![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"মৃত্যু ভয় যেদিন কেটেছে সেদিনই আমার মরণ হয়েছে"
গুলশান এলাকার নামকরা মাস্তান “বাদশাহ চৌধুরী”।তার সহকারি ২ জন।লালু আর কাবু।
-ঐ লালু আমি নামকরা নারে?
-জী ভাই একদম কররা।২৬ বছর বয়সে আপনি যে মাস্তানির ক্যারিয়ার গড়ছেন তা এই এক,দুই,তিন বিংশ শতাব্দীর কেউ পারেনাই।
-চল তোদের আজ মুরগী পুড়া খাওয়াবো।তোরা হইলি গিয়া আমার গ্রেনেড।তোদের চাঙ্গা রাখতে হবে।
-ভাই মুরগী পুড়া না খাইয়া আলুর তরকারী দিয়া মুরগী খাইলে কেমন হয়?
-তোরা কবে স্মার্ট হবি? আমি হইলাম বনানী গুলশানের বাদশাহ চৌধুরী।বরিশালের না।এইটা তোদের মনে থাকেনা?
বাদশাহ তার বাহিনীকে নিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষে বনানী ব্রীজে অবস্থান নেয়।
-কিরে লালু খাওয়াটা কেমন লাগলো।
-ঝাল ভাই ঝাল।আলজিব্বা পর্যন্ত জ্বলতেছে।
কাবুঃ-ভাই সুনিমা ম্যাডাম আজ লেট করতেছে কেন?
বাদশাহঃ- সুনিমা পরের জনমে আইবো।আমি অপেক্ষা করুম।তোর কোন সমস্যা?
বাদশাহর একতরফা প্রেমিক সুনিমা।সুনিমা একটি বেসরকারি ভার্সিটিতে পড়ে।রিকশা দিয়ে বনানী ব্রিজ হয়ে সে তার ভার্সিটি যায়।বাদশাহ তার বাহিনী নিয়ে দাড়িয়ে থাকে শুধু এক নজর সুনিমাকে দেখার জন্য।সব জায়গায় মাস্তানি করতে পারলেও সে সুনিমার সামনে মাস্তানি দুরের কথা উল্টো ভয়ে কাপতে থাকে।
লালুঃ-ভাই আপনি চাইলে সুনিমা ম্যাডামরে উঠাইয়া নিতে পারেন।এত কষ্ট করে ব্রীজে আসেন কেন?
বাদশাহঃ-ভালোবাসার মাস্তানি হয় দিল দিয়ে শরীর দিয়ে নারে লালু।
আজ সুনিমা হেটে হেটে আসছে।সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে;কি ব্যাপার সুনিমা হেটে আসছে।ঠিকমতো হাটতেও পারছেনা।তার মনটাও খারাপ দেখাচ্ছে।বাদশাহ কি করবে বুঝতে পারছেনা।
-কিরে কাবু কি সমস্যা ওর?
-ভাই উনারে জিগান।
-ওরে জিগাইতে পারলে কি আর তোরে জিগাই?
সুনিমা অন্যমনস্ক হয়ে হাটতে হাটতে সামান্য পিচলে পড়ে যায়।কিন্তু দুর্ঘটনাবশত তার একটি জুতা ব্রীজ থেকে নিচে পড়ে যায়।
বাদশাহ দৌড় দিয়ে তার কাছে যেতে সুনিমার চিৎকার।
-সাবধান।মাস্তানের কোন সহযোগিতা আমার লাগবেনা।
এই মাস্তানটাকে সুনিমা আগে দেখতেই পারতনা।খুবই বিরক্ত লাগতো।কিন্তু প্রতিদিন ওকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার প্রতি একটা মায়া জন্মায়, ভালোলাগা জন্মায়।হয়তো সেটা ভালোবাসা না।না কখনই ভালোবাসা না।
সুনিমাঃ-আপনি আর কত আমাকে এভাবে যন্ত্রনা দিবেন?
বাদশাহঃ-আচ্ছা আর আসবনা।
এত বড় মাস্তান যখন নরম গলায় কথা বলে তখন সুনিমার কেন জানি অনেক ভালো লাগে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।আমার জুতাটা পানি থেকে উঠানোর ব্যবস্থা করেন।
-তোমার চিন্তা করতে হবেনা।লালু আর কাবু ইতিমধ্যে তাদের ছোট জাহাজ নিয়ে পানিতে নেমে গেছে।
-বাহ!ছোট মাস্তানরাও দেখি অনেক স্মার্ট।
-আমাকে তুমি এভাবে মাস্তান বল কেন!!
