![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আমার মতই। সুখদুঃখের স্মৃতিতেই আমার বসবাস। তবে সুখের কথাগুলোই বলতে ভালোবাসি।
কুতুব মিনার শব্দটি যিনি পাক সার জমিন সাদ বাদ পড়েছেন জানি তিনি তা কখনও ভুলবেন না। এটি হুমায়ূন আজাদের এক অনন্য সৃষ্টি। কুতুব মিনারের জোরেই অনেক কিছু হয় ধরনের এত্তো কথা তিনি এতো সহজে বলেছেন কি করে মাঝে মাঝে তা নিয়েই ভাবতে হয়।
গতরাতের লিড নিউজ দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে নিয়ে আর একটাতো কমন – বনানীর ঘটনাটা। ’৭১ আর ‘১৭ মাঝের ফারাক ৪৬ বছর হলেও সামনের সাত পিছনে গেলে আর পিছনের এক সামনে এলে। সব সেম টু সেম। ঘটনা একই পাশবিক নির্যাতন। অভিযোগের সাথে অভিযুক্তদের নামেরও বেশ মিল – জামায়াতের সাঈদী, আপন জুয়েলার্সের সাফাত। এ মিল ‘সা’ –তে।
একাত্তরে অসংখ্য অপরাধ করেও অর্থ আর কুতুব মিনারের জোরে স্বাধীন বাংলাদেশে নিজ প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের ইচ্ছামত ব্যবহার করতো একধরণের মালিক। বাবা জাত, বর্ণ, ধর্ম এসব একটু মেনে চললেও ছেলেরা অতো বাছবিচার করতো না। তারা তাদের ক্ষমতা দেখিয়েই যেত, সেইসব মেয়ে কর্মীদেরও মুখের উপর না বলার সাহস ছিল না। বাবা অনেকবার প্রোটেকশন নেওয়ার কথা ছেলেদের উপদেশ দিলেও ছেলেদের সবসময় তা মনে থাকতো না। সেই জন্য নার্সিং হোমে আলাদাভাবে ব্যবস্থাই থাকতো ওই সমস্ত মেয়েদের অ্যাবরসন ও পরবর্তী চিকিৎসা দেয়ার জন্য। মাসেই এরকম কেস নাকি থাকতো দশ-পনেরোটা। আর ওই মালিকের প্রতিষ্ঠান গুলোর সাথে নাকি নার্সিং হোমগুলোর একধরনের চুক্তিও ছিল, কমিশন পেত ডাক্তাররাও।
উপন্যাস থেকে ফিরে আসি এবার বাস্তবে। সাঈদী সাহেব অপরাধ করিনি জানালেও তাঁর রাজনৈতিক একটা পরিচয় আছে। তাঁর পক্ষে সাফাই গাওয়ারও দেশে বিদেশে অনেকই আছে। ইসলামের একজন ভাল বক্তা হিসেবে তিনি একসময় জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন – একথা কম জনেই অস্বীকার করেন। কিন্তু অন্যদিকে সাফাত নিজেকে নির্দোষ বলেনি। তার বাবাও ছেলের আকামের কথা স্বীকার করে বলেছে- যা ঘটেছে আপোষের মাধ্যমেই ঘটেছে।
অর্থ ও সোনার জোর আছে বলেই ২৬ বছর বয়সে তিনটা বিয়ে করেছে, আর অসংখ্য ঘনিষ্ঠ মেয়ে বন্ধুর যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। অপকর্ম করে বাড়িতে বউ থাকা সত্ত্বেও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে বনানীতে নির্যাতিত নারী দুটিকে। এখানে আমার কাছে পাক সার জমিন সাদ বাদ – এর কথাই বার বার মনে পড়ছে। বাপ কুলাঙ্গার জন্যই ছেলে কুপত্র হতে সময় লাগেনি। আর সেই কুকর্মের কথা অস্বীকার করেনা – ওই কুতুবের জোরেই।
আজ গুলশানের আপন জুয়েলার্স এর সামনে দিয়ে ঘুরে এলাম। কোন লোক নেই, কিচ্ছু নেই, চারদিক শুনশান, শুধু মেইন রোডে গাড়ি চলছে আর একটি দুটো হর্ন বাজছে এই যা। এতো বড় একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরদের বেকারত্বের কথা ভেবে খুব খারাপ লাগছে। শুধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীই নন, তাঁদের সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাঁদের পরিবারও। কি নিদারুণ কষ্ট পোহাতে হবে তাঁদের কল্পনা করতেই বুক কাপে।
মালিকের ভুল বা অপরাধের জন্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীকে শাস্তিভোগ করতে কেন হবে তা কেউ বলতে পারেনা। দিতে পারে না, সঠিক ব্যাখ্যাও। যেন সেটাই নিয়ম। কিন্তু তা নয়, নিয়ম এভাবে হয় না, প্রতিষ্ঠান বন্ধ না করেও কর্তৃপক্ষ চাইলেই বিষয়টা ভিন্নভাবে পরিচালনা করতে পারতেন। মালিক পক্ষের মাত্র দুজনের অপরাধের জন্য কত্তো গুলো মানুষকে শাস্তি পেতে হবে – ভাবা যায়!
পাক সার জমিন সাদ বাদের মালিকগুলোই তো ভাল ছিল তারা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেনি। যারা আপোষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এখানেতো ক্ষতিগ্রস্ত মেয়েরা আপন জুয়েলার্স প্রতিষ্ঠানের নয়। সরকার যদি শাস্তি দিতে চান মালিকদেরকে দিন। প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে সেখানকার নিরপরাধ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যেন বেকারত্ব দান করে শাস্তি দেয়া না হয় – সরকার ও কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিনীত বিবেদন। আমরা সাধারন মানুষরা তনু হত্যা, দশ বছরের মেয়ের ধর্ষকের বিচার না পেয়ে বাবা-মেয়ে দুজনে ট্রেনে চাপা পড়ে আত্মহত্যা করার ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তিসহ সকল ধর্ষণ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
©somewhere in net ltd.