![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্লাসে স্টুডেন্টদের 'Quasi passive verb + no complement' শিখাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে দু'জন স্টুডেন্ট ক্লাসে ঢুকে পায়ে ধরে সালাম করা শুরু করে দিলো। আমি কিছুটা সরে গিয়ে বললাম থাক থাক সালাম করতে হবেনা, যাও ভাল মত পরীক্ষা দিও।
ওরা দুজন এসএসসি পরীক্ষার্থী। এই রকম ঘটনার শিকার অনেকেই হয়েছেন। এটা নতুন কিছুনা, ছোটবেলা থেকেই এই বিষয়ের সাথে আমাদের পরিচয়। আমরা নিজেরাও ছোটবেলায় মুরব্বিদের পা ধরে সালাম করে দোয়া নিতাম যাতে এক্সাম ভাল হয়।
এই পা ধরে সালাম করা জিনিসটা ঈদের সময় বেশি দেখা যায়। ছোটরা বড়দের পা ধরে সালাম করে আর বড়রা টাকা দেয় বকশিশ হিসেবে। এছাড়াও অনেক বিয়ে বাড়িতে দেখা যায় নতুন বউ তার শাশুড়ি বা মুরব্বি টাইপের কাউকে সালাম করতেছে পা ছুঁয়ে।
এখন অনেকে এর পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলবে। যারা এই প্রথার পক্ষে যাবে তারা কিছু যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাইবে যে এটা অন্যায় কিছুনা। এটা গুরুজনের প্রতি সম্মান দেখানোর একটা সুন্দর পদ্ধতি। আর গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো তো দোষের কিছুনা। বরং এটা সওয়াবের কাজ। আর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, ' যে বড়দের সম্মান করেনা এবং ছোটদের স্নেহ করেনা সে আমাদের দলভুক্ত নয়', এই হাদিসটা তারা যুক্তি হিসেবে দাড় করাতে পারে। এছাড়াও তারা অন্যান্য হাদিস ও কুরআনের আয়াতসহ অনেক যুক্তি দেখাবে এই বিষয়টির প্রতি।
আর যারা এই রীতির বিপক্ষে যাবে তারা বলবে এটা পা ধরে সালাম না বলে কদমবুসি বলা বাঞ্চনীয়। সালাম হলো আলাদা একটি বিষয়। 'আসসালামু আলাইকুম' কাউকে বলা হলো সালাম। আর পায়ে ধরে সালামের রীতি ইসলামে নেই। এটা জায়েজ নয়। কারণ, কুরআনে আল্লাহ বলেছেন যে আল্লাহ ব্যতিত কারো নিকট মাথা নত না করতে। আর কদমবুসি করতে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই মাথা নত হয়ে যায়।
এই রীতির বিপক্ষে আরো কিছু যুক্তি আছে। হয়তো সেই ঘটনাটি উল্লেখ করা যেতে পারে যা হিজরতের সময় ঘটেছিল। কিছু সাহাবি আবিসিনাতে হিজরত করেন এবং তাদের ফিরিয়ে আনতে কুরাইশদের মধ্যে থেকে কয়েকজন যান সেখানে। তারা বাদশা নাজ্জাশীকে বলেন যারা তার রাজ্যে এসেছে তাদের ফিরিয়ে দিতে।
রাজা সাহাবিদের ডাকলেন। অন্যান্য সবাই মাথা নত করে সম্রাট নাজ্জাশীকে শ্রদ্ধা জানালেন, কিন্তু সাহাবিরা কেউ মাথা নত করে শ্রদ্ধা জানালেন না। তখন তাদের প্রশ্ন করা হলো কেন তারা মাথা নত করে সম্রাটকে শ্রদ্ধা জানালো না। তখন তারা বললো যে আল্লাহ ব্যতিত কারো সামনে মাথা নত না করা মুহাম্মদ (সাঃ) আমাদের শিখিয়েছেন। এছাড়াও আরো অনেক কথাই বলেন যা শুনে সম্রাট নাজ্জাশী সাহাবিদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন এবং তাদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এছাড়াও কদমবুসির বিপক্ষে মিশকাত ও তিরমিযির শিষ্টাচার অধ্যায়ের একটি হাদিস তুলে ধরা যেতে পারে। 'আনাস (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন তার কোন ভাই বা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাত করবে, তখন সে কি মাথা ঝুঁকাবে? তিনি বললেন, না। লোকটি বলল, তাহলে কি কেবল হাত ধরবে ও মুছাফা করবে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, হ্যাঁ’।'
যাইহোক পক্ষে বা বিপক্ষে যারাই থাকুক না কেন অনেকেই হয়তো এই কদমবুসির ইতিহাস জানে না। এই কদমবুসি কখন কোথায় কিভাবে উৎপত্তি হলো তা সুস্পষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে যেখানে বেশি দেখা যায় তা হলো এই ভারতীয় উপমহাদেশে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন এই কদমবুসির উৎপত্তি মূলত ভারতীয় অঞ্চল থেকেই। হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ মনুসংহিতা থেকে সেটাই পাওয়া যায়। হিন্দু সমাজে বেদের শিক্ষক তথা পুরোহিত থেকে শুরু করে গুরুজনেরা মূলত ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের হয়। আর হিন্দু ধর্ম মতে ব্রাহ্মণরা বিশেষ করে ব্রাহ্মণ পুরোহিতরা হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতিনিধি। ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে তারা সাধারণ হিন্দুদের কাছে প্রায় পূজনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
সেজন্য বেদ পড়ার সময় প্রত্যেকটা ছাত্রকেই ব্রাহ্মণের পা ধরে সালাম করতে হয়। এটা আমার কথা না। এটা মনুসংহিতার শ্লোকের কথা। মনুসংহিতার ২:৭১-৭২ শ্লোকগুলোতে বলা হয়েছে - '71. At the beginning and at the end of Veda he must always clasp both the feet of his teacher, he must study, joining his hands; that is called the Brahmangali. 72. With crossed hands he must clasp the feet of the teacher, and touch the left foot with his left hand, the right foot with his right hand.'
