিল্য তার বইতে লিখেছিলেন-
'অহংকারের মত শত্রু আর একটিও নেই'

একজন সংসার বা সংগঠনের সদস্য যখন একতাবদ্ধ ছিল তখন অন্য কেউ অপমান করতে আসলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতেন এবং অপমানের উচিৎ জবাব দিয়ে দিতেন।

কিন্তু ভাংগনের পর সেই কাছের সদস্য গুলাই একজন আরেকজনকে অপমান করে এবং অন্য কেউ একজনের সামনে আরেকজনকে অপমান করলে আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠে।

রোমান দার্শনিক সেনেকা বলেছিলেন-
'যারা বন্ধুদের অপমান করে, বন্ধুদের অপমান হতে দেখে নীরব থাকে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করো না'

একটি বইয়ে পড়েছিলাম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার জন্য দুটি কারণই যথেষ্ট। আর সেই দুটি কারণের মধ্যে অন্যতম হলো সমালোচনা।

হযরত আলী (রাঃ) বলেছিলেন-
'দুনিয়ার সবচাইতে কঠিন কাজ নিজেকে সংশোধন করা আর সবচাইতে সহজ কাজ অন্যের সমালোচনা করা।'

কে কি করলো সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমাদের দেখার বিষয় একটি সংসার বা একটি সংগঠন টিকিয়ে রাখা। সে জন্য আমার, আপনার এবং তার উচিৎ হবে আমাদের রাগ, অহংকার, হিংসা, গীবত, সমালোচনা ইত্যাদি ত্যাগ করা।

আমাদের সংসার নিয়ে কে কি বললো সেটা কানে না নেওয়া। সম্পর্ক ঠিক রাখতে এবং সংসার এবং সমাজে শান্তি আনতে আমাদের কাজ করতে হবে।

সবশেষে একজন লেখকের সাথে তাল মিলিয়ে বলতে চাই-
"সমালোচকদের কাছ থেকে শিখো, কিভাবে তারা তাদের কাজ 'সমালোচনা' নিয়মিত করে যাচ্ছে কিন্তু আমরা আমাদের কাজটা নিয়মিত করে যেতে পারিনা"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.