- তো আপনাকে কি সুইটি হানি পানি বলবো? মাস্তানদের কেউ সুইটি হানি পানি ডাকতে শুনছেন?
লালু আর আবু ইতিমধ্যে জুতা নিয়ে হাজির।
-ভাই জুতা তো ভিজে গেছে।
-যা ড্রাই ওয়াশ এর ব্যবস্থা কর।
সুনিমাঃ-না লাগবেনা।কষ্ট করার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।যদিও এই কষ্টে আপনাদের স্বার্থ জড়িত।
----
বাদশাহ আজ খুব খুশি।সুনিমা আজ এত কথা বলছে।তার কথা গুলি যদি রেকর্ড করে রাখতে পারতাম।
-ঐ লালু তোর শরীরের কোন এক চিপায় টেপ রেকর্ডার লাগিয়ে রাখবি।
-জী বস।রাখবো।
সুনিমার বিবিএ প্রায় শেষ।নিয়মিত আর ক্লাসে যাচ্ছেনা সে।বাদশাহ অপেক্ষায় থেকে অস্থির।আর দেখা পায়না সে সুনিমার।তাহলে কি সুনিমা অন্য কোন সময়ে আসে।আমি কি সারাদিন দাড়িয়ে থাকবো? নাকি সিসিটিভি লাগিয়ে দিবো ব্রীজে।
সুনিমার দেখা পাওয়া যায়না বলে কিছুদিন যাবত তার অবস্থান সুনিমার ভার্সিটি ক্যাম্পাসে।সেখানে ২ দিন অপেক্ষার পর দেখা মেলে সুনিমার।
বাদশাহ বাহিনিকে দেখেই সুনিমার মেজাজ বিগড়ে যায়।
-আপনি এখানে?
-তোমাকে অনেকদিন দেখিনা।তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো।
-আপনি জানেন না আপনি একটা মাস্তান? আর আপনি জানেন এটা আমার জন্য কতটা অপমানজনক যে আপনার আমাকে দেখতে ইচ্ছে হয়? আর যদি আপনাকে আমি আমার আশেপাশে দেখি তবে পুলিশে জানাবো।ছোটলোক কোথাকার।
-আচ্ছা আর কখনও আসবনা।
-----
বাদশাহ আজ কোন কথা বলছেনা।সে নিজেকে অনুধাবন করার চেষ্টা করছে সে আসলে কি।লালু আর কাবুর খুব মন খারাপ কারণ বাদশাহকে কখন এই রকম হতে তারা দেখেনি।
-ভাই মন ভালো করেন।আপনার পায়ে পড়ি।
-নারে আমার মন খারাপ নারে।
সুনিমা এখন তার আশেপাশে আর বাদশাহ বাহিনীকে দেখেনা।আজ ব্রীজ দিয়ে যাওয়ার সময় উত্তরের দিকটার দিকে তাকাতেই তার মন খারাপ হয়।এখানেই তারা দাড়িয়ে থাকতো।আজ বাদশাহ নেই।কিছু একটা শুন্য শুন্য মনে হচ্ছে।তাহলে ঐদিন আমি অনেক বেশি বলে ফেলেছি? আজ আমার এত খারাপ লাগছে কেন?
সুনিমা কানে হেডফোন লাগিয়ে রেডিও অন করতেই বেজে উঠলো সঞ্জিব দার গান…..
"এই নষ্ট শহরে
নাম না জানা যেকোন মাস্তান-
সকল খিস্তি খেউর রাজা উজির মেরে,
মাস্তানি সব সেরে,
বিকেল বেলা তোমার বাড়ির লাগোয়া পথ ধরে,
যাচ্ছে যখন ফিরে,
ভুলে নাহয় দিয়েই ছিল শিস!
হাত ছিল নিশপিশ-
ছুড়ে নাহয় দিয়েই ছিল চিঠি!
আর স্বীকার করে বলি, এসব কাণ্ড খারাপ ছেলেই করে।
তবু মেয়ে, প্রেম তবু তার মিথ্যে ছিল না ।
এই প্রেমের উপস্থাপন, জানি তেমন ভদ্র শোভন নয়।
তার চিঠির ব্যাকরণ, ভর্তি ভুলে বলার মত নয়।
শুধু তোমার নামটি ছাড়া, শুদ্ধ কিছুই লিখতে জানে না।
আর স্বীকার করে বলি, সে কিছুতেই যোগ্য তোমার নয়।
তবু মেয়ে, প্রেম তবু তার মিথ্যে ছিল না "
তানভীর মাহমুদুল হাসান
১৪-০১-২০১৩
©somewhere in net ltd.