হিন্দু ধর্মের কেউ এই লিখা পড়ে থাকলে মনে কিছু নিবেন না। মূলত আমাদের ধর্মের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখার প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে ইতিহাসের কিছু তথ্যের জন্য হিন্দু ধর্মের বিষয়কে টেনে আনতে হয়েছে।
কদমবুসির পক্ষে কারা বা বিপক্ষে কারা সেটা বড় বিষয় না, বড় বিষয় হলো আমি আপনি কোন ধর্মের। আপনি যদি আপনার ধর্ম মানেন তাহলে আপনাকে ধর্মের দেখানো পথ অনুসরণ করতে হবে। সকল ধর্মে শিষ্টাচার বিষয়ে অনেক আলোচনা আছে। ইসলাম ধর্মে কুরআন ও হাদিসে শিষ্টাচার নিয়ে অনেক আলোচনা রয়েছে। বড়দের কিভাবে শ্রদ্ধা বা সম্মান দেখাতে হবে তা ঐসব শিষ্টাচার অধ্যায়ে লেখা আছে। এমন কোনো কুরআনের আয়াত বা সহিহ হাদিস নেই যেখানে কদমবুসির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ছোট কেউ কদমবুসি করতে আসলে তাকে এই বিষয়ে বুঝাতে হবে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে। তাকে হেয় করে বুঝাতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেক মুরব্বি আছেন যারা কদমবুসিকে ইসলাম ধর্মের বিষয় বলে মনে করেন। তাদেরকে বুঝাতে হলে মসজিদে ইমামের বয়ান বা ওয়াজে বক্তার বয়ান বেশি ফলপ্রসূ হবে। কারণ তারা অন্যান্য ব্যক্তির চেয়ে মসজিদের ইমাম এবং ওয়াজ মাহফিলের বক্তার কথা বেশি গুরুত্ব দেয়।
কদমবুসি ছাড়াও আরো কিছু বিষয় আছে। বই-খাতা, কলম, টাকা বা অন্যকিছু পড়ে গেলে অথবা পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র পাওয়া মাত্র চুমু খাওয়া। দোকানদারের প্রথম বিক্রি হওয়া জিনিসের টাকা পেয়ে চুমু খাওয়া, গাড়িওয়ালা প্রথম ভাড়া পাওয়ার পর টাকা চুমু খাওয়া। এছাড়াও ভুলবশত কারো পায়ে পা লেগে গেলে তাকে স্পর্শ করে নিজের হাত নিজের বুকে ছুঁইয়ে চুমু খাওয়া।
এসব বিষয় নিয়ে অনেকের খটকা আছে, জানার আগ্রহও আছে। আবার অনেকে এটা ধর্মীয় রীতিনীতি ভেবে বসে আছে। এসব বিষয়ের উপর অনেক বই লেখা হয়েছে। ইন্টারনেটে সার্চ দিলে এসব বিষয়ের উপর অনেক আর্টিকেলও পাওয়া যায়। যদি সময় হয়ে উঠে তাহলে উপরিউক্ত বিষয়গুলি নিয়ে লিখব।
বর্তমান সমাজ শিক্ষিত ও সচেতন। এখনকার যুবকশ্রেণি অন্ধ অনুকরণ বা অনুসরণ পছন্দ করেনা। তারা সত্য জানতে চায় সত্য মানতে চায়। সত্য জানতে চাইলে বা মানতে চাইলে যাচাই বাছাই ছাড়া কোনো উপায় নেই। সত্য যখন আগত এবং মিথ্যা তখন বিতারিত।
আর যারা সত্য না খুঁজে মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে থাকে সেই সব অবিশ্বাসীদের সমন্ধে কুরআনে বলা হয়েছে, 'আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদিও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও।'
[সুরা আল বাক্বারাঃ১৭০]
মানুষ মাত্রই ভুল করে। আর আল্লাহ হলেন সেই দয়াময় যিনি আমাদের ভুলের ক্ষমা করেন। কুরআনে বলা হয়েছে, 'তোমাদের মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশত কোন মন্দ কাজ করে, অনন্তর এরপরে তওবা করে নেয় এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়।'
[সুরা আল-আন'আমঃ৫৪]
২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: ্ধন্যবাদ পোষ্টের জন্য।
৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৫৫
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: সময়োপযোগী পোস্ট। আমিও এক সময় নিজের মা সহ সব মুরুব্বীদের গণ হারে সালাম করতাম। পরে ব্যপারটা জানার পর বন্ধ করে দিয়েছি। পায়ে ধরে সালামের ইসলামে অনুমতি নেই...
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:৪৮
এম এ কাশেম বলেছেন: যুগোপযোগী পোস্ট।
শুভ কামনা।